তার সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয়েছিলো একটি বইয়ের মাধ্যমে। প্রথম দেখাতেই কেমণ যেন একটি আকর্ষণ জেগেছিল, অথবা কোণো অজানা কৌতূহল। বেশ লম্বা উষ্কখুষ্ক চুল এবং দাড়ি। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি যেন একী সাথে অনেক গুলো চিন্তা তার ভিতরে কাজ করছে। এরপর তার সম্পর্কে জানার পালা। পেশায় একজন চিকিৎসক, কিন্তু একটি বিষয়ে তার সাথে আমার বেশ মিলে গেলো। ঘোরার বেশ ভালই নেশা রয়েছে তার। আর তা না হলে মাত্র বাইশ বছর বয়সে একা প্রায় চার হাজার মাইল( উত্তর আর্জেন্টিনা) পথ ঘুরে বেরানো খূব সহজ কথা নয়। বইয়ের পাতা ঊল্টালাম। একটা জিনিস খেয়াল করলাম, লোকটা প্রায় সব কথাই বেশ সোজাসাপটা বলেন, জদিও এই ধরনের লোক আমার বেশ পছন্দের। কিন্তু এমন একজন মানুষ অস্ত্র বিদ্যায় এত পারদর্শী হলেন কিভাবে সেটা ভেবেই খুব আশ্চর্য হচ্ছিলাম, অবশ্য আমার কৌতূহল আর বেশিক্ষন থাকল না, বইয়ের আর কয়েকটা পাতা উল্টানোর পরেই সেটা কেটে গেলো। পেশায় চিকিৎসক হলেও টার নিজের পেশায় তিনি যতটা পরিচিত টার থেকে বহুগুন বেশি পরিচিত হয়েছেন তার নিজশ্য চিন্তাধারার পরিচিয় দিয়ে, সর্বদাই বৈষম্যতা বিরোধী মানুষটির মাঝে যে প্রারথিব কোন কিছুই খুব একটা আকর্ষণ করে না সেটা বুঝলাম যখন জানলাম যে তিনি একসময় একটি দেশের শিল্প মন্ত্রী ছিলেন, তবে শুধু মাত্র দায়িত্ব বোধের কারনেই তিনি মন্ত্রী পদ থেকে সেচ্ছায় সরে দাঁড়ান। একবার এক খ্যাত নামা পত্রিকা টার জাতীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল, সেটার উত্তরে তিনি যা বলেছিলেন তার পরে ঐ পত্রিকার সাংবাদিক তাকে সেই বিষয়ে আর কোন প্রশ্ন করার সাহস পায়নি। পাতা উল্টাচ্ছি। টার জীবনকাল যে খুব দীর্ঘ সময়ের তা নয়, সর্বমোট ৩৯ বছরের একটি জীবন পারি দিয়েছেন।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা, বুঝতে পারছি বেশ কিছু প্রশ্ন আপনাদের মনে জেগে গেছে,তবে সমাধান এখনি করে দিচ্ছি। আমি এতক্ষন যেই বইটির পাতা উলটালাম সেটার নাম "মোটর সাইকেল ডায়রি"। বইটির লেখক আরনেস্তো চে গুএভারা। আজ থেকে প্রায় এগার বছর আগে একুশে বই মেলায় বইটি কিনেছিলাম বেশ আগ্রহ এবং কৌতূহলের সাথে। সেই বয়সে আমার জ্ঞ্যন ভাণ্ডারে বিপ্লব, সমাজতন্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে দখল খুব একটা বেশি না হলেও এই মহান বিপ্লবির প্রতি একটি প্রবল দুর্বলতা তখন থেকেই ছিল। বর্তমানে পথে-ঘাটে, আনাচে-কানাচে,মারকেটে অথবা ফুটপাথে চে গুএভারাকে দেখা যায়। কিন্তু যারা তার ছবিটাকে পণ্য হিসেবে বিক্রি করছে আর যারা কিনছে তাদের মাঝে কতজন চে-এর সঠিক পরিচয় বলতে পারবে সেটা আমার একটি প্রশ্ন। আমার আজো মনে আছে ২০০২ সালে ঢাকার এলিফেন্ট রোডে ক্যাটস আইএর দোকান থেকে আমি প্রথম চে-এর ছবি সংবলিত একটি টিশার্ট কিনেছিলাম। দোকানের কর্মচারী চে-র ছবি দেখিয়ে আমাকে প্রশ্ন করেছিল-"এই লোকটি কে"?এমন কি তখন সেই টিশার্ট টা পরে বাইরে বের হলে এমন প্রশ্ন আর অনেকেই করত। যাই হোক, চে-র এই বইটি দিয়ে প্রথম জানতে পারলাম এই তরুন বিপ্লবীর সম্পর্কে। খুব অল্প বয়সেই চিকিৎসা বিদ্যা অর্জন করেছিলেন। ভ্রমণের ব্যাপক নেশা ছিল তার, মাত্র ২৩ বছর বয়সেই সমগ্র দক্ষিন আমেরিকা ঘুরে শেষ করেছিলেন মটর সাইকেলে করে।জন্ম ১৯২৮ সালের ১৪ই জুন, আরজেন্টি্নার রোজারিও তে। বাবা গুএভারা লিঞ্চ ছিলেন স্থপতি, মা সেলিয়া লা সেরেনা গৃহিণী। ছয় বছরের ডাক্তারি বিদ্যা মাত্র তিন বছরে শেষ করে বেরিয়েছিলেন দক্ষিন আমেরিকা ভ্রমণে। সাথে ছিলেন তার বন্ধু আলবার্তো গ্রানাদো। ফিরে এসে তিনি তার এই বইটি ( মোটর সাইকেল ডায়রি) লিখেন। তার ভ্রমণে তিনি নিজের চিন্তা ধারায় ধারন করেছিলেন সমাজের সবচেয়ে সুবিধা বঞ্চিতদের, সোজা কথায় বুর্জোয়া শ্রেণী ও ধনীদের দ্বারা নিস্পেসিতদের। এর থেকেই জাগ্রত হলেন একজন বিপ্লবি হিশেবে। ১৯৫৪ সালে জরিয়ে পরেন বিপ্লবে, যোগ দেন ফিদেল ক্যাস্ট্রোর বাহিনীতে প্রবল মানসিক শক্তি, দৃঢ়তা এবং এবং দূরদর্শিতা এই সকল গুনাবলির সমন্বয়ে হয়ে ওঠেন কাস্ত্রো বাহিনীর দ্বিতীয় প্রধান নির্দেশক। এর মাঝে যুক্তরাষ্ট্র সহ অন্নান্য পুঁজিবাদী দেশ গুলোর ঘুম হারাম করে ছেরেছিলেন তিনি। তাকে হত্যার জন্য একের এক চেস্টা চালানো হয়। মোট এগারবার এই চেস্টা ব্যর্থ হয়। জন্মগত ভাবে আর্জেন্টাইন হলেও তিনি ছিলেন কিউবার কেন্দ্রিয় ব্যাঙ্কের গভর্নর এবং পরবর্তীতে কিউবার শিল্প মন্ত্রী। এই সুযোগে টাইম্স পত্রিকা একবার তার জাতীয়তা নিয়ে তাকে প্রশ্ন করলে তিনি কিছু মুহূর্ত গম্ভীর থেকে বলেছিলেন-" আপ্নারা খুব ভালো ভাবেই অবগত আছেন যে আমি জন্মগত এবং জাতিগতভাবে একজন আর্জেন্টাইন।" জগতের কোন চাকচিক্ক তাকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। যে কারনে মন্ত্রিত্ব ফেলে তিনি ১৯৬৫ সালে আফ্রিকার কোঙ্গতে বৈপ্লবিক যুদ্ধে অংশ নেন।১৯৬৬ সালে আবার ফিরে আসেন এবং বলিভিয়াতে মার্কিন মদদপুস্ট সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এর মাঝে আমেরিকা তাদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে তাকে ধরার চেস্টা করে। অবশেষে ১৯৬৭ সালের ৮ অক্টোবর বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হন এবং ধরা পরেন। ৯ অক্টোবর মার্কিন সরকারের নির্দেশে তাকে হত্যা করা হয়।
আজ ১৪ ই জুন। এই মহান বিপ্লবীর ৮৪ তম জন্মবার্ষিকী। মৃত্যুর ঠিক আগমুহূর্তে হত্যাকারী যখন চে কে হত্যা করতে যায় তখন চে বলেছিল-" হে কাপুরুষ, আমি জানি আমাকে হত্যা করতে এসেছ,কিন্তু তোমরা শুধু একটি দেহকেই হত্যা করতে পারবে।" চে-র সেদিনের কথার সত্যতা আজ আমরা দেখতে পাই। লাখ লাখ মানুষের হৃদয়ে আজও জীবিত হয়ে আছে চে গুএভারা। দক্ষিন আমেরিকার অনেক গুলো দেশেই এই দিনটিকে সেন্ট চে গুএভারা দিবস হিএসেবে পালন করা হয়। কিউবার প্রতিটি স্কুল এর শিশুরা প্রতিদিন সকালে একটিবার বলে-" আমরা চে কে ভালবাসব"।জগতে যা কিছু অমর অথবা চিরঞ্জীব তা চিরজাগ্রত, চে আজো জাগ্রত।
আলোচিত ব্লগ
জেনারেল রাও ফরমান আলী ছিল ইন্ডিয়ান 'র'-এর এজেন্ট

জেনারেল রাও ফরমান আলী ছিল ইন্ডিয়ান 'র'-এর একজন এজেন্ট। এই তথ্য কেউ জানতো না। তার ফ্যামিলিও জানতো না। ১৯৪১ সালে বর্ডার ক্রস করে সে ঢুকেছিল পাকিস্তান। তারপর আস্তে আস্তে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...
বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।
১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন
৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।