somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেশপ্রেমের স্মার্ট ও যথার্থ প্রতিফলন কেমন হওয়া উচিত

০১ লা নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিডি ক্লিন চট্টগ্রামের গ্রুপে ছবিগুলি আপলোড করেছে এক ভলান্টিয়ার, পোস্টের শিরোনাম- "সব প্রশ্নের উওর একটায়
♥দেশ প্রেম"। অর্থাৎ, সব প্রশ্নের উত্তর একটাই- দেশপ্রেম। পোস্টটি দেখে একই সাথে খুবই ভালো এবং খুবই খারাপ লাগছে। ভালো কেন লাগছে, কাওকে ব্যাখা করতে হবে না। ভালো কাজ এবং ভালো আবেগ-অনুভূতি দেখলে কারই না ভালো লাগে। খারাপ কেন লাগছে বলি।

প্রথমত, আমরা জানি, এই কাজগুলি কাদের করা দরকার, এবং কাদের অবহেলার কারণে এই সংকটগুলি তৈরি হয়েছে। দুই পক্ষই নিজেদের দায়িত্ব পালনে ব্যার্থ বা উদাসীন বা অপারগ বা অনিচ্ছুক। তাদের পরিবর্তে স্বেচ্ছাসেবীরা খুব কম প্রাপ্তির বিনিময়ে, অসম্ভব নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর এসব কাজ করে যাচ্ছেন। এসব কাজের বিনিময়ে এই শিক্ষিত ও ভদ্রঘরের ভলান্টিয়ারেরা না পাবে কোন সামাজিক বা আর্থিক সম্মান, না তাদের ক্যারিয়ার প্রোফাইলে যোগ হবে বিশেষ কোন মাইলফলক।

খারাপ লাগার দ্বিতীয় ও প্রধানতম কারণ বলতে গিয়ে, ভারতের একটি অসাধারণ ঘটনার উল্লেখ করি। ভারতে প্রচুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ/ভার্সিটি আছে, এবং ইঞ্জিনিয়ার তৈরিতে, সংখ্যার দিক দিয়ে, বিশ্বে মোটামুটি শীর্ষে আছে ভারত। দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত এক ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউটের কয়েকজন শিক্ষার্থী, বেশ কয়েক বছর আগে খেয়াল করলো, মিউনিসিপালিটি বা নগর ব্যবস্থাপনা কতৃপক্ষের ক্লিনার বা সুইপারদের অনেকে, বছরের কিছু নির্দিষ্ট সময়ে, শহরের আন্ডারগ্রাউন্ড নর্দমা, সুয়ারেজের লাইন ও ম্যানহোলের ভেতরে ঢুকে, সুয়ারেজের ময়লা পরিস্কার করে, ময়লা চলাচলের পথ পরিস্কার করে, পানি যাওয়ার পথ সুগম করে। এই কাজ ও প্রক্রিয়া, প্রচণ্ডভাবে ঝুকিপূর্ণ, অস্বাস্থ্যকর ও অমানবিক। ক্লিনারেরা এই কাজের সময়ে অনেক ক্ষেত্রে কয়েক মিনিটের জন্য তরল আবর্জনার ভেতরে নিমজ্জিত অবস্থায় পর্যন্ত থাকেন। যেটা কাজ চলাকালীন অবস্থায় তো হুমকিস্বরুপ বটে, কাজ শেষ করার পরেও তা দীর্ঘমেয়াদে ওই ব্যক্তি ও তার পরিবারের জন্য ক্ষতিকর।

এসব দেখেশুনে, ওই ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্টরা, একটি প্রকল্প হাতে নেয়। অশেষ প্রচেষ্টার ফলে, তারা এমন একটি স্বয়ংক্রিয় মেশিন বানাতে সক্ষম হয়, যেটি মানুষের সরাসরি ইনভলভমেন্ট ছাড়াই, নর্দমার ভিতর থেকে ময়লা তুলে আনা ও চলাচলের পথ পরিস্কার করতে সক্ষম। এবং একই সাথে এই পুরো রোবটিক সিস্টেম, বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করাও সহজ।
সাথে সাথেই স্থানীয় প্রাদেশিক সরকার এই মেশিন কমার্শিয়ালি ম্যানুফ্যাকচার করার উদ্যোগ নেয়। এবং নির্মাণ শেষ হওয়ার পরে, কাজ শুরু করার আগে, ওই ক্লিনারদেরকেই সুন্দর, ভদ্র ও পরিচ্ছন্ন ইউনিফর্ম পড়িয়ে, মেশিনগুলি চালানোর প্রশিক্ষণ দিয়ে, বর্ধিত বেতনে পুনরায় নিয়োগ করা হয়। ধীরে ধীরে পার্শ্ববর্তী স্টেটগুলিও এই কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। উল্লেখ্য যে, বিশ্বের উন্নত সব দেশে অনেক বছর আগে থেকেই, এই ধরণের সব ঝুকিপূর্ণ, অস্বাস্থ্যকর ও অমানবিক কাজগুলি, মেশিন দ্বারা করা হয়ে আসছে।

বাংলাদেশের মানুষ, পাশ্চাত্যের অনুকরণে ফ্যান্সি ফুড রান্না করে, পরিবেশন করে, বিদেশী গানের সাথে নেচেগেয়ে, খেয়েদেয়ে, ভরে ভরে মলমূত্র ত্যাগ করতে পারে, আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলতে পারে, কিন্তু যে কাজটা করা দরকার, সেটার জন্য সামান্য আওয়াজও তুলতে পারে না।

জনগণের টাকা দিয়ে, বৈদেশিক সাহায্য দিয়ে, রেমিটেন্সের টাকা দিয়ে, বা ঋণের বোঝা মাথায় চাপিয়ে, এমন এমন মেগাপ্রজেক্ট হাতে নিতে পারে সরকার, যা দেশের ও জনগণের কোনই উপকারে আসবে না কখনই। অথচ, দেশকে বসবাসের যোগ্য আধুনিক, পরিচ্ছন্ন ও সভ্য লোকালয়ে পরিণত করতে পারে, এরকম কোন জনবান্ধব প্রজেক্টে কোন আগ্রহ নেই সরকারের। অচ্ছুৎ, অস্পর্শ্য যেই সুইপার সম্প্রদায়ের মানুষেরা যুগের পর যুগ অমানবিক ও অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করছে, তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নেও কিছু করার ইচ্ছা নেই গোটা দেশবাসীর। চাইলেই দেশের ইঞ্জিনিয়ারদের দিয়ে এসব যন্ত্র বানিয়ে নিজেরা যেরকম ব্যবহার করতে পারতো, তেমনি রপ্তানি করে সাবলম্বীও হওয়া যেতো।

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৫৩
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×