একথা অনস্বীকার্য সত্য যে আমরা এখন সভ্যতার চরম শিখরে অবস্থান করছি ।আমাদের পার হতে হয়েছে অনেক বন্ধুর পথ ।সামাজিক মানুষের দীর্ঘ্য বিবর্তনের ফসল আমরা আধুনিক মানুষ ।
কিন্তু কতটা হতে পেরেছি আধুনিক? কতটা হতে পেরেছি সভ্য? এর উত্তর নেই আমাদের কাছে ! থাকার কথাও না ।
একটা জাতিকে সভ্য করে তুলার প্রধান নিয়ামক বিজ্ঞান,যুক্তি ।বিজ্ঞান চর্চায় যে জাতি যত উন্নত সে জাতি সভ্যতায় তত উন্নত ।উন্নত বিশ্বের দিকে তাকালে এর নজীর পাওয়া যায় ভুরি ভুরি ।
আমরা তৃতীয় বিশ্বের দেশের নাগরিক । আমরাও বিজ্ঞান চর্চা করি । তবে আমাদের সংস্কৃতিটা একটু ভিন্ন । বিজ্ঞানকে আমরা প্রাত্যহিক জিবনে ব্যবহার করি,বিজ্ঞানের দান গুলোকে কাজে লাগাই নিজেদের জিবন যাত্রাকে সহজতর করতে, কিন্তু বিজ্ঞানকে লালন করিনা নিজেদের মননে ।
আমাদের সংস্কৃতির একটা বড় অংশ বিশ্বাসের ভিত্তির উপর প্রতিষ্টিত ।এটা ধর্মীয় বিশ্বাস । হাজার বছর ধরে চলে আছসে সে বিশ্বাস । অথচ একটিবারের জন্য যাচাই করে দেখিনা আমাদের সে বিশ্বাসের চাকা কতটুকু মজবুত । ভেবে দেখিনা আমাদের বিশ্বাসগুলো কতটা বাস্তব সম্মত ।
জিবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে আমরা বিজ্ঞানকে সত্য যাচাইয়ের মানদন্ড হিসাবে প্রতিষ্টত করি, কিন্তু যখনই বিশ্বাসের প্রশ্ন আসে তখনই বিজ্ঞান হয়ে পরে আপেক্ষিক আর ধর্মীয় বিশ্বাস হয়ে পরে ধ্রুব সত্য । আগে শোনা যেত ধর্ম এবং বিজ্ঞান দুটোর চলার রাস্তা আলাদা । দুটোর গল্প এক নয় । কিন্তু আজকাল খুব জুড়ে-সুরে প্রচারিত হয় সকল বিজ্ঞানের উৎস নাকি ধর্মীয় গ্রন্থ গুলো । হিন্দু ধর্মালম্বীরা বলছে বেদ,গীতা বিজ্ঞানের প্রসুতি আবার মুসলিমরা বলছে কোরান বিজ্ঞানের সুতিকাগার । আর এ গুলো প্রচারের পেছনে রয়েছে আংশিক বিজ্ঞান জানা একদল বুদ্ধিমান চতুর লোক । এখন প্রশ্ন হচ্ছে আসলে কোনটা সত্যি? হিন্দুদের দাবি নাকি মুসলিমদের দাবি ? প্রত্যেকেই নিজের স্বপক্ষে যুক্তি তুলে ধরছে । এই যুক্তি গুলো আবার বিভিন্ন মিডিয়াতে চর্বিত চর্বন হয়ে চলছে প্রতিনিয়ত । কিন্তু আসলেই কি এগুলো যুক্তি ? নাকি ফ্যালাসি?
আমি এপর্যন্ত যতগুলো ধর্মীয় বই পড়েছি উভয় ধর্মের ,এবং এই ধর্মভুক্ত ব্যক্তি গুলোর দেয়া যেসকল রেফারেন্স পেয়েছি এগুলোর কোনটিই বিজ্ঞান সম্মত মনে হয়নি ।
ধর্মীয় বই গুলো আমাদের ভাষায় রচিত নয় ।এ সুযোগ কে কাজে লাগিয়ে কিছু লোক নিজের মত করে অনুবাদ করে নেয় যেন বিজ্ঞানের সাথে কিছুটা হলেও মিল বন্ধন স্থাপন করতে পারে । বাকিটা ব্যাখ্যার মাধ্যমে চালিয়ে নেয় ।প্রকৃত পক্ষে এটা নুংরা অপচেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়।
আমরা নিজেদের যতটা আধুনিক মনে করি বা উপস্থাপন করি ততটা আধুনিক এখনও হতে পারিনি ।আমাদের মগজের প্রতিটি সেল বহন করে চলছে নির্বাক ঘাতকের মত বিশ্বাসের ভাইরাস । সেটা লেখা পড়া জানা উচ্চ শিক্ষিত থেকে শুরু করে গোমুর্খ ব্যক্তি সবাই এই ভাইরাসের পোষক ও বাহক।
এখনও পরিবার পরিকল্পনা গ্রহনকে পাপ বলে চিন্হিত করা হয়,এখনও ঋৃতুস্রাব কে অপবিত্র বলে ধরা হয়,এখনও গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার জন্য হাতে পাথরের আংটি ব্যবহার করা হয়,এখনও কোন কাজ করার আগে পঞ্জিকা দেখে ঠিক করা হয় কোন দিনটা শুভ আর কোন দিনটা অশুভ,এখনও দেশের বিখ্যাত সংবাদপত্র গুলোতে দেয়া হয় রাশি চক্র,কবিরাজের জার-ফুকের দ্বারস্ত হয়ে প্রতিবছর মারা যায় অনেক লোক ।
এর একটাই কারন এসবগুলোর সাথে লাগানো থাকে ধর্মীয় লেবাস ।বিজ্ঞান সেখানে হয়ে পরে গৌন । আমি অবাক হই যখন দেখি বিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রীধারিরা যখন এমনি ভ্রান্ত বিষয় গুলোর দ্বারস্ত হয়ে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলে ।
যুগে যুগে বিজ্ঞান মানুষের অনেক ভুল শুধরে দিয়েছে,আলোকিত করেছে আমাদের ।সময়ের এই ক্রান্তি লগ্নে আমাদের বিজ্ঞান চর্চা ও এর ধারনই পারবে আমাদেরকে মুক্তির আলোকবর্তিতা হাতে তুলে দিতে ।
আসুন আমরা বিজ্ঞানকে একনিষ্ট ভাবে চর্চা করি,মননে ধারন করি ও একে বইয়ের পাতা থেকে বাস্তবে নামিয়ে আনি ।
আমাদের বর্তমান ধর্মীয় ও বিজ্ঞান ভিত্তিক অবস্থানের প্রেক্ষিতে নজরুলের সেই বিখ্যাত উক্তিটি মনে পরে
.........
“বিশ্ব যখন এগিয়ে চলছে আমরা কখনও বসে ।
বিবি তালাকের ফতুয়া খুঁজছি,ফেকা ও হাদিস চষে ।।””
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৫৬