somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিয়ার প্রচলিত কুড়িটি প্রশ্ন ও তার জবাব।

১০ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ৯:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমাকে কিছু ইসলামিক প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করার তৌফিক দান করেছেন। যদিও এখন ব্লগে তেমন লিখা হয় না তবে ব্লগার শুভ জাহিদ ও ব্লগার আনোয়ার এর অনুরোধে ব্লগার তারেক এর করা কিছু প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায়। আল্লাহ আমাদের সত্য বুঝার তৌফিক দান করুন। আমীন।


প্রশ্ন-১। ইতিহাস স্বাক্ষ্য যে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যখন নবুয়াত ঘোষণা করলেন তখন মক্কার কোরায়েশগণ বনী হাশিম গোত্রকে বয়কট (একঘরে) করে দিল। তখন হযরত আবু তালিব সমগ্র গোত্রকে মক্কার অদূরে একটি স্থানে নিয়ে গেলেন, যা তার নিজস্ব সম্পত্তি ছিল এবং সেই স্থানের নামকরণ হয়েছে ‘শেব-এ আবু তালিব’ যেখানে তাঁরা তিন বছর পর্যন্ত কল্পনাতিত কষ্ট-কাঠিন্ন ও দূর্ভোগ সহ্য করেছেন । সেই মুহুর্তে হযরত আবু বকর (রাঃ) এবং হযরত উমর (রাঃ) কোথায় ছিলেন? তারা তো মক্কাতেই ছিলেন, তাহলে তখন তারা রাসুল (সাঃ)-কে কেন সাহায্য করেন নি? তারা যদি ‘শেব-এ আবু তালিব’-এ রাসুল (সাঃ)-এর সাথে যোগ দিতে অপারগ ছিলেন, তাহলে এমন কোন প্রমান আছে কি যে সেই কঠিন দিনগুলিতে তারা রাসুল (সাঃ)-কে কোন প্রকার সাহায্য সহযোগীতা করেছে (বিশেষ করে খাদ্য-দ্রব্য ইত্যাদী সরবরাহ করে), যদিও তারা ভাল করেই অবগত ছিলেন যে কোরায়েশরা বনী হাশিমের প্রতি সমস্ত রকমের খাদ্য-দ্রব্য এবং লেন-দেনকে বয়কট করেছে?

=> প্রথমতঃ আমাদের ইসলামের ইতিহাস জানতে হবে সীরাত গ্রন্থগুলো থেকে। যেমন সীরাত ইবনে হিশাম, আর রাহিকুল মাখতুম ইত্যাদি। তো প্রশ্নকারী তার প্রশ্নটি করেছেন সেই গ্রন্থগুলো থেকেই যে বিপদের সময় আবু বকর রাঃ ও ওমর রাঃ কোথায় ছিলেন? কেন তারা সাহায্য করেন নি? প্রশ্নকারীর সমস্যা হলো আবু বকর রাঃ ও ওমর রাঃ কে নিয়ে।

এখন প্রশ্নকারীর নিকট আমার প্রশ্নঃ-
আবু বকর রাঃ ও ওমর রাঃ যে রাসূল সাঃ এর সাথে তখন ছিলেন না, তার প্রমাণ কি? তারা যে রাসূল সাঃ কে সাহায্য করেন নি, এই ওহীও আপনি কোথা থেকে পেলেন? আপনি কি দিয়ে বুঝলেন যে আবু বকর রাঃ ও ওমর রাঃ রাসূল সাঃ কে সাহায্য করেন নি? মূলত ইসলামের ওহীর দরজা বন্ধ। আর কোন ওহী আসবে না। তবে একটি ওহী আজীবন চালু থাকবে সূরা আনআম এর ১২১ নং আয়াত অনুযায়ী। সেটি হলো

সূরা আনআম-৬:১২১> নিশ্চয় শয়তানরা তাদের বন্ধুদেরকে প্রতি ওহী করে-যেন তারা (শয়তানের বন্ধুরা) তোমাদের (মুসলিমদের) সাথে তর্ক করে।

এ আয়াতে আল্লাহ বলছেন যে শয়তানই তার বন্ধুদের ওহী করে এবং সেই শয়তানের ওহীটির একটি হলো প্রশ্নকারীর প্রশ্ন যে আবু বকর রাঃ ও ওমর রাঃ সে সময় কোথায় ছিলেন? এমন যদি কোন তথ্য থাকতো যে আবু বকর রাঃ ও ওমর রাঃ সেই দুঃখ কষ্টের সময় হানিমুনে ছিলেন সেন্টমাটিন বা কক্সবাজার, তাহলে এমন প্রশ্ন করা যেত। অতএব প্রশ্নকারীর উত্তর আমরা তখনই দিব যখন তিনি প্রমাণ করতে পারবেন যে আবু বকর রাঃ ও ওমর রাঃ বিপদের সময় সাহায্য করেন নি? ইতিহাস থেকে আমরা জানি যে বনু হাশেম ও বনু মোত্তালেব এর মুসলিম ও কাফেররা সম্মিলিতভাবে ‘শেব-এ আবু তালিব’ এ রাসূল সাঃ কে রক্ষা করেছে। যেহেতু দুটো দল অর্থ্যাৎ কাফের ও মুসলিম এর মধ্যে আবু বকর রাঃ ও ওমর রাঃ ও ছিলেন। বয়কটকৃত মুসলিমদের মধ্যে আবু বকর রাঃ ও ওমর রাঃ যেমন ছিলেন, তেমনি নবী সাঃ এর চাচা আবু তালিবও সেখানে ছিলেন যিনি মুসলিম ছিলেন না।

দ্বিতীয়তঃ প্রশ্নকারী দুর্ভোগের সময়ের বর্ণনা করতে গিয়ে এমন ভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করলেন যেন
=> তখন সাহাবারা কেউ খাদ্য দিয়ে সাহায্য করেন নি।
=> তাদের বিপদের দিনে কেউ তাদের পাশে ছিল না।
=> তারা একঘরে ছিলেন, কেউ তাদের সাহায্য করত না।
=> তাদের কাছে খাবার পৌছত না।

প্রশ্নকারীর প্রশ্নটি যে কতটুক মিথ্যা, বিভ্রান্তিমূলক এবং চাতুরতা মূলক তা আমরা নিচের সীরাত গ্রন্থ থেকেই বুঝতে পারব।


উপরের বই এর পাতা থেকে আমরা কিছু বিষয় লক্ষ্য করি। যেমন
১) খাদ্যসামগ্রী মক্কায় এলে পৌত্তলিকরা তারাতারি কিনে ফেলত। এখান থেকে প্রমাণ হয় একঘরে করে দেওয়া বনু হাশেম ও বনু মোত্তালেব রা অর্থ্যাৎ এ দুই গোত্রের মুসলিম সাহাবারা এবং কাফেররা খাদ্যসামগ্রী কিনতেন। তবে ভাগে কম পড়ত।
২) কোন কিছু স্বাভাবিক অবস্থায় পৌছত না। অর্থ্যাৎ এ দুই গোত্রের মুসলিম ও কাফেরদের নিকট খাবার ঠিকই পৌছত তবে একটু ঝামেলা হত।
৩) তাদের কাছে খাদ্য সামগ্রী পৌছানোর সম্ভাবনা ছিল ক্ষীণ। অর্থ্যাৎ খাদ্যসামগ্রী পৌছত কম পরিমাণে।
৪) গোপনীয়ভাবে খাদ্য পৌছত।

৫) হাকিম ইবনে হাজাম নামক ব্যক্তিও খাদ্য পাঠিয়েছিলেন।
৫) পৌত্তলিকরা খাদ্য চড়া দামে বিক্রি করত। অর্থ্যাৎ চড়া দামে বনু হাশেম ও বনু মোত্তালেব এর কাফের ও মুসলিমদের খাদ্য কিনতে হত।

আমাদের প্রশ্ন যেই আবু বকর রাঃ ক্রীতদাস বেলাল রাঃ কে নিজের টাকায় কিনে আজাদ করিয়েছিলেন সেই আবু বকর রাঃ রাসূল সাঃ এর বিপদের চুপ করে থাকবেন এটা আপনারা ভাবেন কেমনে? এমন চিন্তা তো মুসলিমরা করতেই পারে না। অতএব উপরের আলোচনা থেকে আমরা ষ্পষ্ট বুঝতে পারি যে বয়কট করা হয়েছিল বনু হাশেম ও বনু মোত্তালেব এর জনগণকে অর্থ্যাৎ এ দুই গোত্রের মুসলিম ও কাফেরদের। এ দুই গোত্রের মুসলিমদের অর্থ্যাৎ আবু বকর, ওমর, ওসমান, আলী, হামজা রাযিআল্লাহু আনহুম দের যেমনভাবে বয়কট করা হয়েছিল, ঠিক তেমনি ভাবে এ দুইগোত্রের কাফেরদেরও বয়কট করা হয়েছিল যেমন আবু তালিবকে। তিনি নিজেও কাফির ছিলেন।


============================================

প্রশ্ন-২। রাসুল (সাঃ)-এর ইন্তেকালের মাত্র ৬ মাস পরেই হযরত ফাতিমা ইন্তেকাল করেন। অপর দিকে হযরত আবু বকর (রাঃ) ২ বছর ৬ মাস পরে ইন্তেকাল করেন এবং হযরত উমর (রাঃ) ইন্তেকাল করেন ২৮ হিজরীতে, এতো পরে তাদের মৃত্যু হওয়ার পরও তারা রাসুল (সাঃ)-এর পাশেই দাফন হলেন, কিন্তু হযরত ফাতিমা তাঁর পিতার পাশে দাফন হলেন না কেন? তিনি কি এমন ওসিয়াত করেছিলেন যে, তাঁকে তাঁর পিতার থেকে দূরবর্তী স্থানে দাফন করা হোক? তাই যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে কেন, অথবা মুসলমানগণ কি তাঁর দাফনে বাধা সৃষ্টি করেছিলেন?

=> প্রশ্নকারীর প্রশ্নটি মূলত শীয়াদের প্রশ্ন। যারা আবু বকর রাঃ ও ওমর রাঃ কে কাফির বলে। যাদের আক্বিদাহ হলো নবীর মৃতু্র পর উক্ত সাহাবাদ্বয় কাফির হয়ে গিয়েছেন (নাউজুবিল্লাহ)। এ জন্যই তারা সাহাবাদের ফাতিমা রাঃ এর প্রসঙ্গগুলো তুলে ধরে সাহাবাদের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেন। জানি না প্রশ্নকারী শিয়া কি-না।

যাক প্রশ্নকারীর নিকট আমাদের প্রশ্নঃ রাসূল সাঃ কি এমন কোন ওসিয়ত করে গিয়েছিলেন যে কন্যাকে পিতার কবরের সাথেই দাফন করা হোক? যদি প্রমাণ করতে পারেন তো দেখান। আপনাকে চ্যালেঞ্জ করলাম। কখনোই আপনি দেখাতে পারবেন না যে রাসূল সাঃ এমন ওসিয়ত করেছেন। এবার মূল কথায় আসি। ফাতিমা রাঃ কে কোথায় দাফন করা হবে তার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন উচ্চ পর্যায়ের সাহাবারা যাদের মধ্যে ছিলেন জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ যেমন আবু বকর, ওমর, ওসমান, আলী রাদিআল্লাহু আনহুম সহ অন্যান্যরা। এখন আমরা যদি দেখি কোরআনের আয়াত-

সূরা তাওবা-৯:১০০> আর যারা সর্বপ্রথম হিজরতকারী ও সর্বপ্রথম আনছারগণ এবং (পরবর্তীতে) যারা তাদের অনুসরণ করেছে খাটিভাবে, আল্লাহ সে সমস্ত লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন কানন-কুঞ্জ, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত প্রস্রবণসমূহ। সেখানে তারা থাকবে চিরকাল। এটাই হল মহান কৃতকার্যতা।

উপরের আয়াত থেকে আমরা জানতে পারলাম যে যারা সর্ব প্রথম মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেছে এবং মদিনাতে যারা সর্বপ্রথম আনসার হিসেবে তাদের সাহায্য করেছে, আল্লাহ তাদের মানবজাতির জন্য এবং পরবর্তী সাহাবাদের জন্য মডেল বানিয়েছেন। আল্লাহ যাদের মডেল বানিয়েছেন, প্রশ্নকারী তাদেরকেই দোষারোপ করছেন।

তাহলে কি প্রশ্নকারী বলতে চান আল্লাহ এমন মানুষদের মডেল বানিয়ে ভূল করেছেন যারা দুর্নীতিবাজ (নাউজুবিল্লাহ)?

তাহলে প্রশ্নকারী কি বলতে চান এই মহান সাহাবাদের আল্লাহ মডেল বানিয়ে ভূল করেছেন (নাউজুবিল্লাহ)। আল্লাহ তায়ালা এই আবু বকর, ওমর রাঃ দের বলেছেন খাটি ভাবে অনুসরণ করতে। তবেই তিনি আমাদের জান্নাত দিবেন।

আল্লাহ বলছেন রাসূলের খাটিভাবে অনুসরণ করতে। এখন আপনি যদি রাসূল সাঃ এর ভূল ধরেন তবে আপনি কখনোই মুসলিম থাকতে পারবেন না এবং জান্নাতও পাবেন না। ঠিক তেমনি আল্লাহ খাটিভাবে সাহাবাদেরও অনুসরণ করতে বলেছেন। এখন আপনি যদি সর্বপ্রথম যুগের মুহাজির ও আনসারদের ভূল ধরেন তো কখনোই মুসলিম থাকতে পারবেন না এবং জান্নাতও পাবেন না।

এই প্রথমযুগের মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে ছিলেন আবু বকর রাঃ, ওমর রাঃ ও অন্যান্য সাহাবারা। এই আবু বকর রাঃ, ওমর রাঃ ও অন্যান্য সাহাবাদের যেই আল্লাহ মানবজাতির মডেল বানিয়েছেন তাদের যারা ভূল ধরে, তাদের আমরা কাফির হিসেবেই ধরে থাকি যেমন ভাবে ধরে থাকি শীয়াদের। অতএব সাহাবারা যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সেটাই ছিল সত্য এবং চূড়ান্ত। আর আমরা সেই সিদ্ধান্তই মানতে বাধ্য কারণ আল্লাহ তাদের খাটিভাবে অনুসরণ করতে বলেছেন।
============================================

প্রশ্ন-৩। সাহাবাদের মধ্যে হযরত আবু বকর (রাঃ)-কে রাসুল (সাঃ)-এর সাথে তার নৈকট্যের কারণে সর্বোচ্চ মর্যাদা দেয়া হয়ে থাকে। বিষয়টি যদি এমনই হয়ে থাকে তাহলে হিজরতের পরে রাসুল (সাঃ) তাকে সেদিন নিজের ভাই হিসাবে গ্রহণ করলেন না কেন, যেদিন তিনি সকল মোহাজের ও আনছারগণকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করছিলেন? পক্ষান্তরে, রাসুল (সাঃ) হযরত আলীকে এই কথা বলে বেছে নিলেন যে, “তুমি দুনিয়া ও আখেরাতে আমার ভাই” তাহলে কিসের উপর ভিত্তি করে হযরত আবু বকর (রাঃ) রাসুল (সাঃ)-এর এতো নিকটবর্তী এবং সর্বশ্রেষ্ট সাহাবা ঘোষিত হলেন?

=> প্রথমত আপনার প্রদত্ত হাদিসটি “হে আলী, তুমি দুনিয়া ও আখেরাতে আমার ভাই” জাল-বানোয়াট। এটি তিরমিযী (৪/৩২৮), ইবনু আদী (১/৫৯, ১/৬৯) এবং হাকিম (৩/১৪) হাকীম ইবনে যুবায়ের সূত্রে ইবনে ওমর.......থেকে বর্ণনা করেছেন।
মুবারুকপূরী বলেন হাকিম ইবনে যুবায়ের দুর্বল। তাকে শীয়া মতালম্বের দোষে দোষী করা হয়েছে।
আলবানী বলেন, শুধুমাত্র হাকিমকে একা দোষ দেওয়া যাবে না। বরং হাদিসটিতে আরো দোষী রয়েছেন। যেমন হাকিমের শায়খ জামী ইবনু উমায়ের মিথ্যার দোষে দোষী।
ইমাম যাহাবী জামী ইবনু উমায়ের সম্পর্কে বলেন ঃ ইবনে হিব্বান বলেছেন, জামী ইবনু উমায়ের হাদিস জালকারী এবং রাফেযী।
ইবনে নুমায়ের জামী ইবনু উমায়ের সম্পর্কে বলেন, তিনি সর্বাপেক্ষা বড় মির্থূক ছিলেন।
এই হাদিসের সনদে আরো একজন রয়েছেন যিনি ইসহাক ইবনে বিশর আল কাহেলী, তাকে ইবনে আবী শায়না ও মুসা ইবনে কারুন মিথূ্ক আখ্যা দিয়েছেন।
দারাকুতনী ইসহাক ইবনে বিশর আল কাহেলী, সম্পর্কে বলেন তিনি হাদিস জাল কারীদের একজন।
এজন্য ইবনে তাইমিয়াহ রহঃ বলেন, নাবী সাঃ কর্তৃক আলী রাঃ এর ভ্রাতৃত্ব সংক্রান্ত হাদিস মিথ্যার অন্তূর্ভক্ত । তার এ বক্তব্যকে ইমাম যাহাবী মুখতাসারু মিনহাজিস সুন্নাহ গ্রন্থে সমর্থন করেছেন। (পৃষ্ঠা নং-৩১৭)

অতএব উপরের আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে এই হাদিসগুলো শিয়াদের প্রচলিত এবং জাল যা অগ্রহণযোগ্য। ঠিক একই ভাবে প্রশ্নকারীর করা প্রশ্নটিও অগ্রহণযোগ্য।

(দেখুন যইফ ও জাল হাদিস সিরিজ-২য় খন্ড, নং-৩৫১)

--------------------------------------------------------------------------

দ্বিতীয়ত কিসের ভিত্তিতে রাসূল সাঃ সাহাবাদের মধ্যে আবু বকর রাঃ কে নিকটবর্তী ও সর্বশ্রেষ্ঠ সাহাবা হিসেবে ঘোষনা করলেন? মূলত পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন আবু বকর রাঃ।

====>একবার আবু বকর ও ওমর রাঃ এর মধ্যে তর্ক বিতর্ক হওয়ায় আল্লাহর রাসূল সাঃ ওমর রাঃ কে শাসিয়ে ছিলেন এবং বলেছিলেন, হে ওমর! তোমরা সবাই যখন আমাকে মিথ্যাবাদী বলেছ, সেই সময় আবু বকরই আমাকে সত্যবাদী বলে স্বীকৃতি দিয়েছিল। এই কাহিনী থেকে আমরা জানতে পারি যে রাসূল সাঃ বিপদের এবং প্রথমযুগের মানুষদের অর্থ্যাৎ বিপদের বন্ধুদেরই বেশী অগ্রাধিকার দিয়ে থাকতেন।

=====> রাসূল সাঃ কে খুব সম্ভব আয়িশাহ রাঃ জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, কে বেশী পছন্দের খাদিজা রাঃ নাকি আয়িশাহ রাঃ। তিনি উত্তর দিয়েছিলেন তোমরা আমাদের সুখের সময়ের সাথী আর খাদিজা আমার দুঃখের সময়ের সাথী। কার সাথে কি মিলাও। অর্থ্যাৎ রাসূল সাঃ এর নিকট যারা প্রথমযুগের তারাই বেশী অগ্রাধিকার পেতেন।


======> আরও বলা যায় যখন খালিদ বিন ওয়ালিদ এবং সাহাবী আবদুর রহমান ইবনে আওফ রাঃ এর সাথে তীব্র তর্ক বিতর্ক হয়েছিল তখনও রাসূল সাঃ খালিদ বিন ওয়ালিদকে শাসিয়েছিলেন যে হে খালিদ, আমার সাহাবাদের মন্দ বল না। আল্লাহর শপথ, যদি ওহোদ পাহাড় সোনাও হয়ে যায এবং তার সবটুকু তুমি আল্লাহর পথে ব্যয় কর তবেও আমার সাহাবাদের কারো এক দিনের সকালের বা বিকেলের ইবাদতের সমতুল্য হতে পারবে না। (আর রাহিকুল মাখতুম-৪২৭-৪২৮)। এখানে আবদুর রহমান বিন আওফ ছিলেন অগ্রজ মুসলিম খালিদ বিন ওয়ালিদ এর থেকে। তিনি আগে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তাই উনার মর্যাদা অনেক বেশী খালিদ বিন ওয়ালিদ রাঃ এর থেকে।

======> রাসূল সাঃ মৃতু্র কিছু দিন আগেই বলেছিলেন, বন্ধুত্ব ও অর্থ সম্পদের ত্যাগ স্বীকারে আমার প্রতি সবচেয়ে বেশী এহসান রয়েছে আবু বকরের। আমি যদি আল্লাহ ব্যাতিত অন্য কাউকে বন্ধু/খলিল হিসেবে গ্রহণ করতাম তবে আবু বকরকেই করতাম। কিন্তু তার সাথে ইসলামের ভাই ভাই সম্পর্ক এবং ভালবাসার সম্পর্ক বিদ্যমান। মসজিদে কোন দরজা যাতে খোলা রাখা না হয়, সকল দরজা যাতে বন্ধ করা হয় শুধু আবু বকরের দরজা বন্ধ করা যাবে না। (আর রাহিকুল মাখতুম-৪৮৬ পৃষ্ঠা, বুখারী, মুসলিম ও মিশকাত)

উপরোক্ত ঘটনাগুলো থেকে আমরা দেখতে পারি যে যারা অগ্রের তাদের কেই রাসূল সাঃ বেশী প্রাধান্য দিয়েছেন। আর আবু বকর রাঃ যেহেতু সর্বপ্রথম মুসলিম তাই উনিই নিকটবর্তী এবং সর্বশ্রেষ্ট সাহাবা ঘোষিত হওয়ার যোগ্য। আর এ জন্যই তিনি হয়েছিলেন সর্ব প্রথম খলিফা। এ জন্যই তিনি ইমামতি করিয়েছিলেন যখন রাসূল সাঃ অসুস্থ ছিলেন। এখানে রাসূল সাঃ শুধুমাত্র আবু বকর রাঃকেই ইসলামের ভাই ভাই সম্পর্ক ও ভালবাসার সম্পর্কের কথা বলেছেন। মূলত মুমিনরা পরষ্পর ভাই ও বন্ধু।

============================================

প্রশ্ন-৪। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের কিতাবাদি হযরত আয়েশা, হযরত আবু হুরায়রা এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ)-এর রেওয়ায়েত দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে আছে। কিন্তু হযরত আলী, হযরত ফাতিমা, হযরত ইমাম হাসান ও হযরত ইমাম হুসাইন-গণ হতে অতি সামান্যই রেওয়ায়েত হয়েছে, এমনটি কেন? ঐদিও রাসুল (সাঃ) ঘোষণা করেছেন যে, “আমি জ্ঞানের শহর ও আলী তার প্রবেশদার”, এতদসত্বেও হযরত আলী কি রাসুল (সাঃ)-এর সাহাবাদের মধ্যে উপরে বর্ণিত সাহাবীদের তুলনায় কম জ্ঞানী বা কম মর্যাদাবান ছিলেন?

=> প্রশ্নকারীর নিকট আমাদের প্রশ্ন কেন আপনি শুধুমাত্র শীয়াদের মতো আলী, ফাতিমা, হাসান, হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুম কে নিয়েই এত টানাটানি করছেন? বিদায় হজ্জ্বে নবীর সাহাবাদের সংখ্যা ছিল সোয়া লাখ। কতজন হাদিস বর্ণনা করেছেন? খুবই কম সংখ্যক। হাদিস সবাই বর্ণনা করতেন না। কারণ যে রাসূল সাঃ এর নামে মিথ্যা রচনা করবে সে জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নিবে। এজন্যই সবাই ১০০% শিউর না হয়ে হাদিস বর্ণনা করতেন না। হাদিস প্রথম জাল করা শুরু করেছিল শীয়ারা। কারণ তারাই ইসলামের প্রথম ফিরকা যারা আলী রাঃকে ইমাম বানিয়ে দলে দলে বিভক্ত হয়ে কাফির হয়ে গিয়েছিল। আর আপনি যেই হাদিসটি দিয়েছেন সেটিও জাল। আর এটিও শীয়াদের নিকট শক্ত দলিল হিসেবে ব্যবহার করে। আর এটাই সবচেয়ে দুর্বল ও বানোয়াট হাদিস।

হাদিসটি হচ্ছে “আমি জ্ঞানের শহর ও আলী তার প্রবেশদার”।

হাদিসটি হাকিম (৩/১২৬) সূত্রে বর্ণিত এবং
ইমাম বুখারী রহঃ বলেছেন হাদিসটি জাল। আবু হাতিম ও ইয়াহিয়াহ ইবনে সাইদ বলেছেন হাদিসটি ভিত্তিহীন।
ইবনে হাকিম বলেছেন এই হাদিসটি দুর্বল কিন্তু জাল না।
আলবানী বলেছেন হাদিসটি জাল।
দারাকুতনী বলেছেন হাদিসটি মুজতারাব সনদ ও মতনের দিক থেকে।
ইমাম কুরতুবী বলেছেন হাদিসটি বাতিল।
ইবনু মঈন বলেছেন হাদিসটি ভিত্তিহীন রেওয়াত।

অতএব বুঝা গেল যে, জ্ঞানের শহর সংক্রান্ত আলী রাঃ নিয়ে বানোয়াট হাদিসটি জাল। পক্ষান্তরে দরজা সম্পর্কিত আরেকটি হাদিস পাওয়া যায় সহীহ মুসলিমে।

মসজিদে কোন দরজা যাতে খোলা রাখা না হয়, সকল দরজা যাতে বন্ধ করা হয় শুধু আবু বকরের দরজা বন্ধ করা যাবে না। (আর রাহিকুল মাখতুম-৪৮৬ পৃষ্ঠা, বুখারী, মুসলিম ও মিশকাত)

এছাড়াও রাসূল সাঃ ওমর রাঃকেও ছোট ভাই বলে আখ্যায়িত করেছেন।
ওমর ইবনুল খাত্তাব রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ওমরা করার অনুমতির জন্য রাসূল সাঃ নিকট গেলাম। তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন এবং বললেন, হে ছোটভাই, তোমার দোআ'তে আমাকেও শরীক কর। (আবু দাউদ, কিতাবুস সালাত, বিতর এর বিস্তারিত অধ্যায়, হাদিস নং-১৪৯৩)

আসলে শীয়া শব্দটা মানেই দল। তাদের আক্বিদাও হলো দলে দলে ভাগ হওয়া। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করেছেন এই দলে দলে ভাগ হওয়া থেকে। নাইলে আমরাও আবু বকর রাঃ ও ওমর রাঃ কে নিয়ে আলাদা হয়ে যেতাম যেভাবে শীয়া কাফিররা হয়েছে।
============================================

প্রশ্ন-৫। যদি হযরত আলী এবং প্রথম তিন খলিফার মধ্যে কোন ব্যবধানই ছিল না, তাহলে তিনি উক্ত তিন খলিফার খেলাফত আমলে সংঘটিত যুদ্ধগুলোতে কেন অংশগ্রহণ করেন নি, যদিও কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর একটি আবশ্যিক দায়ীত্ব (তথা ফরজ)? তিনি সেই সময়ে বিষয়টিকে যদি তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে না করে থাকেন তাহলে তিনি নিজের খেলাফত আমলে জঙ্গে জামাল, জঙ্গে সিফ্ফিন এবং জঙ্গে নাহারওয়ানের যুদ্ধে তরবারী কোষমুক্ত কেন করলেন?

=> প্রথমত রাসুল সাঃ বলেছেন যে আমীরের আনগুত্য করবে সে আমার আনুগত্য করবে। (বুখারী হা-৬৯৫৭)
অতএব আমীরের আনুগত্য করা ফরজ। এখন আপনার কথা যদি মেনে নেই যে আলী রাঃ তিন খলিফার কথা অমান্য করেছেন। তবে তো আপনি বলতে চাচ্ছেন যে আলী রাঃ রাসূল সাঃকে অমান্য করেছেন (নাউজুবিল্লাহ)। এটা অসম্ভব। আলী রাঃ যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে তালহা রাঃ এর সাথে যুদ্ধ করেছেন। আপনি আলী রাঃ এর নামে যা বলছেন তা সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা ও বানোয়াট। আলী রাঃ কখনো আমীরের আনুগত্য অমান্য করেন নাই।

এখন প্রশ্নকারীর নিকট আমাদের প্রশ্ন আলী রাঃ কি আমীরের আনুগত্য না করে রাসূল সাঃ কে অমান্য করেছেন? আর রাসূল সাঃ কে অমান্য করা তো আল্লাহকেই অমান্য করার শামিল। তাহলে আপনি কি বলতে চাচ্ছেন যে আলী রাঃ আল্লাহ ও তার রাসূল সাঃ কে অমান্য করেছেন?

============================================

প্রশ্ন-৬। যদি (যেমনটি সর্বদাই অভিযোগ করা হয়ে থাকে) সংখ্যালঘু শিয়ারাই ইমাম হুসাইনের হত্যাকান্ডের জন্য দায়ী হয়ে থাকেন, তাহলে সংখ্যাগরিষ্ট ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত’-এর আসুসারীগণ তাঁর সাহায্যে এগিয়ে এলন না কেন? যদিও তারা সংখ্যাগরিষ্ট ছিলেন এবং তাদের লক্ষ লক্ষ লোকবল ছিল, সেই সংকটময় মুহুর্তে তারা কোথায় অবস্থান করছিলেন?

=> বাংলাদেশে ৭ কোটি মানুষ। সবাই শেখ মুজিবর রহমানকে ভালবাসে। কিন্তু কেন সবাই শেখ মুজিবর রহমানকে রক্ষা করতে পারল না? কোন উত্তর নাই। শেখ মুজিবর রহমানের সংকটময় মুহুর্তে বাংলাদেশের মানুষ কোথায় ছিল? কোন উত্তর নাই। আসলে প্রশ্নটাই হাস্যকর। ওহোদের যুদ্ধে এত এত সাহাবাদের মধ্যে রাসূল সাঃ আহত হয়ে গর্তে পড়ে গেলেন, বেহুশ হয়ে গেলেন, হ্যালমেট মাথায় ঢুকে গেল, দাত শহীদ হলো। তখন সাহাবারা কোথায় ছিলেন? আলী রাঃ কই ছিলেন? আসলে এ প্রশ্নগুলোই বেহুদা প্রশ্ন। সাহাবারা তাদের সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন। যা হবার এবং ভাগ্যে যা ছিল তাই হয়েছে। এটাই তাকদীর। এর উপর বিশ্বাস করা ফরজ। মুসলিমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করবে এবং ফলাফলের জন্য আল্লাহর উপর ভরসা করবেন। এটাই উচিত।

কুফার ষড়যন্ত্রকারীরা হুসাইন রাঃকে হত্যা করেছে। আমাদের প্রশ্ন হুসাইন রাঃ কি তার বিরোধীতাকারীদের নিকট গিয়েছিলেন নিজের পক্ষের মনে করে নাকি বিপক্ষে মনে করে? অবশ্যই পক্ষ্যের মনে করে। কুফার ষড়যন্ত্রকারীরা নিজেদেরকে মূলত হুসাইন রাঃ এর লোক বলেই পরিচয় দিয়েছিল। এজন্যই হুসাইন রাঃ তাদের নিকটবর্তী হয়েছিলেন। আজ কারো ঘরের কোন জিনিস চুরি হলে আমরা দেখি কার ঘরে সেটা আছে। যার ঘরে থাকে তারাই চোর। ঠিক একই ভাবে আজও শিয়ারা বলে যে তাদের নিকটই নাকি হুসাইন রাঃ জিনিস পত্র রয়েছে। এতে আমাদের বুঝতে বাকি থাকে না যে তারাই হুসাইন রাঃ এর হত্যাকারী।

হুসাইন রাঃ এর সংকটময় মুহুর্তে যদি সুন্নীরা এগিয়ে আসে নাই, তবে আপনারা শিয়ারাই বা কই ছিলেন?

============================================

প্রশ্ন-৭। রাসুল (সাঃ)-এর মৃত্যুসজ্জায় তাঁর কর্তৃক কাগজ-কলম চাওয়ার বিষয়টাকে প্রত্যাখ্যান করে হযরত উমর (রাঃ) কর্তৃক “হাসবুনা কিতাবাল্লাহ” কথাটি বলা যদি সঠিক হয়ে থাকে, তবুও রাসুল (সাঃ)-কে ‘প্রলাপ বকার’ অপবাদ দেয়ার জন্য হযরত উমর (রাঃ) কেমন পুরস্কার পাবেন?

=> ঘটনাটি ঘটেছে নবী সাঃ এর মৃতু্র চারদিন পূর্বে। ওমর রাঃ হলেন জান্নাতী সাহাবী। আল্লাহ উনাদের মুসলিমদের মডেল বানিয়েছেন। এখন তাদের বিষয়ে বিরুপ মন্তব্য করা মানেই হলো নিজেকে আল্লাহর থেকেও বেশী বড় মনে করা। স্বয়ং আল্লাহ আবু বকর, ওমর, ওসমান আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুমদের সত্যবাদী, সৎকর্মশীল, মডেল হিসেবে তুলে ধরেছেন।

----------------------------------------------------------------------
রাসূল সাঃ এর কষ্ট দেখে ওমর রাঃ বলেছেন যে, আপনি কষ্ট পাচ্ছেন, আমাদের কাছে তো কোরআন রয়েছে। আমাদের জন্য আল্লাহর কিতাবই যথেষ্ট। কেউ কেউ বলেছেন লিখিয়ে নেওয়া হোক। কেউ কেউ বলেছেন লিখার দরকার নাই। ওমর রাঃ যাই বলেছেন সেটাই ঠিক। পরে রাসূল সাঃ বিরক্ত হয়ে সবাইকে ঘর থেকে বেড়িয়ে যেতে নির্দেশ দিলেন।
----------------------------------------------------------------------

এখানে প্রলাপ বকার কথা কোথায় আছে? কোথাও প্রলাপ বকার কথা নাই। আর আপনার কথা অনুযায়ী যদি উনি জাহান্নামী হয়ে থাকেন তবে রাসূল সাঃ কেন উনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিলেন। তবে কি রাসুল সাঃ মিথ্যা বলেছেন (নাউজুবিল্লাহ)।

============================================


প্রশ্ন-৮। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন মানব জাতির হেদায়েতের জন্য ১ লক্ষ ২৪ হাজার নবী-রাসুল প্রেরণ করেছিলেন। কোন নবী ও রাসুলের ক্ষেত্রে এমন কোন নজীর আছে কি যে, তাঁর সাহাবীগণ তাঁর কাফন-দাফনে শরীক না হয়ে তাঁর খলিফা নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন? যদি এমন কোন নজীর নাই থাকে তাহলে সর্বশেষ ও সকল নবীদের সরদার হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা (সাঃ)-এর সাহাবাগণ এমন পথ কেন বেছে নিলেন?

=> "কোন না কোন নজীর থাকতেই হবে" এমন দলিল আপনে কই পাইলেন। সাহাবাগণ এমন পথ বেছে নিয়েছেন। তো তারা কি কাফের হয়ে গেছেন? আল্লাহ তায়ালা সূরা বাকারায় কি বলেছেন

সূরা বাকারা-২/১৩৭> তারা যদি ঈমান আনে তোমরা (সাহাবারা) যেভাবে ঈমান এনেছো তবে হেদায়েত পাবে।

এখানে আল্লাহ তারা বলতে তৎকালীন নব্য মুসলিমদের বলেছেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত আগত অনাগত সকল মানুষকে হেদায়েতের পূর্বশর্ত হিসেবে সাহাবাদের মতো ঈমান আনতে বলেছেন। খলিফা নির্বাচন কাজে ব্যস্ত হওয়ায় সাহাবারা কাফের হয়ে যান তবে আল্লাহ কেন বললেন তাদের মতো ঈমান আনতে? আল্লাহ কি তাহলে ভূল করেছেন (নাউজুবিল্লাহ)। আপনারা কি বলতে চান?
সূরা তাওবা-৯/১০০ > সাহাবাদের অনুসরণ করলে জান্নাত।
সূরা নিসা-৪/১১৫> সাহাবাদের বিপরীতে গেলে জাহান্নাম।
আপনার সাহাবাদের বিপরীতে গিয়ে জাহান্নামে যেতে চাইতে পারেন, আমরা পারব না।

রাসূল সাঃ নব্য সাহাবীদেরই বলেছিলেন যে,
হে খালিদ, আমার (পূর্বেকার) সাহাবাদের মন্দ বল না। আল্লাহর শপথ, যদি ওহোদ পাহাড় সোনাও হয়ে যায এবং তার সবটুকু তুমি আল্লাহর পথে ব্যয় কর তবেও আমার সাহাবাদের কারো এক দিনের সকালের বা বিকেলের ইবাদতের সমতুল্য হতে পারবে না। (আর রাহিকুল মাখতুম-৪২৭-৪২৮)।

যেখানে রাসূল সাঃ প্রথমযুগের সাহাবাদের মন্দ বলতে নিষেধ করছেন সেখানে আপনি প্রথম যুগের মুহাজির আনসার সাহাবাদেরই মন্দ বলছেন। রাসূল সাঃ এর অবাধ্য হওয়া কি আল্লাহর অবাধ্য হওয়া না? অবশ্যই আল্লাহর অবাধ্য হওয়া। আর শয়তান যদি আল্লাহর অবাধ্য হয়ে কাফির হয় তবে আপনারা কি মুসলিম থাকবেন?

============================================



প্রশ্ন-৯। “আল্লাহ্ কর্তৃক প্রেরিত ১ লক্ষ ২৪ হাজার নবী-রসুলগণ তাদের যাবতীয় কিছু উম্মতের জন্য সদকা হিসাবে রেখেগেছেন”- এই কথাটির দলিল-প্রমান কোথায়? আর তাঁরা যদি তেমনটি করেই থাকেন তাহলে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর স্ত্রীগণ তাঁর রেখে যাওয়া যাবতীয় কিছু ইসলামী রাষ্ট্রের নিকট হস্তান্তর করলেন না কেন অথবা ইসলামী রাষ্ট্র তাদের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করে নিল না কেন, যেমনটি হযরত ফাতিমা যাহ্রার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছিলেন? আবার আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আনুসারীগন রাসুল (সাঃ)-এর স্ত্রীগণকেও ‘আহলে বাইতের’ অন্তর্ভূক্ত বলে গণ্য করে থাকেন, অথচ আহলে বাইতের জন্য ‘সদকা’ হচ্ছে ‘হারাম’, তাহলে তারা সদকার মালগুলোকে কেন নিজেদের দখলে রেখেছিলেন?

=> সাহাবারা ইসলামের মডেল যাদেরকে আল্লাহ মনোনিত করেছেন। যারা সাহাবাদের বিরুদ্ধাচারণ করে তাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন,

সূরা নিসা-১১৫> যারা সত্যপথ প্রকাশের পরও রাসূলের বিরুদ্ধাচারণ করে এবং মুমিনদের (সাহাবাদের) অনুসৃত পথের বিপরীতে চলে, আমি তাকে সেদিকেই পরিচালিত করব যেদিক সে অবলম্বন করেছে এবং তাদের দিব জাহান্নাম। কত নিকৃষ্ট সে আবাসস্থল।

এ আয়াতটি যখন নাজিল হয় তখন মুমিন ছিল সাহাবারা। আর এই সাহাবাদের পথের বিপরীতে যারা যাবে তাদের আল্লাহ জাহান্নাম দিবেন বলে ঘোষনা দিয়েছেন।

রাসূল (স.) বললেন, "তোমরা ৭৩টি কাতারে বিভক্ত হবে এবং ১টি দলই জান্নাতে যাবে। সাহাবারা জিঞ্জেস করলেন কোন সেই দল। রাসূল সাঃ বললেন, যে দল আমার এবং আমার সাহাবাদের পথের উপর রয়েছে " (তিরমিজী)।

হাদিসে রাসূল সাঃ আরো বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা আমার সুন্নত এবং আমার পরবর্তীতে সঠিক পথে পরিচালিত খোলাফায়ে রাশেদীনের (৪ খলিফার) সুন্নত আকড়ে ধর।

প্রশ্নকারীর বক্তব্য অনুযায়ী সাহাবারা ভূল করেছেন। অনেক অন্যায় করেছেন। এখন প্রশ্নকারীর নিকট আমাদের প্রশ্ন আল্লাহ কেন আমাদের জন্য এই সাহাবাদের মডেল বানালেন, কেন বললেন তাদের অনুসৃত পথের উপর থাকতে? আল্লাহ কি ভূল করেছেন? (নাউজুবিল্লাহ) শীয়ারাই এমন আক্বিদাহ রাখতে পারে যাদের একাংশ আলী রাঃকেই আল্লাহ বলে ঘোষনা দিয়েছে। আমরা মুসলিমরা এমন আক্বিদাহ রাখি না। সাহাবারা কোন ভূল করেন নি। তারা সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন সকল ক্ষেত্রে। তারাই হলেন সেই সমস্ত ব্যক্তি যারা সর্ব প্রথম মুহাজির ও সর্ব প্রথম আনসার যাদের কে খাটিভাবে অনুসরণ করলে জান্নাতের গ্যারান্টি রয়েছে।

মক্কা বিজয়ের পরেও যারা মুসলিম হয়েছে তাদের উপরেও আবশ্য দায়িত্ব ছিল এই অগ্রজ মুহাজির ও আনসার দের খাটিভাবে অনুসরণ করা (তাওবা-১০০)। যাদের অনুসরণ করা পরবর্তী সাহাবীদের উপর আবশ্য দায়িত্ব ছিল তাদের ব্যাপারে যারা প্রশ্ন তুলে তারা মুসলিম না। কারণ তারা আল্লাহর ফায়সালাই মানে না। যারা আল্লাহর ফায়সালা মানে না তাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন,
সূরা মায়িদাহ-৪৪> যারা আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান অনুযায়ী ফায়সালা দেয় না তারা কাফের।

এখন আল্লাহ সাহাবাদের মডেল বানালেন সূরা তাওবা-১০০, বাকারা-১৩৭, নিসা-১১৫ নং আয়াত। এখন কেউ যদি এই সাহাবাদের না মানে তবে তারা কি আল্লাহ বিধান মানল? কখনোই না। তাই যারা আল্লাহর ফায়সালা মানে না তারা কাফের। ঠিক একই ভাবে শীয়ারাও সাহাবাদের ব্যাপারে আল্লাহর ফায়সালা না মেনে কাফের হয়ে গেছে।

============================================


প্রশ্ন-১০। আমরা পবিত্র কোরআনে পাঠ করে থাকি যে, “কোন মুমিনকে কেহ ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করলে তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম যেখানে সে চিরকাল থাকবে এবং তার প্রতি আল্লাহ্র গজব ও লানত বর্ষিত হবে এবং তার জন্য কষ্টদায়ক শাস্তি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।” [সূরা নিসা, আয়াত-৯৩]। ইতিহাস স্বাক্ষ্য যে, সিফফিন ও জমল যুদ্ধে প্রায় ৭০ হাজার মুসলমান নিহত হয়েছিলেন, এমতাবস্থায় হত্যাকারীদের অবস্থান কোথায় হবে? উক্ত আয়াতের বক্তব্য তাদের ক্ষেত্রেও কি প্রযোজ্য হবে না? তারা তাদের যুগের খলিফার বিরোধিতা করেছিল এবং ফিতনা সৃষ্টি ও হত্যা জজ্ঞের জন্য দায়ী, বিচারের দিনে তাদের অবস্থা কি হবে?

=> আল্লাহ তায়ালা বলেন, সূরা রুম-৩১-৩২> মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত হয়ো না যারা দ্বীনকে বিভক্ত করে এবং দলে দলে ভাগ হয়।

সাহাবারা অর্থ্যাৎ আলী রাঃ ও মুয়াবিয়া রাঃ দুটি দলে বিভক্ত। এখন প্রশ্নকারীর নিকট প্রশ্ন তারা কি দু দলই মুশরিক? তারা কি দলে দলে ভাগ হয়ে মুশরিক হয়ে গেছেন? আলী রাঃ ও মুয়াবিয়া রাঃ কি মুশরিক? উত্তর হবে সর্বসম্মতিক্রমে না।

কারণ শীয়ারাও এই জায়গায় এসে বলবে, "তাদের ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ভিন্ন"। ঠিক তেমনি ভাবে কোন মুমিন অন্য মুমিনকে ইচ্ছাকৃত ভাবে হত্যা করলে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে। তবে এখানেও সাহাবাদের ব্যাপারটাও ভিন্ন। উক্ত আয়াত সাহাবাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। যুদ্ধটি ছিল একটা ইজতিহাদি ভূল।

আপনার বক্তব্য অনুযায়ী উপরোক্ত সাহাবারা তালহা রাঃ, যুবায়ের রাঃ এবং আয়িশাহ রাঃ ফিতনার জন্য দায়ী এবং তারা নবী পরবর্তীতে মুনাফিক হয়ে গেছেন (নাউজুবিল্লাহ)। এখন আপনাদের নিকট আমাদের প্রশ্নঃ

(১) তাহলে কি আপনাদের দাবী অনুযায়ী রাসূল (সাঃ) একজন মুনাফেককে নিয়ে সংসার করেছেন? (নাঊযুবিল্লাহ)নাকি তিনি তখন জানতে পারেননি যে তিনি মুনাফেক, এখন আপনি এবং আপনার উস্তাদরা জেনে তার ঘোষণা দিচ্ছেন। আল্লাহকে ভয় করুন।
যেই আয়েশা (রাঃ)রাসূল (সাঃ)এর উপস্থিত স্ত্রীদের মাঝে সবচেয়ে প্রিয়তমা স্ত্রী ছিলেন। (বুখারী ও মুসলিম) যা্র বিছানায় থাকা অবস্থায় হযরত জিবরীল (আঃ) আগমণ করতেন। যার সম্পর্কে জিবরীল (আঃ) রাসূল (সাঃ)কে সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি দুনিয়া ও আখেরাতে তাঁর স্ত্রী। যার বুকে মাথা রেখে রাসূল (সাঃ) মৃত্যু বরণ করেছেন, যার ঘরেই তাঁর সমাধি হয়েছে। যিনি উম্মতের জন্যে রাসূল (সাঃ)এর গৃহের অভ্যন্তরের সকল বিষয়সহ অসংখ্য হাদীছ বর্ণনা করেছেন... তিনি ফেতনাবাজ?

আপনার কথা অনুযায়ী: রাসূল (সাঃ) জেনেশুনে (ক) একজন ফেতনাবাজ, (খ) কুরআন অমান্যকারীনী, (গ) মিথ্যাবদীনীকে নিয়ে ঘর সংসার করেছেন। (নাউযুবিল্লাহ্) রাসূল (সাঃ)এর জন্যে পূতপবিত্র নারীর কি অভাব ছিল? আল্লাহ আপনাদের হেদয়ায়েত করুন, আর না হয় উম্মুল মুমেনীনের নামে মিথ্যারোপ করার জন্যে লা’নত দিয়ে ধ্বংস করে দিন। দুনিয়াতেই যেন নিজের পরিণাম নিজের চোখে দেখতে পারেন। আখেরাত তো রয়েছেই।

আয়েশা (রাঃ)এর আলী (রাঃ)এর বিরুদ্ধে বের হওয়া একটি ইজতেহাদী ভুল ছিল এবং তিনিও নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন। কারণ মানুষ মাত্রেই ভুল হয়, নবী-রাসূল ব্যতীত কোন মানুষ কেউ ভুলের উর্দ্ধে নয়, কিন্তু তাঁর এই ভুলকে (ইসলামে সমস্ত ফেতনার মূল) বলে আখ্যা দেয়া বিরাট অন্যায়, এই অন্যায় আপনি এবং আপনার মত যারা অন্যের তালীমে কথা বলে তারাই করে।

যদি তিনি ফিতনাই করলেন, তবে আল্লাহর সিংহ হযরত আলী (রাঃ) এই ফিতনার মূলৎপাটন করলেন না কেন? কেন তিনি ফেতনাবাজকে চিরতরে ধ্বংস করে দিলেন না? তিনি কাকে ভয় করেছেন? তিনি তো হায়দার, তিনি আসাদুল্লাহ্। কেননা আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, “ফেতনা নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাও।” (সূরাঃ বাকারাঃ ১৯৩) বরং তিনি স্বসম্মানে আয়েশা (রাঃ)কে মদীনায় ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন। আয়েশা (রাঃ) কে হত্যা না করে আপনার কথামত তো তিনি কুরআনের এই আয়াতের লঙ্ঘণ করেছেন? (নাউযুবিল্লাহ্)

(২) তালহা ও যুবাইর (রাঃ)ও আপনার দাবী অনুযায়ী মুনাফেক ছিলেন, তাহলে কি নবী (সাঃ) দু’জন মুনাফেককে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছিলেন? (হাদীছটি আছে বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী ইত্যাদি গ্রন্থে)

এই দু’জনই ছিলেন মুহাজির সাহাবী। আর মুহাজিরদের প্রশংসা করে এবং তারা যে জান্নাতী তাদের উপর আল্লাহ সন্তুষ্ট সে ঘোষণা দিয়ে কুরআনে আয়াত নাযিল হয়েছে। (দেখুন সূরা তাওবাঃ ১০০)

(৩) মুআ’বিয়া (রাঃ) ছিলেন রাসূল (সাঃ)এর ওহী লিখক (কাতেবে ওহী)। তাহলে কি রাসূল (সাঃ) একজন মুনাফেককে কুরআন লিপিবদ্ধ করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন? এই জন্যে তো মনে হয় আপনারা এই কুরআন মানেন না, আপনাদের প্রভূ ইরানের আয়াতুল্লাহ্ খোমেনীর দাবী মতে কুরআন আরো আছে...।

তাছাড়া হাসান বিন আলী (রাঃ) তাঁর পিতার শাহাদতের পর মু’আবিয়া (রাঃ)এর খেলাফতকে মেনে নিয়েছিলেন। তাহলে কি জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত রাসূল (সাঃ)এর দৌহিত্র হযরত হাসান (রাঃ) একজন মুনাফেককে খলীফা স্বীকার করেছিলেন?

আসলে কি. আপনি যদি সত্যিকার ভাবে আল্লাহকে ভালবাসতেন, তাঁর রাসূলকে ভালবাসতেন, আল বাইতুর রাসূলকে ভালবাসতেন, সাহাবায়ে কেরামকে ভালবাসতেন তবে তাঁদের শানে এধরণের বেয়াদবী মূলক কথা কখনো বলতেন না। তাওবা করুন এবং ঈমান নবায়ন করুন, এখনও সময় আছে।

আবু বকর রাঃ জান্নাতি, ওমর রাঃ জান্নাতি, ওসমান রাঃ জান্নাতি, আলী রাঃ জান্নাতি, মুয়াবিয়া রাঃ সহ রাসূল যাদের জান্নাতের সূসংবাদ দিয়েছেন তারা সবাই জান্নাতি। মা আয়িশা রাঃ ও জান্নাতি, ফাতিমা রাঃ ও জান্নাতি। হ্যা, ইজতিহাদি ভূলের কারণে যে যুদ্ধ হয়েছে যেখানে ৭০০০০ মানুষ মারা গেছেন তাদের ব্যাপার আল্লাহর উপরই ন্যাস্ত। আল্লাহই জানেন তাদের কি হবে। আমরা আলিমুল গায়েব নই।

============================================

প্রশ্ন-১১। আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র কোরআনে আমাদেরকে জানিয়েছেন যে, “আর মদীনাবাসীদের মধ্যে অনেকেই কঠিন মুনাফেকীতে লিপ্ত, (হে রাসুল) তুমি তাদেরকে জান না আমি জানি।” [ সুরা তাওবাহ, আয়াত -১০১ ]। উক্ত আয়াতটি প্রমান করে যে, রাসুল (সাঃ)-এর জীবদ্দশাতেই মুনাফিকদের সংখ্যা অনেক ছিল, তাহলে রাসুল (সাঃ)-এর ইন্তেকালের পর তারা কোথায় চলে গেলেন? ঐতিহাসিকদের তথ্যানুযায়ী রাসুল (সাঃ)-এর ইন্তেকালের পর মুসলমানগণ দু’দলে বিভক্ত হয়েগিয়ে ছিলেন, একটি বনু হাশিম ও তাদের ভক্তবৃন্দ এবং অপরটি ছিল ক্ষমতাসীন দল ও তাদের ভক্তবৃন্দ, তাহলে এদের মধ্যেকার কোন দলটি মুনাফেকীতে লিপ্ত ছিল?

=> বোকামীমূলক প্রশ্নের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। যেমন বাংলাদেশে অনেক চোর আছে। দেশে দুইটি দল আছে বিএনপি ও আওয়ামীলীগ। এদের মধ্যকার কোন দলটি চোর?

আরে ভাই বাংলাদেশে অনেক চোর থাকলে চোরগুলো তো দুটো দলে থাকারই কথা। ঠিক একই ভাবে মুনাফিকরাও দুটি দলেই ছিল। আল্লাহই এ ব্যাপারে ভাল জানেন।

============================================


প্রশ্ন-১২। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতে ৪টি মূল নীতি হল, কোরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস। তাহলে উক্ত ৪টি মূল নীতির কোন একটি বিষয়ও কি রাসুল (সাঃ)-এর খলিফা নির্বাচনের ক্ষেত্রে বনু সকীফাতে উপস্থাপন করা হয়েছিল কি?

=> "উপস্থাপন করা বাধ্যতামূলক" এমন কোন ওহী কি আপনার প্রতি নাজিল হয়েছে? আবারও সাহাবাদের বিরুদ্দাচারণ করলেন। ভাই, সাহাবাদের আল্লাহ খাটি ভাবে অনুসরণ করতে বলেছেন। তাদের ভূল ধরা মানে আল্লাহরই ভূল ধরা যেহেতু আল্লাহ তাদের মনোনিত করেছেন। আর খলিফা নির্বাচনের ক্ষেত্রে বনু সকীফাতে মূলনীতি উপস্থাপন করার প্রয়োজনীয়তা সম্মানিত চার খলিফা বুঝলেন না, কোন সাহাবী বুঝলেন না, আর বুঝলেন আপনি? আসলেই এজন্যই শীয়াদের মুসলিমরা কাফির বলে?

============================================

প্রশ্ন-১৩। মনোনীত কোন খলিফার বিরোধিতা করা যদি স্বধর্ম বা স্বপক্ষ্য ত্যাগ করার সমান হয়ে থাকে, আর ঐ খলিফা যদি মুয়াবিয়ার পুত্র ইয়াজিদও হয়ে থাকে তবুও তাদেরকে রাষ্ট্রদ্রোহী বলা হবে। তাহলে ঐ সমস্ত বিদ্রোহিদের কি হবে যারা খোলাফায়ে রাশেদার ৪র্থ খলিফার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল?

=> আপনার বক্তব্য অনুযায়ী => খলিফার বিরোধীতা করা স্বধর্ম বা স্বপক্ষ্য ত্যাগ করার সমান। এবং ==> মুয়াবিয়া রাঃ এর পুত্র ইয়াজিদ খলিফার বিরোধীতা করার কারণে রাষ্ট্রদ্রোহী।

আপনি জানতে চেয়েছেন একই ভাবে আলী রাঃ এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারী তালহা রাঃ, যুবায়ের রাঃ ও আয়িশা রাঃ ও রাষ্ট্রদ্রোহী। এখানে বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়, হাসান রাঃও কিন্তু খলিফা মুয়াবিয়া রাঃ এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন, তিনিও কি রাষ্ট্রদ্রোহী? হাসান রাঃ কি স্বধর্ম ত্যাগী মুরতাদ? হোসাইন রাঃ ইয়াজিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন তখন ইয়াজিদ খলিফা ছিল। তাহলে তিনিও কি রাষ্ট্রদ্রোহী, স্বধর্ম ত্যাগী? (নাউজুবিল্লাহ)। আসলে শীয়ারা আলী রাঃ এর বিদ্রোহীদের অর্থ্যাৎ খলিফার বিদ্রোহীদের কাফির বলে কিন্তু হাসান রাঃ কে কাফির বলে না যদিও তিনিও বিদ্রোহ করেছিলেন খলিফার সাথে? এ জায়গায় আসলেই শীয়া কাফিররা চুপ খেয়ে যায়।

আমরা মুসলিমরা সাহাবাদের কাউকেই কাফির বলি না। এরা সবাই আমাদের মডেল। এদের অনুসরণ করলেই জান্নাত (তাওবা-১০০)। এদের বিরুদ্ধে গেলে জাহান্নাম (নিসা-১১৫)। এদের মত ঈমান আনলেই হেদায়েত পাওয়া যাবে (বাকারা-১৩৭)। কিন্তু শীয়ারা এই মহান সাহাবা ও আমাদের মা উম্মুল মুমিনিন আয়িশা রাঃ এর বিরুদ্ধাচারণ করে থাকে। আল্লাহ এদের হেদায়েত দান করুন।

============================================


প্রশ্ন-১৪। বিচার-বুদ্ধি সম্পন্ন মূলনীতি তো এটাই যে দু’টি দল যখন একই বিষয়ে দাবী উত্থাপন করে তখন যে কোন একটি অবশ্যই মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু দু’টি দলই সত্যবাদী হতে পারে না। এই নীতি অনুসারে জমল ও সিফফিন যুদ্ধে হত্যাকারী এবং নিহত উভয় পক্ষ কি জান্নাতবাসী হবেন? অথচ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের বক্তব্যানুযায়ী উভয় পক্ষই সত্যের উপর প্রতিষ্টিত ছিলেন!

=> আপনার ব্যাখ্যা ভূল। একই বিষয়ে দুদলই সত্যবাদী হতে পারে। যেমন বাবা মারা যাওয়ার পর একটি বাড়ী দু ছেলেই দাবী করল। এখন মালিক কি শুধু একজনই হবে? একজন সত্যবাদী অন্যজন মিথ্যাবাদী? উত্তর না। কারণ এখানে দুজনই সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত।

আবার এক বাপের এক ছেলে। এখানে বাড়ীটি দুজন দাবী করলে দাবী টিকবে না। এখানে একজনই সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। অর্থ্যাৎ সন্তানটি। আসলে একই বিষয়ে দাবী তুললে দুটোই সত্য হতে পারে, আংশিক সত্য হতে পারে। আবার মিথ্যাও হতে পারে। যেমন ১টি ব্যাগের হারানো বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলো এবং উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে নিয়ে যেতে বলা হলো। এখন দুজন লোক আসল এবং ব্যাগটি দাবী করল কিন্তু কেউই উপযুক্ত প্রমাণ দিতে পারল না। এখানে দুজনই মিথ্যাবাদী।

দুদল একই বিষয়ে দাবী উপস্থাপন করলে কারো টা পুরোপুরি ন্যায্য হতে পারে, কারো কারো আংশিক সত্য হতে পারে। কিন্তু তাই বলে যে কোন একজন যে মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত তা ১০০% বলা যাবে না।

জমল ও সিফফিন যুদ্ধে হত্যাকারী এবং নিহত উভয় পক্ষ থেকে কারা জান্নাতি হবেন কারা জাহান্নামী হবেন তার সিদ্ধান্ত কি আমরা নিব? নাকি আল্লাহ নিবেন? শীয়ারা এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে, আমরা মুসলিমরা পারি না। কারণ আমরা গায়েব জানি না।

============================================

প্রশ্ন-১৫। মহানবী (সাঃ) বলেছেন, “সে সত্ত্বার কব্জায় আমার প্রাণ, আমি তাঁর কসমই করে বলছি যে, এই ব্যক্তি (আলী) এবং তাঁর শিয়াগণ (অনুসারীগণ) কিয়ামতের দিনে সফলকাম হবেন।” অপর দিকে, এমন কোন হাদীস আছে কি যেখানে রাসুল (সাঃ) নিশ্চয়তা প্রদান করে বলেছেন যে, ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালিক, ইমাম শাফেয়ী এবং ইমাম হাম্বলের অনুসারীরা জান্নাতে যাবে?

=> শিয়া শব্দের অর্থ কি অনুসারী। হাস্যকর অনুবাদ। অনেকটা পাগলের প্রলাপ এর মতো। আর এই হাদিস কোন গ্রন্থে আছে যে
মহানবী (সাঃ) বলেছেন, “সে সত্ত্বার কব্জায় আমার প্রাণ, আমি তাঁর কসমই করে বলছি যে, এই ব্যক্তি (আলী) এবং তাঁর শিয়াগণ (অনুসারীগণ) কিয়ামতের দিনে সফলকাম হবেন।”

আমরা কোথাও এমন হাদিস পাই নি। শীয়ারা তাদের ঈমামকে নিয়ে নিয়ে দলে দলে বিভক্ত হয়ে গেছে এবং নবী সাঃ এর নামে অসংখ্য জাল হাদিস তৈরী করছে অতীতেও এবং এখনও। আগে হাদিসের দলিল দেন। তারপর উত্তর দিব। আর আমরা কোন মুসলিমই এমন গ্যারান্টি দেই না যে আবু হানিফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী এবং ইমাম হাম্বল জান্নাতী। আমরা এও বলি না যে আমরা তাদের অনুসরণ করি। আমরা তো অনুসরণ করি আল্লাহ রাসূল মোহাম্মদ সাঃ কে।

আমাদের ইমাম মোহাম্মদ সাঃ আর শীয়া হলো ১২ ইমাম। সুন্নীরা মাজহাবের ইমামদের থেকে প্রদত্ত দলিলগুলোর অনুসরণ করে। আর শীয়ারা অনুসরণ করে তাদের ইমামদের কোন দলিল ছাড়াই। মূল কথা হলো আমাদের ইমামের নাম হলো মুহাম্মদ সাঃ।

============================================



প্রশ্ন-১৬। হযরত উসমান (রাঃ)-এর জীবদ্দশায় হযরত আয়েশা (রাঃ) সর্বক্ষণ তার সমালোচনা করেছেন এবং তাকে হত্যা করার জন্যও উস্কানী যুগিয়েছেন। অথচ এ আবার কেমন করে সম্ভব হল যে তিনি হযরত উসমান (রাঃ)-এর হত্যার পর হযরত আলীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে দাবী উত্থাপন করলেন যে, “উসমানের হত্তাকারীকে ফাঁসি দিতেই হবে”? অতঃপর তিনি হযরত উসমান (রাঃ)-এর হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য মক্কা ত্যাগ করলেন এবং বসরা নগরী থেকে তার অভিযান পরিচালনা করলেন কেন? তার উক্ত সিদ্ধান্তটি হযরত উসমান (রাঃ)-এর সত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ছিল না কি হযরত আলীর বিরুদ্ধে তিনি যে বিদ্বেষ পেষণ করতেন সেটারই বহিঃপ্রকাশ?

=> প্রশ্নকারীর প্রশ্নটি মা আয়িশাহ রাঃ এর বিরুদ্ধে। এ কেমন সন্তান যে মায়ের প্রতি বিদ্বেস জ্ঞাপন করছে। এরাই হচ্ছে শীয়ারা যারা তাদের মায়েদের সম্পর্কে খারাপ ধারণা রাখে। সাহাবাদের মধ্যে অনেক সময় মতবিরোধ হয়েছে। হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। মতবিরোধ হতে পারে কিন্তু হত্যা করার উস্কানী যুগানোর ওহী আপনারা কোথায় পেলেন?
এটা তো শয়তানের ওহী যা নাজিল হয় তার বন্ধুদের উপর।
সূরা আনআম-৬/১২১> নিশ্চয়ই শয়তান তার বন্ধুদের প্রতি ওহী করে।

উসমান রাঃ এর হত্যাকারীদের ফাসি চাওয়াটা যৌক্তিক ছিল এবং আলী রাঃ ও এটাই চেয়েছিলেন। এখানে আয়িশাহ রাঃ এর উদ্দেশ্য ছিল সৎ। কিন্তু আলী রাঃ চেয়েছিলেন আগে খলিফা নিযুক্ত হোক তারপর ওসমান হত্যার প্রতিশোধ নেওয়া হবে।

আপনার প্রশ্নে উল্লেখ করলেন যে, আয়িশাহ রাঃ নাকি আলী রাঃ এর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করতেন সেটা বহিঃপ্রকাশ হলো যুদ্ধের সিদ্ধান্ত। আপনি কোন কি দিয়ে বুঝলেন যে আলী রাঃ এর প্রতি আয়িশা রাঃ বিদ্বেষ পোষণ করতেন? আপনি কি আয়িশাহ রাঃ এর মনের খবরও রাখতেন, নাকি আপনি আলিমুল গায়েব। আল্লাহু আকবর। এজন্যই শীয়াদের কাফির বলা হয় যারা তাদের মায়েদেরও ছাড়ে না।

============================================

প্রশ্ন-১৭। হযরত আয়েশার (রাঃ) প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করা যদি কুফুর হয়ে থাকে তাহলে আমরা তার হত্যাকারী সম্পর্কে কেমন ধারণা পোষণ করব?

=> মুমিনদের মা আয়িশাহ রাঃ কে কি হত্যা করা হয়েছিল? কই পাইসেন এই তথ্য? মা আয়েশা রাঃ এর উপর বিশ্বাস স্থাপন না করা অবশ্যই কুফর। কারন তিনি মুমিনদের মা। বর্তমানে মাকে অস্বীকার কারী হলো শীয়ারা।

============================================

প্রশ্ন-১৮। সাধারণতঃ বলা হয়ে থাকে যে, সাহাবাগণ ছিলেন বীর-বিক্রম, উদার প্রকৃতির ও জ্ঞান সম্পন্ন এবং তারা আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যেই তাদের জীবন অতিবাহিত করেছেন। আমরা যদি তাদের বীরত্ব সম্পর্কে জানতে চাই তাহলে ইতিহাস অনুসন্ধান করে জানতে হবে যে, সবচাইতে স্বনামধন্য সাহাবী হযরত উমর (রাঃ) বদর, অহুদ, খন্দক, খায়বার এবং হুনাইন যুদ্ধে কতজন কাফিরকে হত্যা করেছেন? কতজন মুশরিককে তিনি তার খেলাফত আমলে হত্যা করেছেন? আমরা যদি অনুসন্ধান করি যে অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যক্তি অস্বীকার করেছিল এবং হুদায়বিয়া সন্ধির পূর্বে রাসুল (সাঃ)-এর আদেশ উপেক্ষা করে বলেছি যে, “মক্কার কাফেরদের মাঝে আমার কোন সুভাকাঙ্খী নাই বরং উসমানের অনেক শুভাকাঙ্খী এবং আত্মীয়-স্বজন আছে?

=> ওমর রাঃ অসংখ্য কাফিরদের হত্যা করেছেন। এতে খারাপের কি দেখলেন? শীয়ারা বলে আবু বকর রাঃ, ওমর রাঃ ও ওসমান রাঃ অসংখ্য কাফিরদের হত্যা করেছেন। এজন্য তারা খারাপ। হুম অবশ্যই উনারা প্রতিটি যুদ্ধে অসংখ্য কাফির মুশরিকদের হত্যা করেছেন। ঠিক একই ভাবে আলী রাঃ ও বদরের যুদ্ধে সর্বপ্রথম এগিয়ে গিয়েছিলেন এবং হত্যা করেছিলেন অসংখ্য কাফিরদের। বদরের যুদ্ধের প্রথমেই যারা কাফিরদের হত্যা করেছেন তারা হলেন হামজা রাঃ, আলী রাঃ ও ওবাইদা ইবনে হারেস রাঃ। আলী রাঃ সকল যুদ্ধে সমান ভাবে আবু বকর, ওমর, ওসমান সহ সকল সাহাবাদের সাথে যুদ্ধ করেছেন। যাকাত অস্বীকারকারীদের সাথেও আবু বকর রাঃ এর নেতৃত্বে যুদ্ধ করেছেন। কিন্তু শীয়ারা এককভাবে আলী রাঃকে রবের আসনে বসায় আর অন্যান্য সাহাবাদের বলে মানুষ হত্যাকারী। আশ্চর্য। প্রশ্নকারী নিজেও ওমর রাঃ কর্তৃক কাফির হত্যাকে হাইলাইট করেছে কিন্তু আলী রাঃ কর্তৃক কাফিরদের হত্যাকে গোপন করেছে। এটাই হচ্ছে শিয়াদের আক্বিদাহ। মক্কায় কাফেরদের মাঝে নবীরও শুভাকাঙ্গী ছিল। যেমন একঘরে করে রাখার সময় বনু হাশেম ও বনু মোত্তালেব এর কাফেররা নবীকে বাচিয়েছিল। মুসলিমদের অনেক শুভাকাঙ্গী ছিল। এতে সমস্যার কি? মুসলিমরা কাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে?
আল্লাহ বলেন, তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। (বাকারা-১৯০)

আপনি বললেন, ওমর রাঃ হুদাইবিয়ার সন্ধির সময় রাসূলের হুকুম অমান্য করেছেন? এটা একটি মিথ্যা অপবাদ। মহানবী সাঃ আলী রাঃ কে বলেছিলেন হুদাইবিয়ার সন্ধি লিখতে। কাফিররা বলেছিল যে লেখ "নিম্নোক্ত বক্তব্যসমূহের উপর আল্লাহর রাসূল সাঃ সন্ধি করেছেন"। কাফিররা আল্লাহর রাসূল এর জায়গায় বলল আবদুল্লাহর পুত্র মোহাম্মদ লিখতে। কারণ কাফিররা যেহেতু নবীকে রাসূল ই মানে না, তাই তারা বলেছিল যে লিখতে "নিম্নোক্ত বক্তব্যসমূহের উপর আবদুল্লাহর পুত্র মোহাম্মদ সন্ধি করেছেন"। তখন আলী রাঃ লিখেন নি। রাসূল সাঃ বললেন হে আলী, তুমি লিখ। কিন্তু আলী রাঃ তখনও লিখেন নাই। তাই শীয়ারা বলে যে ওমর রাঃ নাকি হুকুম অমান্য করেছেন, আসলে আলী রাঃ ই হুকুম অমান্য করেছেন বাহ্যিকভাবে। (সূত্র-আর রাহিকুল মাখতুম-পৃষ্ঠা নং-৩৫১)

তবে আমরা মুসলিমরা কখনোই বলি না যে তারা প্রকৃতই হুকুম অমান্য করেছেন। উনাদের দুজনকেই আমরা সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি। উনারা কেউই হুকুম অমান্য করেন নাই। এরা হলো শীয়ারা যারা একজন সাহাবীকে রবের আসনে বসিয়ে উপরে তোলার চেষ্টা করে এবং অন্য সাহাবীকে অসম্মান করে থাকে। এজন্যই আমরা মুসলিমরা তাদের কাফির বলি।

============================================

প্রশ্ন-১৯। সিহাহ্ সিত্তার মধ্যে আছে যে রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “আমার পরে ১২ জন খলিফা হবেন।” তারা কারা? আমরা বিশ্বাস করি যে উক্ত ১২ জন ইমাম রাসুল (সাঃ)-এর আহলে বাইত থেকে হবেন। অথচ মোল্লা আলী ক্বারী হানাফীর দৃষ্টিকোণ থেকে উক্ত হাদীস অনুযায়ী ১২ জন খলিফার তালিকার মধ্যে ইয়াজিদ ইবনে মোয়াবিয়াকে ৬ষ্ঠ খলিফা বলে গণনা করা হয়েছে। সত্যিই কি রাসুল (সাঃ) এমন এক পাপিষ্ট ব্যক্তির নাম ঘোষণা করতে পারেন? অথচ আমাদের নিকট আরো এটি হাদীস আছে যেখানে বলা হয়েছে যে, “যে ব্যক্তি তার জামানার ইমামকে না চিনে মৃত্যুবরণ করল সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করল।” এমতাবস্থায় আমাদের জন্য অতিব জরুরী হয়ে গেছে যেন আমরা অনুসন্ধান করি যে উক্ত ১২ জন খলিফা কারা?

=> প্রথমত আমার পরে ১২ জন খলিফা হবে মর্মে হাদিসটি কোন গ্রন্থে পাইসেন? দলিল কি? রেফারেন্স দেন? দ্বিতীয়ত- আপনারা কোন দলিল দিয়া বুঝলেন যে ১২ জন খলিফা আহলে বাইত থেকে হবে। এটাও কি সেই শয়তানের ওহী ( সূরা আনআম-৬/১২১) থেকে পাওয়া। হুসাইন রাঃ কি ইয়াজিদের আহবানে সাড়া দিয়েছিলেন নাকি শীয়াদের যারা তাকে ভালবাসার ভান করে? মূলত শীয়ারাই উনাকে আহবান করেছিল এবং হত্যা করেছিল। পাপিষ্ট হলে তো শীয়ারাই সর্বপ্রথম পাপী যারা হুসাইন রাঃ কে ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে তারা।

আর একটা হাদিস দিলেন যে, “যে ব্যক্তি তার জামানার ইমামকে না চিনে মৃত্যুবরণ করল সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করল।”

এটাও জাল ভিত্তিহীন হাদিস। এটি কোন গ্রন্থে সহীহ সনদে আসেনি। কিছু শীয়াদের বইয়ে এই কথাটা রয়েছে। তারা ইমামকে ধরা ওয়াজীব প্রমাণের জন্য এই বাক্যগুলো ব্যবহার করে থাকে।
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ আল্লাহর শপথ করে বলেছেন যে রাসূল সাঃ কখনো এই কথা বলেন নি। যাহাবীও এ মতের সমর্থন করেছেন তার গ্রন্থ মুখতাসারু মিনহাজিস সুন্নাহ গ্রন্থের ২৮ পৃষ্ঠায়। (দেখুন-যইফ ও জাল হাদিস সিরিজ-১ম পর্ব পৃষ্ঠা নং-৩২৪)

============================================


প্রশ্ন-২০। আল্লাহ্র আইনকে কেউ কি পরিবর্ত করতে পারে? পবিত্র কোরআন ধাপে ধাপে ঘোষণা দিয়েছে যে, “আর কোন মুমিন নর ও নারীর অধিকার নাই যে, আল্লাহ্ ও রাসুল যে বিষয় ফয়সাল দিয়ে দিয়েছেন তারা সে বিষয়ে কোন ভিন্ন সিদ্ধান্ত নিবে। আর যে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলের আদেশ অমান্য করবে, নিশ্চয়ই তারা সুস্পষ্ট রূপে বিপথগামী।” (সুরা আহযাব-৩৬)। উক্ত আয়াতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলতে হয়, তাহলে হযরত উমর (রাঃ) তারাবীহ নামাজ কেন চালু করলেন, এক বৈঠকে তিনি তালাক দেয়া বৈধ এবং ফজরের আযানে ‘আস্সালাতু খায়রুম মিনান নাউম’ বাক্যটি কেন চালু করলেন? আল্লাহ্ র আদেশের সাথে সম্পর্কিত বিষয়াবলীতে তিনি কোন অধিকারে হস্তক্ষেপ করেছিলেন?

=> প্রথমত আল্লাহ ছাড়া কোন বিধান দাতা নেই। সেই আল্লাহই বলছেন যে সাহাবাদের খাটি ভাবে অনুসরণ করতে সূরা তাওবার ১০০ নং আয়াতে।
সূরা তাওবা-৯/১০০> যারা মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম (অর্থ্যাৎ আবু বকর, ওমর, ওসমান, আলী, ইবনে যুবায়ের রাদিয়াল্লাহু আনহুম) এবং পরবর্তীতে যারা তাদের খাটি ভাবে অনুসরণ করবে তাদের প্রতি আল্লাহ খুশি হয়ে যাবেন, তারাও আল্লাহর উপর খুশি হয়ে যাবে। তাদের আল্লাহ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার তলদেশে নহর প্রবাহিত।

সেই আল্লাহই বলছেন আবু বকর ও ওমর রাঃ কে খাটিভাবে মানতে। এখন ওমর রাঃ কে অস্বীকার করা মানে আল্লাহর হুকুমকেই অমান্য করা। কারণ ওমর রাঃ কে অনুসরণ করা আল্লাহর হুকুম। শীয়ারা আল্লাহর হুকুম অমান্য করে কাফির হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা এই সাহাবাদের বিপরীতে গেলে জাহান্নামের ঘোষনা দিয়েছেন সূরা নিসার-১১৫ নং আয়াতে। শীয়ারা ১১৫ নং আয়াতের সাথে কুফুরী করে সাহাবাদের বিপরীতে গিয়েছে বলেই আমরা তাদের কাফির বলি। ওমর রাঃ যাই করেছেন সেগুলো আল্লাহর হুকুমের অন্তর্গত। কারণ জামাতে তারাবীহর সালাত রাসূল সাঃ ই চালু করেছেন বুখারীর তারাবীহর অধ্যায় অনুযায়ী। পরবর্তীতে ওমর রাঃ সেই রাসূল সাঃ এর পদ্ধতিই আবার পুনরায় চালু করেছেন। এটি তিনি নিজে থেকে বানান নি। তিনি যাই করেছেন সেগুলোও ইসলামিক শারীয়ারহ অন্তর্গত। খোলাফায়ে রাশিদীন আমাদের ইসলামীক শারিয়াহর অন্তর্ভূক্ত।

============================================

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০১২ দুপুর ১২:০০
১০টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×