কিরে অর্না মা এখন কেমন লাগছে ?
রাতে আপুর জ্বর এসে পড়েছিলো আব্বা স্বর্না বলে উঠলো। তাই নাকি রে কি বলিস আমাকে বা তোর মাকে ডাকিস নাই কেন?
আমি ডাকতে চেয়ে ছিলাম আব্বা আপুই মা মানা করলো বললো যে কিছু হয় নাই আব্বা- আম্মা কে অযাথা ডাকিস না বেশী রকমের সমস্যা ফীল করলে আমি বলবো আমি তাই ডাকি নাই আব্বা সরি......
বিকালে ফিরি ডাক্তারের কাছে নিয়া যাবো নে ভাত খেয়ে নাপা আছে খেয়ে নিস (জ্বরের ওষুধ)
আমি বিকালে ফিরে আসি। আর আজকে কলেজে যাইতে হবে না বাসায় থাক
রিজু পত্রিকা হাতে নিয়ে দৌড়ে এসে পত্রিকা টা শাহাবুদ্দিন সাহেবের হাতে দিলো......
পত্রিকা টা হাতে নিয়েই রিজু কে বললেন কিরে আজ স্কুলে যাবি না বাবা?
না বাবা... আপির তো শরীর ভালো না তাই আমারও মন ভালো না
আপই তো জ্বর তাই বলে তুই কেন স্কুলে যাবি না রিজু? বুঝি স্কুল ফাকি দিতে খুব ভালো লাগে
তুই আজ স্কুলে অবশ্যই যাবি আমি অফিসে গিয়ে বাসায় ফোন দেবো কিন্তু
স্কুল ফাকি দিলে তো চলবে না
আমি অফিসে যাবার সময়ে তোড় মাকে বোলে যাবো
স্বর্না তুইও কিন্তু কলেজ মার দিবি না সামনে না তোর পরীক্ষা
জ্বী আব্বা।
রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন শাহাবুদ্দিন সাহেব
স্বর্নার মা এসে বলে গেলেন এই তোরা খাবি আয় টেবিলে নাস্তা দিয়েছি
আম্মা আসছি স্বর্না বললো।
নাস্তার টেবিলে......
এই রিজু দুষ্টুমি বাদ দিয়ে খেয়ে স্কুলে যা ক্লাস সিক্সে উঠলি তাও যদি দুষ্টুমি একটুও কমে
তুমি থামো তো ঋজুর মা আমি বলে দিয়েছি ও আজ স্কুলে যাবে
কিরে যাবি না?
যাবো আব্বা।
এইতো আমার ছেলে ভালো ছেলে। ওহ হ্যাঁ অর্না সন্ধ্যায় এসে আমি তোকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো তুই আজ বাসায় থাক।
জ্বী আব্বা
শাহাবুদ্দিন সাহেবের স্ত্রী সাহাবুদ্দিন সাহেব কে এককাপ চা এগিয়ে দিলেন।
নিজ রুমে বসে বই পড়ছে অর্না, কলেজের বান্ধবীকে ফোন করে জানতে হবে আজ কি কি পড়া দিয়েছে ভাবলো সে।
মা দু কাপ চা হাতে......
অর্না চা করেছি খাবি
দাও মা
মা তোমার মোবাইল টা দিও তো কল করতে হবে
কেনো তোর টা?
পানি তে পড়ে ভিজে গেছে এরপর থেকে আর অন হচ্ছে না
আগে বলিস নি কেন তোর বাবা কে বলে সারাতে পাঠাইতাম
ওটা পরেও করা যাবে, অর্না বললো।
অর্নার মাথায় শুধু মাত্র একটা বিষয়ই ঘুরপাক খাচ্ছে
সোহান ভাইয়া দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার এক্সিডেন্ট দেখলো কিন্তু এগিয়ে এলো না!!! ভাইয়া কে আমার জিজ্ঞাসা করতেই হবে কেন এটা করলো সে...
সন্ধ্যায় শাহাবুদ্দিন সাহেব বাসায় ফিরলেন।
অর্না মা চল ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। শরীর তো আর খারাপ করে নাই মা
না বাবা করে নাই জ্বর আর আসে নাই ডাক্তারের কাছে আর যাওয়া লাগবে না আমিতো সুস্থ্যই
বুঝিস কিন্তু বড় হয়েছিস তার পরেও বাবা-মায়ের মন
না বাবা কোন সমস্যা হলে জানাবো
রিজুটা অংক করছিলো হঠাৎ একটা অংক করতে গিয়ে বুঝতে পারলো না।
এক দৌড়ে অর্নার রুমে
আপা অংক টা পারছি না করে দাও তো বুঝে নিই।
আয় রিজু দেখি কি অংক
অংক দেখায় রিজু.........
এতো একদমই সহজ রে
অংক বোঝাতে গিয়ে রিজু কে প্রশ্ন করে বসলো তোর মাস্টার কি বাসায় আছে?
কোন স্যার?
তোর সোহান স্যার
তাতো জানি না আপা কেনো রে আপা?
না কিছু না এমনি তেই জানতে চাইলাম আর কি।
পরের দিন বিকাল বেলা
বাসার ছাদে দাঁড়িয়ে গুনগুন করে গান গাইছছিল অর্না
নিচে থেকে গানের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিলো
আজ সোহান পড়াতে যায় নাই তাই রুমেই ছিলো সে
গানের শব্দ শুনে ছাদে এলো গল্পের নায়ক
সে মনে করেছিলো স্বর্না গান করছে। স্বর্না যে ভালো গান গাইতে পারে সেটা সোহান আগে থেকেই জানতো।
ছাদে উঠে.........
বাহ খালি গলায় সুন্দর গান গাইছো তো স্বর্না ভালোই লাগছে আমি কি গান শুনতে পারি?
অর্না পেছন ফিরে ছিলো
না! পারেন না! একদমই পারেন না! কখনই পারেন না সোহান ভাইয়া।
ঘুরে দাঁড়াতেই
ওহ অর্না!! আমি ভেবেছিলাম তো তুমি স্বর্না কেমন আছো?
সেটা কি জানার দরকার আছে ভাইয়া?
কেনো??
কেনো জানেন না?
না জানলে বলি, দেখলেন রাস্তার ওই কাদামাটি তে রক্ষা থেকে পড়ে গিয়ে এক্সিডেন্ট করলাম
অথচ আপনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন?
কেমন মানুষ আপনি??
আমার কথা শোনো একবার আমাকে বলতে দাও
আমি এগুই নি কারণ তুমি যদি আমাকে দেখে লজ্জা পাও
সে জন্যই এগুই নি
জানেন ভাইয়া আমি ভীষণ কষ্ট পেয়েছি আপনি আমার এই দূর্দিনে এগিয়ে আসেন নি বলে আপন মানুষ হয়ে আপন মানুষের দুর্দিনে এলেন না!!
যাক সে সব কথা ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলে?
না যাই নি বাবা বলেছিলো আমি যাই নি কোন সমস্যা বোধ করিনি তাই যাই নিই।
শুনুলাম নাকি তোমার নাকি জ্বর এসেছিলো এখন কি অবস্থা তোমার?
জ্বর এসেছিলো কে বললো আপনাকে?
স্বর্না বললো আমাকে নয় লেবুটা কে বলতেছিলো শুনলাম
ওহ তাই নাকি?
হ্যাঁ। এখন তো শরীর ভালো?
ভালো
পড়াশোনার খবর কি কেমন চলছে?
আর পড়াশোনার কথা আর না-ই বা বললেন ভাইয়া
(দুজনের কিছুক্ষণ কথা.........)
যাই ভাইয়া মাগরিবের আজান দিচ্ছে
আসি ভাইয়া
যাও তাহলে বললো সোহান।
সোহানের মনে একটু অনুসুচনা এলো
যদি আমি দেখে না দাঁড়িয়ে থাকতাম যদি সাহায্য করতাম!
(চলবে.........)