ভাগ্যিস, হুমায়ূন আহমেদ মরে গিয়ে বেচে গিয়েছেন। এখন হুমায়ূন আহমেদ বেচে থাকলে নব্য চেতনাজীবিদের হাতে নিগ্রহিত হতেন। হয়তো তার বাসায় উকিল নোটিস যেতো,তার ১৪ পুরূষ গালাগালির চোটে উদ্ধার হয়ে যেতো, পরীক্ষা করে দেখা হতো,তার ডি এন এ বাংলাদেশী না পাকিস্তানীর। কারন তিনি মুক্তিযুদ্ধকে বিকৃত করার চেষ্টা করেছেন।সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের দলিল নিয়ে। তিনি পাক সেনাদের বর্বরতাকে ছোটো করে দেখিয়েছেন।
এসবই নব্য চেতনাবাজদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের অবমাননার সামিল।যা ক্ষমার অযোগ্য
"... লেখক-লেখিকাদের ডায়েরির মতো লেখা বইগুলিও আমাকে সাহায্য করেছে (জোছনা ও জননী লেখার ব্যাপারে - )। ঢাকা শহরে প্রতিদিন কী ঘটছিল ডায়েরি পড়ে তা বোঝা যাচ্ছিল। তবে এই প্রসঙ্গে ছোট্ট একটা ঘটনার কথাও বলি। ডায়েরি জাতীয় গ্রন্থগুলি পড়ে আমার মনে হয়েছে সেগুলি তখনকার লেখা না। পরে তারিখ দিয়ে সাজানো হয়েছে। কারণ একজন কোনো এক বিশেষ দিনে লিখছেন - ঢাকা শহরে সকাল থেকেই প্রবল বর্ষণ, আরেকজন একই দিনে লিখছেন - কঠিন রোদ। রোদে ঢাকা শহর ঝলসে যাচ্ছে। একজন লিখছেন - এই মাত্র খবর পেলাম প্রবাসী সরকার শপথ নিয়েছে। অথচ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হয়েছে তার দুদিন পরে। ডায়েরি রচনায় রাজনৈতিক মতাদর্শও কাজ করেছে। কারো কারো ডায়েরিতে প্রতিদিনকার সমস্ত খুঁটিনাটি আছে, কিন্তু জিয়াউর রহমান নামের একজন মেজর যিনি কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার যুদ্ধে সবাইকে আহ্বান করেছেন সেই উল্লেখ নেই। তার নামটিও নেই।
... বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের দলিলের পনেরো খন্ডের মধ্যে সাতটি খন্ড আমি মন দিয়ে পড়েছি। আমার উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধের দলিল থেকে সরাসরি অনেক অংশ ব্যবহার করেছি। এই দলিল নিয়েও আমার কিছু খটকা আছে। একটি শুধু বলি - রাজারবাগ পুলিশ লাইনে বন্দি তরুণীদের উপর নির্যাতনের সাক্ষ্য গ্রন্থবদ্ধ করা হয়েছে। বলা হচ্ছে তাদেরকে পায়ে দঁড়ি বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হতো। যে তরুণীদের রাখা হয়েছে ভোগের জন্যে তাদেরকে এভাবে ঝুলিয়ে রাখার পেছনের যুক্তি আমার কাছে পরিষ্কার না। তারপ্রেও ধরে নিলাম তাই করা হয়েছে। যা আমার কাছে একেবারেই গ্রহণযোগ্য না তা হলো সাক্ষ্যদানকারী বলছেন এইসব তরুণীদের সঙ্গে বই-খাতা-কলম ছিল। অর্থাৎ স্কুল বা কলেজে যাবার পথে তাদের ধরা হয়েছে। যে ভয়ঙ্কর সময়ের কথা বলা হচ্ছে সে-সময় স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটি সবই বন্ধ। বইখাতা নিয়ে কারো বাইরে যাবার প্রশ্নই উঠে না। আমার ধারণা সাক্ষ্যপ্রমানমূলক তথ্যগুলি ভালোমতো যাচাই করা হয় নি। তাছাড়া জাতিগতভাবেও আমরা অতিকথন পছন্দ করি॥"
- হুমায়ূন আহমেদ / জোছনা ও জননীর গল্প ॥ [ অন্যপ্রকাশ - জুন, ২০০৪ । ভূমিকা ]
হুমায়ুন স্যারের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা পূর্ব
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৫