somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্টঃ বহাল, সংশোধন বা বাতিল

০৩ রা মার্চ, ২০২১ রাত ১২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি আইনটি পড়িনি। এরকম আরো অনেক আইনই পড়িনি। কিন্তু প্রয়োগ দেখেছি। আইনের প্রয়োগ, সুফল, কার্যকারিতা, উপকারিতা- এসব দেখেই সাধারণ নাগরিক একটি আইন সম্পর্কে ধারণা পায়, অভিমত দেয়। যাদের বিশেষভাবে লাগে না, তারা ছাড়া তো আর কেউ এসব খুঁটিয়ে পড়ে না।

যদি প্রশ্ন হয়- এই আইন বলবৎ থাকবে, সংশোধিত হবে, নাকি বাতিল হবে; তবে আমার উত্তর- "বাতিল"। আমার সরকারি চাকরি করার ইচ্ছে নেই, বা সরকারি চাকরির বয়স নেই, বা সরকারের কোন প্রণোদনা বা করুণা পাওয়ার ইচ্ছা নেই, বা এই সরকারের উপর আমার আস্থা নেই- এসব কারণেই যে আমি নির্ভীকভাবে এটা বলছি- তা নয়। "বাতিল" বলার কারণ খুবই প্রায়োগিক এবং পরিস্থিতিনির্ভর। ডিজিটাল ডোমেইনে আলাদাভাবে কাওকে নিরাপত্তা দেওয়ার কোন প্রয়োজনীয়তা আমার মতে নেই। প্রচলিত আইনকাঠামোই সাফিশিয়েন্ট ছিল/আছে। ডিজিটাল ডোমেইন বলতে বুঝিয়েছি- ব্লগ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, অনলাইন নিউজপোর্টাল, ট্র্যাডিশনাল মিডিয়ার অনলাইন ভার্সন, যেকোন কমার্শিয়াল/এডুকেশনাল/অর্গানাইজেশনাল ওয়েবসাইট।

খুব টেকনিক্যাল আলোচনায় না গিয়ে সরলভাবে বলি।

ধরি, কোন এক নিউজমিডিয়ায় অনলাইনে দাবী করলো- ঢাকা শহরের সবগুলো ট্রেনস্টেশনের সবগুলো এন্ট্রি/এক্সিট পয়েন্টে যে স্যানিটাইজিং টানেলগুলো বসানো হয়েছিল, সেসবের কন্ট্র্যাক্ট নিয়েছিল রেলমন্ত্রীর ভাতিজা ও তার লোকজন; কোনরকম টেন্ডার ছাড়াই বা লোকদেখানো টেন্ডার করে (হোক সেটা ই-টেন্ডার)। সেই কাজ তার সাবকন্ট্রাক্টে আরেক কোম্পানিকে দিলো; সেই কোম্পানি আবার আরেক কোম্পানিকে। এভাবে প্রতিটা টানেল বানাতে খরচ পরলো ১ লাখ টাকার কম; আর শেষ পর্যন্ত সেই টানেল সরকার কিনে নিলো ৩ লাখ টাকার কিছু বেশিতে। অর্থাৎ, রেলমন্ত্রীর ভাতিজার কোম্পানি- প্রতিটা স্যানিটাইজিং গেইটের জন্য লাভ করলো ২ লাখ টাকার বেশি। এক্ষেত্রে, যদি যন্ত্রগুলো ঠিকমতো এবং দীর্ঘসময়ধরে, আশানুরূপ সার্ভিস দিতো, তাও একটা কথা ছিল। কিন্তু অনেক ডিভাইসই ঠিকমতো সার্ভিস দেয়নি, এবং দ্রুতই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। অনেকগুলোতে যে কেমিক্যাল ছিটানো হচ্ছে, তা কারসিনোজেনিক এবং মানুষের জন্য অনেক দিক দিয়ে ক্ষতিকর; স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ছাড়াই শুধুমাত্র লোকদেখানো উন্নয়নের উছিলায় লাভের জন্য এই প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়েছিল। এবং ৩ লাখ টাকার সেবা দেওয়ার পরিবর্তে ১ লাখ টাকার সেবা দিচ্ছিলো জিনিসগুলো। কিন্তু, জনগণের ভোটে বসা সরকার দ্বারা পরিচালিত রাষ্ট্র, জনগণের টাকা খরচ করে, জনগণকে আকাঙ্খিত ৩ লাখ টাকার আকাঙ্খিত সেবা দেওয়ার জন্য এই প্রজেক্টের অনুমতি দিয়েছিল।

তোহ- ধরলাম, কোন এক মিডিয়া অনলাইনে এই অনুসন্ধানী রিপোর্ট ছাপালো। সেই রিপোর্টের পিছনের ফিল্ড ওয়ার্কার ও সাংবাদিকেরা, সেই মিডিয়ার এডিটর ও মালিক, সেই নিউজ যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছে, সেই রিপোর্ট নিয়ে যারা সোশাল মিডিয়ায় বা ব্লগে নিজেদের মত আলোচনা-অভিমত প্রকাশ করেছে, সবাইকে এখন "ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্ট"-এর বলে যা খুশি করতে পারে সেই পক্ষ, যাদেরকে ঐ রিপোর্টে দুর্নীতি ও অনিয়মের জন্য দায়ী করা হয়েছে। এই আইনের বলে মামলা দিয়ে বা মামলা ছাড়াই, যেকোন বাহিনী দিয়ে বা বাহিনী ছাড়াই, দোষী সাব্যাস্ত করে বা দোষ প্রমাণ করা ছাড়াই, লেখালেখির পিছনের মানুষগুলোকে যেকোন শাস্তি দিতে পারে ঐ পক্ষ। অবশ্য, অরাজক কোন সমাজে কোন আইন বা ধারা ছাড়াই উঠিয়ে নিয়ে গায়েব করে ফেলতে পারে; সেটাও হতে দেখেছি আমাদের দেশে; ঐ আলোচনায় যাচ্ছি না।

এখন প্রচলিত আইনী কাঠামোয় কি হতে পারতো- সেটা বলি। ধরি- এই প্রতিবেদন অনলাইনে বা প্রিন্ট/ইলেক্ট্রনিক মিডীয়ায় (!!) প্রকাশ পেলো। প্রকাশের পরে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা যেকোন সরকারি দায়িত্বশীল কতৃপক্ষ, দায়িত্বশীলতার সাথে, সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ-দ্রুত তদন্তের উদ্যোগ নিয়ে (!!), তদন্ত ফলাফল প্রকাশ করে (!!), দোষ প্রমাণিত হলে (!!), দোষীদের শাস্তি দিলো। কিন্তু, কোন কারণে, দেখা গেলো- বাংলাদেশের কোন মন্ত্রী-এমপি কোন দুর্নীতি করেন না, তাদের কোন আত্মীয়-বন্ধু-পরিবার-পরিচিতজনেরা কোনভাবেই রাজনৈতিক ও সরকারি ক্ষমতায়নের মদদপুষ্ট হয়ে ব্যবসায়িক ও আর্থিক ফায়দায় লালে লাল হয়ে যান না। সেই ক্ষেত্রে, প্রচলিত আইনী ধারায়, এই লেখালেখির পিছনের মানুষদেরকে, ষড়যন্ত্র ও মানহানির জন্য অবশ্যই জেল-জরিমানা করা যেতো।

শুধু এই এক দৃশ্যপট না, যেকোন সাইবার ক্রাইমের জন্য, এক্সিস্টিং আইন ও সিস্টেম দিয়ে একশন নেওয়া সম্ভব। আর, শব্দটা অবশ্যই "সাইবার", "ডিজিটাল" শব্দটা এক্ষেত্রে ব্যবহার করাও একটা আহাম্মকি। বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ কাছাকাছি ব্যবহৃত টার্মগুলো গুলিয়ে ফেলে; যেমন- সরকার-রাষ্ট্র-দেশ, ডিজিটাল-ইলেক্ট্রনিক-সাইবার, রেমিট্যান্স-রিজার্ভ-রেভিনিউ, ইত্যাদি।

হ্যাকিং, আইডেন্টিটি থেফট, ফিশিং, চাইল্ড পর্নোগ্রাফির মত প্রচলিত ও বহুল-সংঘঠিত সাইবার ক্রাইমগুলোর জন্য সাইবার পুলিসিং, সাইবার ল/এক্ট, সাইবার নোলেজ/স্কিল এসব বাড়ানো দরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি ছিল এই দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সাইবার ক্রাইম, এবং ফাইনান্সিয়াল ক্রাইম। এটার কোন সঠিক সুরাহা তো হয়ই নি, বরং এসব নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু দাবী করলে বা দোষারোপ করলে ডিএসএ-র কোপ খাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

অর্থাৎ যা দেখা যাচ্ছে ও বুঝা যাচ্ছে- ডিএসএ বানানো হয়েছে মূলত এক বা একাধিক গোষ্ঠীর রক্ষাকবচ হিসেবে। কিছু ব্যক্তি, কিছু পরিবার, কিছু দল, কিছু সিন্ডিকেট, এবং তাদের সাথে সম্পৃক্ত লোকজনদের দোষ থেকে দায়মুক্ত করার জন্য, নিন্দা/সমালোচনা থেকে বাঁচানোর জন্য, তাদের দিকে উঠা আংগুল ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়ার জন্য।

এই পরিস্থিতিতে ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্ট বাতিল করা ছাড়া আর কোন সমাধান নেই। ছোট-বড় ফাইনান্সিয়াল ক্রাইমগুলো ঠেকানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, সিকিউরিটি এক্সচেইঞ্জসহ সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিতে হবে, এবং এক্সিস্টিং ওয়ার্কফোর্সকে সাইবার স্কিলে স্কিলফুল করতে হবে। সামাজিক, রাজনৈতিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহমর্মিতা, সৌহার্দ্যবোধ ও সহনশীলতা চর্চা করতে হবে। তাহলে, সো-কল্ড ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে (সঠিক শব্দ হবে- অনলাইন বা সাইবার) সুন্দর ও শালীন আচরণ আপনা-আপনিই বৃদ্ধি পাবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০২১ রাত ১২:১৮
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×