somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সত্তিকারের দেশ প্রেমিক

১৭ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৪:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পায়ের পুরানো ঘা টাতে দপ দপ করছে জয়নাল মিয়ার। আজ এত বছর পেড়িয়ে গেছে তবুও ঘা টা এখন মাঝে মাঝেই জানান দেয়।স্মরন করিয়ে দেয় সেই ভয়াবহ দিনটার কথা। যদিও ডাক্তার বলেছিল সারাজীবন এই ব্যাথাটা তাকে সইতে হবে।স্ক্যাচ এ ভর করে চলতে হয় তাকে। এভাবেই সে কিছু নূরানি কিতাব আর তসবি বিক্রি করে চলে সে।তিন কুলে কেউ না থাকায় অল্পতেই চলে যায় তার। আজ রোদ টাও অনেক কড়া। তার মনে হচ্ছে পড়ে যাবে। আমি বুঝতে পেরে তাকে ধরলাম।আমাকে বলল বাবা আমাকে একটু ধরে ছায়ায় নিয়ে যাবেন। আমি তাই করলাম,আমার যায়গায় যে কেউ হলেও একই কাজ করত। জয়নাল মিয়ার বয়স প্রায় ষাট হবে। যদিও সে নিজেও জানেনা তার সঠিক বয়স কত। জন্মদিন টা শুধু বড়লোকের উৎসব তাই তারা বয়স মনে রাখে। জয়নাল মিয়ার সাথে কিছু কথা হয় আমার।
জয়নালঃ আপনাকে অনেক কষ্ট দিলাম বাবা।আসলে ব্যাথাটা মাঝে মাঝেই অসহ্য হয়ে যায়।তখন শরীরে জোর পাইনা। তাই আপনাকে বিরক্ত করলাম।
আমি অবাক লোকটি কি সুন্দর পরিস্কার ভাষায় কথা বলছে।আমি তাকে স্বান্তনা দিলাম।
আমিঃ আরে নাহ কিছুনা। আমি কেন, যে কেউ হলেও আপনাকে এটুকু সাহায্য করতই।
জয়নালঃ ঢাকা শহরে অনেক দিন হল, তাই দেখেছি। কেউ কাওকে সাহায্য করেনা আজ কাল।
আমিঃ আপনার পায়ে কি হয়েছিল? দেখেত মনে হয় অনেক পুরানো কাটা,কিভাবে কেটেছে।
প্রথমে বলতে কিছুটা সংশয় থাকলেও আমার জোরাজুরিতে সে রাজি হল সব বলতে।
জয়নালঃ তখন আমি তাগরা জোয়ান,দেশে যুদ্ধ শুরু হলো। দেশ কে বাচাতে যুদ্ধে গেলাম। শত্রুদের বিরুধ্যে অনেক পরিশ্রম করার পরেও আমরা পিছু হঠতে বাধ্য হই। তখন শরাফ নামের এক সহযোগী দুইজন মিলে আমরা গোলাগুলি চালিয়ে যেতে থাকি। হঠাৎ একটা গুলি আমার পায়ে লাগে। আমি মাটিতে পরে যাই। শরাফ আমাকে পাজা কোলা করে ক্যাম্পে নিয়ে আসে। চিকিৎসা করাতে দেরি হয়। তাই পা টা কেটে বাদ দিতে হয়। যুদ্ধে জয় হয় আমাদের। তার বদলে এই একটা পা আমার।এটাতো খুবই ছোট্ট ব্যাপার। জীবন দিতেইতো প্রস্তুত ছিলাম সবাই।
আমার কিছুটা সন্দেহ হলো, একজন মুক্তিজোদ্ধা ফেরি করে বেড়াচ্ছে। আমি তাকে প্রশ্ন করে ফেললাম।
আমিঃ আচ্ছা সরকারতো মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক সুবিধে দিচ্ছে, ভাতা দিচ্ছে। আপনি নিচ্ছেন না কেন?
জয়নালঃ আমিত ভিক্ষা করছিনা। তাছাড়া অই ভাতা নিব কেন আমি?
আমিঃ কেন নিবেন না? তাছাড়া আপনার মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট আছেত?
জয়নালঃ না বাবা আমার সার্টিফিকেট নেই।
আমার সন্দেহ বেড়ে গেল। আমি ভাবলাম বেটা আমার সাথে গুল মারছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হলে তার তো সার্টিফিকেট থাকবেই। কিন্তু জয়নাল মিয়ার কথা শুনে আমি হতভম্ব।
জয়নালঃ দেখেন বাবা দেশ কে বাচাতে যুদ্ধ করেছি। কোন কিছুর বিনিময়েতো করিনি। কোন কিছুর বিনিময়ে করলেতো সেটা ব্যাবসা হয়ে যায়।আমি ব্যাবসা করতে যুদ্ধ করিনি। তাছাড়া আমি সার্টিফিকেট দিয়ে কি করবো? উপরে আল্লাহ আছেন তিনি সব দেখেন সব জানেন। কৈফিয়ত যদি দিতে হয় তার কাছেই তো দিতে হবে। আর তিনি তো জানেন আমি কি করেছি আর কি করিনি। কাওকে বলার জন্যে বা বাহাদুরি দেখাতে যেমন আল্লাহর ইবাদত করিনা। তেমনি দেশ কে বাচাতে লড়েছি, সেটা দেশ মা জানে। আর কাঊকে জানানোর দরকার কি বলেন?ধন্যবাদ বাবা, ব্যাথাটা কমেছে।এখন আমাকে ফেরি করে বেড়াতে হবে। ভালো থাকবেন,আল্লাহ আপনাকে অনেক ভাল রাখবেন। আপনি ভালো মানুষ। আল্লাহ হাফেয বাবা।
আমার মুখে কথা নেই, আমি কি বলব তাকে? আমার চোখে পানি এসে গিয়েছিল অনেক আগেই। সেটা আপনা আপনি শুকিয়েও গেছে। এবার তার পথের দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলাম। স্যালুট জানাবো এই সত্তিকারের দেশ প্রেমিক জয়নাল মিয়াকে? নাকি নিজেকে ধিক্কার জানাবো এমন একজন মানুষকে আমি সন্দেহ করেছি তাই?
Aarif chanchal
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×