somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

(বিচারবহির্ভুট রাজনৈতিক) গুপ্তহত্যা : গুপ্তহত্যা দিবসের ফিচার পোস্ট

৩০ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক : গুপ্তহত্যা কি এবং কেন?

আজ ৩০ অগাস্ট বিশ্বগুপ্তহত্যা দিবস। দিনটি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ঘোষিত আন্তর্জাতিক গুম দিবস। উইকিপিডিয়া, মেরিয়াম ওয়েবমাস্টার ডিকশনারি, অক্সফোর্ড ডিকশনারি ঘেটে গুপ্তহত্যা বা গুম(assasination) এর মোটামুটি একই রকম ধারনা পাওয়া যায়। গুপ্তহত্যা হল বিপরীত মতের কাউকে (বিশেষত রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব) হত্যা করা।

গুপ্তহত্যার ইংরেজি প্রতিশব্দ assasination, শব্দটির উৎপত্তি আরবি হাসাসিন শব্দ থেকে মধ্যযুগে। যারা "prince of persia" মুভিটি দেখেছেন, হয়ত মনে করতে পারবেন, নিজাম জাদুর ছোরা উদ্ধার আর দাস্তানকে হত্যার জন্য হাসাসিন সর্দারের স্মরনাপন্ন হয়। এমনকি মুভিতে দেখানো আলাআমুত শহরেই বাস্তবে জন্ম নিয়েছিল এই হাসাসিন গ্রুপ।

আলীকে নিয়ে মুসলিমরা দুটি বিশ্বাসে ভাগ হয়ে যায় উসমানের মৃত্যুর পর থেকেই। একদল পরে শিয়া নাম ধারন করে। রাজনৈতিক ভাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতেই হাসাসিন দলটি গড়ে ওঠে। হাসান সাবাহ পড়াশুনা শেষ করে ইরান চলে আসেন। সুন্নি আর ক্রিশ্চিয়ানদের দ্বিমুখি চাপের বিপরীতে হাসাসিনদের উত্থান বলা যেতে পারে। হাসান সাব্বাহ ইরানের আলামুত শহরে শিয়া তরুনদের নিয়ে গড়ে তোলেন এই হাসাসিন। নতুন সদস্যদের মাদক দিয়ে মাতাল করার পর বেহেস্তের মত বাগানে ঘোরানো হত, আর বলা হত মৃত্যুর পর এরকন এক জীবন তাদের জন্য অপেক্ষা করছে।

হাসাসিনরা সংখ্যায় ছিল খুবই কম। তাই তারা কখনোই সম্মুখ সমরে জড়াত না। গোপনে বিরোধীদের সাথে মিশে যেত আর কাজ হাসিল করে ঝড়ো গতিতে সেখান থেকে বের হয়ে আসত।

এই হাসাসিন থেকেই ইংরেজি assasin শব্দটি এসেছে। মধ্যযুগের আগে assasination শব্দটি ছিল না বলে এটা ধারনা করা একেবারেই অযৈক্তিক হবে যে এর আগে গুপ্তহত্যা ছিলই না। মাংসাশী প্রাণিরা ক্ষুদার তাগিদে হত্যার পুর্ব থেকেই বোধকরি মানুষ অকারনে মানুষ হত্যা শুরু করেছে।

দুই : গুপ্ত হত্যা প্রাচীনকালে

প্রাচীন ভারতেও গুপ্তহত্যার প্রচলন ছিল। মৌর্য সম্রাজ্যের প্রতিষ্টাতা চন্দ্রগুপ্তমৌর্য রাজনৈতিক ভাবে এর ব্যাবহার করেন। তিনি গুপ্ত হত্যার মাধ্যমে আলেওজান্ডারের দুই জেনারেল নিকানোর এবং ফিলিপকে হত্যা পর্যন্ত করিয়েছিলেন। ধারনা করা হয় গুপ্তহত্যার ধারনা তিনি পেয়েছিলেন তার রাজ দার্শনিক চানক্যের কাছে, কারন চানক্য রচিত অর্থশাস্থহ্র বইয়ে গুপ্ত হত্যার উল্লেখ পাওয়া যায়।

আলেকজান্ডারের পিতা ফিলিপ ২ ও গুপ্তহত্যার শিকার। এমনকি এরপর রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে গুপ্তহত্যা বারংবার ফিরে এসেছে।

গ্রীক ছেড়ে রোমানদের দিকে তাকালেও মোটামুটি একই দৃশ্য ধরা পড়ে। গায়াস জুলিয়াস সিজার যিনি রোমান রিপাবলিককে রোমান এম্পায়ারে কনভার্ট করতে পেরেছিলেন, যিনি ব্রিটেন পর্যন্ত রোমান ঝান্ডা উড়িয়েছিলেন, তিনিও সিনেটের সদস্যদের ছুড়িকাঘাতে নিহত হন। সিনেটররা রিপাবলিকের সুর্যকে অস্তমিত দেখতে পেয়েছিলেন "dictator of life" এর হাতে। এই হত্যাকান্ড নিয়ে শেকস্পিয়রের একটি নাটকও আছে। জুলিয়াস সিজরের শরীরে ৩২টি ছুরিকাঘাতে তাকে হত্যা করা হয়।

তিন : গুপ্তহত্যা মধ্যযুগে

মধ্যযুগে মধ্যপ্রাচ্যে গুপ্তহত্যার উত্থান আগেই লিখেছি। হাসাসিনরা রাজনৈতিক ভিন্নমতকে এভাবেই নিজেদের অনুকুলে রাখতে সচেষ্ট ছিল।

চায়নাতে কিন সম্রাজ্যের উত্থানে ভীত হয়ে ইয়ান সম্রাজ্য থেকে কিন সম্রাটকে সরিয়ে দিতে ব্যার্থ অভিযান পরিচালিত হয়।

ব্রিটিশ রানী এলিজাবেথের উপর অনেকবারই ব্যার্থ হামলা হয়েছিল। পরে গুপ্ত হত্যা ধর্মীয় রঙ পেল। দ্বিতীয় হেনরি ফ্রান্সের ভুমিতে দখল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছেন যখন, তখন তার অধিকাংশ নীতি সমর্থক বেকনকে আর্চবিশপ বানানো হয়। পরবর্তিতে বেকনের সমর্থন পাওয়া নআ গেলে বেকন চারজন আরতায়ীর হাতে মারা যান।


চার : গুপ্তহত্যা বর্তমানকালে

মার্কিন ইতিহাসে আব্রাহাম লিঙ্কন ও জন এফ কেনেডি গুপ্ত হত্যার শিকার হন। প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট নির্বাচনী প্রচারনার সময়ে হামলার শীকার হন।

রাশার ২০০ বছরে পাচজন জার নিহত হন। সট্যালিন ক্ষমতা ধরে রাখতে লাখখানেক হত্যা করান।

ইউরোপে ১ম বিশ্বযুদ্ধের ট্রিগার লুকিয়ে ছিল অস্ট্রিয় রাজকুমারের হত্যাকান্ডে।

২য় বিশ্বযুদ্ধ পৃথিবীকে অনেক দিয়েছে। একটা উল্লেখযোগ্য দান হল, গুপ্তহত্যার প্রাতিষ্ঠানিকরন। জার্মান জেনারেল এমআই সিক্স যোদ্ধাদের প্রশিক্ষিত করত এসাসিন বা গুপ্তঘাতক হিসেবে। এরকম একটা ঘাতক দলকেই নিয়োগ দেয়া হয় জার্মান জেনারেল রেইনহার্ড হেইড্রিখ কে হত্যার জন্য। তারা সফলও হয় অবশ্য। এডলফ হিটলারও বারংবার শিকার হয়েছেন গুপ্তঘাতকের।

এই উপমহাদেশের দিকে তাকালে ভারতের মাহাত্মা গান্ধি, ইন্দিরা গান্ধি পাকিস্তানের জিয়াউল হক সম্প্রতি বেনজির ভুট্টো বাংলাদেশের শেখ মুজিব, জিয়াউর রহমান সবাই গুপ্তঘাতকের হাতে প্রান দিয়েছেন রাজনৈতিক কারনেই।

ল্যাটিন আমেরিকার অনেক দেশেই ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল এই গত শতকের শেষ দিকেও। সিরিয়ায় বাসার আক আসাদের প্রায় দু দশকের ক্ষমতাকালীন সেখানে দু লক্ষের মত মানুষ মারা হয়েছে। মোসাদ এর মত গোয়েন্দাসনস্থা গুলো এখন ট্রেইনিং দিয়ে এসাসিন তৈরি করে।

পাঁচ : গুপ্তহত্যা প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

সারা বিশ্বের গুমের প্রকোপে উদ্বিগ্ন হয়ে জাতিসংঘ ২০০২ থেকে কাজ শুরু করে ২০০৬ সালের মাঝামাঝি নাগাদ গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদ রচনা করে। ইংরেজিতে নাম—ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর প্রটেকশন অব অল পারসন্স অ্যাগেইনস্ট এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স। এই আন্তর্জাতিক সনদটা কার্যকর হয়েছে ২১ ডিসেম্বর ২০১০ থেকে আর ২০১১ থেকে ৩০ আগস্ট গুমের শিকার ব্যক্তিবর্গের জন্য আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৪৩টি দেশ সনদটি গ্রহণ করেছে, ৯৩টি দেশ স্বাক্ষর করেছে। বলা বাহুল্য, যেসব রাষ্ট্র গুম করে তারা এই সনদ গ্রহণ করেনি। যেমন, বাংলাদেশ। (এই প্যরাটি আজকের প্রথম আলোতে প্রকাশিত শাহদিন মালিকের গুপ্তহত্যা নিয়ে লেখা থেকে নিয়েছি)

রাষ্ট্রিয় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা গেলে নারায়নগঞ্জের সরকারী বাহিনী কর্তৃক এমন ঘটনা ঘটত না। রাজনৈতিক কোন হত্যাকান্ডের বিচার আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে হয়েছে কি?

বিঃদ্রঃ
টপিকটা নিয়ে কিছু লিখব চিন্তা ছিল অনেক দিনের। আলসেমিতে হয়ে উঠছিল না। আজ প্রথম আলোতে গুপ্তহত্যা দিবসে শাহদিন মালিকের আর্টিকেলটা জানলাম আজ গুপ্তহত্যা দিবস। সাথে সাথেই লেখার জন্য রাখা বুকমার্কগুলোর সদ্বব্যবহার করলাম। লেখার সময় Rango মুভির স্পিরিট অভ দ্য ওয়েস্ট চরিত্রটির একটি উক্তি মনে পড়ছিল বারবার- "Nowadays theres name for everyrhing. Its the deeds makes the man."

(পূর্বে ফেসবুকে প্রকাশিত)
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×