১ম পর্ব
২য় পর্ব
৩)) সকালে জাহিদ ও রিমন (রিমনের বাসায়)।
শীতের ভোরে ফিনফিনে পাতলা ধুসর কুয়াসা নেমেছে বাড়ীর আ্গংীনায়। প্রাকৃতিক মসলিনের সে নেকাব সড়িয়ে উঁকি দিচ্ছে হলুদ গাঁদার দল, গুটি সুটি মেরে শিশিরে ভিজছে চন্দ্রমল্লিকা আর ডালিয়া। ঋজু গ্রীবায় মাথা দুলিয়ে কে যেন বলছে, জাহিদ, জেগে ওঠো, ভোরের সূর্য তোমকে ডাকছে। সারা গায়ে শিশিরের মুক্ত মেখে তুমি ডেকে দাও তোমার ভালবাসার মানুষকে। আমার ক্লান্তি, হতাশা, বেদনা, কষ্ট, সব নীল ব্যাথা ঢেকে দাও আজ তোমারই ভালবাসায়।
- কে তুমি, এ্যাই কে তমি, আর এই সকালে বাগানে কি করছ ?
- তুমি আমাকে চিনতে পারছ না?,আমি জানি তুমি আমাকে চিনতে পারবে না। মন ভার করে বাগানের মধ্যে থেকে রনক বলল।
- ধ্যাৎ, আমি তোমাকে সত্যিই চিনতে পারছি না, প্লিজ, বলো কে তুমি।
- আমি কেও না, ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি, আমাকে তোমার চিনতে হবে না। তুমি আরাম করে ঘুমোও। বাই।
জাহিদ, এ্যাই জাহিদ ওঠ, অনেক বেলা হয়েছে। রিমন হাত দিয়ে জাহিদকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে লাগল।
রিমনের হাতের ধাক্কায় জাহিদ ধরমর করে বিছানার উপর বসল। ঘুম জড়ানো কন্ঠেই বলল, কি হয়েছে, চিল্লাছিস কেন ? আরেকটু ঘুমোব।
- ঠিক আছে বাবা তুমি ঘুমোও, কোন সমস্যা নেই, কিন্তুু তুমি ঘুমের মধ্যে কার সাথে কথা বলতেছিলে ? ঘুমের মধ্যে কথা, আশ্চার্য ব্যাপার।
- কি কথা, কার সাথে কথা ?
- তুই কিছুক্ষন আগে কার সাথে যেন কথা বলতেছিলি, কাকে যেন চিনতে পারতেছিলি না।
- আচ্ছা রিমন, তোদের বাসার সাথে কি কোন বাগান আছে ?
- না তো ,এই ঢাকা শহরের বাসায় আবায় বাগান। বাসায় ঢোকার রাস্তাই এক হ্ত বেশী ছারে না। যেন আর একটু জায়গা হলে আর একটা রুম বেশী করে ভাড়া দেওয়া যাবে, এই টেনডেনছি বাড়িওয়ালাদের কাজ করে।
- থাক থাক, তোর লম্বা বক্তিতা দিতে হবে না। আমার মনে পড়ছে আমি স্বপ্ন দেখছিলাম। বাগানের মধ্যে থেকে একটা মেয়ে আমাকে ডাকতেছিলো।
জাহিদের কথা শুনে রিমন শব্দ করে হেসে ফেলল, জাহিদের কাধে একটা হাত রেখে মুখ কাত করে বলল, ও আচ্ছা, তাহলে একটা মেয়ে তোমাকে ডাকতেছিলো, এ-হে আমি তোমর ঘুম ভেঙ্গে দিয়ে ভুল করেছি, ঝড়ৎৎু দোস্ত, ঝড়ৎৎু.
জাহিদ বিছানা থেকে নামতে নামতে বলল, যাক বাদ দে এসব, মোবইলটা দে, দেখি কয়টা বাজে.
- ১১টা বাজে, আমিও নাস্তা করিনি, শুধু চা খেয়েছি, তারাতারি রেডি হয়ে নে,নাস্তা করতে হবে।
- আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম তোর আবার সকাল দশটার পরে চা খেলে মাথা ব্যাথা করে। জাহিদ দুই হাত জোর করে বলল ঝড়ৎৎু দোস্ত, একটু বস আমি রেডি হচ্ছি।
- জাহিদ রুম থেকে বের হওয়ার পর রিমন বলল, দেখ বাথরুমের পাশে টুথপেষ্ট আছে, আঙ্গুল দিয়ে কাজ সেরে নে।
- জাহিদ ঘুরে উঠে বলল, আমার কাছে ব্রাশ-পেষ্ট সবই আছে। আমার ব্যাগে সবসময় একটা ব্রাশ থাকে, তাছারা আমি যে সকল আত্বিয় বাড়িতে ম্যাক্সিমাম নাইট ষ্টে করি তাদের বাড়িতে একটা করে ব্রাশ আছে।
- আমি জানি, তুই বক্তৃতা বাদ দিয়ে বাথরুমে ঢোক।
হোটেলে কোন নাস্তা পাওয়া গেল না, দুই-তিনটে পরেটা ছিল তাও শক্ত হয়ে গেছে। যাক ঢাকা শহরের কিছু হোটেলের উন্ততি হয়েছে। বাসি খাবার বন্ধ, পরিমান মত রান্না। ভেরি গুড। রিমন দুই কাপ ও জাহিদ এক কাপ চা খেয়ে হোটেল থেকে বের হল।
জাহিদ রংপুর থেকে ঢাকা এসেছে রিমনের সমস্যা সমাধান করার জন্য। রাত সারে চারটা পর্যন্ত ওরা আলোচনা করেছে । জাহিদ আস্বাস দিয়েছে , এইবারই লাষ্ট, ইনশাল্লাহ আর সমস্যা হবে না ।এই সমস্যাটা মাঝে মাঝেই হয়, আবার খুব সহজেই সমাধান হয়ে যায়। রিমনের গার্ল ফ্রেন্ডই সমস্যা তৈরি করে। আবেগটা বেশী কাজ করে মেয়েটার মধ্যে।সুন্দরী বলতে প্রথম শ্রেনীর।আল্লাহ তায়ালা কোন কিছুই মেয়েটার দিতে কার্পন্য করেননি। এমন একটা ভাল মেয়ে রিমনের কপালের ক্যামনে জুটলো এ নিয়ে জাহিদের খুব ঈর্ষে হয়। তার পরে ওদের সম্পর্কটা ফ্যামেলী মেনে নিয়েছে। সব দিক দিয়ে ওরা খুব ভাল আছে।
রিমনের রাত্রির কথা মনে করে জাহিদ একা একা হাসছে । খুবই্ সামন্য একটা সমস্যা। কিন্তুু ও যেভাবে ফোন করে ঢাকাতে নিয়ে আসলো আমিতো ভেবেছিলাম খুবই্ গুরত্বপূর্ন্ । অফিসে ঠিকমত বলাও হয়নি ।সত্যই্ রিমন এই মেয়েটার ব্যাপারে খুবই সেনসেটিভ । ভাল খুবই ভাল। ও ষরশব রঃ ,প্রেমের ব্যাপারে এই রকম হওয়া ভাল । খরভব ঃরসব প্রেম।
এর মধ্যে রিমনের মোবাই্ল বেজে উঠল । রিমন কার সাথে কথা বলছে বোঝা যাচেছনা । জাহিদেরও রিমনের কথা শুনতে ইচেছ করছে না । যার সাথে ইচেছ কথা বলুক । জাহিদ আবার রিমনের চৎড়নষবস এর কথা ভাবছে । মেয়েটার বাসায় একটা ফোন করলেই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে, এটা খুবই সাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু রিমন রাত্রিতে বলেছিল ওর এরৎষ ঋৎরবহফ এর বাসার ঞঘঞ ফোন নষ্ট, আর মোবাইল তো ওর বড় ভাইয়ের কাছে । শুধু মেয়েটার এই বড় ভাই সম্পর্কটা মেনে নেয়নি কিনতু বাধা ও দেয় না বা তার ছোট বোনকে শাসনও করে না। জাহিদ জানে উনার কাছে ফোন করে তার বোনের সাথে কথাও বলা যাবে না। অন্য কোন উপায় বের করতে হবে। হঠাৎ মনে পড়ল জাহিদের বন্ধু আশিশের সাথে ঐ মেয়েদের ফ্যামেলীর সম্পর্ক খুব ভাল। আশিশের তো মোবাইল আছে। ওকে ফোন করে ঐ মেয়েদের বাড়িতে একটা নির্দিষ্ট টাইমে যেতে বলতে হবে। তার আগে মেয়েটার বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলে পড়হভরৎস হতে হবে উনি বাসায় না বাহিরে। ব্যাচ,সমস্যা শেষ।
রিমন এখনও মোবাইলে কথা বলতেছে। জাহিদ রিমনের দিকে ঘুরে তাকাতেই শুনতে পেল, রিমন বলছে ” হ্যাঁ, জাহিদ তো রাত্রিতেই এসেছে, ভালই আছে, ও-তো আমার পাশেই আছে”।
জাহিদের এখন আর রিমনের চৎড়নষবস এর কথা ভাবতে ইচ্ছে হচ্ছে না, পুরো মনোযোগ এখন রিমনের ফোনের দিকে । ” তাতো বুঝলাম ইচছা করলে অনেক কিছুই যোগার করা য়ায় । কিন্তু আমি যতটুকু জানি জাহিদ ঢাকা এসেছে এই কথা আমি আর জাহিদ ছাড়া তৃতীয় কোন ব্যক্তি জানে না । কারন আমাকে জাহিদ রাত্রিতে বলেছিল ওর আফিসের কেও জানেনা ।” কিছুক্ষন থেমে আবার রিমন বলল, শোনেন আমি বুঝতে পারছিনা আপনি এসব কি করছেন। আর কেনই বা করছেন ? আর জাহিদ আপনার সাথে কথা বলবে কি-না এটা আমি জানিনা । আমি একটু জিজ্ঞেস করে দেখি” রিমন জাহিদের দিকে ফিরে তাকাল ।
জাহিদ রিমনের কাছে গিয়ে বলল, মোবইলটা দে, আমি কথা বলব। জাহিদ বা হাত দিয়ে মোবাইলটা নিয়ে কানে ধরল, ওপাশ থেকে রনকের কন্ঠ শোনা গেল ” কি ভাইয়া কেমন আছেন ।”
- হু, ভাল।
- কি একটু চমকে দিলাম না? ছেলেদের একটু চমকে দেওয়া ভাল, কারন ছেলেরা সবসময় ঘোরের মধ্যে থাকে।
- আমি মোটেই চমকায়নি।
- ভাইয়া, একটা অপিৃয় কথা বলছি, আমি আপনাকে ছায়ার মত সবসময় অনুসরন করি, আপনি কোথায় যান, কি করেন সব কিছু । আর একটা কথা ভাইয়া, আপনি সব সময় কপাল কুঁচকে রাখেন কেন ? আপনার কপাল কুঁচকানো দেখতে কেমন অদ্ভুত লাগে, প্লিজ ভাইয়া, এই কাজটা করবেন না। আমি আপনাকে সবসময় হাসি হাসি দেখতে চাই।
রনকের কথা শুনে জাহিদের মুখটা কেমন গম্ভীর হয়ে গেল। ভ্র“ এবং কপাল দুটোই আরো কুঁচকে গেল। জাহিদ রিমনের দিকে তাকিয়ে মোবাইলের লাইনটা খুট করে কেটে দিল । সাথে দুটো মোবাইলের সুইচ অফ করে দিল। ভ্রু-কুচকানো অবস্থায় জাহিদ রিমনকে জিজ্ঞেস করল, ঐ মেয়েটা কিভাবে বুঝলো আমি তোর সাথে আছি ?
রিমন জাহিদের গলা জরিয়ে ধরে বলল, মেয়েটা গতকাল রাত্রিতে আমকে ফোন করেছিল।
- তখন আমি কোথায় ছিলাম, লন্ডনে ?
- তুমি ঢাকা আসার আগেই ঐ মেয়েটা ফোন করেছিল। বলেছিল- তুমি ঢাকা ভালভাবে এসে পেীছেলে আমি যেন সকালে ওকে ফোন করি। কিন্তু তার আগেই মেয়েটা ফোন করেছে।
- ঠিক আছে বাবা, আমি বুঝতে পেরেছি। আর তোরা কেওই আমাকে ভাল থাকতে দিবি না। তুই এখন আমার সামনে থেকে যা, প্লিজ যা।
জাহিদের কথা শুনে রিমন চলে গেল। রিমন বুঝতে পারছে জাহিদ এখন রেগে গেছে। আর রাগ ভাঙ্গার সহজ উপায় হচ্ছে ওকে একা থাকতে দেয়া।
জাহিদ বড় রাস্তার পাশে একটা ভাঙ্গা পোলের উপড়ে বসেছে।তাকিয়ে আছে রাস্তা দিয়ে শো শো শব্দে ছুটে চলা গাড়ি। কার আগে কে যাবে, প্রতিযোগিতা। আজ শুক্রবার, তবুও ঢাকার মানুষের ব্যস্ততার শেষ নেই। সকলেই এই টাকার পিছনে ছুটছে। আমিও ছুটছি। ঢাকাতে কত আরামে ছিলাম। এই টাকার জন্যই আজ রংপুরে একা একা পরে থাকা। বেশী কষ্ট হয় খাবারের। আমার কষ্ট আমারই থাক, কাওকে বুঝতে দেওয়া যাবে না। কিন্তু হঠাৎ এই মেয়েটা কোথা থেকে উদয় হলো। আমার সব কাজে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। কোন মেয়ের সাথে জড়ানো যাবে না। হঠাৎ ঘাড়ের উপর রিমনের হাতের স্পর্শে ফিরে তাকায় জাহিদ।
রিমন জাহিদকে জড়িয়ে ধরে বলল, চল বাসায় যাই, এখানে বসে গাড়ি গোনাড় দরকার নেই।
জাহিদ আস্তে করে দু’বার মাথা নাড়াল, মুখে কোন কথা না বলে রিমনের হাত ধওে উঠে দাড়াল।