somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাজে-কাগুজে

২০ শে মার্চ, ২০২২ রাত ৮:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Headline: Sri Lanka cancels school exams over paper shortage as financial crisis bites

শৈশবে সাধারণ জ্ঞানের জন্য পড়েছিলাম- দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় শতভাগ সাক্ষরতার হার আছে একটি দেশেই- শ্রীলংকাতে। সাক্ষরতার হারে এগিয়ে থাকার অনেক বছর আগেই geostrategic কারণে বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে খুব ভালো অবস্থানে ছিলো এই দেশটা। তারও অনেক আগে- পৃথিবীর প্রায় সূচনা থেকেই- ভৌগোলিক কারণে এই দেশটা প্রাকৃতিকভাবে সম্পদশালী ছিলো।

শিক্ষা, টাকা আর পরিবেশ- তিন দিক দিয়েই মুখ থুবড়ে পরতে বেশি দেরি লাগে না- কোন দেশ/জাতির। যদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকে, জনগণের মধ্যে ঐক্য না থাকে, নেতৃস্থানীয়রা দুর্নীতিগ্রস্থ ও মেরুদন্ডহীন হয়ে পরে।

আমি পরিবেশগত দিক থেকে সবার জন্য সতর্কবার্তা লিখে যাচ্ছি।

আমাদের দেশ ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছে বলা হয়ে থাকে অনেক আগেই। যদিও সেটা শুধুই কথার কথা। যেকোন অফিশিয়াল বা লিগ্যাল ডকুমেন্টে আজও ফটোকপি-প্রিন্ট-স্টাম্প করে, এই অফিসে ঐ অফিসে দৌড়াদৌড়ি করে, একে-ওকে ঘুষ দিয়ে, জুতা ক্ষয় করে, পকেট শূন্য করে- তারপরে সিগনেচার ও সিল নিতে হয়। যদিও e-signature বিশ্বের অনেক উন্নত দেশেই কাগজের ব্যবহার ও মানুষের দুর্ভোগ কমিয়ে দিয়েছে।



ঠিক তেমনি ভিজিটিং কার্ড বা বিজনেস কার্ডের তেমন প্রচলন নেই সভ্য দেশগুলোতে। ইনভাইটেশন ও দাওয়াতের কার্ডগুলিও দেখাই যায় না। কাগজের অপচয়রোধের কারণে গাছপালা যেমন বাঁচে, তেমনি আনুষঙ্গিক অনেক খরচ ও জ্বালানি অপচয়ও বাঁচে। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের আদিখ্যেতা, অতি আহ্লাদ, লোকদেখানো সামাজিকতা এসবের কারণে- সব সেক্টরে ডিজিটালাইজেশন বন্ধ হবে না। আর পাবলিক যদি সম্পূর্ণ ডিজিটাল জীবনযাপনে অভ্যস্থ হয়ে যায়, অনেকের ধান্ধাবাজি, ব্যবসা ও দুই নম্বরিও বন্ধ হয়ে যাবে- এটাই মূল প্রতিবন্ধকতা।



তবে, একসময় আবাসিক ভবন ও শিল্পকারখানার কারণে গাছ যখন কমে আসবে, তখন কাগজের উৎপাদনেও টান পরবে। আপনা-আপনিই প্রিন্টিং ব্যবসায়ী লীগ, কাগজমিল শ্রমিক লীগ, এরা নিজেদের মাথা চাপড়ানো শুরু করবে। মোবাইল-কম্পিউটারে ক্যালেন্ডার থাকার পরেও- প্রত্যেক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বাৎসরিক ক্যালেন্ডার ছাপানোর মত অপ্রয়োজনীয় বিষয়টাও এখনো বন্ধ হয়নি।
Blended learning ও e-learning এ অনেক অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে বিশ্বের সব দেশগুলো। অথচ, কোভিড মহামারীতে শিক্ষাব্যবস্থায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধাক্কা খাওয়া দেশটা হলো- আমাদের সোনার বাংলা। এর একমাত্র কারণ- বিদ্যুৎ এর যথেষ্ট উৎপাদন থাকা সত্ত্বেও- সুপরিকল্পনা ও সুব্যবস্থাপনার কারণে বিতরণ ও সঞ্চালন না থাকার কারণে- প্রত্যন্ত অঞ্চলে ন্যুনতম বৈদ্যুতিক সুবিধা দিতে না পারা। এর ফলে অন্তত কমিউনিটি পর্যায়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেটের সদ্ব্যবহার করে শিক্ষাকার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারেনি। শিক্ষা ও অন্যান্য মৌলিক নাগরিক সুবিধা লাভের আশায়- প্রত্যন্ত সুবিধাবঞ্চিত অঞ্চল থেকে দেশের মানুষ ঢাকার মত মহানগরীতে প্রতিনিয়ত ভিড় করতে থাকে। এই ঢাকা বসবাসের অযোগ্য না হয়ে যাবে কোথায়?!



আদালত ও বিচারব্যবস্থার কাজকর্মে অনেকের মধ্যেই ডিজিটাল পদ্ধতিগুলোর ব্যাপারে অজানা আতংক ও অবহেলা কাজ করে। সরকারের পক্ষ থেকেও চাপ প্রয়োগ করা হয় না; কারণ বিচারপ্রত্যাশী ও আইনজীবিরা এখনো সবকিছু ম্যানুয়ালি করতে চায়। তাই এই সেক্টরে কাগজের অপচয় থামানো সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। অথচ, আইনজীবি ও তাদের সেক্রেটারিরা চাইলেই যেকোন ড্রাফট লেখা, প্রুফরিড করা, আদালত বা অন্য কোথাও পাঠানো, এমনকি বিচারকাজ চলাকালীন অবস্থায় সবার সামনে দেখানো- সবকিছুই কাগজবিহীনভাবে করা সম্ভব!!



স্কুল-কলেজে পড়ার সময় দিস্তার পর দিস্তা কাগজ দিয়ে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে খাতা বানিয়ে নষ্ট করা, প্রতি বছর নতুন বই ছাপিয়ে-বিতরণ করে-কিনতে বাধ্য করে সমাজের সবার মধ্যে একটা অসুস্থ মানসিকতা ঢুকিয়ে দেওয়া, কয়েক বছর পর পর সিলেবাস-কারিকুলাম-পরীক্ষাপদ্ধতি পরিবর্তন করে শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের পাশাপাশি প্রিন্টিং ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের রুটি-রুজির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, quantity over quality মানসিকতার কারণে পরীক্ষার সময় কাগজের পর কাগজ নিতে নিতে ভাসিয়ে ফেলা, ভার্সিটিতে পড়ার সময় প্র্যাক্টিক্যাল-উপকারী জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির পরিবর্তে প্রতি সেমিস্টারে হাজার হাজার টাকার প্রিন্ট-ফটোকপি করা, চাকরিজীবনে প্রতিটা অফিসে "যার যত বেশি কাগজ ব্যবহার (অপচয়) তার তত বেশি কর্মদক্ষতা ও কর্মব্যস্ততা" এই ধ্যানধারণার চর্চা নিজ চোখে দেখা, এসব তো আমাদের দেশের সার্বজনীন অভিজ্ঞতা।



আমাদের বুঝতে হবে- একটা কাগজ- শুধুই একটা কাগজ না। এই কাগজের পিছনে অপরিমেয় পানি, মাটি, জ্বালানি ও মানুষের শ্রম আছে- যা চোখে দেখা যায় না। আমরা চোখে দেখি শুধুই একটা কাগজ- সহজলভ্য, চাইলে পেয়ে যাচ্ছি চোখের নিমিষে। কিন্তু এই কাগজের উৎস যেই গাছ, সেই গাছ কিন্তু চোখের নিমিষে গজায় না; বছরের পর বছর লাগে। ঠিক আমাদের খাবারের মতো। খাবার বা কাগজ ভোগ করতে গেলে আমরা এত কিছু ভাবি না, কৃতজ্ঞতা অনুভব করি না। কিন্তু এগুলোর উৎপাদন ছেলেখেলা না।



End-note: Roughly 15 billion trees are cut down each year!
১৫০০০০০০০০০ গাছ গজাতে কত বছর লাগতে পারে- ধারণা আছে আমাদের?!
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০২২ রাত ৮:৫৪
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×