ছবি সংস্কৃতি : অভিশপ্ত ফেসবুক, পাগল যুব সমাজ
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
বর্তমানে ছবিবিনিময় অতি সাধারণ একটি বিষয়। এতোটাই স্বাভাবিক যে সমাজের কর্ণধর উলামায়ে কেরামও মনে হয় বিষয়টিকে শিথিলভাবে নিচ্ছে। আমজনতার কথা বাদই রাখলাম। মোবাইল বা ক্যামেরার কল্যাণে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রায় অধিকাংশ এ পাপ কাজে লিপ্ত। আর ফেসবুকের কথা কে না জানে? যদিও ইসলামী শরীয়তে কিছু শর্তসাপেক্ষ ছবি তোলার অনুমতি দেয়; কিন্তু অপ্রয়োজন ও বিনোদনের জন্য কখনই অনুমোদন দেয় না। তাই এবার আসুন ইলামীদৃষ্টিকোণ থেকে ছবি বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও বিধান জেনে নেই।
পরিভাষাঃ
ফটোঃ কলম, ব্রাশ, তুলি বা এ জাতীয় কোনো যন্ত্র দিয়ে হাতে বা মেশিনে কালি বা রঙের সাহায্যে কোন কিছুর আকৃতি কাগজে দেয়ালে বা কোন স্থানে অংকন করার নামই ফটো। হাদীসের পরিভাষায় তাছভীর বলে।
প্রতিকৃতিঃ মাটি পাথর রূপা স্বর্ণ বা এ জাতীয় কোন বস্তু দ্বারা নির্দিষ্ট কোন কিছুর হুবহু আকৃতি স্থায়িত্ব ধারণ করানোর নাম প্রতিকৃতি। যেমন: বিভিন্ন নেতা নেত্রীর প্রতিকৃতি। হাদীসের পরিভাষায় তিমছাল বলে।
মূর্তি-প্রতিমাঃ মাটি পথর রূপা স্বর্ণ বা এ জাতীয় কোন বস্তু দ্বারা নির্দিষ্ট কোন কিছুর অনানুরূপ (হুবাহু ব্যতিরেকে) আকৃতি স্থায়িত্বে আনয়ন করা যেমন: হিন্দুদের ভগবান ও অন্যান্য উপাস্য। হাদীসের পরিভাষায় ছনম বলে।
প্রতিচ্ছবিঃ কোন কিছুর স্থায়িত্বহীন অনির্মিত আকৃতি। প্রতিধ্বনির ন্যায় যা বস্তুর সাথে সাথে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রকাশ পায়। যেমন: পানিতে আয়নাতে সূর্যের বিপরীতে ইত্যাদি ক্ষেত্রে দৃশ্যমান ছায়া। যা কোন যন্ত্রের মাধ্যমে তুলতে হয় না। এটাকে আরবীতে আকছ/আকছুত তাছভীর বলে।
শরয়ী বিধানঃ প্রতিচ্ছবি: এটা ফটো প্রতিকৃতি মূর্তি থেকে ভিন্ন। এতে কারো কর্ম বা ক্রিয়ার প্রভাব নেই। বিধায় এটি শরীয়তের নিষেধাজ্ঞার অর্ন্তভুক্ত নয়।
মূর্তি ও প্রতিকৃতিঃ মূর্তি ও প্রতিকৃতি বানানো হারাম। কবীরা গুনাহ। কেনা বেচা হারাম। এগুলোর পুজা করলে মাবুদ মনে করলে বা ক্ষমতার অধিকারী মনে করলে শিরক হবে। ঈমান থাকবে না। কোরআনে বর্ণিত আছে হযরত ইবরাহীম (আ.) স্বীয় প্রতিমা পুজারী কওমকে বলেছিলেন, তোমরাতো আল্লাহর পরিবর্তে কেবল প্রতিমারই পুজা করছ এবং মিথ্যা উদ্ভাবন করছ। তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদত করছ তারা তোমাদের রিযিকের মালিক নয়। কাজেই আল্লাহর কাছে রিযিক তালাশ করো। তার ইবাদত করো। সূরা আন কাবূত।
হযরত ইবরাহীম (আ.) পিতা আযরকে মূর্তি বানাতে ও বিক্রয় করতে নিষেধ করেছিলেন। তিনি মানেন নাই। তাইতো নবী হয়েও কিয়ামতের দিন সুপারিশ করে স্বীয় পিতাকে বেহেস্তে নিয়ে যেতে পারবেন না। রাসূল (সা এর আবির্ভাবই হয়েছে প্রতিমা পুজার অবসান ও অসারতা প্রমাণ করার জন্য এবং এক আল্লাহর ইবাদত চালু করার নিমিত্তে। মূর্তি ও প্রতিকৃতিতে আল্লাহর সৃষ্টি ক্ষমতার সাদৃশ্যতা ও গাইরুল্লাহর উপাসনা অনুভব হয় তাই কবীরা গুনাহ ও হারাম।
মূর্তি পুজারীদের সহায়তা করা চাদা দেয়া তাদের মন্দিরে যাওয়া সবই হারাম। এসবে ঈমান হারাবার আশংকা থেকে যায়।
ফটোর বিধানঃ সর্বসম্মতিক্রমে বিচরণশীল প্রাণীর ফটো তোলা বা উঠানো বিনা প্রয়োজনে জায়েয নেই। কবীরাহ গুনাহ হারাম। রাসূল (সা বলেছেন আল্লাহর নিকট এরচে বেবি আযাবের উপযুক্ত ফটো নির্মাতা। (বুখারী শরীফ)
ফটো তোলা নিষেধ কেন?
শয়তান মানুষের অন্তরে মুরুব্বীদের মহব্বত ও স্মৃতি ধরে রাখতে সর্বপ্রথম একটা নিদর্শন বানিয়ে রাখতে অনুপ্রেরণা দেয়। অতঃপর মাঝে মাঝে তাদেরকে স্মরণ করতে ও শ্রদ্ধা জানাতে আগ্রহ যোগায়। এভাবেই শুরু হয় মূর্তি পুজা, কবর পুজা, ফটো পুজা ইত্যাদি। ফটো, মূর্তি, এগুলো মূর্তি ও ব্যক্তি পুজার মাধ্যম। গাইরুল্লাহর প্রতি অতিভক্তি ও শ্রদ্ধা আল্লাহর আনুগত্য পরিপন্থী। এটা বিধর্মীদের সভ্যতা। এটা মানুষকে মূর্তি পুজার দিকে ধাবিত করে। যা ইসলামে গুরুতর অপরাধ।
কোনো আকৃতি বা অবয়ব সৃষ্টি করা আল্লাহ তাআলার কাজ। তাই যে ব্যক্তি ফটো বানায় দৃশ্যত: সে যেন আল্লাহ তাআলার সৃষ্টি শক্তির অংশীদারিত্বের দাবী করে।
ইবনে মালেক রহ. বলেন ফটো নির্মাতা যদি এমন ধারণ থেকেই কাজটি করে থাকে, তাহলে সে কাফের। অন্যথা সৃষ্টি শক্তির অংশীদারিত্বের সাদৃশ্যতার দরুন জঘন্যতম অপরাধী। যা আল্লাহর ক্রোধকে বাড়িয়ে দেয়।
বর্তমানে ফটো আন্তর্জাতিকভাবে নষ্টামির মূল কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। ফেসবুক ও আকাশ সংস্কৃতির মাধ্যমে আমাদের যবু সমাজ ক্রমশ: ধ্বংসের পথে এগুচ্ছে। নিজের নগ্ন-অর্ধ নগ্ন ছবিগুলো ফেসবুকে শেয়ার করে অশ্লীল কমেন্স ও লাইক পেতে যেনো প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হচ্ছে। সর্বপরি এগুলো ফ্যাশন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্চে। আর এ নগ্ন ছবি দেখে তরুণসমাজ ফেসবুকের প্রতি আসক্তিই নয় বরং পাগলপারা হয়ে পড়ছে। এ সামাজিক নেটওয়ার্কগুলো তরুণ সমাজকে নারী আসক্ত নারী নির্যাতনকারী লুটেরা সন্ত্রাসী বানাচ্ছে। ঈমানহারা হতে চলছে মুসলিম সমাজ। সর্বক্ষেত্রে গোনাহের বিস্তার হতে চলছে।
বর্তমানে ফটো ফ্যাশনে যে অপচয় হচ্ছে তা যদি সংগ্রহ করা যেতো দেশের আর্থিক সহযোগিতায় তা অনেক কাজে আসতো। অপচয় শয়তানের কাজ। তাই ফটো চরিত্র বিনষ্টের পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতিও বয়ে আনছে।
আজ আমাদের দুর্ভোগ আমরা বিধর্মীদের সভ্যতায় গা ভাসিয়ে নিজেদের আদর্শ ও ধর্মের কথা ভুলে গিয়েছি। উন্নতি অগ্রগতি সফলতা কি করে আসবে? আরো দুর্ভাগ্য আমরা অপরাধ করছি কিন্তু তাকে অপরাধ মনে করছিনা। অপরাধকে অপরাধ মনে করা এটাওতো অনেক বড় ভাগ্যের বিষয়।
ক্যামেরা ও মোবাইলে ফটো তোলার বিধানঃ
কেউ কেউ বলেন ক্যমারা ও মোবাইলে ফটো তোলা জায়েয। এটাকে তাছভীর বলা যায় না। হাদীসে তাছভীর এর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এদের যুক্তি হলো: ক্যামেরা ও মোবাইলে কোন কিছুর প্রতিচ্ছবি ক্যামেরা ল্যান্সে বন্দী করা হয়। ক্যামেরা ও মোবাইলে কোন ব্যক্তি আসন গেড়ে বসে নেই যে অংকন করবে। এটা আয়না ও পানিতে ছায়া সদৃশ্য। আয়নাতে ছবি যেমন নিষেধ নয় ক্যামেরা ও মোবাইলেও নিষেধ নয়। তদুপরি হাদীসে নিষিদ্ধ ফটো হলো যেগুলোর পুজা করা হয়। কাগজ বা ক্যামেরাবন্দী ফটো পুজা করা হয় না।
আহলে সুন্নাত জমহুর উলামাদের মতেঃ
মোবাইল ও ক্যামেরাতে সরাসরী কোন ব্যক্তি বসানো না থাকলেও মানব নির্মিত মেশিনের সাহায্যেই তা ক্যামেরা বন্দী করা হয় এবং ক্যামেরা ও মোবাইল পরিচালনা মানুষকেই করতে হয়। তা থেকে কাগজে বা অন্যস্থানে স্থানান্তর মানুষই করে থাকে। সুতরাং মেশিন ও যন্ত্রপাতির মাধ্যমে ব্যবহার ও মানবহস্তের সরাসরি ব্যবহারে পার্থক্য করা যাবে না।
ফটো আর তাছভীর একই জিনিস কোন পার্থক্য নেই। হাদীসের নিষিদ্ধ তাছভীর হলো ফটো। এছাড়া আয়না ও পানিতে যে ছায়া দেখা যায় সেটা ফটো বা ছবি নয়। এর উপর আনদায ও অনুমান করে ফটো তোলার বৈধতা বলা যাবেনাএবং যে ছবির পুজা করা হয় এমন ছবি নিষিদ্ধ। এধরনের ব্যাখ্যা ও অনুমান সম্পূর্ণ ভুল। প্রয়োজন ব্যতিত ফটো তোলা ফটো রাখা হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে এমন ঘরে (রহমতের) ফেরেস্তা প্রবেশ করে না যেখানে তাছভীর বা ফটো থাকে। (বুখারী-২)
প্রয়োজন ও অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রের আলোচনাঃ
শরীয়ত অযথা অহেতুক কর্মকে লাহব শব্দে বর্ণনা করেছে। এবং হারাম ঘোষণা করেছে। আবার মানব প্রয়োজনকে শরীয়ত কখনও অস্বীকার ও অগ্রাহ্য করেনা। মানুষের সাধ্যের বাইরে কোন কিছু চাপিয়ে দেয়নি। শরীয়ত মানুষের বিবেককে বড় মাপকঠি ও বিচারক নির্ধারন করেছে। তাই নিজের বিবেককেই জিজ্ঞাসা করতে হবে নিজের বুদ্ধির আলোকে বুঝতে হবে কোন জিনিসটা কখন প্রয়োজনীয় আর কখন প্রয়োজনীয় নয়। কোনটি অপচয় আর কোনটি অপচয় নয়।
যেমনঃ শরীয়তের একটি প্রসিদ্ধ নীতি ‘জরুরত নিষিদ্ধকে বৈধ করে দেয়।’ এর আলোকে প্রয়োজন বিশেষ নিষেধ বস্তুটিও বৈধ হয়ে যায়। মৃত প্রাণী খাওয়া হারাম। কিন্তু অনুন্যাপায় হলে তা বৈধ হয়ে যায়। সুতরাং ফটো তোলাও প্রকৃত পক্ষে হারাম নাজায়েয। মারাত্মক গোনাহের কাজ। কেবল মাত্র প্রয়োজন বিশেষেই এর অনুমোদন অনুমতি হতে পারে। নাজায়েয কে জায়েয মনে করলেতো ঈমান থাকে না। জাতীয় আইডি কার্ড, পাসপোর্ট, চাকুরী, ভর্তি, ব্যাংক একাউন্ট এমন ধরনের জাতীয় প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলোতে ফটো তোলা জায়েয। কিন্তু ফ্যাশন অতিভক্তি অমত মহব্বতে ঘরে ফটো লটকানো জায়েয নেই। মসজিদ ও ইবাদাতগাহে ফটো লটকানো আরো জঘন্য অপরাধ। রাষ্ট্রীয়ভাবে এসব ব্যাপারে খেয়াল রাখা উচিত। মুরুব্বী নেতা-নেত্রীর ফটো অফিস আদালতে ও টাকা পয়সা মুদ্রা এবং বিভিন্ন ধরনের টিকেটে ও নাজায়েজ হবে। কোরআন বা তাসবীহ পড়ুয়া নারী বা বাচ্চার ফটো গাড়ি বা ঘরে কোথাও রাখা যাবেনা।
আল্লাহ তা'য়ালা আমাদেরকে এ মহাপাপ কর্ম থেকে বেচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমীন।
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
অল্প পুঁজিতে অত্যন্ত লাভজনক একটি ব্যবসার সন্ধান, যে কেউ চাইলে শুরু করতে পারে

কেউ একজন জানতে চেয়েছেন ১০/১২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে কিভাবে মাসে ১/২ লাখ টাকা ইনকাম করা যায়? বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করে দেখলাম বাংলাদেশে ১০/১২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে... ...বাকিটুকু পড়ুন
সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন
রাজনীতির পন্ডিত, ব্লগার তানভীর জুমারের পোষ্টটি পড়েন, জল্লাদ আসিফ মাহমুদ কি কি জানে!

সামুর রাজনীতির ডোডো পন্ডিত, ব্লগার তানভীর ১ খানা পোষ্ট প্রসব করেছেন; পোষ্টে বলছেন, ইউনুস ও পাকিসতানীদের জল্লাদ আসিফ মাহমুদ ধরণা করছে, "সেনাবাহিনী ও ব্যুরোক্রেটরা বিএনপি'কে... ...বাকিটুকু পড়ুন
নীল নকশার অন্ধকার রাত

কায়রোর রাস্তায় তখন শীতের হিম হাওয়া বইছিল। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। দুইটা বড় সংবাদপত্র অফিস: আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু এই আগুন কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা... ...বাকিটুকু পড়ুন
আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে
আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[
স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।