somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“ওয়াল-স্ট্রিট দখল করো” আন্দোলনে বিজ্ঞানীরা : কাজ এবং পরিবর্তনের মহাক্ষুধা

০১ লা নভেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গেল সপ্তাহে বাল্টিমোরে গাড়ি চালাচ্ছিলাম। হঠাৎই গাড়ির সামনে দেখি “ওয়ালস্ট্রিট দখল করো”-আন্দোলনের মিছিল। তারা স্লোগান দিচ্ছিলেন চারপাশে ছুটে চলা গাড়ির দিকে তাকিয়ে। সাথে ছিলো বিচিত্র প্ল্যাকার্ড। অবাক করা বিষয়, আন্দোলনকারীদের মাঝে ছিলেন বিজ্ঞানী এবং বিজ্ঞান-শিক্ষার্থীরা। তারা সন্তুষ্ট নন তাদের জীবিকা, গবেষণার অর্থায়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রে ‘বিজ্ঞান’-কে যেভাবে দেখা হয় – তা নিয়ে।



এর আগে খবরে এই “দখল করো” আন্দোলনের কথা শুনলেও খুব একটা মনোযোগ দেই নি। সেদিন আন্দোলনকারীদের মিছিলে একটা প্ল্যাকার্ডের দিকে আমার চোখ আটকে গেল। সেখানে লেখা:

“পিএইচডি =/= চাকরী”

পিএইচডি মানেই চাকরী নয়। এই প্রসঙ্গ আমাদের বিজ্ঞানীদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত। বিজ্ঞানকে জীবিকা হিসেবে বেছে নেয়ার জন্য দীর্ঘ শিক্ষাজীবন, বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ এখন আর যথেষ্ট নয়। এই বার্তাটি “দখল করো” – আন্দোলনে যেন নতুন সুরে বাজলো।

ব্রান্ডল ক্রস এই প্ল্যাকার্ডটি গলায় নিয়ৈ দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণরসায়ন বিষয়ে পিএইচডি-র পঞ্চম বর্ষ অতিক্রম করছেন। তার গবেষণার বিষয়বস্তু “স্তন-ক্যান্সার”। সাধারণত এই বিষয় সংশ্লিষ্ট গবেষণায় বেশ ভালোভাবেই অর্থায়ন করা হয়। কিন্তু ক্রস তার ভবিষ্যত জীবিকা নিয়ে হতাশ -

“আমি নিজেই একটা জৈব-প্রযুক্তি বিষয়ক কোম্পানী খুলতে চাই। আমার টনকে টন আবিষ্কার আছে। আর আমি চাই এনআইএইচ (NIH- National Institutes of Health) সেখানে অর্থায়ন করুক। কিন্তু সেখানে কোন টাকা নেই। “

কথা হয় ড. ট্রয় রুবিনের সাথে। তিনি জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন স্নায়ুবিজ্ঞানী। যোগ দিয়েছেন “ওয়াল-স্ট্রীট দখল করো” আন্দোলনে। তিনি দীর্ঘমেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত। একটু ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলেন:

“আমরা এমন একটা সমাজে বসবাস করি যেখানে অর্থের তুলনায় জ্ঞানের মর্যাদা কম (… wisdom is less appreciated than money)। যে সমাজ কেবল অর্থের পেছনেই ছোটে, মৌলিক ভাবেই সে অস্থির (… fundamentally unsustainable) ।”

“দখল করো”- আন্দোলনকারীরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক সমস্যার পেছনে আছে মাত্র এক-শতাংশ, আর্থিকভাবে ক্ষমতাশালী ব্যাক্তিদের কর্পোরেট লোভ এবং অসম ক্ষমতার দাপট। গত সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া এই আন্দোলন ছড়িয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন এলাকায়। বাল্টিমোর একটি ছোট শহর হলেও এখানে অনেক গবেষণা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। তাই এটা অবোধগম্য নয় যে এখানকার আন্দোলনে বিজ্ঞানীরাও অংশ নিচ্ছেন।



বিজ্ঞানীদের রাস্তায় নেমে আন্দোলন করার পেছনে যথেষ্ট কারণ আছে। এই কারণগুলো গত এক দশক ধরে জমা হয়েছে। কেবল ক্রস আর রুবিন নয় — আমেরিকান কমপিটি এক্ট(এ বিষয়ে উইকিপিডিয়া দেখুন), জলবায়ু পরিবর্তন বিধান পাশ করতে জাতীয় কংগ্রেসের ব্যর্থতা; বিজ্ঞানশিক্ষা, গণিতশিক্ষায় জাতীয় সংকট আমাদের অনেক বিজ্ঞানীদেরই হতাশ, ক্ষুব্ধ করেছে।

আমি নিজে একজন জ্যোতিঃপদার্থবিদ। গবেষণার এই ক্ষেত্রে বছর বছর আর্থিক সংস্থান কমে আসছে। নিজের অতীত ছাত্রদেরকেই দেখেছি এই গবেষণায় যুক্ত থাকতে কিভাবে কষ্ট করতে হচ্ছে। সূর্যকে কেন্দ্র করে একবার ঘুরে আসতে পৃথিবীর কত সময় লাগে? পরিসংখ্যান বলে মাত্র অর্ধেক আমেরিকানই এর সঠিক উত্তর দিতে পারেন! মরার উপর খাঁড়ার ঘা - টেক্সাস এবং ফ্লোরিডাতে পদার্থবিদ্যা বন্ধ করে দেয়ার হুমকি এসেছে। আমিও বলতে গেলে এই নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে প্রস্তুত।

এতকিছুর পরেও আমি স্বীকার করতে রাজি – বিজ্ঞানীদের “দখল করো” আন্দোলনে দেখে আমি আসলে এখনো বিস্মিত। আমরা বিজ্ঞানীরা সাধারণত শান্তশিষ্ট জীব। এসব বিষয় নিয়ে ঘরোয়া আলোচনাতে গজরাতেই আসলে আমরা পছন্দ করি।

ঠিক, যে এই আন্দোলনে এমন অনেক কিছুই আছে যার কারণে যে কেউ যুক্ত হতে আড়ষ্ট বোধ করবেন। সমালোচকরা বলবেন এই আন্দোলন কেন্দ্রীভুত নয়, আর এর কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্যও নেই। তাছাড়া বাল্টিমোরের মিছিলে আমি সমকামীদের অধিকারের দাবীতে প্ল্যাকার্ড দেখলাম। “দখল করো” আন্দোলনে যুক্ত না হওয়ার পেছনে এগুলো বেশ ভালো যুক্তি। তাবুও কিভাবে একটি আন্দোলন এতোগুলো দাবীকে কিভাবে একসাথে নিয়ে আসে তা অবাক হওয়ার বিষয় বৈকি।

অবশ্য আন্দোলনকারীরা এই বহুবিচিত্র দাবীগুলোকে তাদের সম্পদ হিসেবে ভাবেন। সম্ভবত বিজ্ঞানী এবং পন্ডিতবর্গরা (academics) “দখল করো” আন্দোলনের এই মুক্তমঞ্চকে আকর্ষণীয় হিসেবে দেখবেন।

“এই আন্দোলনে অনেক ইস্যু নিয়ে দাবী তোলা হচ্ছে। দাবীগুলোর বৈচিত্র্য একাংশে এই আন্দোলনে আমাকে টেনে আনার জন্য দায়ী।"

বললেন জেস ক্রো। ক্রো মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাল্টিমোর) পরিবেশ বিজ্ঞান এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে পড়াশুনা করছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে বিজ্ঞান বিষয়ে যে সংকট আছে তা নিয়ে কাজ করার নিশ্চয়ই অনেক পন্থা আছে। এই সংকট সমাধানের সেরা পদ্ধতি এখনো আমাদের অজানা। তবে “ওয়াল স্ট্রীট দখল করো” আন্দোলনে বিজ্ঞানীদের অংশগ্রহণ ইঙ্গিত করছে যে বিজ্ঞানীরও জনমত গঠন এবং সরকারী নীতি প্রভাবিত করতে নতুন বন্ধু এবং পথ খুঁজে নিচ্ছেন। আমরা, যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদীন ধরেই ক্ষুব্ধ। কারণ এই দেশে বিজ্ঞানকে অবহেলা করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক “দখল করো” আন্দোলন আমাদের এই হতাশা থেকে বেড়িয়ে এসে সার্বিক সংকট উত্তরণের সংকল্পকেই নির্দেশ করছে।



মূল লেখক মার্ক কুচনার (Marc Kuchner)। একজন জ্যোতিঃপদার্থবিদ। কাজ করছেন নাসা (NASA) তে। ভাবানুবাদের চেষ্টা করেছি। ভাব-প্রকাশের যাবতীয় অদক্ষতার জন্য দায়ী আমি। মূল লেখাটি পাবেন সাইন্টিফিক আমেরিকান ব্লগে । পূর্বে বিজ্ঞান ব্লগে প্রকাশিত।
১০টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×