somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জেন্ডার ফ্যাক্টর

২০ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অস্থির হয়ে দুয়ারে পায়চারি করছেন মওলবি সাহেব। তার বিবি প্রেগন্যান্ট, প্রথম বাচ্চা হবে। ঘড়ের ভিতর কি চলছে তিনি জানেন না। অনেক্ষন ধরেই কোন কিছুই টের পাচ্ছেন না তিনি। ঘড়ের ভিতরেও সবাই কেমন জানি চুপ করে আছে। মাগরিবের আযানের সময় ঘনিয়ে এসেছে। তাকে নামাজের জন্যে মসজিদে যেতে হবে। স্থানীয় মসজিদের ইমাম তিনি। তাকে নামাজ পড়াতে হবে। আজ সকালে মুয়াজ্জিন সাহেব গ্রামের বাড়িতে গেছেন,কয়েকদিনের জন্যে। মুয়াজ্জিন থাকলে টেনশন কিছুটা কম থাকতো। কারন মুয়াজ্জিন সব সামলে নিতেন। কিন্তু এখন আযান দেওয়া থেকে নামাজ সব কিছুর দায়িত্ব তাকে নিতে হবে। আশে পাশে কাউকে দেখতেও পাচ্ছেন না তিনি। কাকে বলবেন আযান টা দিয়ে নামাজ টা পড়িয়ে দিতে। আজ তিনি নামাজ টা পড়াতে পারবেন না মনে হয়। আল্লাহ্‌ পাক হয়ত এমনটাই চান। তিনি কখনই নামাজ মিস করেন না। সন্ধ্যের এই সময়টাতে মানুষ সব তো ঘড়ের দিকে ফেরার কথা। কিন্তু আজ তিনি কাওকেই দেখছেন না। কপালের ঘামের পরিমান অনেক বেড়ে যাচ্ছে তার। এমনিতেই বাইরে গরম তেমন নেই। কিন্তু আল্লাহ্‌র ভয় তাকে পাইয়ে বসেছে। কেয়ামতের দিন যদি তাকে এই এক ওয়াক্ত নামাজের জন্যে পাকড়াও করেন? তাহলে তিনি কি জবাব দেবেন। তিনি অনেকক্ষন ধরেই আয়াতুল কুরসি পাঠ করছেন। এবার মনে হল তিনি আয়াতুল কুরসি ভুল ভাবে পরছেন। তার কখনও এমন হয়না। তিনি খুব মনোযোগ দিয়ে কুরআন তেলাওয়াত করেন। আজ সব জানি কেমন হয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বেশি ভয় পাচ্ছেন। এখন আয়াতুল কুরসি বাদ দিয়ে দুয়া ইউনুস পরছেন। আল্লাহ্‌ পাক এই দুয়ার বদৌলতে ইউনুস নবীকে অনেক বড় বিপদ থেকে উদ্ধার করেছিলেন। হঠাৎ মেম্বার সাহেব কে দেখে সাহস পেলেন মৌলবি। বিস্তারিত শুনে মেম্বার বদিউজ্জামান বললেন মৌলবি সাহেব চিন্তা করবেন না। ইনশাহ আল্লাহ্‌ সব ঠিক হয়ে যাবে। আপনি এখানেই থাকুন, আমি অন্য কাওকে দিয়ে আযানের ব্যাবস্থা করছি।নামাজটাও পড়িয়ে নিবো কাউকে দিয়ে।
একটু আস্বস্ত হলেও ভয় টা তার কিছুতেই কাটছেনা। বন্ধ ঘড়ের দরজা খুলে গেল অল্প একটু। ভিতর থেকে মমিনের মা মাথা বের করে মৌলবিকে সন্তানের সু সংবাদ দিলেন। খুশিতে আলহামদুলিল্লাহ্‌ বলে মৌলবি চিৎকার করে সন্তানের কানে আযান পৌছাতে ব্যাস্ত হয়ে পরলেন। এদিকে মাগরিবের আযান টাও পড়ে গেছে। তাই সে আযানের আওয়াজের নিচে তার আযান চাপা পড়ে গেল। তাতে কি আল্লাহ্‌ পাক চেয়েছেন তার সন্তান পরিষ্কার ভাবেই আল্লাহ্‌র সালাতের আহবান শুনুক। আলহামদুলিল্লাহ্‌ সব কিছুই আল্লাহ্‌র জন্যে।

মৌলবির বাসার পরিবেশটা ভীষণ ভাবে থমথমে। তিনি জানেননা কি করবেন তিনি। গতকাল তিনি সন্তানের বাবা হয়েছেন। প্রথম সন্তান তার। কিন্তু তিনি খুশি হতে পারছেন না। কাকে দোষ দিবেন তিনি? হয়ত আল্লাহ্‌ পাক এর মাধ্যমেই কোন এক কিছু স্থির করে রেখেছেন। কি সেটা জানেনা সে। মৌলবির মা ক্ষণে ক্ষণে প্যাচাল পেরেই যাচ্ছেন। শাশুরির কথা শুনে কিছুক্ষণ পর পর জ্ঞেন হারাচ্ছেন মৌলবির বিবি।ইতিমধ্যেই ঘড়ের বাইরে কিছু হিজড়াদের কোলাহল শুনা যাচ্ছে। কোত্থেকে যে ওরা বাচ্চা হওয়ার খবর পায় কে জানে। কিন্তু ঠিকই এসে হাজির। মৌলবির মা একজনকে ঘড়ের ভিতর আনলেন। খবর পেয়েছে হিজড়া নেত্রী কবিতা মাসি। তাই মৌলবির নতুন সন্তান কে নিতে এসেছে সে। মৌলবির এ সন্তান যে ভদ্র সমাজে টিকবেনা। এ সন্তান লালন পালন করাটাও অনেক সমস্যা। আসলে মৌলবির বিবি একটি হিজড়া সন্তান প্রসব করেছেন। সন্তান টা রাখা যাবেনা,এটাও তিনি ভাল করেই জানেন। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই তার। ইচ্ছে করলেও তিনি পারবেন না আটকাতে। কোল থেকে কবিতা মাসি তার একদিনের সন্তান কে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি এটা দেখে আবারও জ্ঞেন হারালেন। হিজড়া গুলো খুব আনন্দ করতে করতে মৌলবির প্রথম সন্তান কে নিয়ে যাচ্ছে। মৌলবি ঘড়ের আড়ালে গিয়ে দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে কান্না শুরু করে দিয়েছেন। আল্লাহ্‌ তাকে এ কোন ধরনের পরিক্ষায় ফেলে দিয়েছেন। তিনি দেখতে পাচ্ছেন তার প্রথম সন্তান কে হিজড়া গুলো আসতে আসতে তার থেকে দূরে আরও দূরে নিয়ে যাচ্ছে.........।
পুনশ্চঃ জেন্ডার ফ্যাক্টর নিয়ে অনেক কিছুই লেখার ইচ্ছে থাকলেও লিখতে পারিনা।পারিনা একটি নবজাতক কে নিজের মায়ের কাছে রাখতে। পারিনা তাকে সুস্থ সমাজে টিকিয়ে রাখতে।তাই নিজের অপরাধ বোধ থেকে কিছুটা লিখলাম।
aarif chanchal
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×