ইদানীং এনিমেটেড মুভি নিয়ে বেশ কথাবার্তা শোনা যায়। তাও অনেকেই এনিমেশনকে পাত্তা দেন না। কারণ, তাদের মতে এনিমেশন হয় বেশি ফানি, অথবা বেশি ভায়োলেন্স অথবা বেশি ফ্যান্টাসিতে ভরা (টিপিকাল জাপানিজ এনিমেটেড মুভিগুলার সাইড এফেক্ট)।
এর চেয়ে হলিউড বলিউডের মিষ্টি প্রেম কাহিনী অথবা ধুন্দুমার একশান উইথ হট গার্লস অথবা টুকটাক ফ্যান্টাসি নাকি টাইম পাসের জন্য অনেক এনজয়েবল। কাছাকাছি সেরকম এনিমেটেড মুভি পেলে উনারা আবার মুখ বাঁকাচ্ছেন যে এনিমেশন যদি আসল মানুষের মতই পুরাটা হয়, তাহলে আর এনিমেশন দেখে লাভ কী; আসল মানুষেরটা দেখলেই ত হয় !
ত ভাবলাম, কয়েকটা এনিমেটেড মুভি সাজেস্ট করি সবাইকে। টাইম পাস করার জন্য চমৎকার একই সাথে দারুণ এনজয়েবল। একই সাথে এনিমেশন মুভির স্পেশালিটি টা ধরতে পারবেন যে এখানে প্রতিটা ফ্রেম প্রতিটা ক্যারাক্টারের উপর ডিরেক্টরের, ক্যামেরা(ভার্চুয়াল) ম্যানের কী পরিমাণ কন্ট্রোল থাকে। আর কত সুন্দর করে প্রতিটা দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা যায় ! এনিমেটেড মুভিতে কোন চরিত্রে কেউ অভিনয় করে না, বরং ওই চরিত্রগুলা নিজেরাই নিজেদের অস্তিত্ব। এমনকি রাস্তায় কী কী গাড়ি থাকবে, আকাশে কোন কোন পাখি থাকবে সেখানে পর্যন্ত ডিরেক্টরের মুন্সিয়ানা ফুটে ওঠে।
[টিপিকাল জাপানীজ এনিমেটেড মুভিগুলো সযত্নে বাদ দিয়ে………………]
The Prodigies
ফ্রেন্চ এনিমেটেড মুভি। এক ফ্রেঞ্চ ঔপন্যাসিকের উপন্যাস থেকে বানানো। ৩ডাইমেনশনাল সেটাপে বানানো খুব চমৎকার একটা মুভি। এর অসাধারণ সিনেমেটোগ্রাফি দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন কেন সত্যিকারের মানুষ দিয়ে মুভি না বানিয়ে ডিরেক্টর এনিমেটেড এনভায়রোমেন্ট চয়েস করেছেন।
স্টোরিলাইন হলিউডের টিপিকাল ফ্যান্টাসি কাহিনীর মত। টাইম পাসের জন্য চমৎকার। বিলিয়নিয়ার মিঃ কিলিয়ান কিছু গিফটেড ছেলে খুঁজছেন। তাদের দিয়ে নতুন একটা ফাউন্ডেশন গড়বেন, এবিলিটি কন্ট্রোলের ইউনিভার্সিটি।
[এখন এই থিমটা ত মোটামুটি কমন, আমি জানি। আমেরিকানরা এখান থেকে এক্স-ম্যান বানিয়েছে, যা হাস্যকর কস্টিউম আর সুপারহিরো দিয়ে ভরা। টিভি সিরিজে হিরো বানিয়েছে, যা আজগুবি পাওয়ার দিয়ে ভরা। আর জাপানীজরা বানিয়েছে Darker than Black যেখানে এজ অলওয়েইজ বাকি এনিমেগুলার মত শহর বাড়ি দেশ ধ্বংস হচ্ছে শেষ পর্বে আর স্পিরিচুয়াল পাওয়ার ত থাকবেই। আর হিরো মোটামুটি গড পর্যায়ের শক্তিশালী হয়ে যায় শেষে !
কিন্তু এখানে এই থিমটাকে বেশ একটা রিয়েলিস্টিক ভাব দেয়া হয়েছে। হার্ডকোর এনিমেশন ভক্তদের(যারা জাপানীজ ভায়োলেন্স দেখে অভ্যস্ত) হয়ত একটু পানসে লাগবে, কিন্তু মিডিওকার বা নতুনদের কাছে ভাল লাগবে।]
জিম্বো ফারার সেরকম একটা ছেলে। কিছু কাহিনীর পরে মিঃ কিলিয়ান তাকে খুঁজে পান আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনেন। তার প্রায় ২০ বছর পর থেকে মূল কাহিনী শুরু হয়। জিম্বো ফারার তাঁরই মত আরও ৫টা টিন এজ ছেলে মেয়েকে খুঁজে পান। তার একটা সোশাল গেমিং সাইট আছে যেখানে লুকিয়ে রাখা আছে কিছু গোপন প্রবলেম। ছেলেগুলা এসব খুঁজে পায় আর সমাধান করে। জিম্বোও মিঃ কিলিয়ানের সম্মতিতে তাদের স্বাভাবিক জীবন দেয়ার জন্য ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির চেষ্টা করতে থাকে।
কিন্তু, কাহিনী এত সিম্পল না।
১) মিঃ কিলিয়ান বেশ অসুস্থ। তার মেয়ে সবকিছু কন্ট্রোল করে। সে ত এখানে কোন আর্থিক লাভ পাচ্ছে না। সুতরাং এই প্রজেক্ট সে বন্ধ করে দেবে।
২) মিঃ কিলিয়ানের সাথে জিম্বোর একটু বেশি খাতির ছিলো। যে কারণে তার মেয়ে জিম্বোকে কিছুটা হিংসা করে। জিম্বোকে সে জব থেকেও বাদ দিতে চায়।
৩) জিম্বো বিবাহিত। আর তার স্ত্রীও প্রেগন্যান্ট। সারাদিন ঐ ৫ জনকে সময় দিলে হবে না, সংসারও করতে হবে।
৪) নতুন যে গিফটেড ৫ জনকে পাওয়া যায়, তাদের সাথে একটা এক্সিডেন্ট ঘটে। যা সব কিছু চেঞ্জ করে দেয়। কিলিয়ান ফাউন্ডেশন নিজেদের ব্র্যান্ডের কথা ভাবে আর সেটাকে ধামাচাপা দিতে আসে।
কিন্তু ওরা কী সেটা পারে? কী সেই এক্সিডেন্ট? তার পরিণতি কী? কিলিয়ান ফাউন্ডেশনের এই প্রচেষ্টা কী পরিণতি ডেকে আনে? শেষ মেষ জিম্বোর কী হয়? সে কী সিদ্ধান্ত দেয়? সেটা কী সঠিক নাকি ভুল? সব কিছু কী সে স্যাক্রিফাইস করতে পারবে? সেটা কী উচিত?
সব মিলিয়ে কাহিনীতে প্যাচ লাগতে বেশি সময় লাগে না। কিন্তু কখনই কাহিনী খুব বেশি প্যাচ লাগে না যে আপনার টাইম পাস মুডটা নষ্ট করবে।
টরেন্ট লিংকঃ Click This Link
(বলেন কী ! এই যুগে টরেন্ট ডাউনলোড করতে পারেন না ! ঠিক আছে, সেইটারও উপায় আছে। http://wings.rizvanhasan.com/archives/622)
From Up on Poppy Hill
এই যুগে হায়ায়ো মিয়াজাকিকে চেনেনা এমন মানুষ কম। আমি এখন উনার তেমন একটা ভক্ত নেই আর যদিও(সব মুভিতেই রুপকথা টাইপ প্লট আর স্পিরিট দিয়ে ভরা থাকে বলে), তারপরেও এই মুভিটা আমাকে মুগ্ধ করেছে।
এই মুভির ব্যাকগ্রাউন্ড এপিক। হায়ায়ো মিয়াজাকি স্ক্রিনপ্লে তে আর উনার ছেলে গরো মিয়াজাকির ডিরেকশনে এই এনিমেটেড মুভি এসেছে লাইক এজ অলওয়েইজ স্টুডিও ঘিবলি থেকে।
কিন্তু এখানে কোন জাপানীজ স্পিরিচুয়াল ক্যারাকটার নেই, একই সাথে প্লটটাও কোন জাপানীজ ফেইরিটেইলকে বেইজ করে নয়। ভিতরে গম্ভীর কোন ম্যাসেজও নেই। বরং চমৎকার একটা প্লট আর দারুণ মিষ্টি একটা প্রেম নিয়ে মুভিটা।
১৯৬৩ সালে জাপানীজরা রেডি হচ্ছে ২য় বিশ্বযুদ্ধের কথা ভুলে যেয়ে সামনের বছরেই অলিম্পিক গেইমসের আয়োজন নিয়ে। ওরা হোস্ট। এরকম পটভূমিতে কলেজ গুলায় সিনেমা-মেয়ে-খেলা এসব নিয়ে না; বরং দর্শন, বিজ্ঞান আর ফিউচার প্ল্যানিং নিয়ে আলোচনা চলছে ছাত্রদের মধ্যে।
টোকিও কিছু দূরে মফস্বল এলাকা ককুরিকো। পাহাড় আর সমুদ্র পাশাপাশি। সেখানে থাকে উমি। ওর নানার বাসায়। মা ডাক্তার, দূর দূরান্তে ডিউটি আর ইন্সটিটিউশনাল শিক্ষার জন্য বাসায় অনিয়মিত। বাবা নাবিক ছিলো, করিয়ান যুদ্ধে মারা যায়।
ওখানকারই এক কলেজের ছাত্র শান, উমিও সেখানেই পড়ে। জুনিয়ার মানে থার্ড ইয়ারে। ওখানকার ছেলেদের বর্তমান গসিপ চলছে যে, তাদের পুরোনো ক্লাব হাউসটা অতীতকে সম্মান দেখিয়ে টিকে থাকবে নাকি সেটা ভেঙ্গে নতুন ক্লাব হাউস গড়া হবে ! সেই সূত্রে উমির সাথে শানের বন্ধুত্ব। ওদিকে উমির ছোট বোনের সাথে শানের বন্ধুরও বেশ বন্ধুত্ব জমে ওঠে।
এখন তাহলে কাহিনীর টুইস্ট টা কী? সিনেমাটা দারুণ এনজয় করছিলাম। কিন্তু একই সাথে মাথায় ঘুরছিলো যে কাহিনীতে ত সমস্যাই দেখছি না। তাহলে টুইস্ট হবে কোন দিক থেকে !
শেষমেষ টুইস্ট আসলো। চমৎকার মুন্সীয়ানার সাথে উমি আর শান এর এটিচিউড, চিন্তাভাবনা আর এক্সপ্রেশান ফুটিয়ে তুলেছেন গরো মিয়াজাকি। মুভিটার কোন কথা না শুনেও যদি দেখতে থাকেন, ভাল লাগবে। কিন্তু প্রতিটা লাইন যদি খেয়াল করেন দেখবেন মুভিটা অন্য একটা লেভেলে উঠে গেছে। আমি যেই লিংক্টা দিচ্ছি সেখানে সাবটাইটেল আছে। প্রতিটা লাইন খেয়াল রাখতে যেয়ে আবার মুভিটা মিস করবেন না। তবে যতটুকু সম্ভব লাইনগুলা দেখবেন, ফিল করবেন। আমি নিশ্চিত যে, ভাল লাগবেই।
আর হ্যা, চরম সিরিয়াস করে ফেলে টাইম পাস মোমেন্টটাকে নষ্ট করার মত টুইস্ট নাই। নিশ্চিত থাকেন। সাধারণত, ক্লান্ত অথচ অবসর থাকলে আমি পরিচিত রোমান্টিক মুভি এভয়েড করি। সাধারণত এগুলা এত সিরিয়াস হয়ে যায় যে ক্লান্তি আরও বাড়িয়ে দেয়। অপরদিকে এই মুভিটা দারুণ রিফ্রেশিং। চমৎকার সংলাপ আর চমৎকার ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক।
টরেন্ট লিংকঃ Click This Link
Starship Troopers: Invasion
স্টারশিপ ট্রুপারস ছিল পুরানো যুগের টিভি সিরিজ। এর এনিমেশন সিরিজটাও যথেষ্টই পুরানো। এর মুভিগুলাও। সেই ধারাবাহিকতায় ৪র্থ মুভি হল Invasion। কিন্তু এইটা ঝকঝকে নতুন, ২০১২ এর সামারে পাবলিশড।
আমার ধারণা মূল থিমটা সবাই জানেন। দূর ভবিষ্যতে বাগস এর সাথে মানব জাতির যুদ্ধ। বাগস রা এলিয়েন আর ওদের টেকনলজি হলো বায়োলজিকাল। মানে, আপনি গুলি মারতেছেন একটা বন্দুক দিয়ে (মেকানিকাল ডিভাইস) আর বাগস গুলা কাটার মত মারতেছে নিজেদের বডি থেকেই। এইরকম যুদ্ধ যুদ্ধ ক্যাচাল। পুরা গ্যালাক্সিতে মানুষ ছড়িয়ে আছে, কিন্তু জমির দখল বাগ রাও ছেড়ে দিবে না। তারাও ওই গ্রহগুলাকে চায়। ব্যাস, এটুকু জানাই যথেষ্ট। বিশ্বাস করেন, আজকে যদি স্টারশিপ ট্রুপারস এর নাম আপনি প্রথমবার শুনে থাকেন, তাও ৪র্থ পার্ট দেখতে সেটা কোন সমস্যাই না। উপরের প্যারাটুকু জানাই যথেষ্ট।
এখন যেহেতু আপনি টাইম পাস মুডে আছে, মোটামুটি একশান কিন্তু খুব বেশি সিরিয়াস কিছু দেখতে চান না, আবার এমন কিছু চান যেটা এনজয়েবলও হতে হবে, মানে অর্থহীন কাহিনী আর জাপানীজ মারপিট না বা চাইনিজ স্পেশাল এফেক্ট না – সুতরাং আপনি এই মুভিটাকেই খুঁজছেন।
ম্যাট্রিক্স রিলিজের পরে হলিউড বলিউড থেকে হালের অনন্ত তথা জলিল সাহেব পর্যন্ত সেইম ফাইটিং স্টাইল কপি পেস্ট মেরে আসছেন। গুলি আসতেছে, পিছনে সরু রেখা আর হিরো/ভিলেইন সেটার থেকে সরে গেল ঠাণ্ডা মাথায়। এরপর হিরো/ভিলেইন যখন লাফ দিয়ে আরেকজনের উপর চড়াও হবে তখন স্ক্রিন থেকে গেলো; সবার ফেইস দেখালো আর এরপর ঠাস করে পড়লো।
ম্যাট্রিক্সের সময় এই স্টাইলটা অসাম লাগছিলো। কিন্তু যেই হারে এটার কপি পেস্ট হচ্ছে ১২টা বছর ধরে, বিশেষ করে ইন্ডিয়ান মুভি গুলাতে অক্ষয় কুমার, শাহরুখ খান থেকে শুরু করে সুনীল শেটি শুদ্ধা এই স্টাইল কপি করে চোখ পঁচায়া দিছে আমার। কিন্তু স্টারশিপ ট্রুপারসঃ ইনভেইশান অনেক দিন পরে আমাকে নতুন স্টাইলের স্বাদ দিলো। এইটা ম্যাট্রিক্সের মত এত অসাম না, বরং কিছুটা টার্মিনেটরের মতন। গুলি মারলে আগুনের ফুলকিটা একটু বেশি দেখা যায়। তারপরও এর নিজস্বতাও আছে।
টুকটাক ন্যুডিটি আছে। মারাত্বক মাত্রার না হলেও যতটুকু দরকার অতটুকু ভায়োলেন্স আছে, সিরিয়াস করার মত না কিন্তু এনজয় করার মত টুইস্ট আছে, হিরো আছে, হিরোইন আছে, চ্যালেঞ্জ আছে, ব্যাকগ্রাউন্ডে ধুমধাম মিউজিক আছে।
মানে, মুড়ি মাখা খেতে খেতে এর চেয়ে ভাল মুভি আর হয় না।
কাহিনীও হালকা বলি। ফোর্ট কেইসি তে আউটপোস্ট স্টেশান। বাগস এটাকে ধ্বংস হবার পরে এদের উদ্ধার করলে যায় স্টারশিপ এলিশিয়া। কিন্তু আচমকা এলিশিয়া কাউকে রিস্পন্স না করে এর ক্যাপ্টেনকে রেখে নিজে যাত্রা শুরু করে। অনেক চেষ্টা করেও এর ট্রেস পাওয়া যায় না, কারণ ভেতর থেকে সিগনাল অফ করা। পরে “জন এ ওয়ার্ডেন” নামের আরেকটা স্টারশিপ কোন মতে একে খুঁজে পায়। এখানে আবার ক্যাচাল। ফাইটিং ট্রুপারসরা স্টারশিপ এলিশিয়াতে নামবে না, কারণ তাদের লিডার মিলিটারি পলিটিক্সে এখন জেইলে। এখন সেই লিডারকে কী ছাড়া দিবে ? ওকে জেলে ঢুকিয়েছিলো ক্যানো? স্টারশিপ এলিশিয়ার অদ্ভূত আচরণের কারণ কী? এলিশিয়ার সুন্দরী ক্যাপ্টেন কী এলিশিয়াকে উদ্ধার করতে পারবে? ফাইটিং ট্রুপারস রা কী একটা স্টারশিপের দখল নিতে পারবে? অন্যান্য স্টারশিপ গুলো কী এই অদ্ভূত আচরণ করা এলিশিয়াকে থামাতে পারবে?
টরেন্ট লিংকঃ Click This Link
© আকাশ_পাগলা (https://www.facebook.com/blogger.Aakash )
এনিমেটেড মুভির রিভিউ নিয়ে আমার বাকি লেখাগুলোঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ৯:৫৮