somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক হাজার গ্রাম এ এক কিলো গ্রাম

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাস থেকে নামার আগ মুহূর্তে ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করে দিল,একটু আগেও আকাশ ঠিক ছিল।একেই বলে বৈশাখ মাস।মনের ভিতক ক্ষীণ একটু আশা শুভর, যদি ক্যাম্পাসে পৌঁছানোর আগে বৃষ্টি না শুরু হয়। কিছুটা পথ হেটে যেতে হবে তাকে। ক্যাম্পাস বাস স্ট্যান্ড থেকে ৫ মিনিট হাটার পথ।কিন্তু ভাগ্য সহায় হলো না।মাথার উপর ছাওনি পেতে একাবারে প্রায় ভিজে চুপসে গেল সে।রাস্তার পাশে একটু গাড়ীর পার্টসের শো-রুম। এখানেই দেখলো সে কয়েকজন মানুষ তারই মতো ভিজে আছে।হাত দিলেই বৃষ্টি ছুয়া যায়। কিন্তু ইচ্ছে করছেনা।নিজের শরীরটা এখন অনেকটাই ভিজে। একটু শীত শীত লাগছে তার। হঠাৎ শো-রুমের ভিতর থেকে একজন এসে তাকে ডাকল।
-আপনাকে ম্যানেজার স্যার ডাকছেন।
-আমাকে? আপনি সিউর?
-হুম, আপনাকেই। স্যার আপনাকে দেখিয়ে দিয়েছেন।
একটু ভয় নিয়ে লোকটার পিছন পিছন চলল শুভ। কিছুইত করেনি সে, আর বাকিদের মতো সেও বৃষ্টির অসহায় শিকার। কিন্তু এত ভিজে শরীর নিয়ে ম্যানেজারের রুম এ ঢুকতে কেমন জানি সংকোচ লাগলো তার। কিন্তু ম্যানেজার সাহেব শুভকে অভয় দিলেন। কর্মচারীটি চলে যেতেই ম্যানের হাতের ইশারায় তোয়ালে টা দিয়ে মাথাটা মুছতে বললেন। চোখে একটা কৌতূহল দেখে ম্যানেজার মুখ খুললেন। আসলে উনি শুভদের এলাকায় থাকেন।শুভকে বাইরে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ভিতরে আসতে বলা। কিন্তু শুভ তাকে চিনতে পারছেনা। তিনি আরও অভয় দিয়ে বললেন তুমি আমাকে চিনবেনা,কিন্তু আমি তোমাদের বাসার সবাইকেই ভাল ভাবে চিনি। চা খেতে বললেন, কিন্তু শুভ চা খেলনা। কিন্তু ভদ্রতা দেখিয়ে কিছু ক্ষোশ গল্প করলো সে।ইতিমধ্যেই বৃষ্টির ধাপট অনেকটা কমে গিয়েছে। বিদায় নিয়ে ক্যাম্পাসে রওনা দিলো সে। আসলে একটা ক্লাস তাকে ধরতেই হবে। খুবই ইম্পরট্যান্ট ক্লাশ। তাই বৃষ্টি থামার অপেক্ষা করতে পারলোনা সে। ক্লাশে পৌছাতে পৌছাতেই সে পুরোপুরি ভিজে একাকার। কিন্তু ক্লাশ টা হয়নি।ক্লাশেই সবাই গল্প করছে।ক্লাশে ঢুকতেই ক্লাসমেট মাহিন এগিয়ে এসে কৌতুক করলো।
- কিরে মাম্মা কই ত্থেইকা উইঠ্যা আইচ্ছস?।কোন ড্রেইনে পইরা গেছিলি?
- বাদ দে, ক্লাশ কি হয়নি?
-নাহ, স্যার আসতে পারেনি মনে হয়।
হতাশ লাগছেনা, কারন তার মিস হতো। কিন্তু শুধু শুধুই ভিজতে হলো। হঠাৎ পিছন থেকে একজন সাইড চাইলো। দুই সারি ব্যেঞ্চের মাঝখানে দাড়িয়ে কথা বলছিল ওরা। শরীর থেকে পানি ঝরছে শুভর। পিছনে তাকাল সে। একটি বোরখা পড়া মেয়ে মুখটা উন্মুক্ত।অনেকটা হোচট খাওয়ার মত হলো শুভর। কে এই মেয়ে? এত মায়া কারো মুখে থাকতে পারে,চিন্তাই করতে পারছেনা সে। কি মায়াবি চেহারা,কি আজব চোখ! ইচ্ছে করে শুধুই তাকিয়ে থাকি অনন্ত কাল। পাশ থেকে মাহিন কথা বলায় সম্বিৎ ফিরে পেল শুভ। আসলে এই মেয়েটাও নাকি শুভর ক্লাসমেট। কি আজব এতদিন ক্লাশে একবারেও তাকে দেখেনি সে। আসলে মাত্র কয়েকটা সপ্তাহ ক্লাশ করেছে শুভ। চাকরীর জন্যে ক্লাশ করতে পারেনি সে। এখন শেষ কটা দিন ক্লাশে উপস্থিত থাকছে। তাও আবার প্রাক্টিক্যাল ক্লাশ গুলোতে শুধু। মাহিন পরিচয় করিয়ে দিলো ওদের। মেয়েটার নাম শায়না। খুবই ভাল স্টুডেন্ট সে। যদিও শুভ নিজেও অনেক ভাল স্টুডেন্ট। অনেক কথা বলল মেয়েটি। কিন্তু শুভ নিজে তখন ভিজে একাকার। তাই কথায় বেশি মনোযোগ দিতে পারেনি সে। সেই প্রথম মেয়েটার সাথে কথা বলা। তারপর কয়েকটা সপ্তাহ চলল তাদের আড্ডা। শুভ তার ফ্রেন্ড সার্কেল দের এড়িয়ে শায়নার সাথেই বেশি আড্ডা দেয়। সকালে ক্লাশ শেষ হতে দেরি,ওরা দুজনের আড্ডা জমে উঠে।ক্লাশেও মেয়েটা পাসেই বসে শুভর। কিন্তু মেয়েটা রোল নং এ পার্থক্য থাকায় আলাদা গ্রুপ এ প্রাক্টিক্যাল করতে হয়। কিন্তু ক্লাশ সেশেই ছুটে আসে শায়না। কেন যেন আলাদা থাকতেই পারেনা। দুপুর গরিয়ে বিকেল, বিকেল থেকে সন্ধ্যা গরিয়ে যায়। শায়না যেতে চায়, কিন্তু যখন শুভ কিছুই বলেনা তখন আর যেতে চায়না।আসলে শুভ শায়নার সঙ্গ অনেক বেসি উপভোগ করে। ভীষণ ভাল লাগে তার শায়নাকে। হয়ত ভালবেসেও ফেলেছে ইতিমধ্যেই। কিন্তু শায়না পরিচয়ের শুরুতেই বলে দিয়েছে ওর আকদ হয়ে আছে। পরীক্ষার পর তাকে তুলে নিবে বর পক্ষ। তাই ইচ্ছে থাকা সত্বেও কিছু বলতে পারেনা সে শায়না কে। সকালে ক্লাশ শেষ হতেই ওরা দুজনে সারাদিন ক্যাম্পাসেই থাকতো। কখনও অডিটরিয়ামের সিঁড়িতে,কখনও শহিদ মিনারের বেদিতে,কখনো মাঠের কোন এক কোনায়। কিভাবে যে দিন চলে যেত টেরই পেতনা দুজনের কেও। এত কথা কই থেকে আসতো কে জানে। কিন্তু কথা যেন আর ফুরায় না ওদের। পরের দিনের জন্যে অপেক্ষা করতে চায়না।আজই সব কথা শেষ করে ফেলবে এমন ভাব। কিন্তু বাসায় দিরে এসে শুভর মনে হয় কিছুই বলা হয়নি তার। প্রাক্টিক্যান এক্সামের শেষ গ্রুপ শুভদের। আগেই শায়নাদের গ্রুপের এক্সাম শেষ হয়ে গেছে। প্রতিদিনই শুভ ক্যাম্পাসে এসেছে। শুধু শায়নার জন্যে। তার এক্সাম ছিলনা। নিজের প্রাকটিস বাদ দিয়ে সে আসতো ক্যাম্পাসে। বন্ধুদের সাথে দেখা না হয় তার জন্যে সে উপরের তলায় গিয়ে অপেক্ষা করত। আর শায়নার এক্সাম শেষ হলে ফোন দিত শায়না। তারপর শায়নাও ভুলে যেত পরেরদিন তার আরেকটা এক্সাম। সন্ধ্যার আগে কখনই বাড়ী ফিরা হয়না তাদের। রোল নং শেষ দিকে হওয়ায় শুভর এক্সাম সবার শেষে। আজ তার শেষ দিন এই ক্যাম্পাসে। শায়না কথা দিয়েছে আসবে। যদিও শায়নার এক্সাম শেষ। ক্যাম্পাসে আসতে হলে তাকে কারন ছাড়াই আসতে হবে। গত দুইদিন শায়না আসেনি। যদিও শুভ চায়নি শায়না আসুক। কারন তার এক্সাম শেষ করতে করতে এমনিতেই সন্ধ্যা হয়ে যাবে তাই। আজ সকাল থেকেই বৃষ্টি, কিছুক্ষণ থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। ভয় হচ্ছে শুভর আসতে পারবে কি শায়না? নাকি বৃষ্টি দেখে আসবেইনা।পরে অজুহাত দেখাবে বৃষ্টি ছিল। আল্লাহর কাছে এক্সাম বাদ দিয়ে প্রার্থনা করছে সে বৃষ্টি যেন থেমে যায়।আজ এক্সাম শেষ সবার। তাই আজ বন্ধুরা সব বিদায় নিচ্ছে। আর কখনও দেখা হবে কিনা। টাচ এ থাকবে আরো অনেক কিছু। বাইরে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। মনে হচ্ছে বৃষ্টির পানি নয় শুভর চোখ থেকে সব পানি মেঘ ঝরাচ্ছে। বছরের সেরা বৃষ্টির রেকর্ড হবে আজ। কান্না পাচ্ছে শুভর। একদিকে তার বন্ধুদের সাথে বিদায়,অন্যদিকে শায়না আসবে কিনা জানেনা।না আসার সম্ভাবনাই বেশি। এমন বৃষ্টিতে ছেলেরাই বের হয়না আর শায়না তো একটা মেয়ে মানুষ। হয়ত আর কখনোও দেখা হবেনা তার শায়নার সাথে। শায়না আগেই বলেছে, এক্সাম শেষ হলে সে আর কখনও দেখা করবেনা। তাই শেষ এক্সামের দিনে আসবে শেষ দেখা করতে,অল্প কিছুক্ষনের জন্যে। তাতেই রাজি হয়ে যায় শুভ, কারন সে জানে একবার কাছে আসলে শায়না এত সহজে তাকে ছেড়ে যেতে পারবেনা। কিন্তু বৃষ্টি তো থামছেইনা। বন্ধুদের আড্ডা ছেড়ে কিছুক্ষণ পড় পড় সে জানালা দিয়ে রাস্তার দিকে তাকাচ্ছে। ক্যাম্পাসের ওদের ডিপার্টমেন্ট বিল্ডিং এর মাঝখানের জানালা দিয়ে পুরোটা রাস্তা দেখা যায়। একটাই রাস্তা মেইন গেট হয়ে অদের ডিপার্টমেন্ট এ আসতে। বৃষ্টির জন্যে বেশি দূর দেখা যায়না। কিন্তু রাস্তায় বৃষ্টি ছাড়া আর কিচ্ছু নেই।মন অবিরাম কেঁদে চলেছে। হঠাৎ বৃষ্টির মধ্যে একটা আবছা ভাবে ছাতা নিয়ে একজন বোরখাওয়ালি এগিয়ে আসছেন। চোখ জ্বল জ্বল করে উঠলো শুভর। ইচ্ছে করছে দৌড়ে গিয়ে শায়না কে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলতে, আজ সে অনেক সুখি। এত ভাল লাগেনি আর কোনদিনোও। ক্যাম্পাসের বেশির বাগ রুমই অনেক ফাকা ফাকা। কয়েকজন করে বসে বসে গল্প করছে।তারই একটাতে ওরা দুজন। শায়না শুরু করে দিয়েছে বাহানা। এদিকে একটা কাজে এসেছিলাম, ভাবলাম তোমার সাথে দেখা করে যাই, আর কখনো দেখা হবেনা তাই।অভিমান করে বলে ফেলে শুভ ।
-ধন্যবাদ ,দেখা হয়েছে এবার চলে যাও।
-নাহ বৃষ্টি থামলেই চলে যাবো।
এক হাজার গ্রাম এ এক কিলো গ্রাম-২
বৃষ্টি থেমে গেছে অনেক আগেই। সন্ধ্যাও হয়ে গেছে, টেরই পায়নি দুজনের কেও।আজ যাওয়ার কথা একবারও বলছেনা শায়না। কিন্তু রাত হয়ে গেছে, দুজনে ক্যাম্পাসের বাইরের একটা রেস্টুরেন্ট এ বসে আছে অনেক্ষন হল। এবার ভয় হচ্ছে শুভর শায়না কি যেতে চায়না?কিন্তু শায়নার তো আকদ হয়ে আছে।কয়েকদিন পরেই বিয়ে। এবার কথা বলল শায়না।
-শুভ আমাকে একটু এগিয়ে দেবে প্লিজ।
একথার মানে কি জানেনা শুভ। কারন রেগুলার ওকে বাস এ উঠিয়ে দিয়ে তবেই নিজের বাসার দিকে রওনা হয় সে।তখন রাত প্রায় আট টা বাজে। শুভ একটা রিক্সায় উঠে শায়নাকে তুলে নিল। শুভর খুব ইচ্ছে করছে শায়নাকে একটু জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু সাহস পাচ্ছেনা বলার। জানে আজ ই তাদের শেষ দেখা।সাহস করে তাই কথাটা বলে ফেলে সে শায়নাকে।শায়না খুব রেগে গেল। শুভ একটু হেসে কথাটাকে অন্যদিকে নিয়ে গেল। রিক্সা থেকে নেমে বাসের জন্যে অপেক্ষা। অল্পকিছুক্ষনের মধ্যেই বাস এসে হাজির। শায়না বাসে উঠছেনা দেখে শুভ জানতে চায়।
-এটা কি তোমাদের ঐদিকে যায়না?
জানে শুভ এটা ঐদিকেই যায়। কিন্তু তবুও না জানার ভান করে সে। এমন করে অনেকগুলো বাস চলে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে রাত সারে নয়টা বেজে যায়। এবার উঠে শায়না, বাসে উঠতে যাবে সে। হাত ধরে আটকায় শুভ, শায়না চমকে উঠে।
-এত রাতে একা যাবে?
- হুম যেতে পারবো।
-সেটা তো জানি। কিন্তু আমি কি সাথে আসবো?
-নাহ আসতে হবেনা। অনেক রাত হয়ে গেছে, বাসায় যাও।
-তোমাকে পৌঁছে দিয়ে বাসায় ফিরবো।
-নাহ তোমাকে আর কষ্ট করে এত দূরে উল্টো পথে যেতে হবেনা। অনেক দেরি হয়ে যাবে তোমার। তার চেয়ে বাসায় যাও। আমি বাস এ করে চলে যেতে পারবো।
-আমি জানি তুমি সবই পার, এতদিন দেখেছি। আজ শেষ দেখা তাই আমি চাই তোমাকে পৌঁছে দিতে। দাড়াও একটা ক্যাব ডাকছি।
ক্যাব পাওয়া গেলনা, একটা সি এন জি পাওয়া গেল। সেটায় উঠার আগে একটা শর্ত দিয়ে দিলো শায়না। তাকে ধরতে পারবেনা। শর্তে রাজি হয়ে গেল শুভ। যদিও জড়িয়ে ধরার ইচ্ছেটা ভুলেই গিয়েছে সে।
সি এন জি ছুটে চলছে, মতিঝিল বেশি দূরে নয়। বেশি সময় লাগবেনা। হয়ত আধা ঘন্টা। দুজনেই চুপ করে আছে। শুভ কথা দিয়েছে তাই চুপ চাপ বসে আছে হাত ভাজ করে, কিছুটা দুরত্ব বজায় রেখে। শায়নাই কথা বলল,
-কি ব্যাপার চুপ কেন? এভাবে হাত ভাজ করে আছো কেন? আমি কি বলেছি হাত ভাজ করে থাকতে?
-তুমি তো বলেছ না ধরতে, কিন্তু হাত খোলা থাকলে যদি তোমার দিকে চলে যায়, তাই হাত কে শাসন করছি।
-বাদরামি করবেনা আমার সাথে। আমি কি বলেছি হাত গুটিয়ে বসে থাকতে?
-হাত গুটিয়ে বসতে বলনি ঠিক তবে ধরতে না করেছ। আমি নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি কথা দিয়ে কথা রাখি এটা তুমিতো জানই।
-ঠিক আছে, তোমার যা ইচ্ছে কর।
শুভ বুঝতে পারছেনা তার কি কড়া উচিত।শায়না কি চায়?মেয়েদের বোঝা আসলেই অনেক কঠিন কাজ। কি করবে সে? শায়নাকে ধরবে? নাহ এটা ঠিক হবেনা।এবার শায়নাই বলে বসলো।
-আমি আমার শর্ত তুলে নিচ্ছি, কেউ যদি ধরতে চায়,সে ধরতে পারে।
খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো শুভ শায়নাকে,এত নরম শরীর কেন ওর? আকাশে বিদ্যুৎ চমকে উঠলো। জড়সড় হয়ে আরও গুটিয়ে এলো শায়না শুভর বুকের মধ্যে। হার্ট বিট অনেক গুন বেড়ে গেছে। দুজনেই টের পাচ্ছে। বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। নিজের মুখটা লুকিয়ে আছে সে শুভর বুকের মধ্যে।জানেনা শুভ কতক্ষন ছিল সে এভাবে। কিন্তু তার কাছে মনে হয় তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় ছিল ওটা। মধুমিতা হলের পাশে নামিয়ে দিয়ে ঐ একি সি এন জি তে করে ফিরলো শুভ। সারাটা রাস্তা একটা ভয় ছিল তার, একটা ভাললাগা। যদিও শায়না বলেছিল সি এন জি ছেড়ে দিয়ে বাস এ করে ফিরতে। কিন্তু কেন জানি সি এন জি ছারতে ইচ্ছে হলোনা শুভর। যাওয়ার আগে একটা চিঠি ধরিয়ে দিয়ে যায় শায়না। বলেছিল বাসায় গিয়ে পড়তে। রাস্তায় যাতে না পড়ে।
বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত সারে এগারটা বেজে যায়। তাতে কি? এক্সাম শেষ।
শুভ,
আমি জানি আমার অনেক কথায় তুমি অনেক কষ্ট পাও, কিন্তু আমার কিছুই করার থাকেনা।তোমাকে ইচ্ছে করে কষ্ট দেই আমি। তানাহলে নিজেকে কন্ট্রোল এ রাখতে পারিনা আমি। তুমি হয়ত জাননা, তোমার কাছ থেকে বাসায় ফিরে রোজ ই কেদেছি আমি।কেন আকদের আগে তোমার সাথে দেখা হয়নি?আমার জ্জিবনের সেরা সময়টা আমি কাটিয়ে দিয়েছি তোমার সাথে। আমি তোমার প্রতি ভীষণ ভাবে দুর্বল হয়ে পরেছি। আসলে দুর্বলতা বললে ভুল হবে, আমি তোমাকে ভীষণ ভাবে ভালবেসে ফেলেছি। আমি নিজে আর ধরে রাখতে পারছিনা। প্লিজ আমাকে রেহায় দাও এ যন্ত্রনা থেকে।
একটা মজার কথা বলি তোমাকে, আমি কিভাবে তোমার প্রতি দুর্বল হই সেটা তোমার জানা উচিৎ। তোমার মনে আছে একবার সেলিনা ম্যাডামের প্রাক্টিক্যাল ক্লাশে বীট এর উপর প্রাক্টিক্যাল চলছে। তখন গ্রাম এর হিসেব চলছিলো। আমরা এমনকি ম্যাডাম ও বলছিলেন ১০০ গ্রাম এ এক কিলোগ্রাম। সেইভাবে হিসেব করছিলাম। কিন্তু তুমি সবার সামনে এসে বললে ম্যাডাম ১০০ না ঐটা ১০০০ গ্রাম হবে। আমরা সবাই কনফিউজড ছিলাম। কেউ কেউ তোমার বিরোধিতাও করে। কিন্তু তুমি ছিলে অনড়।অবশেষে তুমি জয়ী হয়েছিলে। সেদিন থেকে ম্যাডাম তোমাকে অনেক পছন্দ কড়া শুরু করলেন। যদিও অল্প কয়েকদিনে এমন কোন স্যার ছিলেন না জিনি তোমাকে পছন্দ করতেন না। জাহিদ স্যার তো বলতেন তুমি নাকি তার দেখা সেরা স্টুডেন্ট। ঐ একটা ব্যাপার আমাকে অনেক নাড়া দেয়। আমি ভুলতে পারিনা সেই ঘটনা। অথচ সেদিনই প্রথম আমি তোমাকে দেখেছি, আগে কখনো নোটিশ করিনি। ভাবছ কি সিলি গার্ল, আসলে মেয়েদের মন এমনি। ওরা যে কখন কোন কারনে কোন ছেলের প্রতি দুর্বল হয়ে যায় সেটা তারা নিজেরাও জানেনা।
যাই হোক ফিরে আসি কথায়। আমি তোমাকে ভুলতে চাই। তোমাকে মনে রাখলে আমি সংসার করতে পারবনা। জানি ভুলতে পারবনা, কিন্তু তুমি যদি চাও আমি সুখে থাকি তাহলে প্লিজ।তোমাকে ভুলতে সাহায্য করবে। আমাকে ফোন দিবেনা কোনদিন।
আমি আর কোনদিন তোমার সাথে কথা বলবনা। দেখাও করবনা। প্লিজ আমাকে আর দুর্বল করে দিওনা।
ইতি
শায়না।
চিঠি পড়তে পরতেই চোখ ভিজে উঠলো শুভর। কি ভাব্বে সে শায়না কে নিয়ে?শায়না জানেনা আজ এত বছর পরেও শুভ শায়নার আগের নাম্বারে ফোন দেয়। প্রথম প্রথম রিং হত, কিন্তু কিছুদিন পর থেকে রিং হয়না। শায়নার হাসি শুভ তার মোবাইলে রেকর্ড করে রেখেছিল। সেটাই এখন শুনে সে।আর রিং দিলেই বলে ......... এই মুহূর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা, আপনি একটু পর আবার চেষ্টা করুন............।

aarif chanchal
২টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×