ছোটবেলা থেকে আমাদের বাবা-মা অনেক কষ্ট করে আমাদের লেখাপড়া শেখান দুটো কারনে ।
১।আমরা যেন মানুষের মত মানুষ হতে পারি।
২। লেখা পড়া শিখে যেন কোন কর্মে নিয়োজিত হতে পারি ।
অন্তত আমাদের দেশে এ দুটো কারনই যতেষ্ট গুরুত্তপুর্ণ ।
ছোটবেলায় আমরা যখন স্কুলের বারান্দায় পা দিই বাবা অথবা মায়ের হাত ধরে সেখানে আমাদের পরিচয় হয় বর্ন পরিচয় শব্দ গঠন, গনিতের প্রথম দিকের কিছু বিষয়ের সাথে ।অতপর আমারা যেসকল বিষয় পড়ি তা হল বাংলা,ইংরেজি,গনিত,সামাজিক বিজ্ঞান,সাধারন বিজ্ঞান ,ধর্ম ইত্যাদি ।
এবং এ সবগুলো বিষয়ই একই সাথে একই ক্লাসে পড়ানো হয় । তার পর মাধ্যমিক শ্রেণিতে ওঠার পর আমরা বিভক্ত হয়ে যাই বিভিন্ন গ্রুপে ,যেমন আর্টস,কমার্স,বিজ্ঞান ইত্যাদি ।উচ্চমাধ্যমিকেও তাই ।
যখন আমরা অনার্স ক্লাসে ওঠি তখন এগুলোও আবার বিভক্ত হয়ে সাবজেক্ট ভিত্তিক হয়ে যায় । সে সময় যে যেই সাবজেক্টে ভর্তি হয় সে বিষয়ে সে চার বছর ব্যাপি যতেষ্ট পড়ার জানার সুযোগ পায় । একট কথায় সেই বিষয়ে সে এক্নপার্ট হয়ে যায় । মাস্টার্সের ক্ষেত্রেও একই বিষয় ।
পড়াশোনার পাঠ চুকে সভাবতই চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিতে হয় । সেখানেই ঘটে নতুন বিপর্যয় । আমাদের দেশের চাররির পরীক্ষা তে যে প্রশ্নপত্র করা হয় তাতে বাংলা ,ইংরেজি,গনিত,ইতিহাস,বিজ্ঞান,সাধান জ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ের উপর প্রশ্ন থাকে। বাস্তবিক পক্ষে একজন ছাত্র তার ছাত্রাবস্তায় মাধ্যমিক পর্যায়ে উঠার পর থেকে এ বিষয় গুলো একসাথে কখনও পড়েনা বা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় পড়ার সুযোগ নেই ।স্নাতক সম্মান লেবেলেতো আরো একট কেন্দ্রিক পড়াশোনা করতে হয় ।
কথা হচ্ছে যে ছাত্র বিজ্ঞান নিয়ে মাধ্যমিকে,উচ্চমাধ্যমিকে,কিংবা সম্মান লেবেলে পড়াশোনা করে পাশ করল তার পক্ষে ইতিহাস থেকে প্রশ্নের আনসার করা কি দু:আর ব্যাপার নয়? অথবা যে ছাত্র আর্টস বা কমার্স বিষয়ে পড়ল তার পক্ষে কি বিজ্ঞান থেকে আনসার করা কঠিন নয় । কিন্তু কিছুই করার নেই ।এই পদ্ধতিকে পরিবর্তন করা তো আর কোন একক ব্যাক্তির পক্ষে সম্ভব নয়!!
তাই সে একাডেমিক পড়ার পাঠ চুকে চাকরির জন্য পড়া শুরু করে দেয় মাথা গুজে ।দিন রাত অক্লান্ত শ্রম দিয়ে কৈশোরে ফেলে আসার পড়া গুলো পুন পুন জাবার কেটে নিজেকে চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করে ।
এখন সে পরীক্ষায় বসল,প্রশ্নে আসল রবীন্দ্র নাথের শ্রেষ্ট গ্রন্থ কোনটি ?সে আনসার করল গীতাঞ্জলী, যদিও সে গীতাঞ্জলীর একটি পাতাও উল্টে দেখেনি কখনও । প্রশ্নে আসল ডিএনএ এর ডবল হেলিক্স গঠন কে আবিস্কার করল? সে উত্তর দিল ওয়াটসন এন্ড ক্রিক ।যদিও ডিএনএ কোথায় থাকে সেটাই জানেনা ।শুধু মাত্র একাডেমিক পরীক্ষার পর নিজ স্মৃতি শক্তির গুনে এসব প্রশ্নের উত্তর দিল । অতপর নির্বাচিত হয়ে চাকরিতে যোগ দিল ,মেধাবী হিসাবে গন্য হয়ে । যে প্রশ্নের উত্তর গুলোর জোড়ে সে চাকরি পেল হয়তো একট বছর আগেও তা জানতো না, আবার চাকরি পাওয়ার. চার মাস পড়েও তা মনে রাখবে না । তাহলে এটাকি মেধা বা মননের পরিচয় বহন করল?শুধুমাত্র কিছু সময়ের জন্য বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষে যে ভাসা ভাসা জ্ঞান অর্জন করা হয় এবং উদ্দেশ্য পুর্ণ হওয়ার পর তা আর মনে থাকেনা ,সে জ্ঞান কখনও এমন বা মেধার পরিচয় বহন করতে পারেনা ,এবং সে জ্ঞান কোন যোগ্যতার মান দন্ড হতে পারেনা । অথচ এই মানদন্ডেই আমরা নির্বাচিত হচ্ছি বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় ।
আমার পরিচিত একজন ব্যাংকের ভাইবা দিতে গেলে তাকে প্রশ্ন করা মাকরশার পা কয়টি? সে উত্তর দিতে পারেনি বলে আর কোন প্রশ্ন না করে তাকে বলল, আসতে পারেন । দেখুন তো যে মাকরশার পায়ের সংখ্যা জানেনা সে কি ব্যাংকের চাকরির জন্য অযোগ্য?
এ ছাড়া আরো অসঙ্গতি রয়েছে যেমন ইতিহাসে পড়াশোনা করে করছে ব্যাংকে চাকরি,একাউন্টিংএ পড়াশোনা করে করছে স্বাস্থ্য সহকারির চাকরি,প্রাণিবিদ্যায় পড়াশোনা করে করছে কোন অফিসের একাউন্সে চাকরি ।
এমনি অসঙ্গতির জন্যই যথাস্থানে যোগ্য লোকেরা আসছেনা যথা যোগ্য জায়গায় এমনকি যে যেই বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছে সেখানেও তারা শুধুমাত্র পরীক্ষা পাশের জন্য যতটুকু পড়া দরকার ততটুকুই পড়ছে নজর দিচ্ছে চাকরির পড়াশোনার প্রতি ।এতে করে অধক্ষ জনশক্তিই বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন ।
তাই অচিরেই এ পদ্ধতির সংস্কার দরকার ।যে যেই বিষয়ে পড়া শোনা করেছে সে বিষয়ের সাথে সম্প্রৃক্ত চাকরি দেয়া প্রয়োজন । চাকরির সাথে সম্পর্কযুক্ত প্রশ্ন করে ঐ চাকরির যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করা উচিৎ ।
নতুবা বিশ্বায়নের এ যুগে আমাদের সেক্টরগুলো বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরন পেয়ে বিশ্বমানের হতে পারবেনা কখনও ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৩