somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিচার : ইউথেনেশিয়া (ইচ্ছামৃত্যু) - মৃত্যুর অধিকার বনাম ধর্ম ও আবেগ

১৯ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ১২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবি সূত্র: aercmn-com
জীবনের প্রতি মানুষের মায়া অপরিসীম। জীবনকে ভালোবাসে বলেই এত দুঃখ-কষ্ট সংগ্রামের মধ্যেও মানুষ বেঁচে থাকে। সমস্ত পৃথিবীময় বাঁচার চেষ্টা অবিশ্রান্ত চলছে। মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারকে (Right to Life) পৃথিবীতে সব রাষ্ট্রেই আইনি সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। মানুষ বেঁচে থাকার চেষ্টা যতই করুক না কেন মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। তাই জীবনকে পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করে পরিণত বয়সে স্বাভাবিক মৃত্যুর মধ্য দিয়ে জীবনের ইতি ঘটুক সেটাই আমরা সবাই চাই। কোনো মানুষের অস্বাভাবিক মৃত্যু আমরা কেউই চাই না। কিন্তু বিভিন্ন কারণে জীবন যখন কোনো মানুষের শত্রু হয়ে দাঁড়ায়, বেঁচে থাকা যখন নিজের কাছে এক নিদারুন যন্ত্রণা ও বোঝা হয়ে যায় তখন অনেক মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করার ধর্য্য থাকে না, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মৃত্যুর জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠে। মৃত্যুর এই ইচ্ছাকে বাস্তবে পরিণত করা এখন যৌক্তিক বাস্তবতা ও সময়ের দাবী এবং অনেক দেশে আইনের দৃষ্টিতেও বৈধ। অর্থাৎ দীর্ঘদিন নিরারোগ্য অসুখ থেকে যখন মুক্তির কোন পথ নেই, তখন রোগ যন্ত্রণায় তিলে তিলে কষ্ট পেয়ে যমদূতের জন্য অপেক্ষা না করে স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ সাহায্যে সহজ উপায়ে মৃত্যু কার্যকর করে পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার পর্বটিকে বলা হচ্ছে ইউথেনেশিয়া বা 'সহজ মৃত্যু' বা 'ইচ্ছামৃত্যু'।


ইউথেনেশিয়া’ বলতে কী বুঝায়

‘ইউথেনেশিয়া’ শব্দটি গ্রিক শব্দ εὐθανασία থেকে এসেছে। ‘ইউ’ (εὖ) অর্থ ভালো বা সহজ এবং ‘থানাতোস’ (θάνατος) মানে মৃত্যু। অভিধান অনুসারে ইউথেনেশিয়া শব্দের শাব্দিক অর্থ 'যন্ত্রণাহীন মৃত্যু' বা 'সহজ মৃত্যু'। ‘ইউথেনেশিয়া’বলতে দূরারোগ্য রোগের কারণে দীর্ঘস্থায়ী বেদনা ও কষ্ট থেকে বাঁচার জন্য রোগী বা রোগীর আত্বীয়স্বজনের ইচ্ছায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহজে মৃত্যু কার্যকর করা। এটি রোগীর ইচ্ছা বা অনিচ্ছা, সম্মতি বা অসম্মতি উভয়ভাবে হতে পারে। তাই ‘ইউথেনেশিয়া’কে সামষ্টিক অর্থে 'স্বেচ্ছামৃত্যু' বললে ভুল হবে, বড় জোর 'ইচ্ছামৃত্যু' বলা যেতে পারে।

অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি নিরাময় অযোগ্য কঠিন কোনো রোগে আক্রান্ত হলে তাকে অসহনীয় কষ্ট ও ব্যথা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য প্রাণনাশে সহায়তা করাকেই ইউথেনেশিয়া বা ইচ্ছামৃত্যু বলে। এই সংজ্ঞা বিভিন্ন দেশের আইনের দৃষ্টিতে কিছুটা ভিন্নভাবে করা হয়েছে।

ইউথেনেশিয়ার ইতিহাস

একজন ব্যক্তির মৃত্যুকে ইচ্ছাকৃতভাবে ত্বরান্বিত করার অর্থে ইউথেনেশিয়া প্রাচীন বিশ্বের সক্রেটিস, প্লেটো এবং সেনেকা দ্য এল্ডার সমর্থন করেছিলেন, যদিও হিপোক্রেটিস এই অভ্যাসের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন বলে মনে করা হয়। অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে, "মৃত্যুর যন্ত্রণা" চিকিৎসার জন্য মরফিনের ব্যবহার আবির্ভূত হয়েছিল। জন ওয়ারেন ১৮৪৮ সালে এটি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছিলেন। ১৮৬৬ সালে জোসেফ বুলার ক্লোরোফর্ম অনুরূপ কাজে ব্যবহার করেছিলেন। ১৮৭০ সালে স্যামুয়েল উইলিয়ামস, একজন স্কুলশিক্ষক, ইংল্যান্ডের বার্মিংহাম স্পেকুলেটিভ ক্লাবে প্রদত্ত একটি বক্তৃতার মাধ্যমে সমসাময়িক ইথানেশিয়া বিতর্কের সূচনা করেন, যা পরবর্তীতে বার্মিংহাম স্পেকুলেটিভ ক্লাবের প্রবন্ধ শিরোনামে একটি একক প্রকাশনায় প্রকাশিত হয়েছিল। খ্রিস্টান ধর্মযাজকগণ আধুনিক অর্থে সবসময়ই ইউথেনেশিয়ার ঘোরতর বিরোধিতা করেছেন। সেইসাথে কয়েকজন দার্শনিকও এর বিরোধিতা করেছিলেন এবং যুক্তি দিয়েছিলেন যে ইউথানেশিয়ার অনুশীলন আমাদের বেঁচে থাকার স্বাভাবিক মানবিক প্রবৃত্তির সাথে সাংঘর্ষিক।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রবার্ট ইঙ্গারসোল ১৮৯৪ সালে ইউথানেশিয়ার পক্ষে যুক্তি দিয়েছিলেন যে যেখানে কেউ একটি টার্মিনাল রোগে ভুগছেন, যেমন টার্মিনাল ক্যান্সার, তাদের আত্মহত্যার মাধ্যমে তাদের ব্যথা শেষ করার অধিকার থাকা উচিত। ইনগারসোল এবং অ্যাডলার উভয়ই শেষ রোগে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্কদের স্বেচ্ছাসেবী ইথানেশিয়ার পক্ষে যুক্তি দিয়েছিলেন। ১৯০৬ সালে হেনরি হান্ট ওহাইওর সাধারণ পরিষদে আইন প্রবর্তন করার সময় ইউথানেশিয়াকে বৈধ করার প্রথম প্রয়াস ঘটেছিল।
১৯৩৫ সালে স্বেচ্ছাসেবী ইউথানেশিয়া লিগ্যালাইজেশন সোসাইটি গ্রেট ব্রিটেনে ইউথানেশিয়া বৈধকরণের জন্য প্রচারণা চালায়। ১৯৩৬ সালে রাজা পঞ্চম জর্জকে তার মৃত্যু ত্বরান্বিত করার জন্য মরফিন এবং কোকেনের একটি মারাত্মক ডোজ দেওয়া হয়েছিল। সেই সময়ে তিনি কার্ডিও-শ্বাসযন্ত্রের ব্যর্থতায় ভুগছিলেন, এবং তাঁর জীবন শেষ করার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তাঁর চিকিৎসক লর্ড ডসন সম্মতি দিয়েছিলেন। যদিও এই ঘটনাটি ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে গোপন রাখা হয়েছিল।

২৪ জুলাই ১৯৩৯ সালে নাৎসি জার্মানিতে গুরুতরভাবে অক্ষম গেরহার্ড ক্রেচমার নামের একটি শিশুর হত্যাকাণ্ডকে প্রথম "রাষ্ট্র-স্পন্সরড ইউথানেসিয়া" হিসাবে বিবিসি "নাৎসি টাইমলাইনের অধীনে গণহত্যা" হিসাবে বর্ণনা করা করেছিল। এ ধরনের হত্যায় সম্মত হয়েছিল তাদের মধ্যে ছিল হিটলারের অফিস, পিতামাতা এবং গুরুতর এবং জন্মগতভাবে ভিত্তিক অসুস্থতার বৈজ্ঞানিক নিবন্ধনের জন্য রাইখ কমিটি। যদিও ক্রেচমারের হত্যার জন্য পিতামাতার সম্মতি পাওয়া যায়, পরে এ ধরনের নিহত ৫০০০ থেকে ৪০০০ শিশুর অধিকাংশই তাদের পিতামাতার কাছ থেকে জোরপূর্বক নেওয়া হয়েছিল।
১৭৪৯ সালের ৬ জানুয়ারী, আমেরিকার ইউথেনেশিয়া সোসাইটি নিউ ইয়র্ক স্টেট আইনসভার কাছে ইউথানেশিয়াকে বৈধ করার জন্য একটি পিটিশন পেশ করে, যেখানে ৩৭৯ জন নেতৃস্থানীয় প্রোটেস্ট্যান্ট এবং ইহুদি মন্ত্রীরা স্বাক্ষর করেছিলেন। রোমান ক্যাথলিক ধর্মীয় নেতারা পিটিশনের সমালোচনা করে বলেছেন যে এই ধরনের একটি বিল "এটি আত্মহত্যা-খুন চুক্তিকে বৈধতা দেবে" এবং "ঈশ্বরের পঞ্চম আদেশ, 'তুমি হত্যা করো না'" এর পরিপন্থি।

যাইহোক, বিশ্বজুড়ে কিছু সরকার শর্ত সাপেক্ষে ইথানেশিয়াকে বৈধতা দিয়েছে তবে এটিকে এখনও অনেকে অপরাধমূলক হত্যাকাণ্ড হিসাবে বিবেচনা করে। যেমন শুরুর দিকে নেদারল্যান্ডস এবং বেলজিয়ামে ইচ্ছামৃত্যুকে বৈধ করলেও, এটি এখনও হত্যাকাণ্ড রয়ে গেছে। অর্থাৎ ডাক্তার কিছু আইনি শর্ত পূরণ করে ইচ্ছামৃত্যু সম্পাদন করলে এটি শাস্তিযোগ্য নয়। আর শর্ত না মেনে করলে এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সম্প্রতি একটি ঐতিহাসিক রায়ে, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট প্যাসিভ ইথানেশিয়াকে বৈধ করেছে। সুপ্রিম কোর্ট রায়ে মন্তব্য করেছে যে, ভারতের সংবিধান স্বাধীনতা, মর্যাদা, স্বায়ত্তশাসন এবং গোপনীয়তাকে মূল্য দেয়। প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বে একটি বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে এই রায় দেয়।

ইউথেনেশিয়ার শ্রেণিবিভাগ

সূত্র: https://byjus.com/

রোগীর সম্মতির ধরনের ওপর ভিত্তি করে ইউথেনেশিয়াকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়:
১) স্বেচ্ছাপ্রণোদিত বা স্বেচ্ছাকৃত (voluntary euthanasia) - রোগীর স্ব-ইচ্ছায় যখন সহজ মৃত্যু কার্যকর হয়। যাকে আমরা বলি স্বেচ্ছমৃত্যু।
২) অস্বেচ্ছাকৃত বা একান্ত বাধ্য হয়ে (non-voluntary euthanasia) - বিভিন্ন কারণে যেখানে রোগীর সম্মতি নেওয়া সম্ভব হয় না, তখন নিকটাত্মীয়ের ইচ্ছায় এই সহজ মৃত্যু কার্যকর হয়। যেমন: রোগী কোমায় বা সংজ্ঞাহীন অবস্থায় আছে। যার দরুন এটি সম্পাদনে রোগীর অনুমতি বা মতামত নেওয়া সম্ভব হয় না। তখন রোগীর নিকটাত্মীয়ের ইচ্ছায় ইনভলান্টারি বা অনিচ্ছাকৃত ইউথেনেশিয়া কার্যকর করা হয়। শিশু ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি রোগীর বেলায়ও এ ধরনের ইউথেনেশিয়া সম্পাদন করা হয়।

৩) অনিচ্ছাকৃত (involuntary euthanasia) - রোগীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যখন সহজ মৃত্যু সম্পাদন করা হয়। রোগী একাধিক জঠিল রোগে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস অবর্ণনীয় কষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু রোগী স্বেচ্ছামৃত্যুতে (voluntary euthanasia) রাজী নয়।
'মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে,
মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই।'
তারপরেও যদি ডাক্তার ও রোগীর আত্মীয়-স্বজনের ইচ্ছায় 'রোগী এবং রোগীর আত্মীয়স্বজনকে যন্ত্রণামুক্ত করার জন্য' রোগীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে সহজ মৃত্যু সম্পাদন করে তখন একে অনিচ্ছাকৃত ইউথেনেশিয়া (involuntary euthanasia) বলে।

ইউথেনেশিয়া বা সহজ মৃত্যু সম্পাদন করার জন্য যেসব পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় সেগুলোকে আবার দুইভাগে ভাগ করা যায়:

ক) পরোক্ষ সহজ মৃত্যু (Passive euthanasia) - রোগীকে জীবিত রাখতে যেসব জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, তা থেকে বিরত থাকা অথবা যে উপায়ে রোগী জীবিত আছেন, তা বন্ধ করে দেওয়া। বিভিন্ন ঔষধ বা অক্সিজেন দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে এমন রোগীকে ঔষধ বা অক্সিজেন দেওয়া বন্ধ করে মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করা Passive euthanasia-এর একটি উদাহরণ।
খ) প্রত্যক্ষ সহজ মৃত্যু (Active euthanasia) - প্রত্যক্ষ ইথানেসিয়াতে মৃত্যু কার্যকর করার জন্য প্রাণঘাতী পদার্থ বা শক্তি ব্যবহার করা হয। উচ্চ মাত্রার পয়জন ইনজেকশন বা কোনো ঔষধ দিয়ে মৃত্যু কার্যকর করা এক ধরনের Active euthanasia।

আত্মহত্যা (Suicide) ও ইচ্ছামৃত্যু (euthanasia)-র মধ্যে পার্থক্য

প্রথম পার্থক্য শব্দের মধ্যেই দৃশ্যমান। প্রথমটি হত্যা (আত্মহত্যা) এবং দ্বিতীয়টি মৃত্যু (ইচ্ছামৃত্যু)।
আত্মহত্যা বা আত্মহনন (Suicide) হচ্ছে কোনো ব্যক্তি কর্তৃক ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের জীবন বিসর্জন দেয়া বা স্বেচ্ছায় নিজের প্রাণনাশের প্রক্রিয়াবিশেষ। ল্যাটিন ভাষায় সুই সেইডেয়ার থেকে আত্মহত্যা শব্দটি এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে নিজেকে হত্যা করা। সাধারণত আত্মহত্যা সংঘঠিত হয় ব্যক্তির ইচ্ছায় সকলের অগোচরে। ডাক্তার বা চিকিৎসকগণ আত্মহত্যার চেষ্টা করাকে মানসিক অবসাদজনিত গুরুতর উপসর্গ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই আত্মহত্যার প্রচেষ্টাকে এক ধরনের অপরাধ হিসেবে গন্য করা হয়। অনেক ধর্মেই আত্মহত্যাকে পাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আত্মঘাতী পদ্ধতি বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন রকমের হয়। যেমন- গলায় ফাঁস দিয়ে, বিষাক্ত কীটনাশক পান করে এবং আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে মানুষ আত্মহত্যা করে। মানসিক রোগ বা অন্য যে কোন কারণে আবেগতাড়িত আত্মহত্যা কখনো সমর্থন যোগ্য নয়। কেননা তাদের যথাযথ চিকিৎসা দিলে বা তাদের মনোকষ্ট বা আবেগীয় সমস্যার সমাধান হলে তারা আত্মহত্যা করতো না, বরং জীবনকে আরো আনন্দময় ও সফল করতে সচেষ্ট হতো।

ইউথেনেশিয়া বা ইচ্ছামৃত্যুর ক্ষেত্রে রোগী বা রোগীর আত্মীয়স্বজনের স্বাধীন ইচ্ছাকে কার্যকর করার জন্য কিছু প্রক্রিয়া মেনে মেনে চলতে হয়। মৃত্যুর ইচ্ছার সপক্ষে গ্রহণযোগ্য কারণ প্রমাণ করতে হয়। বৈধ কতৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকের সহায়তায় এই ধরনের মৃত্যু সম্পাদন করা হয়। ইচ্ছামৃত্যু সাধারণত শুধু নিরারোগ্য জঠিল রোগ বা বার্ধক্যজনীত রোগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

বিভিন্ন ধর্মের দৃষ্টিতে ইথানেশিয়া

বিভিন্ন ধর্মের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা ইথানেশিয়ার পক্ষে এবং বিপক্ষে মতামত দিয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই মানুষের জীবনের ইচ্ছাকৃত সমাপ্তিকে সৃষ্টিকর্তার সাথে বাড়াবাড়ি মনে করেন। আবার অনেকে বিভিন্ন শর্তসাপেক্ষে এর পক্ষেও মতামত প্রকাশ করেছেন।

প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চের বিভিন্ন গির্জার প্রতিনিধিদের মধ্যে এটি সম্পর্কে মতামত ভিন্ন। এদের কেউ কেউ এটিকে একটি বাস্তব হত্যা বলে অভিহিত করেছেন। একই সময়ে সংস্কারপন্থী সম্প্রদায় এটিকে একটি প্রগতিশীল সিদ্ধান্ত বলে মনে করে এবং জঠিল রোগের যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য স্বেচ্ছামৃত্যুকে সমর্থনও করে।

অর্থোডক্স খ্রিস্টানদের দৃষ্টিকোণ থেকে, এটি আত্মহত্যা এবং পাপ। তাদের মতে "একজন মৃত ব্যক্তির জন্য, দুর্ভোগ সবচেয়ে ভাল," এতে মানুষের জীবন পরিশুদ্ধ হয়।

ক্যাথলিক চার্চের প্রতিনিধিদের একটি বিরাট অংশ ইউথেনেশিয়ার বিরোধিতা করলেও অনেকে একে যুক্তিসংগত কারণে মেনে নিয়েছেন। গ্রীক ক্যাথলিকগণ মৃতের কষ্টকে ক্রুশবিদ্ধ করার সময় যীশু খ্রিস্টের দ্বারা অনুভূত ব্যথার সাথে তুলনা করে ইউথানেশিয়ার ব্যবহার প্রত্যাখ্যান করেন।

ইসলাম ধর্ম অনুসারে মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি এবং একজন লোক কতদিন বাঁচবেন তা আল্লাহর ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। এখানে মানুষের হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার নেই। বেশিরভাগ মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মৃত্যুর আগমনকে ত্বরান্বিত করা মহাপাপ। তাই আত্মহত্যা ও ইউথানেশিয়া ইসলামে অবৈধ।
"Do not take life, which Allah made sacred, other than in the course of justice." -Qur'an 17:33
"Destroy not yourselves. Surely Allah is ever merciful to you." -Qur'an 4:29
ইসলাম ধর্মের বেশিরভাগ ধর্মীয় নেতারা স্বেচ্ছামৃত্যুর বিরোধিতা করলেও অনেকে আবার নীরব সমর্থনও দিয়েছেন।

বৌদ্ধ ধর্মের লোকেরা বিশেষ করে অনিচ্ছাকৃত (involuntary euthanasia) মৃত্যুর সম্পুর্ণ বিরোধী। বৌদ্ধ ধর্ম মতে মানুষ পূর্ববর্তী জন্মের পাপপূণ্যের প্রতিফল পরবর্তী জন্মে ভোগ করে। এভাবেই পাপ থেকে মুক্তি পেয়ে 'নির্বাণ' লাভ করে। তাই এদের কাছে রোগ-যন্ত্রণা 'নির্বাণ' লাভের পূর্ববর্তী ধাপ। সুতরাং স্বেচ্ছামৃত্যু নিয়ে আপাতত পরিত্রান পেলেও পাপের প্রায়চিত্ত করতে আবারো পৃথিবীতে আসতে হবে।

হিন্দু ধর্ম অনুসারে এভাবে দেহ থেকে আত্মাকে আলাদা করার জন্য রোগী এবং ডাক্তার উভয়ের পাপ হবে। এ ধরনের পাপের কারণে পরবর্তীতে এদের নিকৃষ্ট জীবজন্তু হিসাবে পুনর্জন্ম হবে।

শিখ ধর্মে এ ব্যাপারে পরিষ্কার কিছু না থাকলেও তারা মনে করে যে মানুষের জীবন ঈশ্বরের সৃষ্টি। তাই যেভাবেই হোক কারো প্রাণনাশ করা সমর্থনযোগ্য নহে।

ইউথেনেশিয়া দেশে দেশে

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ইউথেনেশিয়ার সার্বিক অবস্থা মানচিত্রের মাধ্যমে দেখানো হলো।

সূত্র: উইকিপিডিয়া

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইউথেনেশিয়াকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। ধীরে ধীরে এর সংখ্যা বাড়ছে। শুরুতে যেসব দেশ ইউথেনেশিয়াকে বৈধতা দিয়ে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল সেরকম কয়েকটি দেশ সম্পর্কে কিছু তথ্য এখানে তুলে ধরলাম:

১) নেদারল্যান্ড
২০০২ সালের এপ্রিলে নেদারল্যান্ড পৃথিবীর প্রথম দেশ হিসেবে ইউথেনেশিয়াকে বৈধ ঘোষণা করে। তবে এক্ষেত্রে কিছু শর্ত অবশ্যই পূরণ করতে হবে, যেমন: রোগী যদি অসহনীয় ব্যথায় ভুগতে থাকে, অসুখটির চিকিৎসা সম্ভবপর না হলে এবং রোগী যদি সজ্ঞান অবস্থায় এই ইউথেনেশিয়া দাবি করে, শুধুমাত্র তখনই এটি কার্যকর করা যাবে। ২০১০ সালে ৩,১৩৬ জন নেদারল্যান্ড অধিবাসীকে চিকিৎসকদের রক্ষণাবেক্ষণে প্রাণনাশক ঔষধ পান করানোর মাধ্যমে আত্মহত্যায় সহায়তা করা হয়। এ সংখ্যা দিনদিন আরো বাড়ছে।

২) বেলজিয়াম
বেলজিয়ামেও ২০০২ সালে ইউথেনেশিয়াকে বৈধ করার জন্য একটি আইন পাশ করা হয়। নেদারল্যান্ডসের পর বেলজিয়াম দ্বিতীয় দেশ হিসেবে এই কার্যক্রমকে আইনগত সম্মতি প্রদান করে। তবে এই আইনে উক্ত ইউথেনেশিয়া ভলান্টারি, নন-ভলান্টারি নাকি ইনভলান্টারি, তা সম্পর্কে বিশেষভাবে কিছু বলা নেই, যার কারণে কীভাবে কার্যকর করা হবে, তা স্পষ্ট নয়। ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য রাইট টু ডাই উইথ ডিগনিটি’-এর প্রেসিডেন্ট জ্যাকুলিন হেরেমেনস বলেন, “আমরা ইউথেনেশিয়ার ক্ষেত্রে শাব্দিক কোনো পার্থক্য করি না।” অর্থাৎ কোন ধরনের ইউথেনেশিয়া কার্যকর করা হচ্ছে, তা নিয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে তা বাস্তবায়নের সময় অবশ্যই একজন চিকিৎসককে উপস্থিত থাকতে হবে। বেলজিয়ামে ২০০৩ সালে ২৩৫টি, ২০০৮ এ ৭০৮টি ২০১২ তে ১৪৩২টি এবং ২০১৩ সালে ১৮০৭টি ইউথেনেশিয়ার ঘটনা ঘটে। ২০১৪ সালে বিশ্বে প্রথমবার বেলজিয়াম শিশুদের জন্য ইউথেনেশিয়া বৈধ ঘোষণা করে। প্রাণনাশী ঔষধ কিংবা ইনজেকশনের মাধ্যমে যেকোনো বয়সের মানুষ স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করতে পারেন।

৩) আমেরিকা
আমেরিকার শুধুমাত্র ছয়টি প্রদেশে এটা আইনসম্মত; বাকি প্রদেশে অবৈধ। তবে কলম্বিয়া প্রদেশে শুধু ওয়াশিংটন ডিসি, অর্থাৎ আমেরিকার রাজধানীতে এটি বৈধ। অরিগন প্রদেশে সর্বপ্রথম ভলান্টারি বা স্বেচ্ছাকৃত ইউথেনেশিয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু শুধুমাত্র সেইসব রোগীরাই এজন্য দরখাস্ত করতে পারবে, যারা মারাত্মক অসুস্থ এবং ছয় মাসের চেয়েও কম সময় বেঁচে থাকার সম্ভাবনা আছে। এর প্রায় এক যুগ পরে ওয়াশিংটন অরিগনের মতোই একটি আইন পাশ করে এ বিষয়ে। ২০১৩ সালে ভারমন্টেও এটা বৈধ করা হয়। পরবর্তীতে মন্টানার কোর্ট ইউথেনেশিয়াকে বৈধতা প্রদান করে। এছাড়া ক্যালিফোর্নিয়া, কলোরাডো, হাওয়াইতেও এটা স্বীকৃতি পায়। আমেরিকায় ২০১৩ সালে প্রায় ৩০০ জন ইউথেনেশিয়ার জন্য সম্মতি পায়। এর মধ্যে ২৩০ জন প্রাণনাশক ঔষধ গ্রহণে মারা যায়। আর বাকিরা অনুমোদনের পরে আত্মহত্যার এই সিদ্ধান্ত বাদ দেন।

৪) কানাডা
কানাডায় ২০১৬ সালে ‘বিল সি-১৪’ এর মাধ্যমে ইউথেনেশিয়াকে অনুমোদন দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে আবেদনকারীকে অবশ্যই প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে, অর্থাৎ ১৮ বছর বা এর উর্ধ্ববয়সী হতে হবে এবং ‘কানাডিয়ান হেলথকেয়ার কাভারেজ’ -এর অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। কোনো নাবালক যদি মারাত্মক কোনো রোগে আক্রান্তও হয় কিংবা বাঁচার সম্ভাবনাও খুব বেশি একটা না থাকে, তবুও তাকে ইউথেনেশিয়ার স্বীকৃতি দেওয়ার নিয়ম নেই। রোগী মানসিকভাবে অসুস্থ হলে কিংবা মানসিক চাপে থাকলে সে এই স্বেচ্ছা মৃত্যুর স্বীকৃতি পাবে না। এক পরিসংখ্যান অনুসারে, যারা মৃত্যুর এই পন্থা বেছে নেয়, তারা মূলত বৃদ্ধ, উচ্চশিক্ষিত, স্বাধীন এবং অত্যন্ত অসুস্থ। ২০১৬ সালের ‘আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ জার্নালের এক জরিপ অনুসারে, কানাডায় ইউথেনেশিয়ার আবেদনকারীদের মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগই ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তি।

৫) সুইজারল্যান্ড
ইথানেশিয়া সংক্রান্ত সুইজারল্যান্ডের আইন বিশ্বের সবচেয়ে নমনীয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রাণঘাতী ওষুধ প্রদানের জন্য চিকিত্সকেরও প্রয়োজন হয়না এবং মৃত্যুপ্রার্থীর বয়সেরও বয়সের কোনো সীমা নেই। সক্রিয় ইউথানেসিয়া নিষিদ্ধ হলেও, চিকিৎসকরা আইনত রোগীর স্ব-ইচ্ছায় মৃত্যুর জন্য প্রাণঘাতী ওষুধ সরবরাহ করতে পারেন। এই অনুমতি আন্তর্জাতিক রোগীদের জন্যও প্রযোজ্য। যার ফলে সুইজারল্যান্ড "স্বেচ্ছামৃত্যুর পর্যটন" হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে।

৬) কলম্বিয়া
দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন কলম্বিয়ার বাসিন্দা ভিক্টর এসকোবার। কৃত্রিমভাবে শ্বাস নিতে হত, হুইলচেয়ার ছাড়া হাঁটতে-চলতে পারতেন না। এমন পরিস্থিতিতে স্বেচ্ছামৃত্যু চেয়েছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত আদালতের অনুমতিতে আত্মীয়দের উপস্থিতিতে স্বেচ্ছামৃত্যু বরণ করেছেন তিনি। ১৯৯৭ সালে কলম্বিয়া সরকার স্বেচ্ছামৃত্যুর অধিকারকে বাতিল করেছিল। যদিও ২০২১ সালে ওই দেশের উচ্চ আদালত ‘মর্যাদাপূর্ণ মৃত্যুর অধিকারে’ অনুমোদন দেয়। কলম্বিয়াই প্রথম দেশ, যারা একজন রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীকে স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি দিল।

প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত


গত ৯ মার্চ, ২০১৮ ভারতের সুপ্রিম কোর্ট মুমূর্ষু কিংবা মৃতপ্রায় ব্যক্তির পরোক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যুর অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে, এটা “একটিভ ইউথেনেসিয়া” বা “ এসিসটেড সুইসাইড” নয়। এটা “প্যাসিভ ইউথেনেসিয়া” বা পরোক্ষভাবে মৃত্যু ঘটানো। সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর নেতৃত্বে ৫ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ বলেছেন সম্মানজনক মৃত্যু অনুমোদনযোগ্য। যদি কোনো ব্যক্তি স্বেচ্ছায় মৃতুবরণ করতে চান তাহলে তাকে মৃত্যুর অনুমতি দিতে হবে বলে রায় দিয়েছেন ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। তবে এক্ষেত্রে আবেদনকারীকে গাইডলাইন মেনে মৃত্যুর অনুমতি চাইতে হবে। ‘সম্মানজনক মৃত্যু জীবনের অধিকার’ বলে সর্বোচ্চ আদালতে মন্তব্য করা হয়। তারপরেই ওই রায় ঘোষণা করা হয়। এ বিষয়ে উপযুক্ত আইন প্রণয়নেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে সরকারকে। পাশাপাশি স্বেচ্ছামৃত্যু নিয়ে আইন প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত এই গাইডলাইনই বহাল থাকবে বলেও জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে অনেকগুলো দেশ ইউথেনেশিয়াকে বৈধতা দিলেও মৃত্যুর ধরণ ও আইনগত দিক দিয়ে দেশ থেকে দেশে কিছু তারতম্য রয়েছে। কিছু দেশ শুধু পরোক্ষ সহজ মৃত্যুকে (Passive euthanasia) বৈধ, আবার কিছু দেশে প্রত্যক্ষ সহজ মৃত্যুকেও(Active euthanasia) বৈধতা দিয়েছে।

বাংলাদেশে ইউথেনেশিয়া

বাংলাদেশে ইউথেনেশিয়া এখনও অবৈধ। অন্যান্য দরিদ্র দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও প্রায় ৫ থেকে ৬ লাখ মানুষ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত, যার প্রতিরোধ বা প্রতিকার সম্ভব নয়। এসব রোগীদের স্থায়ীভাবে সার্বক্ষণিক দেখাশুনা করার জন্য সরকারি কোনো উদ্যোগ নেই। পরিবারের অর্থনৈতিক সামর্থ্য ও আন্তরিক প্রচেষ্টার ওপর ভিত্তি করে মৃত্যুর অপেক্ষায় থাকা এসব রোগীদের দৈনন্দিন জীবনের মান নির্ভর করে।


২০১৭ সালে বাংলাদেশের হাইকোর্টে এক ফল বিক্রেতা পিতা তার দুই ছেলে ও এক নাতির জন্য ইউথেনেশিয়ার আবেদন করে। তখন বাংলাদেশে এ বিষয়ে নতুন করে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়। উল্লেখ্য, মেহেরপুরের এই ফল বিক্রেতা তোফাজ্জল হোসেন অনেক বছর পরিবারের এই তিন সদস্যের ভরণপোষণের সর্বাত্মক চেষ্টা করেন। তার ২৪ এবং ১৩ বছর বয়সী দুই ছেলে ও ৮ বছর বয়সী নাতি ডাচেন মাস্কুলার ডিস্ট্রফিতে আক্রান্ত। যার কারণে দেহের মাংসপেশী বয়সের সাথে না বেড়ে উল্টো কমতে থাকে। এটা মূলত জিনগত সমস্যা এবং এই রোগে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচতে পারে। তোফাজ্জল হোসেন তাদের চিকিৎসা করানোর জন্য নিজের শেষ সম্বল দোকান বিক্রি করে বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে কোনো কিছুই ফলপ্রসূ হয় নাই। অবশেষে আর কোনো পথ খুঁজে না পেয়ে তিনি ইউথেনেশিয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন।
তিনি বলেন, “সরকারকে ভাবতে দেন তারা আমার নাতি ও সন্তানদের সাথে কী করবে। তারা অনেক কষ্টে ভুগছে এবং এ থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় নাই। আমার পক্ষেও তাদের এই ভোগান্তি দেখার আর ধৈর্য নেই”।

অবশ্য শেষ পর্যন্ত তাদেরকে ইউথেনেশিয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। সোস্যাল মিডিয়ায় এই ঘটনাটি বেশ সাড়া পেয়েছিল যার দরুন সরকার ও বিভিন্ন সংস্থা তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে। ঘটনাটির প্রেক্ষিতে ইসলাম বিষয়ক গবেষক ফরিদুদ্দীন মাসুদ বলেন,“ইউথেনেশিয়া ইসলাম ধর্মে নিষিদ্ধ। প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব সরকারের অবশ্যই নিতে হবে।” আইন ও শালিস কেন্দ্রের প্রধান নূর খান লিটন বলেন, “বাংলাদেশে অধিকাংশ জনগণ একে হত্যা মনে করে। এ বিষয়ে সরকার ও সমাজকেই রোগীদের দায়িত্ব নিতে হবে।”

স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছিলেন যেসব বিখ্যাত ব্যক্তি


‘এটা এত সময় নিচ্ছে কেন’—এই শেষ বাক্যের মাধ্যমে চিরবিদায় নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ১০৪ বছর বয়সী উদ্ভিদবিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদ ডেভিড গুডল। ২০১৮ সালে তাঁর মৃত্যু আলোচনা সৃষ্টি করেছে বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমে। কেননা তিনি বৈধভাবে স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করেছেন। স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করতে অস্ট্রেলিয়া থেকে তাঁকে যেতে হয়েছে সুইজারল্যান্ডে। সেখানেই একটি ‘সহজ-মৃত্যু’ ক্লিনিকে প্রাণনাশক ইনজেকশন গ্রহণের মাধ্যমে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।


ফ্রান্সের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা জ্যঁ-লুক গদার সেপ্টেম্বর মাসে একইভাবে সুইজারল্যান্ডে গিয়ে স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছেন। দারের আইনি কাউন্সিল প্যাট্রিক জনারে বলেন, একাধিক দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত ছিলেন বিশ্বখ্যাত এই নির্মাতা। স্বেচ্ছায় মৃত্যুর জন্য তিনি সুইজারল্যান্ডে যান। ফ্রান্সে স্বেচ্ছামৃত্যুর আইনি বৈধতা না থাকায় গদারের মৃত্যুর খবর প্রকাশের পর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ জানিয়েছেন, স্বেচ্ছামৃত্যুর অধিকার নিয়ে জাতীয় বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। ১৯৩০ সালের ৩ ডিসেম্বর প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন জ্যঁ-লুক গদার। পঞ্চাশের দশকে তিনি চলচ্চিত্র জগতে আত্মপ্রকাশ করেন। তার হাত ধরেই বদলে যেতে থাকে ফরাসি চলচ্চিত্রের ধারা। এজন্য তাকে বলা হয় ফ্রেঞ্চ নতুন ধারার চলচ্চিত্রের রূপকার।

আগেই উল্লেখ্য করেছি যে, সুইজারল্যান্ডে স্বেচ্ছামৃত্যুর আইন খুবই নমনীয়। তাই আশেপাশের দেশ ও দূরদুরান্ত থেকে মানুষ স্বেচ্ছামৃত্যুর উদ্দেশ্যে দলে দলে সুইজারল্যান্ডে আসছে। এখানে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় অনেক ইউথেনেশিয়া ক্লিনিক। এসব ক্লিনিকগুলো স্বেচ্ছামৃত্যুর রোগী ও তাদের আত্বীয়স্বজনের জন্য বিভিন্ন রকমের সেবা ও সুযোগের ব্যবস্থা করে দেশ-বিদেশের মানুষকে ইউথেনেশিয়ায় আগ্রহী করে তোলছে। সোজা কথায় এখানে 'ইচ্ছামৃত্যু'র ব্যবসা এখন শিল্পের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।

শুধু জ্যঁ লুক গদার এবং ডেভিড গুডল নয়, আরও বিভিন্ন অঙ্গনের বিখ্যাত মানুষ স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছিলেন। মৃত্যু সাল ও পেশা সহ তেমন কয়জনের নাম দেওয়া হলো এখানে:
থমাস বের্নহার্ড (১৯৮৯): ঔপন্যাসিক, কবি
আর্থার ব্ল্যাক (২০১৮): ব্রডকাস্টার ও লেখক
এডওয়ার্ড ব্রঞ্জার্সমা (১৯৯৮): রাজনীতিবিদ
মাইকেল কসে (২০১০): থিয়োরিস্ট, অনুবাদক, লেখক
হুগো ক্লস (২০০৮): লেখক
ফু ডা-রেন (২০১৮): টেলিভিশন প্রেজেন্টার
ক্রিশ্চিয়ান দ্য দুভ (২০১৩): সাইটোলজিস্ট ও বায়োকেমিস্ট
এডওয়ার্ড ডনেস (২০০৯): কনডাক্টর
মার্ক ফ্লাইশচম্যান (২০২২): ব্যবসায়ী
হারবার্ট ফাক্স (২০০৭): অভিনেতা ও রাজনীতিবিদ
ডেভিড গুডঅল (২০১৮): বোটানিস্ট ও ইকোলজিস্ট
পাওলেট গুইঞ্চার্ড-কানস্টলার (২০২১): রাজনীতিবিদ
জন হিকলেনটন (২০১০): কমিকস আর্টিস্ট
পাইটার হিন্টজেনস (২০১৬): সফটওয়্যার ডেভেলপার
উইলেম জুয়েট (২০২২): রাজনীতিবিদ
ফ্রাইডহেম কনিয়েটজকা (২০১২): ফুটবল স্ট্রাইকার ও ম্যানেজার
মারগারেট লিয়নস (২০১৯): রেডিও কর্মকর্তা
উইলফ্রাইড মারটেনস (২০১৩): রাজনীতিবিদ
ব্রিটানি মেনার্ড (২০১৪): শিক্ষক
মর্ড রানসেন (২০২১): নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার
এলিজাবেথ রিভার্স-বাল্কেলি: (২০০৬) স্টকব্রোকার
আদি তালমোর (২০১১): সাংবাদিক ও সংবাদ পাঠক
মারিকে ভেরবুর্ট (২০১৯): প্যারালিম্পিক অ্যাথলেট
পামেলা ওয়েস্টন (২০০৯): শিক্ষক ও লেখক

ইউথেনেশিয়ার পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তিসমূহ

নৈতিকতা, আবেগ, আইন, ধর্ম ও বাস্তবতার দৃষ্টিভঙ্গিতে ইথানেশিয়ার পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি-তর্কে যেসব বিষয় উঠে আসে তা এখানে সংক্ষেপে দেওয়া হলো:

ইউথেনেশিয়ার পক্ষে

সূত্র: https://www.abc.net.au/

♦ জীবন নিয়ে একজন ব্যক্তির যৌক্তিক ইচ্ছাকে বাস্তবায়ন করার অধিকার প্রনয়ন করে।
♦ গণতন্ত্রের মূলনীতি হলো মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা। যন্ত্রনাবিহীন সহজ মৃতু্যর প্রত্যাশা যে কোনো নাগরিকের মৌলিক অধিকার। তাই রাষ্ট্রকে নাগরিকের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের জন্য আইনী সহায়তা ও সুযোহ-সুবিধা দিতে হবে। তবে কেবল তাদের জন্য যারা সত্যিই রোগ-ব্যাধির কারণে সৃষ্ট যন্তণাকাতর জীবন থেকে মুক্তি পেতে চান।
♦ নিশ্চিত মৃত্যপথযাত্রী দুর্দশাগ্রস্থ রোগীর পেছনে অযথা অর্থ, শ্রম ও সম্পদের অপচয় না করে রোগীর স্বেচ্ছামৃতু্যকে অনুমতি দিলে রোগী, রোগীর পরিবার এবং রাষ্ট্র সবাই উপকৃত হবে।
♦ কালের প্রবাহে বিজ্ঞানের উন্নতিতে মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তন হচ্ছে এবং সেইসাথে জীবন-মৃত্ু্য নিয়েও মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হচ্ছে। ধর্মীয় বাণী ও প্রাচীন চিন্তাভাবনা বর্তমান আধুনিক যুগে প্রায় অচল। ইউথেনেশিয়া বা ইচ্ছামৃতু্য এখন সময়ের দাবি।

ইউথেনেশিয়ার বিপক্ষে

সূত্র: https://cruxnow.com/vatican/

♦ প্রায় সব ধর্মীয় রীতিতে বলা হয়েছে যে মানুষের জীবন দিয়েছেন ঈশ্বর এবং মৃতু্যও তার ইচ্ছাতেই হওয়া উচিত।
♦ যুগে যুগে বিজ্ঞান জঠিল রোগের নতুন ওষুধ এবং চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে মানবসভ্যতাকে ঠিকিয়ে রেখেছে। স্বেচ্ছামৃতু্য কোনো সামাধান নয়, রোগ থেকে যন্ত্রনামুক্ত করার জন্য বিজ্ঞানকে এগিয়ে আসতে হবে।
♦ শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পরিবারের লোকেরা এদেরকে 'বোঝা' মনে করে 'স্বেচ্ছামৃতু্য'-র জন্য উৎসাহিত করবে। এমনকি সামাজিক চাপে অনিচ্ছা স্বত্বেও অনেককে ইচ্ছামৃতু্যকে মেনে নিতে হবে।
♦ উদ্দেশ্যমূলক খুনকে বৈধতা দেওয়ার জন্য 'ইচ্ছামৃত্যু'র অপব্যবহার হতে পারে। সেইসাথে অসৎ ও দুর্নীতিবাজ চিকিৎসকেরা যন্ত্রণাকাতর রোগীদের চিকিৎসার পরিবর্তে 'ইচ্ছামৃতু্য'র উপদেশ দেবে।
♦ একজন মুমুর্ষ রোগী মারা যেতে চায় কিনা তা জানা বা বোঝা অত্যন্ত কঠিন। তাই এ ধরনের রোগীকে অনেকে স্বেচ্ছামৃতু্যর নাম দিয়ে মৃতু্্যর দিকে টেলে দেবে।
♦ বেঁচে থাকার ইচ্ছা স্বত্বেও অনেকে অবহেলা, বিনা চিকিৎসা, দীর্ঘস্থায়ী হতাশা, সামাজিক চাপ বা হুমকির কারণে স্বেচ্ছামৃতু্যকে বেচে নিতে বাধ্য হবে।
♦ বছরের পর বছর শয্যাশায়ী জঠিল রোগের রোগী পরবর্তীতে আবিষ্কৃত মেডিসিন বা চিকিৎসাপদ্ধতির বদৌলতে সুস্থ হয়ে আবার স্বাভাবিক জীবনযাপন করেছেন - এরকম দৃষ্টান্তও অনেক আছে। ইচ্ছামৃতু্যর কারণে অনেকে এ ধরনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন।
♦ যখন ইউথেনেশিয়া জীবননাশের একটি সাধারণ পথ হয়ে দাঁড়ায়, তখন এই পথ সহজেই বেছে নেওয়ার মানুষও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
♦ বয়সগত রোগের কারণে অনেকে স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করতে চায়, তবে তাদের মধ্যে কেউ মারাত্মক কোনো রোগে আক্রান্ত নয়। তারা বৃদ্ধ, তাদের বন্ধুরা মারা গেছে, সন্তানেরা সময় দেয় না, একাকিত্ব ভালো লাগে না- এসকল কারণে স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করতে চাইবে।


শেষ কথা

বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। ফলে মানুষের আয়ু বেড়েছে। মৃত্যুকে এখন চাইলে অনেকক্ষেত্রে দেরী করানো সম্ভবপর হচ্ছে। যেমন আইসিইউ সাপোর্ট। এ সাপোর্ট যখন ছিলো না তখন এসব রোগীর বাঁচা-মরা একদম নিয়তির হাতে সমপির্ত হতো। দেখা যেতো শেষাবধি রোগীর মৃত্যুই ঘটতো। এখন তো আইসিইউ সাপোর্ট দেয়া অনেক রোগী মৃত্যুর ঘর থেকে ফিরে আসছেন।

কিন্তু যখন ডাক্তার বলছেন যে আইসিইউ সাপোর্টে থাকা রোগীটির আর বাঁচার বা ভালো হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। তবুও শুধুমাত্র আবেগের উপর ভর করে এমন রোগী অথবা অশীতিপর বৃদ্ধ একজন মানুষকে দিনের পর দিন লাইফ সাপোর্ট দিয়ে শুধুমাত্র হৃৎপিন্ডের স্পন্দনটুকু জিইয়ে রাখার কোনো মানে হয়! এভাবে আইসিইউর অপ্রয়োজনীয় খরচের কারণে কত পরিবার কিভাবে সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছে সেটা কি একবারও আমরা ভেবে দেখছি? অনেক সময় দেখা যায়, জমিজমা, সহায় সম্পত্তি সবকিছু বিক্রি করে আইসিইউর মাধ্যমে প্রিয় মানুষটির নীথর দেহটাকে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস বাঁচিয়ে রাখার জন্য খরচ জোগাতে গিয়ে পরিবারটি পথের ফকির হয়ে যাচ্ছে।

তবে, যাদের অর্থের অভাব নেই তারা চাইলে তাদের আবেগের কারণে রোগীটিকে সকল সাপোর্ট দিয়ে রাখতে চায় রাখুক। কিন্তু যে পরিবারের আর্থিক সামর্থ্য নেই আবার রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা একদমই নেই- সেক্ষেত্রে পরিবারটি চাইলে সহজ মৃত্যুর জন্য তো রোগীর দেহ থেকে সহায়ক যন্ত্রপাতি খুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতেই পারে। সে অধিকারটুকু পাবার জন্য ধর্ম, আবেগ, আইন এতোকিছুর প্রতিবন্ধকতা থাকা মোটেই উচিত নয়।

এছাড়া রয়েছে দূরারোগ্য রোগের যন্ত্রণা নিয়ে তিলে তিলে বেঁচে থাকা রোগীর কথা। প্রচন্ড রকমের শারীরিক ভোগান্তি নিয়ে (যেমন ক্যান্সার) একজন মানুষ মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। খাবার খেতে পারে না, শারীরিক যন্ত্রণা, একা চলাফেরা করতে পারে না, অসহ্য ব্যথা, ব্যথা কমানোর কোনো ওষুধ আর কাজ করছে না, আজ হোক বা কাল হোক মৃত্যু নিশ্চিত সে ক্ষেত্রে এমন যন্ত্রদায়ক মৃত্যু থেকে মুক্তি পেতে একজন মানুষ যদি স্বেচ্ছায় তার মৃত্যু চায় সেটা তো কোনো অপরাধ হতে পারে না। এ ধরনের রোগী কষ্ট পেয়ে মারা গেলে অনেকে মন্তব্য করেন যে, লোকটি অনেক অনেক যন্ত্রণা ভোগ করছিলেন। বরং মরে গিয়েই উনি বেঁচে গেছেন। এখন আমরা বলছি যাক লোকটা মরে গিয়ে বেঁচে গেলেন; অথচ আগেই ইচ্ছামৃত্যুর মাধ্যমে আমরা লোকটির মৃত্যুকে আরো সহজ করতে পারতাম।

সংখ্যায় খুব কম হলেও একইসাথে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধির কিছু শিশু জন্মগ্রহণ করে। জন্মের পরেই ডাক্তারী পরীক্ষানীরিক্ষার মাধ্যমে শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার পরও এ ধরনের শিশুদের মেডিসিন ও চিকিৎসা দিয়ে জোর করে বেঁচে রাখার কোনো যুক্তি আছে কী! যে শিশুটি শারীরিক, মানসিক, বুদ্ধিমত্তা - সবদিক দিয়েই প্রতিবন্ধী, যাকে বাঁচিয়ে রাখতে সার্বক্ষণিক একজন লোককে পাশেপাশে থাকতে হবে তাকে 'সহজ মৃত্যু' দিয়ে বেঁচে থাকার কষ্ট থেকে শুরুতেই মুক্তি দেওয়া প্রতিবন্ধী শিশু, তার পরিবার ও সমাজের জন্য ভালো নয় কি! ইউথেনেসিয়া বৈধ হওয়া দেশগুলোতে স্বেচ্ছামৃত্যুর জনপ্রিয়তা দিনদিন বাড়ছে।

সূত্র: http://www.researchgate.net/
তাই “স্বেচ্ছামৃত্যু” বা ”সহজ মৃত্যু” “একটিভ বা প্যাসিভ ইউথেনেসিয়া” যাই বলি না কেন সেটা নিয়ে আমাদের দেশেও সস্তা আবেগের পরিবর্তে কঠিন বাস্তবতাকে সামনে রেখে আলাপ আলোচনা হওয়া উচিত। ঢালাওভাবে ইউথেনেসিয়ার সব পদ্ধতিকে বৈধ না করলেও উপরোল্লোখিত পরিস্থিতির ক্ষেত্রে বৈধতার প্রয়োজন জরুরি। সমাজের নানা সেক্টরের মানুষ যেমন ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, সুশীল, বুদ্ধিজীবী, চিকিৎসক, আইনজ্ঞ প্রমুখ ব্যক্তি বা এমন সংগঠন সবার এটা নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত। সামাজিক যে কোনো পরিবর্তনে ধর্ম ও সনাতন চিন্তাভাবনার মানুষ থেকে কিছু বাধা আসে। তাদেরকে যোক্তিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ইউথেনেসিয়ার সুফল বুঝাতে হবে।

কিভাবে, কখন এমন মৃত্যুর জন্য আবেদন করা যাবে এবং রোগীর অবস্থা কেমন হলে মেডিকেল বোর্ড তাতে সাড়া দিতে পারবে-সে বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে একটা গাইডলাইন প্রণয়ন করা যেতে পারে। যাতে কেউ এর অপব্যবহার করতে না পারে। পৃথিবীর অনেক দেশ এমন কি আমাদের প্রতিবেশী ভারতও স্বেচ্ছামৃত্যুকে বৈধতা দিয়েছে। এটা নিয়ে মনে হয় এখন সত্যি সত্যি জোরালোভাবে আমাদেরও ভাবার সময় এসেছে।

মনে রাখা উচিত, নিরাময়হীন রোগের সার্বক্ষণিক যন্ত্রণা, পারিপার্শ্বিক মানুষের লাঞ্চনা ও অনুগ্রহে এবং হতাশার কাপন জড়ানো একটি জীবন্ত লাশ হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে স্বেচ্ছায় সহজ মৃত্যুর মধ্য দিয়ে নিজেকে ও অন্যদেরকে ভারমুক্ত করে পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়া অনেক সম্মানজনক।

ফিচার বিষয়: জানা-অজানা

ছবি ও তথ্যসূত্র:
1. Euthanasia and physician assisted suicide - BBC
2. ইউথেনেশিয়া: আত্মহত্যা নাকি সহজ মৃত্যু? - Jinat Jahan Khan, Roarmedia
3. স্বেচ্ছামৃত্যুর অধিকার, বাস্তবতা এবং আবেগ - ডা. পলাশ বসু, Jago news
4. Euthanasia - Wikipedia
5. গদার ছাড়াও স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে নিয়েছেন যারা - Channel I
6. Euthanasia - Wikipedia
7. স্বেচ্ছামৃত্যু - আহমেদ লিপু
8. স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি দিল ভারতের আদালত- প্রথম আলো
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২২ ভোর ৫:৩৩
১২টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×