শাহাবুদ্দিন সাহেব। একটি সরকারী অফিসের ২য় শ্রেণির কর্মচারী সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে ঢাকা শহরের কেরানীগঞ্জ এলাকাতে একটা তিন তলা বাড়ী নির্মান করেছেন তাও চাকুরীর শেষ প্রান্তে এসে। তিনতলা বাড়ীর দুইতলা পর্যন্ত প্লাস্টার করা আর বাকি একতলায় এখনো প্লাস্টার করা হয়ে উঠেনি। পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫ জন। দুই মেয়ে আর এক ছেলে শহাবুদ্দিন সাহেবের অর্ণা,স্বর্ণা, আর রিজু। অর্না ভাইবোনদের মধ্যে সবার বড় মেধাবিনি পরিশ্রমী পড়াশোনা করছে অনার্সে। স্বর্ণা মেঝ পড়াশুনাতে সেও ভালো তবে গান আর ছবি আকায় খুবই দক্ষ। আর সবার আদরের রিজু বাসার ছোটো ছেলে খুবই ডানপিটে স্বভাবের আর প্রাথমিক এর গণ্ডি পেরিয়ে গেলো বছর মাধ্যমিক শ্রেণির ছাত্র সে খুব দুরন্ত।
আমার গল্পের নায়িকা অর্না
নায়ক নেই তা ভাবলে কিন্তু চলবে না নায়কের পরিচয় না হয় পরের দিকে গিয়ে বলবো।
কলেজে আর দশটা সাধারণ ছাত্রীর মতন মেধাবিনী চুপচাপ স্বভাবের শিক্ষক-শিক্ষিকা ভালোভাবেই চেনেন অর্না কে।
অর্না দের বাড়ি ৩ তলা নিচ তলায় অর্নাদের বাস।দুই ও তিনতলায় ভাড়ায় দেওয়া তিনতলায় ভাড়া থাকে আমার গল্পের নায়ক সোহানের পরিবার এর বসবাস। সোহান এর বাবা চাকুরী থেকে অবসরে গিয়েছেন ২ বছর হলো। পেনসনের অর্থই চলে সোহানদের সংসার।
সংসারে বাবাই একমাত্র উপার্যক্ষম ব্যাক্তি ছিলেন সোহান দেখতে সুন্দর শখ ছিলো বিমানবাহিনী তে চাকুরী করবে ফ্লাইং অফিসার হবার স্বপ্ন দেখতো সে কিন্তু মধ্যবিত্ত পরিরারে জন্ম বলেই সে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেলো। সোহানের মা লিপি বেগম একদিন পত্রিকায় দেখলেন বিমানবাহিনীর বিমান উড়ার কিছুক্ষণ পরেই বিধ্বস্ত হয়েছে। এদেখে তিনি সেই দিনই সোহান কে বলে দিলেন “বাবা তুমি আমার কথা শোনো আর কখনই বিমান সেনা হব এইটা বলবা না”।
সেটা ২০০৮ সালের কথা সে সময় সোহান মাধ্যমিক পড়ছে। মাধ্যমিক শেষ করেই বিমানবাহিনীর পরীক্ষায় বসতে যাবে সে কিন্তু মায়ের মন রক্ষা করতে গিয়ে আর হলো না।
সোহানের বাবা জামিল সাহেব
ছিলেন শিক্ষক ৩৩ বছর চাকুরী করেছেন সততার সাথে কেননা তিনি ছিলেন দেশ গড়ার মতন একটি মহৎ পেশায়। তিনি চেয়ে ছিলেন সোহান যেটা হতে চায় সে সেটাই হোক।
সোহানের একটা বোন আছে নিবেদিতা ওর নাম। সোহান নিবেদিতা কে ডাকে লেবু বলে। লেবুর বয়স সবে ১৯ ইন্টার মানে উচ্চমাধ্যমিক পড়ছে। সাহাবুদ্দিন সাহেবের মেঝ মেয়ে স্বর্নার সাথে পড়াশোনা করে সে। সে দিক থেকে নিবেদিতা আর স্বর্না বান্ধবী।নিবেদিতা স্বর্নার বান্ধবী বলেই শাহাবুদ্দিন সাহেব জামিল সাহেবকে বাড়ী ভাড়া দিয়েছেন আর শিক্ষক বলেই তো কথা......
যাই হোক
সোহান মাস্টার্স পাশ বেকার ছেলে ।
মায়ের কথা ফেলতে না পাড়ায় সে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে কেমেস্ট্রিতে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে আজ চাকুরীর পেছন পেছন ছুটছে। তিন-চার মাস হল জামিল সাহেব স্বপরিবারে শাহাবুদ্দিন সাহেবের বাসায় ভাড়া উঠেছেন।
শাহাবুদ্দিন সাহেব ও জামিল সাহেবের খুবই সক্ষতা। প্রতিদিন সন্ধ্যায় শাহাবুদ্দিন সাহেব অফিস থেকে ফিরে এসে দাবা খেলেন জামিল সাহেব তার দাবা খেলার সঙ্গী। সকালে হাটতে যান নিয়ম করে দুইজনে। বয়সে জামিল সাহেব বড় হলেও বন্ধু সুলভ সম্পর্ক।
অর্না সোহান কে দেখে মাঝে মধ্যে বাড়ির ছাদে। সোহান কে অর্না ভাইয়া বলে ডাকে সোহান অর্নার চেয়ে বড়। অর্নার ভাই রিজু মাঝে মাঝে সোহান ভাইয়ার কাছে অঙ্ক আর ইংরেজি পড়তে যায়। চাকুরী না করলেও বসে নেই সোহান ঢাকায় বিভিন্ন এলাকায় প্রাইভেট পড়ায় সে। পরিবার কে কিছু সাপোর্ট করে।পাশাপাশি চাকুরী খুঁজছে
রিজু বাড়ীর মালিকের ছেলে তাই ফ্রী পড়ায় সে মাঝে মাঝে।
একদিন বিকাল বেলায় ছাদে মেলা কাপড় আনতে গিয়ে প্রথম দেখা হয় অর্না আর সোহানের।
সোহান আগে থেকেই জানতো বাড়ির মালিকের দুইটা মেয়ে আছে। আর স্বর্নাকে সে চিনতো কারণ সে তার ছোট বোনের বান্ধবী।
একদিন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো সোহান কিছুক্ষণ আগে জোড়-বৃষ্টি হয়েছে,
বাসার সামনের রাস্তাটা তেমন ভালো না রিক্সায় করে যাচ্ছিলো অর্না বৃষ্টি হয়ে রাস্তা ভরে যাওয়ায় খানা-ক্ষন্দ টের পাওয়া যাচ্ছিলো না।
রিকশাওয়ালার চালানোর গাফিলতিতে সেই জলভরা রাস্তায় ভাঙ্গন বুঝতে না পারায় রিক্সা থেকে পড়ে যায় অর্না। কাদাপানিতে পড়ে গিয়ে ব্যাথা পায় জামা-কাপড় নোংরা হয়ে যায়......
অর্না পড়ে গেলে তাকে উদ্ধার করতে আসে অন্য সব পথচারি। তবে সোহান সেখানে থাকলেও এগিয়ে আসে নি এটা লক্ষ করে অর্না। বিষয়টা ওকে ভীষণ কষ্ট দেয়, সে ভাবে সোহান ভাইয়া আমার এই বিপদে এগিয়ে এলো না?
চলবে...............
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:১৪