somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটু সচেতনতাই পারে চারপাশ বদলে দিতে-২ঃ বর্জ্যব্যবস্থাপনা

২৫ শে এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১০:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফেসবুকের "ক্লিন বাংলাদেশ, গ্রীন বাংলাদেশ" গ্রুপে একজন ভাই লিখলেনঃ-

"শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তরফ থেকে রাস্তার পাশে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার ময়লা ফেলার পাত্র বসানো হয়েছে। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ এবং জনসচেতনতার অভাবে সেগুলো ঠিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে না। অনেক পাত্র চুরি হয়ে গেছে। লোকজন এখনো সড়কেই ময়লা ফেলছে।
নগরবিদেরা বলছেন, শহর পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ে জনগণকে সচেতন হতে হবে। পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে এলাকাভিত্তিক জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। শহরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হলে আগে নিজেকে বদলাতে হবে। আবর্জনাপাত্র ব্যবহারে জনসাধারণকে উৎসাহী করতে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম প্রয়োজন।"



এই জাতীয় সংকটগুলো নিরসনে নাগরিক উদ্যোক্তানির্ভর নতুন নতুন ব্যবসা বা সংগঠনের বিকল্প নেই। বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করছি।

বাসাবাড়ি, হোটেল-রেস্তোরা বা যেকোন জায়গা থেকে আমরা সাধারণ মানুষ কয়েকভাবে আবর্জনা থেকে নিস্তার পাইঃ-

১) যেখানে সেখানে ফেলে দিই
২) ইটের দেওয়াল ঘেরা ডাস্টবিন নামক স্থানে ফেলি
৩) ময়লার গাড়িতে ফেলি
৪) পুড়িয়ে ফেলি/মাটি চাপা দিই/পানিতে ফেলি (গ্রামে, শহরের বাইরে)

১ ও ৪ এর ফলে পরিবেশ ভয়ানক দূষিত হয়।
৩ সবখানে প্রচলিত না; ব্যবস্থাপনা ভালো না; খরচ এবং পদ্ধতি অনিয়মিত।
২ আজকাল সবখানে দেখা যায় না। আর মানুষ ডাস্টবিনের আশেপাশের জায়গাও ডাস্টবিন বানিয়ে ফেলে। ডাস্টবিনের আশেপাশের নালানর্দমা-খালকেও ডাস্টবিন বানিয়ে ফেলে। কাক-কুকুর-মশামাছি-জীবাণুর আখড়া হয়ে যায়। বায়ুদূষণ এর পাশাপাশি জলাবদ্ধতাও বাড়ায়।

তাহলে এখন সরকার বা প্রশাসন বা কর্পোরেশন কি করতে পারে? পাবলিক প্লেসে কোটি কোটি টাকা খরচ করে হাজার হাজার ডাস্টবিনের পাত্র বসালেও কিছু হচ্ছে না; চুরি হবেই (দারিদ্র্য, অপরাধ, অশিক্ষা এসব আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় নয়)।

যা করা যায়ঃ-

১) পচনশীল খাদ্যবর্জ্যের জন্য ব্যক্তিগতভাবে, বিল্ডিং হিসেবে, সোসাইটি/মহল্লা হিসেবে- এক বা একাধিক Kitchen Waste Composter বানিয়ে বসাতে হবে। এগুলো দেশী-বিদেশী নানা প্রযুক্তিতে নানা পদ্ধতি অনুসরণ করে বানানো যায়। বেসরকারি ও দেশীয় তরুণ উদ্যোক্তাদের অর্থসাহায্য দিয়ে এই কাজ দিয়ে দিলে হবে।
মানুষ আইপিএস যেমন কিনেছে, জেনারেটর যেমন কিনেছে, ক্যাবল কানেকশন যেমন কিনেছে, তেমনি এটাও কিনতে বাধ্য করতে হবে। (আইপিএস, জেনারেটরের চেয়ে সোলার প্যানেল কেনা, লাগানো ও ব্যবহার করা যে অতীব জরুরি- সেটা যদিও এই দেশে এখনো গ্রাহক পর্যায়ে নরমালাইজ করা যায়নি)
নষ্ট হয়ে যাওয়া সবজি থেকে বিদ্যুৎ শক্তি

২) খাবার সংশ্লিষ্ট সব আবর্জনা বাদ দিলে বাকি যা থাকে- সেসব হচ্ছে অপচনশীল আবর্জনা। যেগুলো আমাদের খাবার থেকে আসে না। যেসব বস্তু পশুপাখি খায় না, কীটপতঙ্গও খায় না।
এর মধ্যে আছে- কাগজ, কাপড়, কাঁচ, ধাতু, এবং প্লাস্টিক!

ক) কাঁচ এবং ধাতু রিসাইকেল হচ্ছে বহুদিন ধরে। রিসাইক্লিং ব্যবসায়ীরা (যাদেরকে নোংরা/প্রচলিত বাংলায় ভাঙ্গারি বলা হয়) এসব টোকাই দিয়ে দেশের যত্রতত্র থেকে সংগ্রহ করে নিজেদের দোকানে/গুদামে রাখে। সেখান থেকে গাড়িতে করে অন্য এজেন্ট/ব্যবসায়ীরা নির্দিষ্ট কলকারখানায় নিয়ে যায়। সাধারণত কাঁচ ও ধাতব পদার্থ ঐ কাঁচ ও ধাতব পদার্থসংশ্লিষ্ট উৎপাদনকাজেই আবার ব্যবহৃত হয়।

খ) কাগজকে আমরা পচনশীল ভাবলেও অধিকাংশ কাগজই আসলে খাবারের মত দ্রুত ও সহজে পচনশীল না। আর সার, বায়োগ্যাস, বায়োমাস, ইত্যাদির জন্য কাগজ ততটা উপযোগী না। তাই বর্জ্য বা অদরকারি কাগজ-ও ফেলে দিতে হবে আলাদাভাবে; অন্য ধরণের আবর্জনাগুলোর সাথে মিশিয়ে না। যেমনটা আমরা দেখে এসেছি, সচরাচর শহরে-গ্রামে পত্রিকা ও পুরানো বই-খাতা ঝুড়িসহ কিনতে আসে।

গ) পোশাকখাতনির্ভর দেশ হওয়ার কারণে ইন্ডাস্ট্রিয়ালিও আমাদের টেক্সটাইল ওয়েস্ট অনেক বেশি; এবং সেগুলো প্রধানত মাটিতে (ল্যান্ডফিল) এবং পানিতেই গিয়েছে অনেক অনেক বছর। অনেকে পুড়িয়েছেও। বিশ্ব এখন পোশাক পরিধান ও উৎপাদন কমিয়ে এনেছে, আরো আনবে। মিনিমালিস্টিক হবে, সেকেন্ড-হ্যান্ড প্রোডাক্টের চল উন্নত দেশগুলোতে বেড়েছে। কাপড়কে বর্জ্য ঘোষণা করার আগে কয়েক বার পুনর্ব্যবহার করতে হবে- নানারূপে। ঝুট কাপড় থেকে নতুন কাপড়ের কাঁচামাল (সুতা) বানানো-ও একটা অভাবনীয় উদ্ভাবন। বাসাবাড়ি থেকে কাপড়-ও সংগ্রহ করতে হবে আলাদা।

ফেলে দেওয়া কাপড়চোপড় থেকে পরিবেশবান্ধব ইট

ঘ) The last but not the least: প্লাস্টিক/পলিথিন। এটা নিয়ে কি কি করা উচিত- সেসব আলোচনা হরহামেশাই আমাদের আশেপাশে হচ্ছে। সবাই জানে, কিন্তু মানে না, করে না। প্লাস্টিককে উপরের সব প্রকারের বর্জ্যের সাথে কিছুতেই মেশানো যাবে না, ফেলা যাবে না। তা সে যেরকমেরই প্লাস্টিক হোক না কেন। আমরা যে প্লাস্টিকের সাগরে নিমজ্জিত হয়ে আছি, তা আমরা নিজেরাও বুঝি না। এই প্লাস্টিক রিসাইকেল ও রিইউজ করে ঘরবাড়ির দেওয়াল-ছাদ-মেঝে, আসবাবপত্র, ফুটপাত, রাস্তাঘাট ও ফুটপাতসহ আরো অনেক কিছু নির্মাণে ব্যবহার করা যায়।
------
যেখানে সেখানে (ময়লার গাড়ি বা কর্পোরেশনের ডাস্টবিন) ফেলে দেওয়ার পরিবর্তে- প্রত্যেক এলাকায় এক বা একাধিক নির্দিষ্ট রেজিস্টার্ড সংস্থার ওয়েল-পেইড এমপ্লয়িরা, সুন্দর-সুস্থ পোশাক পরিধান করে, বাসায় বাসায় গিয়ে এসব অপচনশীল বর্জ্য নিয়ে আসতে পারে। বাসায় বুয়া আসতে পারে, ভিখারি আসতে পারে, মিলাদুন্নবীর চাঁদা খুঁজতে আসতে পারে, তাহলে এই অতীব জরুরি কাজের জন্য ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির লোক কেন আসতে পারবে না?? প্রয়োজনে সাধারণ মানুষদেরকে কিছু না কিছু ইন্টেন্সিভ বা টোকেন অব এপ্রিসিয়েশন দিতে পারবে এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। এরকম বেশ কিছু উদ্যোগের সাথে আমার পরিচয় হয়েছে। FILTER, GARBAGEMAN, Bonkagoj লিখে ফেসবুকে বা গুগলে সার্চ দিতে পারেন। ঢাকা ও ঢাকার আশেপাশে এরা সার্ভিস দিচ্ছে। এদের দরকার আরো বেশি সরকারি সাহায্য-স্বীকৃতি, এবং জনগণের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ।

নিউইয়র্ক বা এরকম শহরগুলোর সাথে যদিও বাংলাদেশের ঢাকার তুলনা হয় না, তারপরেও নিচের ভিডিওটা দেখে কিছুটা ধারণা পেতে পারেন- কি করা যেতে পারে, কিভাবে করা যেতে পারে।
আবর্জনার পাহাড় কিভাবে সামাল দেয় নিউইয়র্কবাসী
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১০:৪৮
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×