somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পড়ার টেবিলে আবহাওয়া অফিস

৩১ শে মার্চ, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিচিত্র কারণে এলাকার কাকগুলো প্রায়ই চড়াও হয় অ্যান্টেনার ওপর। তখন স্যাটেলাইট থেকে তথ্য পেতে সমস্যা হয়। নিজের তৈরি আবহাওয়ার বার্তা সংগ্রাহক অ্যান্টেনা দেখাতে গিয়ে এ কথা বললেন তারিফ রশীদ।



ঢাকার অনুসন্ধিৎসু চক্র বিজ্ঞান সংগঠনের ডেমরা শাখা বিজ্ঞানচর্চা চালিয়ে আসছে নিয়মিত। ওই সংগঠনেরই এক বিজ্ঞানকর্মী তারিফ। আর তাঁর বাসার ছাদেই আছে নানা রকম ছয়টি অ্যান্টেনা! চারটি দেখতে সাধারণ টিভি-অ্যান্টেনার মতো হলেও একটি বেশ প্যাঁচালো, ঠিক যেন কোষের ডিএনএ। অন্যটা বিচিত্র এক চতুর্ভুজের মতো। কক্ষপথে ঘুরতে থাকা বিভিন্ন আবহাওয়া স্যাটেলাইটের পাঠানো তথ্য ধরার জাল এসব অ্যান্টেনা।

তারিফদের নিয়মিত কাজ হলো, ওই স্যাটেলাইটগুলোর পাঠানো সংকেত নেওয়া। তারপর কম্পিউটারে বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ, বঙ্গোপসাগরসহ আশপাশের এলাকার মেঘের ছবি, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা_চটজলদি বের করা।
তারিফ জানালেন, 'স্যাটেলাইট অনেক রকম হয়_সামরিক, আবহাওয়া, যোগাযোগ ইত্যাদি। আবহাওয়া স্যাটেলাইট দুই রকমের হতে পারে। একটা স্থির, তাই ওটাকে বলে 'ভূস্থির'। অন্যটি সব সময় পৃথিবীকে কেন্দ্র করে উত্তর-দক্ষিণ দিক বরাবর ঘোরে। ভারতের অনেক ভূস্থির উপগ্রহ আছে। বাংলাদেশের এ রকম কোনো নিজস্ব স্যাটেলাইট নেই। তবে প্রতিদিনই বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক আবহাওয়া স্যাটেলাইট চলে যায়। এরা হলো_পোলার অরবিটিং স্যাটেলাইট, অর্থাৎ উত্তর-দক্ষিণ দিক বরাবর এগুলো পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। এক দিনে তারা সারা পৃথিবী ঘুরে আসে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নোয়া (ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) সিরিজের আবহাওয়া স্যাটেলাইট। নোয়ার অনেক স্যাটেলাইটের মধ্যে নোয়া_১৫, নোয়া-১৭, ১৮, ১৯ এখন কাজ করছে।
'পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকার ওপর দিয়ে নোয়ার স্যাটেলাইটগুলো যাওয়ার সময় ইনফ্রারেড রশ্মির সাহায্যে ছবি তোলে। যা দেখে মেঘ, বাতাসের জলীয়বাষ্পের পরিমাণ ও তাপমাত্রা বিশ্লেষণ করা যায়। এ ছাড়া কোথাও ঝড়-দুর্যোগ হলেও বোঝা যায়। প্রথমে ছবিগুলোকে শব্দ-সংকেতে রূপান্তর করে স্যাটেলাইট। পরে ওই অডিও সংকেতটা রেডিও সিগন্যালে পরিণত করে পাঠিয়ে দেয় পৃথিবীতে। এই বেতার সংকেত সবার জন্য উন্মুক্ত। যে কেউ চাইলে এগুলো 'রিসিভ' করতে পারবে। এরপর কম্পিউটারে ওই সংকেত বিশ্লেষণ করলেই বেরিয়ে আসবে নোয়ার পাঠানো ছবি। তারিফের নেতৃত্বে অনুসন্ধিৎসু চক্রের ডেমরা শাখা তৈরি করেছে লিনডেন বেডসহ কয়েকটি অ্যান্টেনা। নিরবচ্ছিন্নভাবে নোয়ার পাঠানো এই বেতার তরঙ্গ গ্রহণ করাই যেগুলোর কাজ।

শুরুর কথা
'হঠাৎ করেই আমাদের ডেমরা শাখার বিজ্ঞানচক্রে ২০ মিটার ব্যান্ড ও ২০০ মেগাহার্জের একটি এফএম রিসিভার আসে। তখন বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সি স্ক্যান করে দেখাটা শখ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এক দিন ১৩৭ দশমিক ৬২০ মেগাহার্জ ফ্রিকোয়েন্সিতে বিপ বিপ শব্দ শুনতে পাই। তখন কৌতূহল হয় ওই ফ্রিকোয়েন্সিতে কী আছে, ইন্টারনেটে খুঁজে দেখি। পর্যবেক্ষণ শুরু তখন থেকেই।'

তারিফ আরো বললেন, ইন্টারনেট থেকে ডিজাইন নিয়ে তাঁরা বিভিন্ন পরীক্ষামূলক অ্যান্টেনা তৈরি করেন। তবে আবহাওয়া স্যাটেলাইটের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো লিনডেন বেড অ্যান্টেনা। স্যাটেলাইট কোনো জায়গার ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় ভূমিতে ঘড়ির কাঁটার দিক বরাবর সংকেত পাঠায়। তাই এই অ্যান্টেনার চারটি ডায়পোল (রেডিও অ্যান্টেনার দুই প্রান্ত) ঘড়ির কাঁটার দিক বরাবর ৩০-৫০ ডিগ্রি কোণে ঘোরানো থাকে।


অ্যান্টেনা থেকে বেতার সংকেত চলে যায় রেডিও রিসিভারে। রেডিও রিসিভার বেতার সংকেতকে শব্দে পরিণত করে। এ শব্দ কম্পিউটারে রেকর্ড করে একটি ডিকোডিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে আবহাওয়ার ছবি তৈরি করা হয়।
কোন স্যাটেলাইট কখন কোন এলাকার ওপর দিয়ে যাবে, তা বের করে দেয় ডবি্লউএঙ্ট্র্যাক নামের একটি সফটওয়্যার। তারিফ জানান, এ সংকেত থেকে সহজে আবহাওয়ার তথ্য বের করা যাবে ঠিকই, তবে বেতার তরঙ্গ গ্রহণ করতে হলে রিসিভারকে স্যাটেলাইটের নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকতে হবে।

বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের ওপর দিয়ে চলে যায় নোয়ার তিন থেকে পাঁচটি স্যাটেলাইট। দিনের যেকোনো সময় স্যাটেলাইটের কাছ থেকে সংকেত নিলেই হলো।

কদিন বাদেই ঝড়-বাদলের মৌসুম। আর এ জন্য অনুসন্ধিৎসু চক্রের ডেমরা শাখা ঝড়ের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ জন্য দরকার শক্তপোক্ত একটা অ্যান্টেনা, যা অন্তত কাকের আক্রমণ কিংবা ঝড়ো হাওয়ায় টিকে থাকবে ভালোভাবেই। এ ছাড়া প্রয়োজন একটি ল্যাপটপেরও। ওটা থাকলে অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে কাজ।

হ্যাম রেডিওর সাহায্যে ঝড়ের গতিবিধি উপকূলীয় সাগর এলাকায় জানিয়ে দিতে চায় ডেমরা শাখা। এ ব্যাপারে চক্রের বরিশাল, বরগুনা শাখার সঙ্গে সমন্বয়ের প্রয়োজন। উপকূলবর্তী এলাকায় রেডিও কিংবা মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক থাকে না। হ্যাম রেডিও দিয়ে সেখানে আবহাওয়ার তথ্য জানানো সম্ভব। তারিফ জানান, এ বছর বিশেষ পরীক্ষার মাধ্যমে হ্যাম রেডিওর লাইসেন্স দেওয়ার কথা বিটিআরসির। তিনি মনে করেন, দেশের উপকূলবর্তী এলাকায় বিজ্ঞান সংগঠনগুলো এ ধরনের উদ্যোগ স্থানীয়দের বেশ উপকারে আসবে।


পূর্বে কালের কন্ঠবিজ্ঞানব্লগে প্রকাশিত।
৯টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হেঁটে আসে বৈশাখ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০০


বৈশাখ, বৈশাখের ঝড় ধূলিবালি
উঠন জুড়ে ঝলমল করছে;
মৌ মৌ ঘ্রান নাকের চারপাশ
তবু বৈশাখ কেনো জানি অহাহাকার-
কালমেঘ দেখে চমকে উঠি!
আজ বুঝি বৈশাখ আমাকে ছুঁয়ে যাবে-
অথচ বৈশাখের নিলাখেলা বুঝা বড় দায়
আজও বৈশাখ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×