somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আরবী নববর্ষরে জন্মকথা

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১০:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আজ আরবী নববর্ষের প্রথম দিন, কিন্তু সেরা পত্রিকা গুলো তা নিয়ে কার্পন্য করেছে। তাই আমার লেখাটা্ই সবার জন্য শেয়ার করলাম।


হিজরি সন-জন্মকথার ইতিহাস।
সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ সময়কে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে আসছে। সময় আল্লাহ তাআলার অন্যতম একটি রিযিক। বছর-মাস-দিন সৃষ্টির সূচনা থেকেই মহাকালের সাক্ষী হয়ে রয়েছে। চন্দ্র ও সূর্য উভয়টির মাধ্যমে সন-তারিখ নির্দিষ্ট করা যায়।চাঁদের গতি-প্রকৃতি হিসাবে যে সন গণনা করা হয়, সেটাকে বলা হয় চান্দ্রসন, আর সূর্যের গতি-প্রকৃতি হিসাবে যে সন গণনা করা হয়, তাকে বলা হয় সৌরসন। আর তা নির্ভর করে সূর্য ও চন্দ্র উভয়ের জন্য আল্লাহ তায়ালা যে কক্ষপথ নির্ধারণ করে দিয়েছেন তাতে উভয়ের পরিভ্রমণের ওপর। বাংলাদেশে ইংরেজি, বাংলা ও হিজরি এই তিনটি সালের প্রচলন রয়েছে। আমরা যে বাংলা এবং ইংরেজি সাল গননা করি এটা একটি সৌর সন। এবং হিজরি সন হচ্ছে চন্দ্রসন। নানা পরিবর্তন, পরিমার্জন, পরিবর্ধন, বিবর্তন এবং যোগ-বিয়োজনের মধ্য দিয়ে বর্ষ গণনায় বর্তমান কাঠামো লাভ করে। ইংরেজি নববর্ষের আছে বিরাট এক ইতিহাস। বাংলা সনের ইতিহাসও ঘটনাবহুল ও বৈচিত্র্যময়। আমরা যে বাংলা সাল ব্যবহার করি তা সম্রাট আকবর কর্তৃক প্রচলিত। এভাবে খ্রিস্টানরা হজরত ঈসার (আ.) জন্মদিন থেকে এর গণনা আরম্ভ করে। যেহেতু এ গণনাকে ইংরেজরা প্রচলন করেছে, তাই এটাকে ইংরেজি বলা হয়। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় আজ বাংলা বা ইংরেজি নয়, আমরা আলোচনা করবো হিজরী সন নিয়ে।

মানুষ যেদিন বর্ষ গণনা করতে শিখল সেদিন চাঁদের হিসাবেই শুরু করে বর্ষ গণনা। চাঁদের বিভিন্ন অবস্থা দিয়ে ওরা মাসের বিভিন্ন সময়কে চিহ্নিত করতো। সূর্যের হিসাবে বা সৌর গণনার হিসাব আসে অনেক পরে। বলা যায় পৃথিবীর সূচনা থেকেই আল্লাহর নির্দিষ্ট মাস সমূহ রয়েছে আরবী তথা হিজরী সনে।
মহান এ পৃথিবীতে মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সকল কিছুই সুনির্ধারিত করেছেন সহজ ও সুষ্ঠ হওয়ার জন্য। তারই ধারাবাহিকতায় মহান আল্লাহ নিজেই আরবী ১২ মাসের নাম সমূহ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এ সম্পর্কে আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনের সূরা তাওবার ৩৬নং আয়াতে ইরশাদ করেন,
“নিশ্চয়ই পৃথিবী ও আকাশ সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর নিকট মাস সমূহের সংখ্যা ১২টি। তার মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। ইহাই সু-প্রতিষ্ঠিত বিধান।”
মহান আল্লাহ তায়ালার বাণী-
লোকেরা আপনাকে নবচন্দ্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, আপনি বলুন, তা হলো মানুষের এবং হজের জন্য সময় নির্ধারণকারী।
— সূরা-বাকারা; আয়াত-১৮৯
এ আয়াত থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যায়, আল্লাহ তা’য়ালা বান্দাদের হিসাব-নিকাশের সুবিধার্থে পঞ্জিকা স্বরূপ চন্দ্রকে সৃষ্টি করেছেন। এজন্য, চন্দ্র মাস তথা হিজরী সনের গুরুত্ব অপরিসীম ।

মক্কার অধিবাসীরা ছিল হজরত ইব্রাহিম আ:-এর নবুওয়াতের প্রতি বিশ্বাসী ও তার শরিয়ত অনুসরণের দাবিদার। বলাবাহুল্য ইব্রাহিমী শরিয়ত মতেও নিষিদ্ধ মাসগুলোতে যুদ্ধবিগ্রহ এমনকি জন্তু শিকার নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু কিছু দুষ্টাচারী শরিয়তের বিধান ভঙ্গ করে স্বীয় স্বার্থ সিদ্ধির জন্য নানা টালবাহানার আশ্রয় নিত। কখনো এ মাসগুলোতে যুদ্ধবিগ্রহে লিপ্ত হতে চাইলে কিংবা যুদ্ধের সিলসিলা নিষিদ্ধ মাসে প্রসারিত হলে তারা বলত, বর্তমান বছরে এ মাস নিষিদ্ধ নয়, আগামী মাস থেকেই নিষিদ্ধ মাস শুরু হবে। যেমন কখনো যদি যুদ্ধ চলাকালে মহররম মাস এসে পড়লে বলত, এ বছরের মহররম মাস নিষিদ্ধ মাস নয়, বরং তা হবে সফর বা রবিউল আউয়াল মাস। অথবা বলত, এ বছরের প্রথম মাস হলো সফর, মহররম হবে দ্বিতীয় মাস। সার কথা তারা মহান আল্লাহর চিরাচরিত নিয়মের বিরুদ্ধে বছরের যেকোনো চার মাসকে তাদের সুবিধামতো নিষিদ্ধরূপে গণ্য করে নিতো। যে মাসকে ইচ্ছা, জিলহজ বা রমজান নামে অভিহিত করত। এমনকি অনেক সময় যুদ্ধবিগ্রহে ১০টি মাস অতিবাহিত হলে বর্ষপূর্তির জন্য আরো কয়েকটি মাস বাড়িয়ে দিয়ে বলত- এ বছরটি হবে চৌদ্দ মাস সম্বলিত। অতঃপর অতিরিক্ত চার মাসকে সে বছরের নিষিদ্ধ মাসরূপে গণ্য করত।
মূলত তারা দ্বীনে ইব্রাহিমের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ দেখিয়ে বছরের চারটি মাসের সম্মান করে যুদ্ধবিগ্রহ থেকে বিরত থাকত। কিন্তু মহান আল্লাহ মাসের যে ধারাবাহিকতা রেখেছেন, তাতে নানা হেরফের করে নিজেদের স্বার্থ পূরণ করে নিত। ফলে সেসময় কোন মাস প্রকৃত রমজান বা শাওয়াল এবং কোন মাস প্রকৃত জিলকদ বা রজব তা নির্ধারণ করা দুষ্কর হয়ে পড়েছিল।তাছড়া মুসলিম বিশ্বে চাঁদের হিসাবে অনেক ইবাদত-বন্দেগি, আমল অনুশাসন পালিত হওয়ায় হিজরি সনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। মূলত এসব কারণেই একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও পরিকল্পিত সন গণনা শুরু করা জরুরী ছিল।

মুসলিম হিসেবে হিজরী নববর্ষ উদযাপন কিংবা মুসলিমদের গৌরবের দিনটি পালনের ঐতিহ্য আমাদের সংস্কৃতিতে ব্যাপকতা লাভ করেনি। আমরা অনেকেই জানি না যে, মুসলিমদের নববর্ষ কোন মাসে হয়? আবার কেউ হয়ত বা হিজরীবর্ষ গণনার সঠিক ইতিহাস জানেন না। হিজরী সনের তারিখের খবরও রাখেন না। এর প্রতি মানুষ আকর্ষণও অনুভব করেন না। এটা খুবই দুঃখ জনক।
হিজরি সন মুসলমানদের ধর্মীয় প্রেক্ষাপটেই ব্যবহার করা হয়। ইসলামের অধিকাংশ ইবাদত-বন্দেগী যেমন: রোজা, হজ, কোরবানি, শবে-কদর, শবে বরাত , আশুরা ইত্যাদি ইবাদত হিজরি সনের সাথে সম্পর্কযুক্ত। ফলে হিজরী সনের ব্যবহারের মাধ্যমে সঠিক সময়ে ইবাদত বন্দেগী পালন করে; মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন লাভ করা সম্ভব হয়। এজন্য হিজরী সন তথা চন্দ্র মাস গণনাকে ফরযে-কেফায়া হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
হিজরী ৩৫৪ দিনে ১ বছর। হিজরী সন ইংরেজী সন থেকে ১১ দিন বছরে কম হয়। অর্থাৎ ৩৬৫-৩৫৪=১১ দিন। হিজরী সনকে চান্দ্র মাস ও বলা হয়। আরবি সন, হিজরী, এ সনেরই অন্যান্য নাম। চন্দ্রের উদয়াস্তের আবর্তনের উপর ভিত্তি করেই এ সনের দিন তারিখ নির্ণীত হয়ে থাকে। সাল প্রবর্তনের পূর্বে গুরুত্বপূর্ণ অনেক ঘটনাকে কেন্দ্র করে বর্ষপঞ্জির ধারাবাহিকতার ইতিহাস পাওয়া যায়। যথা : হজরত নূহ (আ.)-এর মহাপ্রলয়, হজরত ইব্রাহিম (আ.)-কে অভিশপ্ত নমরুদ কর্তৃক অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা, হজরত ইউসুফ (আ.) মিসরের শাসনকর্তা নিযুক্ত হওয়া, মূসা (আ.) তদানীন্তন জালিমশাহী ফেরাউনের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে বনি ইসরাইলের বহুধা-বিভক্ত সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে মহান আল্লাহর নির্দেশে মিসর ছেড়ে চলে যাওয়া, হজরত দাউদ (আ.)-এর নবুওয়াত ও শাসনকাল, এরপর হজরত সোলাইমান (আ.)-এর রাজত্বকাল, হজরত ঈসা (আ.)-এর জন্ম ইত্যাদিকে কেন্দ্র করেই মূলত সমসাময়িকভাবে বর্ষপঞ্জি তারিখ গণনার সূত্রপাত হয় বলে ঐতিহাসিকদের ধারণা। পরবর্তী সময়ে প্রত্যেক গোত্র, সম্প্রদায়, জনগোষ্ঠী তাদের নিজেদের মধ্যে ঘটে যাওয়া বিশেষ কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বর্ষগণনা শুরু করত। বর্ষগণনার উল্লিখিত প্রথা যেমনটা ছিল অনারবদের মধ্যে, তদ্রূপ প্রচলন ছিল আরব জাতির মধ্যেও। বাসুস যুদ্ধ যা বকর বিন ওয়ায়েল ও বনি যুহাল গোত্রের মধ্যে একটা উষ্ট্রীকে কেন্দ্র করে ৪০ বছর ধরে চলমান ছিল। ওই যুদ্ধকে মূল ভিত্তি বানিয়ে বর্ষগণনার সূত্রপাত করেন আরবরা। এর পরে দাইস যুদ্ধ ও আসহাবে ফীল তথা হস্তীবাহিনীর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বর্ষপঞ্জি প্রণয়ন করা হয়।

হিজরি সনের সঙ্গে মুসলিম উম্মাহর আদর্শ ও ঐতিহ্যের ভিত্তি সম্পৃক্ত। যার সঙ্গে জড়িত আছে বিশ্বমানবতার মুক্তির অমর কালজয়ী আদর্শ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় ও পুণ্যময় জন্মভূমি মক্কা ত্যাগ করে মদিনায় গমনের ঐতিহাসিক ঘটনা। মহানবী (সা.) স্বয়ং আনুষ্ঠানিকভাবে হিজরী সন চালু করেননি। এটি প্রবর্তন করেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর বিন খাত্তাব (রা.)।হজরত ওমর (রা.) খিলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করে লক্ষ্য করলেন যে, সরকারি নথিপত্রে তারিখ লিখতে শুধু মাসের নাম লেখা হয়। ফলে বোঝা যায় না যে এই মাস কোন বছরের। নিজস্ব সাল না থাকার কারণে শুধু মাসের নাম উল্লেখ করা ছাড়া কোনো বিকল্প পথ ছিল না। যথাযথ ভাবে তারিখ না লেখার কারণে বহু জটিলতা ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতে থাকে। বিশেষ করে বিভিন্ন প্রদেশের শাসনকর্তাদের কাছে পত্রাদি ও ফরমানাদিতে শুধু মাসের উল্লেখ থাকায় কোন বছরের মাস তা নির্ধারণ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। একদা হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) খলিফা হজরত উমর (রা.)-কে পত্র লিখে বলেন,
“বিশ্বাসীদের নেতা আপনার পক্ষ হতে আসা শাসন কার্যের সাথে সংশ্লিষ্ট উপদেশ, পরামর্শ এবং নির্দেশ সম্বলিত বিভিন্ন চিঠিপত্র ও দলিলে কোন সন-তারিখ না থাকায় আমরা তার সময় ও কাল নির্ধারণে যথেষ্ট সমস্যার সম্মুখীন হই। অধিকাংশ সময় এসব নির্দেশনার সাথে পার্থক্য করা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে বলে আপনার নির্দেশ ও উপদেশ পালন করতে যেয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।”

এ গুরুত্বপূর্ণ পত্র পাওয়ার পর হযরত ওমর (রাঃ) মুসলিম বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়ে এক পরামর্শ সভার আয়োজন করেন। এ সম্পর্কে আয়োজিত সভায় সাহাবায়ে কিরামদের কেউ নবুওয়াতের সূচনা থেকে তারিখ গণনার প্রস্তাব দেন। কেউ প্রস্তাব দেন হিজরত থেকে আবার কেউ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের দিন থেকে তারিখ গণনার। কেউ কেউ প্রস্তাব করেন যে, মহানবী সা:-এর জন্মদিন থেকে ওই তারিখ গণনা করা হোক, কিন্তু ওই তারিখ নিশ্চিত নয়। কথিত আছে হজরত আলীর (রা.) পরামর্শ প্রদান করেন হিজরতের বছরকে কেন্দ্র করে নতুন সাল গণনার শুরু করা হোক। সাহাবায়ে কিরামদের এসব প্রস্তাব শোনার পর হজরত উমর (রা.) হিজরতের দিন থেকে ইসলামী তারিখ গণনার পক্ষে বলেন। যুক্তি দেখান হিজরতের মাধ্যমে সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য সূচিত হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে মুসলমানদের উন্নতি, অগ্রগতি, বিজয় ও সাফল্যের প্রতীক ও শ্রেষ্ঠ তৌহিদী বিপ্লব ছিল হিজরত। যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় জন্মভূমি ত্যাগ করা ছিল ইসলামের ইতিহাসে একটি মহান ঘটনা। সে কারণেই হিজরতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে হিজরি সন গণনা শুরু হয় । সকল সাহাবা কিরামরা এ প্রস্তাবকে সাদরে গ্রহণ করেন। হিজরতের বছরটি হিজরি অব্দের প্রথম বছর নির্ধারিত হয়েছিল। মাসগুলো যেমন প্রচলিত ছিল তেমনি রইল এবং মহররমকে বছরের প্রথম মাস হিসেবে ধরা হলো। সুতরাং হিজরি সনের শুরু ধরা হলো ঠিক হিজরতের দিন থেকে নয়, তার বদলে এই বছরের ১ মহররম থেকে ।

হিজরতের সময়কে ইসলামী সন গণনার সূচনাকাল ধরা হলেও মহররম মাসকে প্রথম মাস হিসেবে ধরা হয়। কারণ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রবিউল আউয়াল মাসে হিজরত করলেও মক্কা থেকে মদিনা মুনাওয়ারায় যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন মহররম মাসে। মহররম মাসকে ইসলামী সন বা হিজরি সনের প্রথম মাস নির্ধারণের পেছনে পবিত্র কোরআনের একটি নির্দেশনা গুরুত্ব পেয়েছে। পবিত্র কোরআনে চারটি মাসকে সম্মানিত বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এ চারটি মাস হলো জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব। মহররম মাসে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরতের ইচ্ছা ঘোষণা করায় এবং এ চারটি সম্মানিত মাসের অন্যতম হওয়ায় তা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।

৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে হজরত ওমর (রা.) কর্তৃক হিজরি সন প্রবর্তিত হওয়ার এক বছর পরই আরব বণিকদের আগমনের মাধ্যমে আমাদের দেশেও প্রচলিত ইসলামের প্রচার ও প্রসার শুরু হয়। সঙ্গে সঙ্গে হিজরি সনও ক্রমান্বয়ে এ দেশে প্রসারিত হতে থাকে। ৫৯৮ হিজরি মোতাবেক ১২০৯ খ্রিস্টাব্দে ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজীর বঙ্গবিজয়ের মাধ্যমে বাংলার জমিনে মুসলিম শাসনের ইতিহাস সূচিত হয়। এই সময় থেকে এখানে হিজরি সন রাষ্ট্রীয় মর্যাদা লাভ করে জাতীয় সনে পরিণত হয়। যা ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। ইতিহাসবিদদের মতে, উপমহাদেশে প্রায় ৫৫০ বছর রাষ্ট্রীয়ভাবে এই হিজরি সন স্বীকৃত ছিল। ইংরেজ শাসনকালে আমাদের দেশে খ্রিস্টাব্দ সনের প্রচলন হয়। যা আজও আমরা ব্যবহার করছি।
একথা মনে করার কোনোই অবকাশ নেই যে, হিজরী সনটি আসলে আরবী বা কেবল আরবদের একটি সন; বরং এটি মুসলমানদের সন এবং ইসলামী সন। তাই আমাদের সকলের উচিত ইসলামী সাংস্কৃতির সাথে পরিচিত হওয়া এবং হিজরী সন ও তার তৎপর্য স্পষ্ট ভাবে উপলব্ধি করা। হিজরি গননা অনুযায়ী সকল ইবাদত গুলো সঠিক ভাবে পালন করতে হিজরি সনের হিসাব রাখাও আমাদের জন্য জরুরী। আল্লাহ আমাদের সেই তাওফিক দান করুন।

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১০:৪১
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×