somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্বজোড়ে এয়ার করপোরেট আধিপত্য: অসহায় মানবতা বন্দি যেখানে

১৪ ই জুন, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


Boeing (USA) ও Airbus (EU - ইউরোপ)। মাত্র দুটি বিমান তৈরিকারী কোম্পানি। বিশ্বের প্রায় ৯৮% যাত্রীবাহী কমার্শিয়াল জেট বিমানের বাজার দখল করে রেখেছে। ৪০% Boeing এর দখলে। বাকিটা Airbus এর। অল্প কিছু যাত্রীবাহী বিমান রাশিয়া ও চীনের আছে। বহু বছর যাবৎ তৃতীয় কোনও দেশ এই ব্যবসায় আসতে পারছে না

ব্যবসা করার প্রায় সবকিছু তাদের নিয়ন্ত্রনে। বিমানের আন্তর্জাতিক উড্ডয়ন সংস্থা (ICAO, FAA, EASA) সমূহ যারা সার্টিফিকেট ইস্যূ করে-সেগুলোও মনোপুলেট বাই ইউএস। ফলে যারা Boeing বা Airbus নয় — তাদের সার্টিফিকেশন পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। যেমন:Russia ও China নিজস্ব যাত্রীবাহী বিমান বানালেও (Sukhoi, COMAC), পশ্চিমা বিশ্ব তা গ্রহণ করে না। এটা এক ধরনের "টেকনিক্যাল জিও-পলিটিক্যাল অবরোধ"।

অর্থনীতিতে এটিকে বলে “Duopoly” বা দুই কোম্পানির বাজার নিয়ন্ত্রণ। এসব পূঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলোই দেখবেন মুক্ত বাজারের কথা বলে মুখে ফেনা তুলে নেয়। কিন্তু দিন শেষে নিজেদের সুবিধাজনক একচেটিয়া আধিপত্য (convenient monopoly) বজায় রাখতে তারা সিদ্ধহস্ত।

Boeing পায় মার্কিন সরকারের সামরিক ও বেসামরিক বড় বড় চুক্তি। Airbus পায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সরকারী সাপোর্ট। এটি জিও-পলিটিকস ও সরকারী সাবসিডি-এর উদাহরণ।

Boeing মূলত আমেরিকার সরকারের সবচেয়ে বড় সামরিক সরবরাহকারী (F-15, Apache ইত্যাদি)। কিন্তু আমেরিকা নিজের রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে অনেক দেশকে বাণিজ্যিক বিমানও Boeing থেকে কিনতে "পরোক্ষভাবে বাধ্য" করে। সৌদি আরব, কাতার, তুরস্ক — সবাই Boeing-এর বিশাল ক্রেতা। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সামরিক সহযোগিতা পেতে হলে বাণিজ্যিক চুক্তিও "প্যাকেজ ডিল"-এর অংশ হয়।

সম্প্রতি আহমেদাবাদের দূর্ঘটনায় Boeing এর বিমান ছিল। এই জায়ান্ট সব সময় যাত্রীর নিরাপত্তার চেয় মুনাফাকে গুরুত্ব দিয়ে আসে। বহু আগেই Boeing এ উৎপাদন দ্রুততার চাপ, ক্ষমতা বৃদ্ধি ও লাভকে প্রাধান্য থেকে safety culture ধ্বংস করা শুরু করেছে। বিভিন্ন সময় ইঞ্জিনিয়ারগণ FAA তে অভিযোগ করেছেন-কিন্তু উল্লেখযোগ্য কিছুই হয়নি।

আমাদের কেউ কেউ তিন শূন্যের পৃথিবী গড়ার দিবা স্বপ্ন নিয়ে পড়ে আছেন। এসব তথাকথিত সুশীলদেরকে কখনই আপনি আধিপত্যমূলক একচেটিয়া পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে দেখবেন না। সুদ ও প্রফিট মেক্সিমাইজেশন এর বিরুদ্ধে কথা বলবে না-ওরা চুয়ে পড়া বিষয় নিয় কথা বলবে-যেমন, জলবায়ূ পরিবর্তন, সুদী ক্ষুদ্র ঋণ, সামাজিক ব্যবসা।

মুসলিম বিশ্ব নিজস্বভাবে বাণিজ্যিক বা সামরিক বিমান উৎপাদনে প্রায় অনুপস্থিত—এটি একটি দুঃখজনক বাস্তবতা। যদিও কিছু দেশ সীমিত পরিসরে চেষ্টা করেছে (যেমন: তুরস্ক, ইরান, পাকিস্তান), তবুও Boeing বা Airbus-এর মতো বিশ্বস্তরের কোম্পানি মুসলিম দেশগুলো গড়ে তুলতে পারেনি।

আধুনিক বিমান নির্মাণে প্রায় ৬ মিলিয়ন পর্যন্ত পার্টস লাগে। এর প্রায় ৯০%-এর প্রযুক্তি ও পার্টস পশ্চিমা জোটভুক্ত দেশগুলোর দখলে (যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, জাপান)। এতো দিন পর্যন্ত মুসলিম দেশগুলো এ প্রযুক্তি নিজে তৈরি করার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি।
অতি সত্ত্বর এই একচেটিয়া পূঁজিবাদ ভেঙ্গে দিতে মুসলিম বিশ্বকে সম্মিলিতভাবে "Aviation Consortium" গঠন করার প্রতি মনোযোগ দেয়া উচিত। একক দেশ তা করতে পারবে না। সম্মিলিত উদ্যোগ দরকার।

যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপে বসবাসকারী মুসলিম বিমান প্রকৌশলী, ডিজাইনার ও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে Muslim Aerospace Expert Network (MAEN) গঠন করা যেতে পারে। এসব নিয়ে কথা বলা দরকার।

আর না হয়-ওদের দৌরাত্ম থামানো যাবে না। Boeing-এর দুর্ঘটনা নতুন নয়, বরং এটি বহু বছরের নিরাপত্তা ত্রুটি ও ব্যবসায়িক লোভের ফলাফল।

বিশেষ করে Boeing 737 MAX মডেল কোম্পানির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সঙ্কট তৈরি করেছে। বর্তমানে অনেক এয়ারলাইন্স বিকল্প খুঁজছে এবং Airbus-এর প্রতি আস্থা বাড়ছে। সময় এখন মুসলিম বিশ্বের নিজস্ব এয়ার ভেহিকল তৈরি করা।

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৬
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×