somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লাল সোয়েটারের গল্প

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ৯:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(প্রথম পর্ব)

ডিসেম্বরের শেষের দিকে ঠান্ডা ভালই পড়েছে কুয়াশাও কম যায় না। সামিয়া লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে। তবু্ও তার
ঠোটেঁ কেমন একটা হাসি লেগে আছে। লেপের উষ্ণতায় ঘুমটা ভালই হচ্ছে বুঝি। সুন্দর স্বপ্নও দেখছে বলে মনে
হচ্ছে।

সূর্য পুরোপুরি না উঠলেও সূর্যের আলোকরশ্মি পূব আকাশে উঁকি দিয়েছে এখন।
সাদিকা(সামিয়ার আম্মু)ফজর নামাজ পড়ে জায়নামাজেই বসে ছিল। এলার্ম ঘড়িটা টুংটুং বেজে উঠল। সাদিকা
জায়নামাজ ছেড়ে উঠে পড়ে। জায়নামাজটা গুছিয়ে রেখে সামিয়ার রুমে যান তিনি।

সামিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে ডাকে সামিয়া! সামিয়া মামনি উঠো। দেখ! কত্ত ভোর হয়ে গেছে। সবাই উঠে গেছে শুধু
তুমিই ঘুমিয়ে আছ ‘মা’। সামিয়া আড়মোড়া ভেঙ্গে লেপ থেকে মাথা বের করল। ঘুম কাতর চোখে বলল, কি হয়েছে
আম্মু।
সকাল হয়ে গেছে উঠে পড়।
আর এক মিনিট ঘুমাই না আম্মু। সামিয়ার আদুরে স্বর।

সারা রাত তো ঘুমালে। এখন আবার ঘুমাতে হবে? উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেয়ে নাও। আর এক মিনিটও না।
সাদিকার কড়া জবাব। সামিয়া বুঝে গেছে আর কাজ হবে না। ‘উঠছি মামনি’ বলতে বলতে সামিয়া লেপ থেকে বের
হল। বিছানা ছাড়ে।

সাদিকা মেয়েকে ঘুম থেকে তুলে নাস্তা বানাতে গেল। ঘুমে ঢুলঢুল চোখে সামিয়া ঘর থেকে বের হয়। তার মুরগিটা
ছানাদের নিয়ে উঠানে ঘুরে ঘুরে পোকা-মাকড় খাচ্ছে। গাছের পাতায় শিশির জমে আছে। ঠিক যেন মুক্তোর মতে
জ্বলছে শিশিরগুলো। তাই-ই কিছুক্ষন পরপর টপটপ করে ঝরছে। শীতের কাপড় পড়া হয়নি। তাই কেমন শীত শীত
লাগছে সামিয়ার। এখন তার মনোযোগ মুরগিছানাদের দিকে। প্রতি সকালে নিজে ওঠে আগে তাদের খেতে দেয়
সামিয়া । আজ এখনো দেয়া হয়নি। সে ঘর থেকে চাল এনে উঠোনে ছিটিয়ে দিল। মুহুর্তেই মুরগীর বাচ্চাগুলো
খাবার দেখে দৌঁড়ে চলে এলো। কী সুন্দর যে লাগছে বাচ্চাগুলোকে দেখতে! উফ! সামিয়ার মনটা আনন্দে নেচে
উঠলো।

সামিয়া ফ্রেশ হয়ে স্কুলের জন্য রেডি হয়ে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালো একবার।
কি বানাচ্ছো আম্মু?
রুটি বানাচ্ছি।

আর কতক্ষণ লাগবে?
তোমার ক্লাসের সময় কি হয়ে গেছে?
না আম্মু এখনো হয়নি।
তাহলে এতো তাড়া কিসের?
না এমনি বললাম।
প্লেট নিয়ে এসো তোমার নাস্তা দিচ্ছি।
তুমি খাবে না আম্মু?
হাতের কাজগুলো শেষ করে নেই পরে খাব। তুমি খেয়ে নাও।
সামিয়া ঘর থেকে প্লেট নিয়ে এলো। সাদিকা ডিম ভেজে রুটি দিল। সামিয়া প্লেট নিয়ে ঘরে গিয়ে খেতে বসল।
সামিয়া খাওয়া নিয়ে খালি বাহানা করে। সকালে হাতে কাজ থাকে দেখে মেয়েকে ঠিক ভাবে খাওয়াতে পারে না
সাদিকা। সামিয়া আস্তে আস্তে খেয়ে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বলল। যাই আম্মু।
ঠিকঠিক আস্তে আস্তে যেও।
ঠিক আছে আম্মু।

সামিয়ার গায়ে আজ সুন্দর একটি সোয়েটার। সোয়েটারে বুকের অংশে সুন্দর ফুলের ছবি আঁকা। সোয়েটারে কী
দারুণ মানিয়েছে ওকে। একটা ছোট পরি মনে হচ্ছে। স্কুলে বন্ধুরা নিশ্চয় খুশি হবে। সামিয়া তাই ভাবছে আর মনে
মনে আনন্দ পাচ্ছে এখন। ভাবতে ভাবতেই পথে রুপার সাথে দেখা।
কেমন আছ রুপা?
ভাল, তুমি কেমন আছ?
ভাল, খুব শীত পড়েছে না?
হুম। লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমালে বেশ ভাল হত।
সেটা কি আর বলতে হয়। কিন্তু কি আর করা, ক্লাসে যে আসতে হবে আমাদের।
রুপা বলল, হ্যাঁ। তাই তো।

কথা বলতে বলতে ওরা ওদের ক্লাসের সামনে চলে এল। ক্লাস শুরু হতে এখনো অনেক দেরি। সামনের বেঞ্চে
বসার জন্যই সামিয়া আগে আগে এসে পড়ে। শুধু সে’ই নয় আরো অনেকে আছে যারা সামনের বেঞ্চে বসতে চায়।

কে কার আগে আসতে পারে এ নিয়ে রিতিমতো তাদের মাঝে প্রতিযোগিতা চলে। কোনদিন সে বসে কোনদিন অন্য
কেউ।
আজ সামনের বেঞ্চে বসা হয়ে গেছ। তাই দ্বিতীয় সারির বেঞ্চেই বসল সামিয়া। ক্লাস শুরু হওয়ার আগে এখন
কিছু সময় ফাঁকা। এ সময় ফাঁকা থাকলে সব মেয়েরাই খেলে। কেউ খেলে দড়িলাফ। কেউ গোল্লাছুট। কেউ খেলে
কানামাছি। যে যেভাবে পারছে গ্রুপ করে খেলছে। সামিয়াও তাদের একদলে যোগ দিয়েছে।

সে খেলছে দড়িলাফ। দড়িলাফ খুব ভাল খেলতে পারে ও। সহজে ক্লান্তও হয়না। মেয়েদের খেলার শেষ নেই।
এদিকে আজ হলো কী একটু সময় না যেতেই রঞ্জু বেল পিটিয়ে দিল। রঞ্জু বেল পেটাচ্ছে একনাগাড়ে। ঘন্টার
শব্দ শুনে খেলা ফেলে হুড়োহুড়ি করে সবাই ক্লাসে এলো। ক্লাসে বসে একে অন্যের সাথে খেলা বিষয়ে কথা
বলছে। তাদের কথার বিষয়, আজ কে খেলায় জিতেছে কে হেরেছে! এদের কেউ আফসোস করছে আজ ভালো খেলতে
পারেনি বলে, কেউ রাগ ঝারছে খেলার সময় কম বলে।

সামিয়া কথার ফাঁকে লক্ষ করলো লিমা আজও আগের ভারি ফুল হাতা গেঞ্জি পরে আছে। লিমার মুখটা মলিন।
সামিয়া বেশ কয়েকবার জিজ্ঞাসা করেছিল, তুমি যে এটা পরে আস তোমার শীত লাগে না? লিমা বলেছিল, হালকা
শীত পড়েছে। এজন্য আবার সোয়েটার লাগে নাকি। আজ সে অল্প অল্প কাঁপছে। মুখে যাই বলুক না কেন শীত
উপেক্ষা করতে পারছে না সে। সামিয়া আজ তাকে কিছুই বলল না। বলেই বা কী হবে। কিছু না কিছু বলে কাটিয়ে
দিবে ও। হঠাৎ ক্লাসে মেম এসেছেন। তাই সে পড়ায় মন দিল।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:২৮
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×