somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবনের আরো একটি বছর......

১৬ ই জুলাই, ২০১০ রাত ১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার হাইস্কুলে পড়ার সময় একটা বাংলা ছায়াছবি মুক্তি পেয়েছিল যার নাম ছিল “ফকির মজনু শাহ”। বাংলায় ইংরেজদের অপশাসনের বিরুদ্ধে ফকির বিদ্রোহের মহানায়ক মজনু শাহের আলোকিত কর্মকাণ্ড ছিল ছবিটির প্রতিপাদ্য। ছবিটি আমার দেখা হয়নি। তবে ছবির একটা গান শুনা হয়েছিল যা সে সময় সবার মুখে মুখে উচ্চারিত হত। গানটা ছিল - “সবাই বলেহ বয়স বাড়ে আমি বলিহ কমেহরে, আমি বলিহ কমে – এই মাটির ঘরটা খাইল ঘুণে প্রতিহ দমেহ দমেহরে, প্রতিহ দমেহ দমে।” কথাগুলো ভীষণ সত্য। প্রতিটি চলে যাওয়া মুহুর্ত মূলত আমাদের জীবন থেকে ক্ষয়ে যাওয়া এক একটা অংশ।

জীবনের একটা সময় থাকে যখন আমরা নিজেদেরকে অন্যদের চেয়ে বড় দেখাতে চেষ্টা করি। অবশ্য যখন আমরা বড় হয়ে যায় তখন আর অন্যদের চেয়ে নিজেকে বয়সে বড় দেখানোর আর চেষ্টা করিনা; আমরা চেষ্টা করি কে কার চেয়ে বয়সে কত কম তা দেখানোর জন্য। নিজেকে অন্যের চেয়ে বয়সে তরুণ প্রমান করার চেষ্টার আমাদের অন্ত থাকেনা। বয়স গোপন করার জন্য নানা পন্থা ও উপকরণের আশ্রয় আমরা গ্রহন করি। কিন্তু যাই আমরা করিনা কেন,আমাদের যতই অপসন্দ হোক না কেন আমরা পর্যায়ক্রমে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হই। নীরবে, কিন্তু নিশ্চিতভাবেই আমাদের জীবনের অবিধারিত মুহুর্তটি এসে উপস্থিত হয়ে যায় আমাদের অজান্তেই।

প্রতিটি জীবিত সত্ত্বার জন্য [খোদার সত্ত্বা ব্যতীত] মউতই একমাত্র অবধারিত সত্য। সেজন্য আল্লাহ মউতের জন্য ব্যবহার করেছেন “ইয়াক্বীন” [সুনিশ্চিত বিষয়] শব্দটিকে; যেমন তিনি বলেছেন, “আর তোমাদের প্রতিপালকের বন্দেগী করতে থাকো নিশ্চিত বিষয়টি [ইয়াক্বীন/মৃত্যু] এসে যাওয়া পর্যন্ত।” [১৫:৯৯] জীবনের একটা অতিক্রান্ত বছর মানে আমিও, আমার পূর্বে অতিক্রান্ত এবং পরে যারা আসবে এমন সব মানুষের মত, নিশ্চিতভাবেই সে অবধারিত মুহুর্তটির দিকে অগ্রসর হচ্ছি।

জীবনের এ সময়ে এসে পেছন ফিরে তাকালে মনে হয় এই সেদিন আমি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। কিন্তু আসলে অনেক সময় পার হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে আমি উচ্চ শিক্ষাও শেষ করে ফেলেছি। মনে হচ্ছে এই সেদিন ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিলাম, লাইব্রেরীতে এসাইনমেন্ট তৈরীর জন্য রেফারেন্স বই আর জার্নাল আর্টিক্যাল খুঁজে বেড়াচ্ছি অথবা ক্লাসে অধ্যাপকদের বক্তৃতা শুনছি ও নোট নিচ্ছি। কিন্তু সেই কবে আমি নিজেই অধ্যাপনার সাথে জড়িত হয়ে গেছি খেয়াল নেই। একাকিত্ব ঘুচিয়ে পুরোদস্তুর সংসারী হয়ে গেছি। যে শিশু আমি ছিলাম সে ধীরে ধীরে কৈশোর, তারুণ্য আর যৌবনের উদ্দাম দিনগুলো পাড়ি দিয়ে আস্তে করে প্রৌঢ়ত্বে পা দিয়ে দিয়েছি।এরপর একদিন হয়তো বৃদ্ধাবস্থায় পৌঁছে যাবো; অথবা তার আগেই হয়তো নিশ্চিত বিষয়টি এসে যাবে। কে জানে?

মানুষ সৃষ্টি প্রক্রিয়ার এক বিবর্তন ধারায় [আদম ও হাওয়া ছাড়া] পিতার পৃষ্ঠদেশে শুক্র থেকে মায়ের গর্ভে স্থানান্তরিত হয়ে বাচ্চা হিসেবে ভূমিষ্ঠ হয়; আর তারপর ছোট্ট শিশু থেকে বিবর্তিত হয়ে কৈশোর, তারুণ্য, যৌবন, প্রৌঢ়ত্ব পেরিয়ে শেষে বার্ধক্যে পতিত হয়। কেউ কেউ এমন বার্ধক্যে পৌঁছেন যে তাঁদের আর ছোট্ট শিশুদের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকেনা। আল্লাহ তা‘আলা এ কথাগুলোকে সুন্দর করে তাঁর কিতাবে তুলে ধরেছেন নীচের আয়াতেঃ


يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِن كُنتُمْ فِي رَيْبٍ مِّنَ الْبَعْثِ فَإِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّن تُرَابٍ ثُمَّ مِن نُّطْفَةٍ ثُمَّ مِنْ عَلَقَةٍ ثُمَّ مِن مُّضْغَةٍ مُّخَلَّقَةٍ وَغَيْرِ مُخَلَّقَةٍ لِّنُبَيِّنَ لَكُمْ وَنُقِرُّ فِي الْأَرْحَامِ مَا نَشَاء إِلَى أَجَلٍ مُّسَمًّى ثُمَّ نُخْرِجُكُمْ طِفْلًا ثُمَّ لِتَبْلُغُوا أَشُدَّكُمْ وَمِنكُم مَّن يُتَوَفَّى وَمِنكُم مَّن يُرَدُّ إِلَى أَرْذَلِ الْعُمُرِ لِكَيْلَا يَعْلَمَ مِن بَعْدِ عِلْمٍ شَيْئًا

হে মানুষেরা! যদি পুনর্বার উত্থানের বিষয়টিতে তোমাদের সন্দেহ হয় তবে ভেবে দেখ আমি তোমাদেরকে [অর্থাৎ আদমকে] মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। এরপর বীর্য থেকে, এরপর লেগে থাকা জমাট রক্তপিণ্ড থেকে, এরপর পূর্ণাঙ্গ বা অপূর্নাঙ্গ [গর্ভপাত হওয়া] গোশ্তের দলা থেকে; যাতে করে আমরা তোমাদেরকে এটা পরিষ্কার করে বলে দিতে পারি। এরপর যাকে ইচ্ছে আমরা তাকে মায়ের গর্ভে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত রেখে দেই এবং অতঃপর তোমাদেরকে আমি শিশু অবস্থায় বের করে আনি, তারপর যাতে তোমরা পরিপূর্ণ কর্মক্ষম বয়সে পৌঁছতে পারো। আর তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ মৃত্যুমুখে পতিত হয়; আবার তোমাদের মধ্যে কাউকে কাউকে নিষ্কর্মা-অক্ষম বয়স পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া হয় যাতে সে জানা বিষয় সম্পর্কে আর কিছু না জানে।” [আল-হজ্জ, ২২:৫]

আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই সেই নিষ্কর্মা-অক্ষম বয়সে উপনীত হওয়া থেকে। আজ আমার দয়াময় প্রভূর কাছে আমার একমাত্র আরাধনা যে তিনি আমাকে মাফ করে দেবেন এবং এত সময় পর্যন্ত জীবিত রাখবেন যাতে আমি তাঁর পূর্ণ আনুগত্যের জীবন যাপন করতে পারি যা আমার গোনাহ মাফের কারণ হবে। তাঁর কাছে আমার প্রার্থনা তিনি যখন আমাকে মৃত্যু দেবেন তখন তা যেন হয় সব ধরণের ক্ষতি থেকে মুক্তির। এভাবেই দু’আ করেছেন আল্লাহর হাবীব মুহাম্মদ [আল্লার করুণা ও শান্তি বর্ষিত হোক তাঁর ও তাঁর পরিবার বর্গের উপর, ]যেমন আবূ হুরায়রা [আল্লাহ তাঁর উপর সন্তুষ্ট হোন] বর্ণনা করেছেনঃ

اللَّهُمَّ أَصْلِحْ لِي دِينِي الَّذِي هُوَ عِصْمَةُ أَمْرِي وَأَصْلِحْ لِي دُنْيَايَ الَّتِي فِيهَا مَعَاشِي وَأَصْلِحْ لِي آخِرَتِي الَّتِي فِيهَا مَعَادِي وَاجْعَلْ الْحَيَاةَ زِيَادَةً لِي فِي كُلِّ خَيْرٍ وَاجْعَلْ الْمَوْتَ رَاحَةً لِي مِنْ كُلِّ شَرٍّ

"হে আল্লাহ! আমার জন্য সংশোধন করে দাও আমার দীনকে, যা আমার কাজের সংরক্ষক; আমার জন্য সংশোধন করে দাও আমার দুনিয়াকে, যাতে রয়েছে আমার জীবন-জীবিকা; আমার জন্য সংশোধন করে দাও আমার আখিরাতকে, যেখানে আমাকে ফিরে যেতে হবে; আমার জন্য আমার হায়াতকে বৃদ্ধি করে দাও প্রতিটি কল্যাণকর কাজে; আর মৃত্যুকে কর আমার জন্য সমস্ত অকল্যাণ থেকে নিষ্কৃতির মাধ্যম।” [সহীহ মুসলিম]

================

নোটঃ মূল লিখাটা লিখা হয়েছিল ফেসবুকে নোট হিসেবে ইংরেজীতে গতকাল,আমার কিছু শুভানুধ্যায়ী আমাকে জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানোর প্রেক্ষিতে। এটা এখন এখানে ছাড়াও আরো কয়েকটা ব্লগে ছাড়া হয়েছে।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×