somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অবশেষে খোলাসা হলো মামুজান কেন বারবার সাব-রেজিস্ট্রার হতে চেয়েছিলেন!!!!!

২৮ শে জুলাই, ২০০৮ সকাল ৯:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তার গত তিনটি কর্মদিবস একটানা কেটেছে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে। গরীবের ঘোড়া রোগ অথবা একটি মাথা গোঁজার ঠাই করার বাসনায় একটি বহুজাতিক মহাজন, আধুনিক অর্থনীতির ভাষায় বহুজাতিক ব্যাংক, এর কাছে ১১ বছরের জন্য ঋণগ্রস্ত থাকা এবং গৃহীত ঋণের ডাবল টাকা ফেরত দেয়ার মুছলেকা দিয়ে বাড়ি কেনার পরিবর্তে একটি 'তলা'র অর্ধেক কিনেছেন। লগ্নি পুঁজির কাছে অনেকটা দাসখত দিয়ে মাটি থেকে একশো গজ ওপরে আপাতত স্থায়ী নিবাসের ব্যবস্থা করেছেন। তাও আবার এ ঢাকা শহরে। অবশ্য একে 'তলা' বললে তিনি নারাজ হতে পারেন। তার কাছে এটি হচ্ছে স্বপ্নের ফ্লাট। আর এ ফ্লাটটির রেজিস্ট্রেশনের কাজ সারতে গিয়েই গত তিনটি কর্মদিবস অত্যন্ত ব্যাস্ত সময় কাটিয়েছেন। মিরপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে। এ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে না এলে তাঁর ভুলে যাওয়া শৈশববের একটি পুনপৌনিক প্রশ্ন এতদিন পর আবার স্মৃতির দুয়ারে হয়তো কিছুতেই নাড়া দিত না। নতুন উদ্যমে উকিঝুকি মারতো না।
এ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের বড় ম্যাডাম মানে সাব-রেজিস্ট্রার আপা থেকে পিওন পর্যন্ত সবার কাজ-কর্ম দেখে হলফ করে বলা যায়-তারা বাংলাদেশের ভীষণ ব্যস্ত মানুষ। তাদের ব্যস্ততা নিরবিচ্ছিন্ন। এ নিরবিচ্ছিন্নতার ফাঁকে ফাঁকে ঘটে যাওয়া ঘটনা-দুর্ঘটনাগুলো আস্তে আস্তে তাকে নস্টালজিক করে তোলে। তিনি হারিয়ে যান তার শৈশবে। তখনও স্কুলের গণ্ডি পাড়ি দেওয়া হয়নি। থাকেন মফস্বল শহরে। সামন্ত নানার 'বংশের বাতি' চার ছেলের মধ্যে সেজ মামুজান তার ভীষণ প্রিয়। মামুজানও তাকে খুব আদর করেন। মামুজান পড়েন সমাজতত্ত্বে। চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। অনার্স শেষ করেছেন। আধা সামন্ত পরিবার আর আধা উপনিবেশিক শিক্ষা কাঠামোর সামাজিকায়নে বেড়ে উঠা মামুজান সরকারি কর্মচারী হওয়াটাকে দরকারী মনে করে নিয়মিত ইত্তেফাক পড়া শুরু করেছেন। কোন নিউজ নয়, চাকরির বিজ্ঞাপনই মামুজানের পাঠযোগ্য কনটেন্ট। সে যে অনার্সের পর থেকে শুরু। তারপর একে একে দীর্ঘ চার-ছয় বছর। ইতোমধ্যে মামুজানের মাস্টার্স কমপ্লীট হয়েছে। অথচ চাকরির পরীক্ষা আর শেষ হয় না। একের পর এক চলছে। চলছে তো চলছে। মামুজানের এ ক্রমাগত চাকরির পরীক্ষার ইতিহাসে বার কয়েক সাব রেজিস্ট্রারের পরীক্ষা দিয়েছেন। এবং প্রতিবারই অসফল হয়েছেন। মামুজানের মতো মেধাবী শিক্ষার্থীর বারবার সাব-রেজিস্ট্রার পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়া এবং পুনপৌনিক অকৃতকার্য হওয়ার ঘটনা সে শৈশবে তার ছোট্র মনের কোনায় প্রশ্ন তৈরি করেছিল। বারবার মনে হয়েছিল এত চাকরি থাকতে মামু কেন সাব-রেজিস্টার হতে চান? শৈশবের সে দুরন্ত দিনগুলোতে সে প্রশ্নের কোন সুরাহা না হলেও আজ যেন সব দিবালোকের মতো তার কাছে স্পস্ট হয়ে উঠেছে। গত তিনদিনের প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণে তিনি বুঝতে পারলেন রেজিস্ট্রি অফিসের প্রতিটি কাগজের গতি আনতে দরকার স্পীড মানি আর তেল। স্পীড মানি যতবেশি হবে তেলটাও তত বেশি লব্রিকেটেড হবে। তাতে ফাইলের গতিও সচল হবে বেশি। এ দৃশ্য নিজ চোখে দেখে মামু জানের জন্য আজ তার খুব কষ্ট হচ্ছে। যদি মামুর সপ্নটা পুরণ হতো তাহলে মামুজানও সারা জীবন এ স্পীড মানি দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে পারতেন। মূল বেতনে কখনো হাত দিতে হতো না। এ সাব রেজিস্টার হওয়ার জন্যও নাকি আবার প্রচুর তেল খরচ করতে হয়েছে তাদের। ইনভেস্টম্যান্ট আর কি! যেমন ইনভেস্টম্যান্ট তেমন প্রফিট। আর তাই জরুরি অবস্থা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান কিছুই ঠেকাতে পারছে না। অবলীলায় সব চলছে এখনও। হায়রে মামুজান সত্যি তুমি বড় দুর্ভাগ্যবান। দোয়া করি পরজনমে যেন বিধাতা তোমায় সাব-রেজিস্টার বানিয়ে দেয়.........
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০০৮ সকাল ১০:৫৭
৮টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×