আমার এলাকার এক বন্ধু আছে, বড়ই খাসরা টাইপ

। মানে হইল, এলাকায় কিছু একটা হইলে আয় ওরে মারি, ওইখানে যাই ,এই করি, সেই করি। ঘটনা হল, সে যেখানেই যায়,মাইর খেয়ে ফেরত আসে

। তো, কী এক সুমতি অথবা দুর্মতিতে তার বাবা তাকে একটা বাইক কিনে দিল। পুরা সেইরম। দারুন জিনিস। গত ৩ বছর সে মাইর খেয়ে হাতে পায়ে যত না দাগ ফেলসে, শরীরে তার চেয়ে বেশি দাগ গত ৩ মাসে, বাইক থেকে পড়ে পড়ে।
যাই হোক, আমার ইন্টার পরীক্ষার ২ মাস বাকি তখন। আর ও বাইক কিনেছে নতুন। আমি উঠতে চাইনা, তবু আমাকে জোর করে উঠালো। মিরপুর ১০ থেকে আগারগাঁও যাচ্ছি, বড়ো খোলা রোড, দারুণ বাতাস। চান্স পায়া দোস্ত চোখ কান বন্ধ রেখে চালাচ্ছে

। হঠাত দেখি, হুবহু একই বাইক, আমাদের সামনে। চালাচ্ছে মাঝবয়েসী এক ভদ্রলোক। আমি তাড়াতাড়ি ওকে দেখিয়ে বললাম, বন্ধু দেখ, তোমার বাইক, সেইম। দোস্ত দেখি পুরা চ্যাতা, বলে, “আমারটা মানে? ওই ব্যাটারটা ভুয়া আর পুরান, আমারটা নতুন আর আসল জিনিস। বল, আমারটা ভাল।” আমিও ভয়ে ভয়ে বললাম , হ্যা হ্যা তোরটাই ভাল

। অতক্ষণে বাইক চালানো পোলাপানের মনমানসিকতা সম্পর্কে কিছুটা আন্দাজ করে ফেলসি। কিন্তু, আমার বোঝার আরও বাকী ছিল

। একটু পরে দেখি, ওই ভদ্রলোক আর আমার দোস্ত বাইক দিয়ে রেইস শুরু করে দিছে। আমি “ইয়া আল্লাহ” বলে ভয়ে চুপ মেরে গেলাম

। মনে মনে ভাবতেছি,এই শালার ত মাথা খারাপ, ত ওই ব্যাটার সমস্যা কী ? একটু পরে দেখি দুজনেরই চরম গতি। বিজয় সরণীতে তখন আমরা। আমি ভয়ে অনেক অনুরোধ করে বন্ধুকে রাজী করালাম এই রেইস ছাড়ার জন্য।হাতে পায়ে ধরসি আর কী !! তো সে গতি কমিয়ে ফেলল। দেখি সামনে ওই লোকও গতি কমিয়ে ফেলসে। আমরা আরও গতি কমালাম, ওই লোক যেন চলে যায়, দেখি, সে যায় না। মানে, সে এখনও রেইসে আগ্রহী।আমরা ডানে যাই, সেও সামনে ডানে সরে যায়, আমাদের সামনে যেতে দিবে না, আবার নিজেও চলে যাবে না। আমারও তখন জেদ চেপে গেল

। এভাবে কিছুদূর সামনে এসে দেখি ট্রাফিক জ্যাম। আমরা রাস্তা বাদ দিয়ে, একটা হোটেলে বসলাম

দুপুর হয়ে গেছে, ক্ষিধাও লাগসে। দেখি, ওই লোকও একই হোটেলে ঢুকল, আর তা আমাদেরকে দেখেই। মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল

। আমাদের পাশের টেবিলেই বসছে সে। হোটেলে ভাত খাওয়ার অভিজ্ঞতা নাই তেমন, কিন্তু আমার বন্ধু ভাত ছাড়া আর কিছু এই ভর-দুপুরে খাবে না। যাই হোক, অর্ডার দিলাম ভাত আর মুরগীর মাংস। বিল ত দোস্ত দিবে

। ওই ব্যাটাও আমাদের অর্ডার শুনে হুবহু তাই দিতে বলল। আমরা অর্ডার ডাবল করলাম(আগেই বলছে, বিল দিবে দোস্ত

), সেও করল।
রাগে আমার মন তখন তেতো হয়ে গেছে

। ঠিক করলাম, উনার আগে খেয়ে উঠব

। কিন্তু সেও গোগ্রাসে খেতে লাগল। মানে, এইখানেও রেইস, সে আমাদের ছাড়বে না।

এর পর আমার বন্ধু ডালের অর্ডার দিল। এক বাটি আনালাম। ২ই চুমুকে শেষ। আরেকবাটি ২ই চুমুকে এটাও শেষ। অতক্ষণে দেখি ওই লোকও ডাল অর্ডার করেছে। আমি আরো তাড়াতাড়ি খাওয়া শুরু করলাম। আরো এক বাটি ডাল শেষ।
একটু পরে দেখি ওই লোক চিল্লাইতেছে ওয়েটারের সাথে। মনে হল, ব্যাপার কী? দেখি আরো কিছু লোক তার সাথে যোগ দিছে, আমি ত অবাক। পরে শুনি, ডালে নাকি কীসের যেন গন্ধ!!!

আর ওয়েটারও স্বীকার করসে। অতক্ষণে আমরা ৪ বাটি ডাল খেয়ে ফেলসি।

আমরা ঢেকুর তুলি, আর ঐ ব্যাটা ফাজিল, মুচকি মুচকি হাসে।।




এর ৩ ঘণ্টা পরে থেকে ডায়রিয়া।


৫ দিন ঘরে বন্দী।
কষ্টের কথা নাই-ই বা বললাম।
এরপরে থেকে আর কখনও ওই বেকুবের বাইকে উঠি নাই।


আগের পর্ব দেখতে
Click This Link
© আকাশ_পাগলা
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৮:০৪