রাস্তার পাশের আম গাছটা বেশ মোটা হলেও বেশি লম্বা হতে পারে নি। পাড়ার সব ছোট ছেলেরা এটায় বসে। নানা খেলায় মেতে ওঠে। ওদের অত্যাচারে গাছটা লম্বা হতে পারে নি। কেউ গাছ চড়তে না পারলেও এটায় চড়তে পারে অনায়েসে।
শুভ, হাসিব, শাওনসহ সবাই আম পারছে। গাছের নিচে এলাকার এক ছোট্ট ছেলে বসিয়ে রেখেছে। যে আমগুলো নিচে পড়ে যাবে সেগুলো দেখার জন্য। নিচের ছেলেটা সময় বুঝে কৌশলে দু’একটা আম লুকিয়ে ফেলছে।
শাওন নিচু স্বরে বলল, রফিক আসছে। শিহাব আড় চোখে দেখে রফিক একা আনমনে হাঁটছে। তাদের এখনো দেখে নি।
একটু জোড়ে শিহাব বলল, তোর মাথার উপরের আমটা পার। ওটা অনেক বড়।
তোর ঘাড়ের পিছনে একটা আম আছে বলল আলামিন।
কথার আওয়াজ শুনে দাঁড়িয়ে গেল রফিক। গাছে হাসিবকে দেখতে পেল সে। অন্যদের দেখতে না পেলেও সবাই যে এখানে আছে সেটা বুঝতে তার মোটেও কষ্ট হলো না। মূল পথে না গিয়ে লুকিয়ে অন্যের বাড়ির ভিতর দিয়ে গেল সাজুর বাড়ি।
সাজু,সাজু, ডাক দিল রফিক।
ঘর থেকে বের হতে হতে বাচ্চু বলল, কিরে রফিক কি হইছে।
আসার সময় দেইখ্যা আসছি হাসিব হাসিনা বুবুর গাছ থেকে আম পারতাছে। হের লগে সবাই আছে নিশ্চিত।
তোরে দেখে নাই তো আবার।
আরে নাহ। আমারে দেখব কোন থেইক্যা। এত সহজ।
তাড়াতাড়ি চল, হাতে নাতে ধরতে হইব। সব সময় বাচইচা যায়। হাসিনা জ্যাঠির গাছ থেইক্যা আমা পারা, দেখাইতাছি।
দু’জনে তাড়াতাড়ি গেল। আম গাছের নিচে এসে চ্যাচাতে লাগলো, ওই গাছে কেড্যায়রে। তাড়াতাড়ি নাম। নাম কইতাছি।
শুভ গাছ থেকেই বলল, আম পারছি চাচা।
বাচ্চু মুখ ভেংচিয়ে বলল, আম পারছি। দাড়া তোদের আম পরা দেখাইতাছি।
হাসিব বলল, আমরা কি করেছি চাচা।
কাহিনী করো হাসিনা জ্যাঠি গাছ থেইক্যা আম চুরি করে বলছ, আমরা কি করছি। এখন বিপদে পরে চাচা ডাকতে আইছছ। সব সময় যে বাচ্চা, বাচ্চা কইরা ডাকছ। চল হাসিনা জ্যাঠির কাছে চল। আজ তোদের কঠিন বিচার হবে।
বাচ্চু, রফিক ওদের ধরে হাসিনা বুবুর কাছে নিয়ে যাচ্ছে। কাচুমাচু মুখে বাধ্য ছেলে মতো যাচ্ছে তারাও। কেউ কোন কথা বলছে না। রফিকের দিকে তাকিয়ে বাচ্চু মুচকি হাসলো। জ্যাঠি, ও জ্যাঠি। কই গ্যালা তুমি।
কি হইছে, চিল্লাইতেছছ ক্যান।
চিল্লামু না তো কি করমু। তোমার গাছের সব আম তো শেষ কইরা ফ্যালাইল।
আমার গাছের আম ধরে এত সাহস। আজ ওর একদিন কি আমার একদিন।
হাসিনা বুবু ছড়ি হাতে নিয়ে তেড়ে এলো। হাসিনা বুবু এ ছড়ি দিয়ে চলাফেরা করে। ছড়ি ছাড়া হাটতে পারে না। তবে কেউ তার গাছের ফল ধরলে তখন তেড়ে যেতে ছড়ি লাগে না। কাউকে পিটাতে মোটেও কার্পণ্য করেন না। তাই তাকে সবাই জমের মতো ভয় পায়। তার গাছের ফল পারবে কি গাছের নিচে পরে থাকা ফল কুড়িয়ে নেয়ার আগে দেখে নেয় হাসিনা বুবু আছে কিনা।
বাচ্চু বলল, কে আবার তোমাগো আদরের শুভ।
হাসিনা বুবু বাচ্চুর দিকে তাকিয়ে বলল, তো কি কোন কাম নাই। হারাডাদিন তাগো পিছনে পইরা থাকছ।
বাচ্চু কিছু বুঝতে না পেরে বলল, আমি আবার কি করছি। তোমার গাছের আম পারছিলো দেইখ্যা ধইরা নিয়া আসছি। আম চুরি করে হে আর দোষ হয় আমার। তোমার গাছও যদি কেউ কাট্টা লায় তাও কমু না।
চুপ কর বেশি পটপট করিস না। বাইরাইয়া পিঠের ছাল তুইল্লা ফালামু।
অবস্থা বেগতিক দেখে বাচ্চু আর কথা বাড়ালো না। হাসিনা বুবুকে বিশ^াস নাই। তার লাঠি কখন কার উপর পওে তার ঠিক নেই।
হাসিনা বুবু বলল, তুই না কইছিলি আমের ভত্তা খাওয়াবি। কই ভত্তা কই।
শুভ বলল, ভর্তা বানাবো কি আমই তো পারতে পারিনি। গাছ থেকে ঘরে নিয়ে এসছে।
যা তাড়াতাড়ি ভত্তা নিয়া আয়। বাচ্চু তোওে কইয়া দিলাম, সামনে যদি এমন করছ তোর পিঠের ছাল আস্তা রাখমু না।
শুভ বাচ্চুকে বলল, চাচা আপনিও ভর্তা খাবেন?
বাচ্চু কিছু না বলে রফিক কে নিয়ে চলে গেল।
আলামিন, শুভ, হাসিব, শাওন শিহাব হাসিনা বুবুর বাড়ি থেকে বের হলো বাচ্চু পিছনে পিছনে। রাস্তায় এসেই বাচ্চা বাচ্চা বলে হাক তুলল।
বাচ্চু ওদের দিকে তেড়ে আসলে ওরা আবার হাসিনা বুবুর বাড়িতে ঢুকে যায়।
প্রতিবার কোন না কোন ভাবে বেঁচে যাচ্ছে। এভাবে হলে তো হবে না। ওদের ভাল প্যাচে ফেলতে হবে কোন ভাবেই যেন বাঁচতে না পারে। রাগে গজরাতে গজরাতে বলল আরমান।
সাজুরা মিটিংয়ে বসেছে। শুভদের প্যাচে ফেলার নিত্যনতুন ফন্দি আটতে মিটিংয়ে বসে তারা। সাজুর বেশ কিছু ফাঁদ কাজে দিয়েছে। এ নিয়ে গর্ভের শেষ নেই তার।
রফিক বলল, হেরা তো এইবারও বাইচ্চা গেলো।
সাজুর কপালে চিন্তার ছাপ। তাদের বোকা বানিয়েছে তার জন্য সে চিন্তিত না। কিভাবে বানালো সেটাই ভাবছে। নিড়বতা ভেঙ্গে সাজু বলল, ওদের আম পাড়তে কেডায় দ্যাখছে।
আমি দেখছি, বলল রফিক। আমি সোজা গিয়ে বাচ্চু চাচারে কইছি।
তুই ওদের গাছে ওঠতে দেখছছ?
না, হেরা তহন আম পারতাছিল।
যখন ওদের ধরে নিয়ে তখন হেরা কই ছিল?
তহনও আম পারতাছিল।
আমের ভত্তা খাইতে কতগুলা আম লাগে? তুই আমার বাড়ি গিয়া বাচ্চুরে নিয়া আইতে আইতে কমে এক কেজি আম পারতে পারব ওরা। এই আম দিয়া সারা গেরাম খাওয়াইতে পারব। গাধা তুই হেগরে প্যাচে ফালাও নাই, ওরা তোমারে ফালাইছে। নাইলে আম নিয়া ওরা চইল্লা যাইতে পারত। বইস্যা থাকত না।
নিচু স্বরে রফিক বলল, হেরা তো আমাকে দেহে নাই।
ওরা গাছে ছিল। গাছ থেকে তোকে দেখে নাই এটা তোরে কে কইল, বলল আরমান।
সাজু বেশ কিছুক্ষণ বসে থেকে মুচকি হাসলো। বলল, বাচ্চু তুই শুভওে দেইখ্যা রাখবি। কই যায় দেখবি। কিছু করতে যাবি না আবার। শাওনের নৌকায় ওঠলে খবর দিবি। আমি ওদেও চহুইর (বৈঠা) নৌকা থেইক্কা সরাইয়া রাখমু।
আরমান বলল, এসবের মানে কী?
কোন কথা কইবা না। খালি দেখতে থাকো। এমন প্যালান করছি এইবার বাঁচতে পারব না।
কি করতে চাও সেটা তো বলবা। তাহলে বুঝতে সুবিধা হবে।
শুন তাইলে, আলামিনদের বাড়ির পিছনের খালটায় শুভ বাড়ি আইলে নৌকা বায়। এবারও নৌকা বাইব। আলামিনদের চহুইর নৌকার মধ্যে রাখে। তাই সে এইটা খুজব না। নৌকায় ওইঠঠা দেখব চহুইর নাই। তখন ভিইজ্জা আওন লাগবো।
কল্পনায় শুভকে কাক ভেজা দেখে মুচকি হাসলো সাজু। সাজুর চোখ চকচক করছে। মনে মনে বলল, এইবার তুমি কই যাইবা। ধরা তোমারে খাইতেই হইব। বারবার তুমি আমরারে ধরা খাওয়াইবা আর তুমি ধরা খাইবা না হেইডা হইব না।
চলবে...
প্রথম পর্বের লিঙ্ক: https://bit.ly/2V9mcvW
দ্বিতীয় পর্বের লিঙ্ক: https://bit.ly/37KxlFZ
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৮:৩৪