অস্থির হয়ে দুয়ারে পায়চারি করছেন মওলবি সাহেব। তার বিবি প্রেগন্যান্ট, প্রথম বাচ্চা হবে। ঘড়ের ভিতর কি চলছে তিনি জানেন না। অনেক্ষন ধরেই কোন কিছুই টের পাচ্ছেন না তিনি। ঘড়ের ভিতরেও সবাই কেমন জানি চুপ করে আছে। মাগরিবের আযানের সময় ঘনিয়ে এসেছে। তাকে নামাজের জন্যে মসজিদে যেতে হবে। স্থানীয় মসজিদের ইমাম তিনি। তাকে নামাজ পড়াতে হবে। আজ সকালে মুয়াজ্জিন সাহেব গ্রামের বাড়িতে গেছেন,কয়েকদিনের জন্যে। মুয়াজ্জিন থাকলে টেনশন কিছুটা কম থাকতো। কারন মুয়াজ্জিন সব সামলে নিতেন। কিন্তু এখন আযান দেওয়া থেকে নামাজ সব কিছুর দায়িত্ব তাকে নিতে হবে। আশে পাশে কাউকে দেখতেও পাচ্ছেন না তিনি। কাকে বলবেন আযান টা দিয়ে নামাজ টা পড়িয়ে দিতে। আজ তিনি নামাজ টা পড়াতে পারবেন না মনে হয়। আল্লাহ্ পাক হয়ত এমনটাই চান। তিনি কখনই নামাজ মিস করেন না। সন্ধ্যের এই সময়টাতে মানুষ সব তো ঘড়ের দিকে ফেরার কথা। কিন্তু আজ তিনি কাওকেই দেখছেন না। কপালের ঘামের পরিমান অনেক বেড়ে যাচ্ছে তার। এমনিতেই বাইরে গরম তেমন নেই। কিন্তু আল্লাহ্র ভয় তাকে পাইয়ে বসেছে। কেয়ামতের দিন যদি তাকে এই এক ওয়াক্ত নামাজের জন্যে পাকড়াও করেন? তাহলে তিনি কি জবাব দেবেন। তিনি অনেকক্ষন ধরেই আয়াতুল কুরসি পাঠ করছেন। এবার মনে হল তিনি আয়াতুল কুরসি ভুল ভাবে পরছেন। তার কখনও এমন হয়না। তিনি খুব মনোযোগ দিয়ে কুরআন তেলাওয়াত করেন। আজ সব জানি কেমন হয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বেশি ভয় পাচ্ছেন। এখন আয়াতুল কুরসি বাদ দিয়ে দুয়া ইউনুস পরছেন। আল্লাহ্ পাক এই দুয়ার বদৌলতে ইউনুস নবীকে অনেক বড় বিপদ থেকে উদ্ধার করেছিলেন। হঠাৎ মেম্বার সাহেব কে দেখে সাহস পেলেন মৌলবি। বিস্তারিত শুনে মেম্বার বদিউজ্জামান বললেন মৌলবি সাহেব চিন্তা করবেন না। ইনশাহ আল্লাহ্ সব ঠিক হয়ে যাবে। আপনি এখানেই থাকুন, আমি অন্য কাওকে দিয়ে আযানের ব্যাবস্থা করছি।নামাজটাও পড়িয়ে নিবো কাউকে দিয়ে।
একটু আস্বস্ত হলেও ভয় টা তার কিছুতেই কাটছেনা। বন্ধ ঘড়ের দরজা খুলে গেল অল্প একটু। ভিতর থেকে মমিনের মা মাথা বের করে মৌলবিকে সন্তানের সু সংবাদ দিলেন। খুশিতে আলহামদুলিল্লাহ্ বলে মৌলবি চিৎকার করে সন্তানের কানে আযান পৌছাতে ব্যাস্ত হয়ে পরলেন। এদিকে মাগরিবের আযান টাও পড়ে গেছে। তাই সে আযানের আওয়াজের নিচে তার আযান চাপা পড়ে গেল। তাতে কি আল্লাহ্ পাক চেয়েছেন তার সন্তান পরিষ্কার ভাবেই আল্লাহ্র সালাতের আহবান শুনুক। আলহামদুলিল্লাহ্ সব কিছুই আল্লাহ্র জন্যে।
মৌলবির বাসার পরিবেশটা ভীষণ ভাবে থমথমে। তিনি জানেননা কি করবেন তিনি। গতকাল তিনি সন্তানের বাবা হয়েছেন। প্রথম সন্তান তার। কিন্তু তিনি খুশি হতে পারছেন না। কাকে দোষ দিবেন তিনি? হয়ত আল্লাহ্ পাক এর মাধ্যমেই কোন এক কিছু স্থির করে রেখেছেন। কি সেটা জানেনা সে। মৌলবির মা ক্ষণে ক্ষণে প্যাচাল পেরেই যাচ্ছেন। শাশুরির কথা শুনে কিছুক্ষণ পর পর জ্ঞেন হারাচ্ছেন মৌলবির বিবি।ইতিমধ্যেই ঘড়ের বাইরে কিছু হিজড়াদের কোলাহল শুনা যাচ্ছে। কোত্থেকে যে ওরা বাচ্চা হওয়ার খবর পায় কে জানে। কিন্তু ঠিকই এসে হাজির। মৌলবির মা একজনকে ঘড়ের ভিতর আনলেন। খবর পেয়েছে হিজড়া নেত্রী কবিতা মাসি। তাই মৌলবির নতুন সন্তান কে নিতে এসেছে সে। মৌলবির এ সন্তান যে ভদ্র সমাজে টিকবেনা। এ সন্তান লালন পালন করাটাও অনেক সমস্যা। আসলে মৌলবির বিবি একটি হিজড়া সন্তান প্রসব করেছেন। সন্তান টা রাখা যাবেনা,এটাও তিনি ভাল করেই জানেন। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই তার। ইচ্ছে করলেও তিনি পারবেন না আটকাতে। কোল থেকে কবিতা মাসি তার একদিনের সন্তান কে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি এটা দেখে আবারও জ্ঞেন হারালেন। হিজড়া গুলো খুব আনন্দ করতে করতে মৌলবির প্রথম সন্তান কে নিয়ে যাচ্ছে। মৌলবি ঘড়ের আড়ালে গিয়ে দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে কান্না শুরু করে দিয়েছেন। আল্লাহ্ তাকে এ কোন ধরনের পরিক্ষায় ফেলে দিয়েছেন। তিনি দেখতে পাচ্ছেন তার প্রথম সন্তান কে হিজড়া গুলো আসতে আসতে তার থেকে দূরে আরও দূরে নিয়ে যাচ্ছে.........।
পুনশ্চঃ জেন্ডার ফ্যাক্টর নিয়ে অনেক কিছুই লেখার ইচ্ছে থাকলেও লিখতে পারিনা।পারিনা একটি নবজাতক কে নিজের মায়ের কাছে রাখতে। পারিনা তাকে সুস্থ সমাজে টিকিয়ে রাখতে।তাই নিজের অপরাধ বোধ থেকে কিছুটা লিখলাম।
aarif chanchal