২
কখনো শাড়ি পড়া হয়নি অহনার।আজ তাই অনেক সমস্যা হচ্ছে ওর।বার বার মনে হচ্ছে এই বুঝি খুলে যাবে।কিন্তু এখন পর্যন্ত ঠিকই আছে।এখন পর্যন্ত ধোকা দেয়নি সে।শাড়ি পড়ার পর আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই হিংসা করতে ইচ্ছা হলো ওর।নাহ আল্লাহ তাকে দিয়েছেন।ঐ মানুষটা কেন ওকে দেখেও না দেখার ভান করে?আজ তাকে শিক্ষা দিতে হবে।
অনেক চেস্টা করেও মেয়েটাকে এড়াতে পারেনা ফারাবি।বারবার চোখের সামনে এসে পড়ছে।আড়াল করতেই পারছেনা।মানুষ এত সুন্দর হতে পারে! ঐ মেয়েটাকে না দেখলে সে জানতই না।
ভাবতে ভাবতে মেয়েটা প্রায় কাছেই চলে আসছে।ক্যাম্পাসের সিড়িতে বসে আছে সে।প্রায়ই সময়ই এখানে বসে থাকে সে,ক্লাশ ফাকি দিয়েও এখানে বসে থাকে সে।নির্দিস্ট কোন কারণ যে আছে তা না।তবে এখানে বসে থাকতে ভিষন ভালো লাগে ওর।মেয়েটা গাড় মেরুণ রং এর শাড়ি পড়ে এসেছে।চোখ ফেরানো যাচ্ছেনা।মনে হচ্ছে ঠিক এই মুহুর্তে যেনও আকাশ থেকে একটা পরী নেমে এসেছে।শুধু তার বাহন নেই,নেই তার উড়ার সেই ডানাও।কোথাও রেখে এসেছে নাকি?আচ্ছা পরীরা কি পৃথিবীতে আসার আগে নিজেদের ডানা কোথাও রেখে আসে?কেন ঐখানে যদি ডানার প্রয়োজন থাকে তাহলে সেখানে কেমন দুনিয়া?নাহ আজ মেয়েটা তাকে পরাজিত করেই ছাড়বে।ভুলেই গিয়েছিলো সে এতক্ষন মেয়েটার দিকেই তাকিয়ে আছে।কেন জানি মনে হচ্ছে আজ পুরো পৃথিবী জুড়ে শুধু ঐ পরীটাই আর কিচ্ছু নেই।নাহ মেয়েটা কি ভাববে? অনেকটা জোর করেই চোখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হলো সে।
-আমি কি আপনার পাশে একটু বসতে পারি?
পরীটার(মেয়েটার) মতলব কি?কোন ভুল করেছে নাকি সে? এই যেমন আপনি এই পৃথিবী অনেক দেখে ফেলেছেন।আপনার সময় শেষ।আপনাকে এখন আমাদের দেশে মানে মৃত্যুর দেশে যেতে হবে।আমি আপনাকে নিয়ে যেতে এসেছি।ইশ এত সুন্দর মেয়ে যদি কাওকে এসে বলে তাকে তার সাথে যেতে হবে।কে যাবেনা?মানুষের মৃত্যুটা অনেক কঠিন সত্য।ঐ সময়কার ভয়াবহ ঘটনা অনেকের কাছেই শুনেছে সে।মালাকুল মউত( মৃত্যুর কাজে নিয়জিত ফেরেশতা) যখন আসে তখন নাকি বান্দার অনেক কস্ট হয়।হোক সে মুমিন অথবা কাফের।আল্লাহ মানুষের জীবনের সবচেয়ে কস্ট আর সবচেয়ে ভয়াবহ দিনটাতে কি কস্ট না দিয়ে এমন একজন পরী পাঠাতে পারতেন না?তাহলে সবাই খুশি মনে বিদায় নিত?আসলে আল্লাহপাক নিজেই এর উত্তর জানেন।হয়্ত এর আরোও গভীর কোন মাহাত্ব লুকিয়ে আছে।
-আমার পাশে?কেন আমাকে কি কোন দরকার আপনার?
-আগেত বসি তারপর উত্তর দেই।কেন আমি বসলে কি আপনার খুব অসবিধা হবে?আমার গায়ে কি কুস্ঠ জাতীয় রোগ বা কোন ছোয়াচে রোগ আছে নাকি?যে পাশে বসলেই আপনার সে রোগ হয়ে যাবে?
কি করে বুঝায় সে! বলে কি এই মেয়ে?এমন একটি মেয়ে পাশে বসে থাকবে সেটাতো যেকোন ছেলের জন্যে অনেক সৌভাগ্যের।কিন্তু তার কাছে সৌভাগ্যের নয়।কারন তার মেয়েটার প্রতি ভালোলাগা অলরেডি জন্মে গিয়েছে।বেশিক্ষন থাকলে সমস্যা হতে পারে।কিন্তু মানুষ মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অনেক কিছুই করে বা করতে হয়।
-আপনি কি এই ডিপার্টমেন্ট এর স্টুডেন্ট?
-ঠিক তা নই।কেন বলুন তো?
-আপনি এত প্রশ্ন করেন কেন?
-আপনি উত্তর দেন না তাই হয়্ত।
-আমাকে কেমন লাগছে?প্লিজ আমাকে খুশি করার জন্যে বলবেন না।যা সত্ত্যি তাই বলবেন।
যদিও অহনা, সে নিজেও জানে এর উত্তর কি আসতে পারে।তবুও বুঝে নিতে চায় অহনা ছেলেটা কি বলে?
-হুম সুন্দর।
যদি বলি অনেক সুন্দর,সেটা বাড়িয়ে বলা হবেনা।যদি বলি পরীর মত,সেটা মিত্থ্যে বলা হবে।কারণ আমি পরীদের দেখিনি।আসলে অনেক কিছুই বলতে মন চাচ্ছে,কিন্তু বলা যাবেনা।তাহলে মেয়েটার অহংকার বেড়ে যাবে।
-এক কথায় শেষ?
-সুন্দরের চেয়ে কি আরোও বেশি কিছু আছে নাকি?তাহলে বলুন আমি শিখে নেই।আচ্ছা আপনি কি আর কিছু বলবেন?আমার একটু কাজ আছে।আমাকে যেতে হবে।আচ্ছা আসি,পরে কথা হবে।
বলেই উঠে চলে যাচ্ছে ফারাবি।পিছন ফিরে তাকানো যাবেনা,জানে মেয়েটির চোখে জল আসবে।এটা পুরুষের দেখতে নেই।তাহলে গলে যেতে হয়।সে গলতে চায়্না।তার মাথার উপরে অনেক কিছুর বোঝা এখন,সেগুলা খালি না করে অন্য কিছুকে প্রশ্রয় দেওয়াটা ঠিক হবেনা।আল্লাহ মানুষকে খুব দুর্বল করে বানিয়েছেন।মেয়ে মানুষের মায়া খুব কঠিন মায়া।এখানে একবার জড়িয়ে গেলে আর বের হওয়া যায়্না।
কান্না এসে যাচ্ছে অহনার,এই লোকটা এমন কেন?একটু ভালো করে কথাও বলেনা।এত অহংকার কোত্থেকে আসে ওর?ইচ্ছে করছে এক ছুটে পালিয়ে গিয়ে চোখের সব জল গড়িয়ে ফেলে দিতে।এত সুন্দর করে কোনদিনও সাজেনি সে।আজ কত যত্ন করে সেজেছে সে।পালাতে হবেনা ওর,লোকটি চলে যাচ্ছে,একবারও পিছন ফিরে তাকাবেনা সেটা জানে অহনা।কখনযে জলের ধারা বয়ে যাওয়া শুরু হয়ে গেছে।টেরই পায়নি সে।ইশ এই চোখের পানি এত্ত সহজলব্য কেন?সময় টময় মানেনা।শুধু পড়তে পারলেই মনে হয় বাচে।
চলবে……….
Aarif chanchal