লালমনিরহাটে সম্প্রতি মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে "ধর্ম অবমাননার" উছিলায় পিটিয়ে ও পুড়িয়ে মেরে ফেলেছে স্থানীয় সচেতন (!) ও ধর্মপ্রাণ (!) আপামর জনতা। ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পরে, নিহত ব্যক্তিকে অনেকক্ষেত্রে "পাগল" সম্বোধন করতে দেখা যাচ্ছে।
আধুনিক, উন্নত ও মানবিক সভ্যতার সমাজে "পাগল" বলে কোন শব্দ নেই। "পাগল" শব্দটি পিছিয়ে পড়া জাতিগোষ্ঠীরা ব্যবহার করে আসতো; যারা জ্ঞানে-বিজ্ঞানে এবং প্রযুক্তি-প্রকৌশলে পিছিয়ে আছে।
শরীরে যেমন জ্বর হয়, ব্যাথা হয়, ঘা হয়, আঘাতপ্রাপ্ত হয়, রক্ত ঝরে, পুঁজ পড়ে, সর্দিকাশি হয়, হাড় ভেঙ্গে যায়, তেমনি মানুষের মনেও হাজারো রকমের সমস্যা, যন্ত্রণা ও রোগ হয়।
শারীরিক অসুখের যেমন ডাক্তার আছে, চিকিৎসা আছে, প্রতিরোধক আছে, প্রতিষেধক আছে, তেমনি মানসিক সব সমস্যা ও রোগেরও আছে।
রাগ হওয়া, মন খারাপ হওয়া, দুশ্চিন্তা হওয়া, ভুলে যাওয়া, এগুলো সচরাচর মানসিক সমস্যার উদাহরণ। ঠিক যেমন, সময়মতো খাবার না খেলে পেটে গ্যাস জমে ব্যাথা করাটা একটি সচরাচর শারীরিক সমস্যার উদাহরণ।
কেউ দূর্ঘটনায় পা ভেঙ্গে ফেললে, আমরা কি তাকে তিরস্কার করি? তাকে নিয়ে হাসাহাসি করি? আড়ালে গিয়ে বাজে কথা বলি? জনসম্মুখে অপমান করি? তাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করি? করি না।
ঠিক তেমনি, দূর্ঘটনাজনিত কারণে, বা যেকোন আকস্মিক বা প্রাকৃতিক কারণে, যেকোন স্বাভাবিক মানুষের, নানারকমের মানসিক সমস্যা ও সংকট দেখা দিতে পারে।
বিশ্ব প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে। ২০ বছর আগের বিশ্ব আমূল বদলে গিয়েছে। জলবায়ু বিপর্যয় বা মহামারি বা অটোমেশন বিপ্লব বা অদূর ভবিষ্যতের যেকোন স্নায়ুযুদ্ধ বা বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা বদলে দিতে পারে অনেক দেশের মানচিত্রও। এরকম অবস্থায় আমাদের দেশের মানুষ যদি নিজেদের চিন্তাচেতনা ও কাজকর্ম আপডেট করতে না পারে, তাহলে বরং গোটা জাতিটাকে "পাগল" বলা শ্রেয়।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ৮:৫৭