এক সময় কেন যেন মনে হচ্ছিল আমি আর দেশে ফিরে যেতে পারবো না। এই অনুভূতি ছিল আমার সবচেয়ে ভয়াভহ। তবে একদিনে মনে হবার তেমন কোন ব্যাপার না এটা… তৈরি হয়েছে অনেক দিন ধরে। তখন আমার দেশ ছাড়ার আড়াই বছর চলছে। আমি অনেক বন্ধু আর সিনিয়র ভাইদের যেতে দেখি, বিদায় দেই কিন্তু আমার আর যাওয়া হয় না। প্রথম বছর কিছুই মনে হোত না.. কিন্তু সময় পার হলে ইউনিভার্সিটি শুরু হয়। যে যার পড়াশুনা আর কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। শুরু হয় একাকীত্ব। ক্লাসের পরিবেশ ছিল দুঃখজনক। কোন কোন কোর্সে পুরো ক্লাসে আমি একা, কোন কোন সময় নতুন শেখা টার্কিশ ভাষা বড় বেশী দুর্বোধ্য মনে হচ্ছিল, কোন সময় পুরো বিরক্তিকর। নতুন ছাত্র হলে খাবারের সমস্যা তো লেগেই ছিল, এখানে রান্না করার কোন নিয়ম নেই !! নতুন বন্ধু ছিল তবে শুধুই একটা সীমারেখা পর্যন্ত কেন যেন সেটা আর কিছুতেই পার করা যায় না। কোন এক সময় মনে হতে লাগলো আমি অচেনা এক দ্বীপে বাসা বাঁধতে শুরু করেছি। অনেক দিন পরে দেখা হয় বাংলাদেশীদের সাথে ক্যামন যেন এক দীর্ঘ পথের চক্রে পড়ে গেলাম। নতুন পড়াশুনার ব্যাপার বুঝে উঠা জরুরী এইসময়ে আরও এক মেঘ দুঃখ আমার জন্য অপেক্ষা করছিল.. ভাবতেও পারিনি। সেই বছরে আমার বড় দু বোনেরই বিয়ে ছিল। আমাকে সেই সময় ক্লাসে থাকতে হয়েছে, বিয়ের দিন একমাত্র ভাই হয়েও শুধু ফোনেই শুভকামনা জানিয়ে.. শান্ত থাকতে হয়েছে। আমি ফোনে শব্দ শুনে কল্পনা করেছি.. আমার বোনের বৌসাজ, মানুষের কোলাহল আর ছড়িয়ে থাকা আনন্দ। এত কঠিন সময় আমার জন্য অপেক্ষা করছিল একবারের জন্যও দেশ ছাড়বার আগে ভাবিনি। মানুষ সব অবস্থার মোকাবেলা করতে শিখে যায়, আমিও শিখতে থাকি শতবার আছাড় খেয়ে। টাকার একটা সমস্যা সবসময়ই লেগে থাকত। তখন দেশে যাওয়া আমার কাছে স্বপ্নতূল্য। আমি বুঝতে শিখি আমাদের সব ইচ্ছাই জীবনের সব বাঁধাকে অতিক্রম করতে সমর্থ না, আমি একটা চক্রে আটকে আছি। আমার দুই বছর আট মাস পার করার পর.. বাংলাদেশে যাওয়ার প্রথম টিকিট কিনলাম। সেদিনের আনন্দ অনেক বেশী কারণ একই সময় আমার একটা স্কেচের প্রদর্শনী চলছিল ফাইন আর্টস ফ্যাকালটির গ্যালারীতে। কয়েদিন আমার আর ঘুম হয় না… খালি ভাবছি যেয়ে কি কি করব। একসময় আমি সব যাত্রার প্রায় শেষে এসে গ্যাছি। সকল অপেক্ষার সমাপ্তি হতে যাচ্ছে.. আমি আকাশের ঠিক কোথায় বার বার সামনে কম্পিউটার স্ক্রিনে দেখছি। ভয়াভহ এক উত্তেজনা আমার সমস্ত শরীরকে অন্য এক আনন্দ সীমায় পৌঁছে দিচ্ছে। আমি জানালের ঝাপসা কাচ দিয়ে বাইরে দেখার চেষ্টা করি, আমরা নাকি ঢাকার ঠিক উপরে !! আমার হৃদস্পন্দন বাড়তে থাকে, আমি হালকা মেঘগুচ্ছের ভিড় ঠেলে নিচে জ্বলে থাকা আলোক বিন্দু আবিষ্কার করি। ঢাকায় তখন গভীর রাত, আমি কেন যেন দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি…. নিজের অজান্তেই বলে উঠি, “এই যে আমার বাংলাদেশ, দেখ আমি আবার ফিরে এসেছি।”… আমার অসাড় দেহটা ফেলে রেখে, আট হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে প্রতি মুহূর্তে এখানেই ফিরে এসেছি !! আমি জানি না.. এত ভালবাসা কোথায় লুকানো ছিল!! আমার সকল মৃত্যুর অবসান হয়েছে, আমি অবাক দু চোখ ভরে বাংলাদেশ দেখছি… আহা কি সুন্দর !!
ঘরে ফেরা
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ ভোর ৫:৩২
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল
নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন
হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়
সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।
হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন
আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই
সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ
গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।
... ...বাকিটুকু পড়ুন
৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…
১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন