ইডেনের ঘটনায় সারাদেশে নিন্দার ঝড় উঠেছে। মানুষ আগে ছাত্ররাজনীতির এক রূপের সাথে পরিচিত ছিল, এখন বেরিয়ে এসেছে আর এক ভয়ানক বিকৃত রূপ। ছাত্ররাজনীতিতে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, প্রতিপক্ষের সাথে সংঘর্ষ, দলীয় কোন্দল ইত্যাদির অবসান কামনা করে এসেছিল অভিভাবক ও সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, ঐ আকাক্মখা তো পূরণ হয়নি বরং ছাত্ররাজনীতির এমন এক কুৎসিত দিক উন্মোচিত হয়েছে যা ভাবতে গেলেও গা শিউরে ওঠে। ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের দু'গ্রুপ এখন একে অপরকে দেহব্যবসার অভিযোগে অভিযুক্ত করছে।
পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয় : ইডেন কলেজের একাধিক ছাত্রী এবং ছাত্রলীগের জুনিয়র কর্মীরা জানায়, শুধু নেতাদের বাসায় নয়, বিভিন্ন শিল্পপতি এবং আজিমপুর, হাজারিবাগ, নিউমার্কেট ও ধানমন্ডি এলাকার ব্যবসায়ীদের বাসায়ও পাঠানো হয় ছাত্রলীগের জুনিয়র ছাত্রীকর্মীদের। এতে রাজী না হলে ছাত্রীদের ওপর নেমে আসে নির্যাতন। এদিকে খোদ ছাত্রলীগের সভাপতির বিরুদ্ধেই রয়েছে ইডেন কলেজ নেত্রীদের কাছ থেকে মাসোহারা আদায় এবং তার বাসায় নেত্রীদের যাতায়াতের অভিযোগ। ছাত্রলীগের দুই সহ-সভাপতি ও দুই যুগ্ম-সম্পাদকের বিরুদ্ধে ইডেন ও বদরুন্নেসায় নবাগত নেত্রীদের বিভিন্নভাবে ফাঁদে ফেলে সর্বস্ব লুটে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এদেরই একজন গত ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে মাইক্রোবাস নিয়ে অপেক্ষা করছিল। মিছিল-সমাবেশ শেষে বদরুন্নেসা থেকে আসা কয়েকজন ছাত্রীকে জোর করে ধরে অজানা স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ওই মাইক্রোবাসে দুই যুগ্ম-সম্পাদক আগে থেকেই বসা ছিল। মাইক্রোবাসে ঢুকে তাদের দেখতে পেয়ে কয়েকজন ছাত্রী লাফিয়ে নেমে পড়ে। যারা নামতে পারেনি তাদের নিয়ে যাওয়া হয় অজানা স্থানে। আরো জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দিনটি ইডেনের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষ তথা জুনিয়র কর্মীদের কাছে আতঙ্কের দিন হিসেবে দেখা দেয়। ওইদিন বিকেল হলেই তাদের চাহিদা ও কদর বৃদ্ধি পায়। নেত্রীরা খোঁজাখুঁজি করে তাদের হাতে ঠিকানা ধরিয়ে দেয়। একই চিত্র বদরুন্নেসা কলেজেও। তাদেরও হোটেলে বা বাসায় পাঠানো হয়। এতে কেউ রাজি না হলে মারপিট করে হল থেকে বের করে দেয়া হয়। অনৈতিক কাজে রাজি না হলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিবির সমর্থক বলে নির্যাতন করে হল থেকে বের করে দেয়া হয়। বিভিন্ন তদবির বাগিয়ে নেয়া এবং ছাত্রসংগঠন ও মূলদলের নেতাদের অনুকম্পা লাভের আশায় ছাত্রীদের এভাবে দেহব্যবসার কাজে লাগানো হচ্ছে। এবারের ঘটনার পর ছাত্রী ও অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মাত্রা বেড়ে গেছে। অনেক ছাত্রী হল ছেড়ে চলে যাচ্ছে। কোন কোন ছাত্রী ও অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা কি আবার সেই আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে এসে পড়েছি, যেখানে মেয়েরা তাদের ইজ্জত ও সম্মান নিয়ে লেখাপড়া করার সুযোগ পাচ্ছে না।
ছাত্ররাজনীতির নামে মেয়েদের দেহব্যবসার কাজে লাগানোর ঘটনা শুধু ছাত্রলীগের জন্যই নয়, জাতির জন্যও কলঙ্কজনক। লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, আওয়ামী লীগের বিগত আমলেও দলের প্রশ্রয়ধন্য এক ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের সেঞ্চুরি উৎসব পালন করেছিল। কাজী নাসির উদ্দিন মানিক নামের ঐ ব্যক্তির বিরুদ্ধে তৎকালীন সরকার কোন ব্যবস্থা তো নেয়নি, উপরন্তু তাকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এবারও সরকারের একটি মহলের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে শুধু টেন্ডার, চাঁদাবাজি ও ভর্তিবাণিজ্য নয়, দেহব্যবসার কাজেও জড়িয়ে পড়েছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এইসব অপকর্ম থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের এবং শিক্ষাঙ্গনকে মুক্ত করতে না পারলে দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়বে বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন। তবে অবস্থা যে পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে এবং নেতারা যেভাবে বিভিন্ন পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন তাতে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। এ ব্যাপারে বিলম্ব ঘটলে দেশের শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটতে পারে।