১
ঝুম বৃস্টি হচ্ছে,ছাতায় মানছে না।তাও আবার তিনজন এক ছাতার নিচে।আসলে উজির মিয়া ও তার ছোট্ট মেয়েকে ছাতার নিচে রাখতে হচ্ছে।যদিও ওরা চাচ্ছিলোনা।কিন্তু নিজের কাছেই খারাপ লাগছিল ওর।তাই ছাতাটা শেয়ার করাই শ্রেয় মনে হলো ওর কাছে।উজির মিয়া অনবরত কথা বলেই যাচ্ছে।বৃস্টির শব্দে তার কথা বেশিরবাগই বুঝা যাচ্ছেনা।তবুও তার মধ্যে থামার কোন লক্ষন দেখা যাচ্ছেনা।কিছু কিছু মানুষ আছে এরা কথা বলতে খুব পছন্দ করে।কেও শুনতে না চাইলেও অনেকটা জোর করেই শুনতে বাধ্য করে।
: কে জানি শখ করে নাম রেখেছিলেন উজির মিয়া।বলেনতো ভাইজান একজন ভিখিরির নাম উজির।ভিখিরির নাম হবে ফকির মিয়া,তা না নাম হয়েছে উজির মিয়া।কে রেখেছিলো এই নাম,তাকে একবার পেলে…..গালিটা গিলে ফেললো সে।
ভাইজান সাথে আছে বলে গালিটা গিলে ফেলতে বাধ্য হলো সে,আসলে হয়্ত বাবাই রেখেছিলেন।কাওকে নিজের নাম বললেই, যে শুনে তার মুখটা কেমন হয় সেটা দেখে নিজের গা জ্বলে তার…নিজের মুখটা আসলেই অনেক খারাপ।মানুষের ভালোটাতো দেখতেই পারেনা।তাও বলতেও পারেনা সে।বাবাটাও কি পরিহাস করতেন তাকে নিয়ে।জানতে পারবেনা সে কোনদিনোও।বাবা নেই,অনেক আগেই বিদায় হয়ে গেছেন।তাকে ভিষন একা ফেলে।মনে মনে ভিষন খিস্তি করে সে।অজথাই মানুষকে গালি দিয়ে বসে সে।মেয়েটাকেও প্রতিদিন অনেক গালি দেয় সে।খুব যে ভেবে বলে তাও না।আসলে এটা তার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে।গালি না দিলে ভালো লাগেনা তার।অনেক কথা বলে সে।অনবরত কথা বলতেই থাকে।এটা তার আরেকটা বদঅভ্যাস।একদিন সব হিসেব করে দেখতে হবে,ঠিক কত গুলো বদঅভ্যাস আছে তার।নাহ হিসেব করার দরকারই নেই।কারন ভাল অভ্যাস তার নেই বললেই চলে।
উজির মিয়া প্রায় ১২ বছর ধরে এই রাস্তায় ভিক্ষা করে বেরান।তাই প্রতিটা রাস্তাই তার কাছে অতি আপন।অনেক মানা করেছে সে ভাইজান কে ।কিন্তু জানে সে ভাইজান তার মানা শুনবেনা।এই লোকটা কেন এমন?কেন এত আপন করে নেয় মানুষকে। সে পথের ভিখিরি,অথচ লোকটা কত আপন করে ডাকে।মানুষ এত ভাল হয় কি করে?এত ভাল মানুষ ,অথচ তার নাকি চাকরি হচ্ছেনা।এই ঢাকা শহরে কত বাজে মানুষের বসবাস।তারাতো ঠিকই চাকরি বাকরি করে অস্থির।মন থেকে মহান আল্লাহ পাকের দরবারে আকুল আবেদন জানায় সে।এই লোকটার শীগ্রই যেন চাকরি হয়।যদিও জানে সে তার দুআ তেমন একটা কবুল হয়্না।তাই বলে আফসোস নাই,তবে এই দুআ টা যেন কবুল করেন।চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো।কেও দেখেনি জানে সে।বৃস্টির জন্যে তার চোখের পানি ঐ জলের সাথে মিশে একাকার হয়ে যাবে।ইশ ভাইজান যদি দেখে ফেলে।ভিষন লজ্জা লাগছে এইবার।ভাইজান আবার সব কেমন করে জানি বুঝে ফেলেন।
ভাইজানের দিকে তাকাতেই দেখলো ভাইজান সামনের রাস্তায় জমে উঠা গাড়ির জ্যামের দিকে তাকিয়ে আছেন।রাস্তায় অনেক পানি জমে যাওয়ার কারনে জ্যাম লেগে গেছে।ঢাকা শহরে যে কত্ত বড়লোক থাকে।আজব এই ঢাকা শহর।দিনের এক চরিত্র আর রাতের চরিত্র আরেক রকম।প্রায় ১৩ বছর আগে রিক্শা আর প্রাইভেট কার এক্সিডেন্ট এ তার দুটো পা ই কেটে বাদ দিতে হয়।তখন রিক্শা চালাতো সে।পা কেটে ফেলায় এখন ভিক্ষা ছাড়া উপায় নেই আর।নাহ সেই প্রাইভেট কারের লোকটা তৎক্ষনাত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবতিয় খরচ দিয়েছিলেন।তানাহলে তাকে হয়্ত বাচানোই যেত না।আসলেই ভালো মানুষের অভাব নেই এই দুনিয়ায়।নিজেকেই তিরস্কার করে সে।এখনও সে ভালো হতে পারেনি।অতি ভালো লোক আবার সে দেখতেই পারেনা।কেমন জানি অস্থির লাগে।খালি মনে হয় নিজেকে কে জানি গালি দিচ্ছে।কিন্তু একটা ব্যাপার খেয়াল করেছে সে এই ভাইজানের জন্যে অল্পতেই প্রায় সময়ই চোখে জল এসে যায়।জানে ভাইজানের চোখ এড়ানো এত সহজ নয়।তাই খুব লজ্জা লাগে যখন ভাইজান সামনে থাকে।আজ মনে হয় ভাইজান টের পায়নি।তিনি খুব মনোযোগ দিয়ে দাড়িয়ে থাকা গাড়ির দিকে তাকিয়ে আছেন।মেয়েটা ঠিকই খেয়াল করেছে।
: ও বাপজান কানতাছ কেন?
মেয়েটাও হয়েছে ভাইজানের মতো।কিছুই এড়ানো যাবেনা তার থেকে।
: কিছুনা ।এতদিকে খেয়াল কেন তর?ভিজ্যা জ্বর হইবো।মাথাডা আরেকটু ভিতরে রাখতে পারসনা?বেকুব কোনহান কার।
এত অল্প বয়সে মেয়েটা সব বুঝে গেছে।তার বাপজান কেমন মানুষ।সারাদিন বকে ঠিকই।কিন্তু রাতে কোলে না নিয়ে ঘুমাবেনা।আগে বকা শুনতে খারাপ লাগতো,এখন আর লাগেনা।
মেয়েটা অনেক লক্ষী।আর জানতে চাইবেনা।মেয়েটা হয়েছে তার একেবারে উল্টো,কে জানে আসলে এই মেয়ে তার কিনা। এ নিয়ে মাঝে মাঝে তার বউকে সন্দেহ হয় তার।এত ভালো একটা মেয়ে আল্লাহ তাকে কেন দিয়েছেন তাও মাঝে মাঝে ভাবে।এর দরকার ছিলো ভাইজানের মত পরিবারে জন্ম হওয়া।মেয়েটার ব্রেইনটাও মাশা আল্লাহ অনেক ভালো।কিছু একবার শুনলেই মনে রাখতে পারে।খুব ইচ্ছা ছিল তাকে ডাক্তার বানাবে।কিন্তু তাকে স্কুলে পাঠানোটাই এখন সম্ভব নয়।সে স্কুলে গেলে তাদেরকে না খেয়ে থাকতে হবে।মেয়েটা তার বাবার পংখীরাজ (এই নামটা মেয়েটার দেয়া)ধাক্কা দিয়ে চালাতে হয়।আজকাল এক যায়্গায় একটানা বেশিদিন থাকলে লোকে ভিক্ষা দিতে চায়্না।তাই অকে নিয়ে ঘুরতে হয়।
চলবে……….
Aarif chanchal