somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

The Wall of Shame (লজ্জার দেয়াল)

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ সকাল ৮:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইংরেজীতে Hall of Fame কথাটা বেশ প্রচলিত। আমেরিকায় বেইসবল খেলোয়াড়রা অনেকেই "হল অফ ফেইমে" স্থান করে নিয়েছেন। এর সাথে মিল রেখে অনেকে আবার Hall of Shame কথাটাও ব্যবহার করেন। লজ্জাজনক কাজের জন্য অনেকেই এ হলেও স্থান করে নিচ্ছেন। এনাবলিক স্টেরয়েড নামক ড্রাগ সেবন করার জন্য হল অফ ফেইমের অনেক খেলোয়াড়ের এখন হল অফ শেইমে স্থান হবার যোগাড়।

যাইহোক, Wall of Shame কথাটার সাথে পরিচিতি ছিলনা আগে। আজ গ্রোসারী কিনতে গিয়ে কথাটার সাথে পরিচিত হলাম। আমার আগের বাসার কাছের একটা চীনা গ্রোসারী স্টোর। প্রায়ই কেনাকাটা করতাম সেখানে। দোকানটাতে অনেক দেশের গ্রোসারী সামগ্রী পাওয়া যায়। আগে মোটামুটি আকারের মুদি দোকান থাকলেও এখন সম্প্রসারণের মাধ্যমে সুপার-মার্কেট হয়ে গিয়েছে। দোকানের মালিক আবার তাঁর খদ্দেরদের সবার ভাষার কয়েকটা শব্দও মোটামুটি জানেন, আমাদের "ধন্যবাদ" সহ।

বাসা পরিবর্তন করার কারণে দোকানটায় যাওয়া হয়না এখন আর সাধারণত। কিন্তু আমার গিন্নী এসে খবর দিল ঐ দোকানটাতে ল্যাক্টোজ় ফ্রী দুধের দাম আর সব দোকান থেকে কম। আমি আবার পেটের রোগী হওয়ায় ল্যাক্টোজ় ফ্রী ছাড়া খেতে পারিনা। অন্য সব দোকানে দাম বেড়ে ল্যাক্টোজ় ফ্রীর আধা গ্যালনের প্রতিটি প্যাকেটের দাম $৪.৫০ থেকে $4.99 হলেও এ দোকানটায় এখনও $৩.৯৯। আমি কিছু অন্যান্য মুদি সামগ্রীসহ দু'টো প্যাকেট কিনে দাম দেবার জন্য লাইনে দাঁড়াতেই দেখি পরিচিত হিস্পানিক ক্যাশিয়ার মেয়েটার কম্পিউটার স্ক্রীনের উপর থেকে ঝুলন্ত একটা কাগজে বড় করে লিখা "The Wall of Shame"। ভাল করে তাকিয়ে দেখি শুধূ তাই নয়। তার কম্পিউটার মনিটরের চারপাশে অনেকগুলো মানুষের ছবি দিয়ে ফ্রেইম বানানো হয়েছে একটা। আর সে ফ্রেইমের টাইটেলটাই হল The Wall of Shame। আমি হাসতে হাসতে মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলাম এগুলো কী শপ-লিফটারদের ছবি। সে লজ্জা মিশ্রিত হাসিতে হাঁ বোধক জবাবই দিল।

আমি নিজের মনেই মরে যাচ্ছিলাম। আসলেই ওটা একটা লজ্জার দেয়াল। কিন্তু লজ্জার দেয়ালতো মানুষকে শপলিফটিং এর মত লজ্জাজনক কাজ থেকে বিরত রাখার কথা ছিল। আসলে হয়েছে কী, এদের লজ্জার দেয়ালটা ভেঙ্গে গেছে অনেক আগে। এজন্য ছোট-খাট এসব চুরি করে Wall of Shame এ নাম উঠিয়েছে এরা।

লজ্জার দেয়াল যাদের ভেঙ্গে গেছে তারা যা ইচ্ছে তাই করতে পারে। মালয়েশিয়াতে প্রথম যখন পড়তে যাই তখন বড় ভাইদের কাছ থেকে শুনেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথম বহিষ্কৃত ছাত্র ক'জন ছিল বাংলাদেশী। পতিতালয়ে যাওয়া, ক্যাম্পাসে নিজের রুমে মদপান করা আর পরীক্ষায় নকল করতে গিয়ে ধরা খেয়ে বীর বাঙ্গালীরা বহিষ্কৃত হয়েছিলেন এবং বাংলাদেশের নাম বিশ্ববিদ্যালয়ের Hall of Shame এ উঠিয়ে দিয়ে এসেছিলেন। এরপর নাকি প্রতিবছরের ওরিয়েন্টশন উইকে নতুন ছাত্র-ছাত্রীদেরকে ঐ বাংলাদেশীদের উদাহরণ হিসেবে পেশ করতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ছাত্র-বিষয়ক ডেপুটি রেক্টর প্রফেসর সুহায়মী। পরে অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের Student Representative Council এর এক সময়কার VP বাংলাদেশী ছাত্র আব্দুর রহমান ভাই সহ আরো কয়েকজন বাংলাদেশী বড় ভাইয়ের দেন দরবারের পর প্রফেসর সুহায়মী বাংলাদেশীদের উদাহরণ দেয়া বাদ দেন।

এর পরের ইতিহাস বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের গৌরবের। অসাধারণ একাডেমিক পারফর্মেন্স ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কর্মকাণ্ডে গঠনমুলক ভূমিকা পালন করে দেশের জন্য সুনাম বয়ে এনেছে আমাদের সোনার ছেলেরা। কিন্তু এর মাঝেও ছিল লজ্জার দেয়াল ভেঙ্গে যাওয়া কেউ কেউ। পাশ করে বেরিয়ে যাবার পরও মালয়েশিয়া যতদিন ছিলাম IIUM এর সাথে সম্পর্ক ছিল। জুনিয়রদের কাছ থেকেই শুনেছিলাম লজ্জাহীন আরেক বাঙ্গালীর খবর। তার বাবা দেশে সরকারের সচিব। ছেলেটা ক্যান্টিনে খেয়ে পয়সা না দিয়ে চলে আসত। ওখানকার ক্যান্টিন বা অনেক খাবারের দোকানের সিস্টেম হল, আপনি আপনার পসন্দ মত খাবার নিয়ে ক্যাশের মানুষটাকে দেখিয়ে দাম জেনে নিয়ে খেতে বসবেন। এরপর খাওয়া শেষে পয়সা দিয়ে আসবেন। আমাদের এই লজ্জাহীন অধিকাংশ সময়ই দাম না দিয়েই চলে আসত। ক্যাশের লোকটা ব্যাপারটা ঠিকই টের পেত। কিন্তু মালয়িদের স্বভাবসুলভ লজ্জার কারণে কিছুই বলতনা। যদি ওরা কখনো ব্যাপারটা নিয়ে আমাদের বাঙ্গালীদের মত হৈচৈ শুরু করে দিত তবে আমাদের জন্য আবারো Hall of Shame এ নাম উঠার ব্যবস্থা হয়ে যেত, যা আসলেই হত Wall of Shame যা আমাদের দুষ্কৃতিকে আড়াল করার পরিবর্তে হয়ে যেত আমাদের লজ্জাকে স্থায়ীভাবে খোদাই করার আরেক ফলক।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ সকাল ১০:৪৩
১৮টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×