ঘুম থেকে উঠে অয়ন মা ও মা বলে ডাকছে।
পাশের রুম থেকে মাঝ বয়সি এক মহিলা এসে হাজির।
-কি হয়েছে তোমার? মাকে ডাকছ কেন? খারাপ স্বপ্ন দেখেছ নাকি?
-খারাপ স্বপ্ন দেখব কেন? আরে আজব মা কই? আর আপনি কে?
এইবার মহিলাটি সিঊর যে অয়নের মাথা সত্যই খারাপ হয়ে গেছে,নয়ত সে খারাপ স্বপ্নই দেখেছে। মহিলাটি আবারও চিৎকার করছে।।
-এই কি হয়েছে তোমার, কইরে রাইয়ান দেখে যা তোর বাবা জানি কেমন করছে।
পাশের রুম থেকে ১০-১১ বছরের এক বালক এসে হাজির।এদের দেখে অয়ন নিজেও বোকা বনে গেছে।এই ছেলে নাকি তার সন্তান?কি বলবে অয়ন ভেবে পাচ্ছেনা। এরা কি বলে?মহিলাটি কান্না ভরা চোখে আবারও বলছে।
-এই কি হয়েছে তোমার? কি খারাপ স্বপ্ন দেখেছ? মাকে স্বপ্ন দেখেছ?
-আরে আজব,আপনি কে? এরা কারা? আমি কোথায়? আমি তো আপনাদের চিনি না।
মহিলাটি এবার কেঁদে ফেলছে। হঠাৎ কি হলো? অয়ন বুঝতে পারছে পরিস্কার।সে রাতে ঘুমিয়েছে আর এটা তার স্বপ্ন। ঘুম ভাঙলেই দেখবে সব ঠিক। ভালো করে চোখে রগড়ালও সে। নাহ সে তো ঘুমানো নয়।এগুলা বাস্তবেই ঘটছে। আর বাবা মা ই কই গেল? চশমা পড়া বালকটি কিছুই বুঝতে পারছেনা।সে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে শুধু। এবার মহিলাটি কান্নার চোখে বলছে।
-এই কি হয়েছে? আমি তোমার বউ আর এ আমাদের ছেলে রাইয়ান।তুমি কি কাওকে চিনতে পারছনা?
এবার অয়নের মাথা খারাপ হওয়ার অবস্থা।বলে কি এই মহিলা,আরে সেতো ভারসিটিতে পরে,বিয়ে করলো কবে? আর এত বড় ছেলে কিভাবে থাকে তার? এক দৌরে ঘড় থেকে বের হয়ে যায় সে। রাস্তায় এক বুড়া মত লোক তাকে দেখে ডাক দেয়। লোকটিকে পরিচিত লাগলো ওর। কিন্তু মনে পরছেনা।
-কিরে কই যাস?
-কই যাই মানে? আপনি কে?
-ঠাট্টা করছিস কেন? রাগ করেছিস? আরে বাবা কাল রাতের জন্যে সরি।
-ঠাট্টা করবো কেন? আমিত আপনাকে চিনতেই পারছিনা। কে আপনি আর আমাকে চিনেন?
লোকটি বুঝতে পারছে অয়ন রাগ করেছে অনেক,জানে সে অয়নের রাগ অনেক বেশি।তাই বলে সে তাকে চিনবেইনা? এটা কেমন কথা? এত দিনের বন্ধুত্ব তাঁদের।
-দেখুন মিঃ আসলে আমি কাওকেই চিনতে পারছিনা, প্লিজ আমাকে একটু বলবেন?আমি ভার্সিটিতে যাবনা বলে মাকে ডাকলাম।কিন্তু আমার ঘরে এক মহিলা ও আরেকটি ছেলে দাবি করছে তারা নাকি আমার বউ আর ছেলে।কিন্তু আমি জানি আমি ভার্সিটিতে পড়ুয়া একটি ছেলে।বিয়েই করিনি,তাহলে কিভাবে এরা আমার বউ আর ছেলে হয়। তাছাড়া আমার বাবা মা ই কই গেল? বাবা কাল আমাকে ইলেক্ট্রিক বিল দিতে বলেছিলেন,আমি বলেছিলাম পারবোনা।
সব শুনে লোকটি এবার বোকার মত চেয়ে রইল।
-প্লিজ।
অনেক অনুনয় করে বলল অয়ন।
কোত্থেকে শুরু করবে লোকটি ভেবে পেলনা,তবু অয়নের অনুরোধে শুরু থেকেই বলল লোকটি।
-তোর বাবা আর মা মারা গিয়েছেন প্রায় ৫ বছর হবে।তুই বিয়ে করেছিস অনেক আগে। বাসার ওরা ঠিকই বলেছে ওরাই তোর বউ আর সন্তান।তোর ছেলেটা ক্লাশ ফাইবে পড়ে। আর আমি তোর বন্ধু রাফাত।মনে করে দেখ।
এবার ভালো করে তাকালো সে লোকটির দিকে, মনে পরেছে।রাফাতের চেহারার সাথে লোকটির মিল আছে। কিন্তু রাফাত ছিল ইয়ং আর লোকটি বুড়া। সে নিজেও কি বুড়া হয়ে গেছে?বাসায় ফিরে আসলো সে।আয়নায় নিজেকে দেখে চমকে উঠলো। আসলেই তো সে বুড়া হয়ে গেছে।মুখের উপর দাড়ি গুলো থেকে থেকে সাদা কালো হয়ে আছে। বয়স কত তার? মহিলাটি কাছে এল ওর।
-কি গো কিছু মনে পড়েছে? যা ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে, এভাবে মজা করে কেউ? ছেলেটা কত্ত ভয় পেয়েছে জান? ঘরে ধুকে কাঁদছে।
কি বলবে এই মহিলাটিকে বুঝতে পারছেনা অয়ন। মাথাটা নিচ করে আছে সে। মহিলাটার মুখ ফুটেছে এবার। কান্নার মত করে বলছে,
-মাকে তুমি অনেক কষ্ট দিয়েছ,দিন রাত মাকে বকা ঝকা করতে। বাবা কেও অনেক কষ্ট দিয়েছ তুমি। বাবা মারা যাবার পর তুমি মাকে সহ্যই করতে পারতেনা। তোমাদের পারিবারিক কবরস্থানে তাদেরকে দাফন করা হয়েছে।অনেকদিন হল তাঁদের কবরেও যাও না জিয়ারত করতে।
কি বলছে এই মহিলা? ভেবে পাচ্ছেনা অয়ন। মাকে বকা ঝকা করবে কেন সে? সে মাকে অনেক ভালোবাসে।বকা ঝকার তো প্রশ্নই উঠেনা। আর বাবাকে সে আরো বেশি ভালবাসে। কিন্তু মুখে না বললেও অন্তরে সে বাবার প্রতি অনেক ভালবাসাই ছিল। অবহেলা করার প্রশ্নই উঠেনা। কিছু একটা গণ্ডগোল হয়েছে ঠিকই।
-বাবা মার কবরটা কোথায়?
-দারাও রাইয়ান কে তোমার সাথে পাঠাচ্ছি। রাইয়ান বাবাকে একটু গোরস্থানে নিয়ে যা তো বাবা।
চশমা পড়া ছেলেটা ঘড় থেকে ভয়ে ভয়ে বেড়িয়ে আসছে।এখনো সে ভয় পাচ্ছে তার বাবাকে।বাবাকে এমনিতেই সে অনেক ভয় পায়,আর ভালোও বাসে।বাবাটা যে ভীষণ রাগি।ছেলের পেছন পেছন এগোতে থাকে অয়ন। ঘন ঝোপ ঝারে ঢাকা পাশাপাশি দুটি কবর দেখালও সে ইশারা দিয়ে। ঠাস করে বসে পরলো অয়ন কবরের সামনে।এবার চিৎকার করে কান্না শুরু করে দিল সে।কলিজা যেন বের হয়ে যাবে এমন ভাবে চিৎকার। আসলে আর কেও না জানুক সে জানে তার বাবা মা তার জন্যে কি।সে কিছুতেই মানতে পারছেনা তার বাবা মা নেই।আর সে তাদের উপর অত্যাচার করেছে। ইচ্ছে করছে বুক চিরে দেখাতে, নিজের বুকটা খামচে ধরে কাঁদছে সে। প্লিজ মা প্লিজ বাবা একবার ফিরে এস।আমি তোমাদের ছেড়ে থাকতে পারবনা। আমাকে ক্ষমা করে দাও। ও আল্লাহ্ তুমি আমার বাবা মাকে এনে দাও।আমি আর কিচ্ছু চাইনা।
চশমা পড়া ছেলেটা তার বাবার কান্না দেখে আরো ভয় পেয়ে দৌরে মাকে ডাকতে গেলো সে। আসে পাশে অনেক মানুষ জমে গেছে অয়নের কান্না দেখে। সবাই কিছুটা জানে।অয়ন তার বাবা মাকে অনেক অত্যাচার করত। তাই সবাই ভাবছে অয়ন হয়ত অনুশুচনায় দগ্ধ হয়ে মা বাবার কবরে ক্ষমা চাইছে।
কষ্টে মনে হচ্ছে তার বুক ফেটে যাবে। কষ্টে আর কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞেন হারালো অয়ন।কবরের পাশেই লুটিয়ে পড়ল অয়ন।
জ্ঞেন ফিরে দেখলো সে বিছানায় শুয়ে আছে। মা তাকে ডাকতে এসেছে।
-এই খোকা উঠ, ভার্সিটিতে যাবিনা? তোর বাবা অফিসে যাওয়ার আগে তোর সাথে কথা বলতে চায়। আয় বাবা একটু।
চোখ মেলেই মায়ের পা ধরে চিৎকার করে কাঁদছে অয়ন।
-মা গো ও মা তুমি আমাকে ছেড়ে যেওনা।
অয়নের চিৎকার শুনে বাবাও ছুটে এল।
- কি হয়েছে? কি হয়ছে?
বাবাকে দেখে বাবার পায়েও লুটিয়ে পড়ল অয়ন।
-বাবা ও বাবা আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি।প্লিজ আমাকে ছেড়ে কোত্থাও যেওনা। তোমাকে রাগ করে উছু গলায় কথা বলেছিলাম।বাবা ক্ষমা করে দাও।
বাবার চোখে পানি এসে গেছে। এই জল কষ্টের নয়,আনন্দের মায়ার।মা ও এতক্ষনে কেঁদে ফেলেছে।তাদের ছেলে বড় হয়ে গেছে।
পুনশ্চঃ এটা আজ সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর হঠাৎ মনে হল।তাই লিখলাম।জানি অনেক বড় হয়ে গেছে,কিন্তু সংক্ষেপ করতে চেয়েও পারলামনা। শুধু বলব একবার ভেবে দেখুন, যদি এমন আপনার জিবনেও আসে? আপনি কি পারবেন সব কিছু ফিরাতে? এক্ষনি একবার যান বাবা মায়ের কাছে।আবেগ নিয়ে একবার তাদের ডাক দিন,আল্লাহ আপনার আমল নামায় দশটি কবুলিয়াত হজ্জের সওয়াব লিখে দিবেন। বলুন সুব হানাল্লাহ।
aarif chanchal