somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহান আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করার পুরষ্কার জান্নাত

২৪ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ১২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভূমিকা :
কোরআন এমনই এক বরকতময় কিতাব, যার সংস্পর্শের দ্বারা মানুষের অন্তর নরম হয়ে যায়। এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা সর্বোত্তম বাণী সংবলিত কিতাব নাজিল করেছেন, যা পরস্পরে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং পুন:পুন পঠিত। এতে তাদের দেহচর্ম ভয়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে, যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে। মহান আল্লাহ মানবজাতিকে সৃষ্টিই করেছেন তাঁর ইবাদতের জন্য। যেমনটি তিনি নিজেই বলেছেন ‘আমি জিন ও মানুষকে শুধু আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।’ (জারিয়াত : ৫৬)। এ ইবাদতের সারকথা হলো মানুষ সবসময় সব কাজে আল্লাহ তা’য়ালার আদেশ ও নিষেধ মেনে তাঁর দয়া ও অনুগ্রহের ভিখারি যেমন থাকবে, তেমনি তাঁর ভয়ে সর্বদা ভীতও থাকবে। আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর বান্দার এ ভীত হওয়া এবং ভয়ের কারণে চোখ ভিজিয়ে রাখার চরিত্রটা খুবই পছন্দ করেন। এ কারণেই দেখা যায়, আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করা ছিল নবী-রাসূল, সাহাবায়ে কেরাম, সালাফে সালেহী, পূর্ববর্তী বুজুর্গ ও মুমিনদের বিশেষ এক বৈশিষ্ট্য। কারণ অন্তরের ঈমান ও আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ভয়ের নিদর্শনই হলো এ ক্রন্দন। সুতরাং আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে যার চোখ বেয়ে দুই ফোঁটা অশ্রæও বের হয় না এমন পাষাণ হৃদয়ের অধিকারী কখনও পূর্ণ মোমিন হতে পারে না। সঙ্গে সঙ্গে এমন ক্রন্দনকারীর জন্য আখেরাতে রয়েছে মর্যাদাপূর্ণ স্থান ও সুখময় জান্নাত। যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলার ভয়ে কান্নাকাটি করে হাদীসের ঘোষণায় তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম হয়ে যায়। যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে কেউ তার ক্ষতি করতে পারে না। আর যে আল্লাহ ছাড়া অন্যকে ভয় করে কেউ তার উপকার করতে পারে না। ক্রন্দনকারীর আরেকটি মর্যাদা হলো, হাশরের ময়দানে যখন সব মানুষ ভয় ও আতঙ্কে থাকবে, তখন এ ব্যক্তি নিরাপদ ও নিশ্চিন্তে আল্লাহর আরশের ছায়ায় অবস্থান করবে। ইসলাম তাই আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করার বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। আল্লাহ তা’আলার ভয়ে কাঁন্নাকাটি করা ব্যক্তি মর্যাদা অনেক উঁচু মানের।
মহান আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করা সর্ম্পকে কুরআনের ভাষ্য:
১. (হে নবী) তুমি বল, তোমরা একে (কোরআনকে) বিশ্বাস কর আর না-ই কর, নিশ্চয় যাদেরকে এর আগে (আসমানি কিতাবের) জ্ঞান দেয়া হয়েছে যখনই তাদের সামনে এটি পড়া হয় তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে। তখন তারা বলে : ‘আমাদের প্রভু পূত-পবিত্র মহান, অবশ্যই আমাদের প্রতিপালকের ওয়াদা পূর্ণ হবে।’ আর তারা ক্রন্দন করতে করতে নত মস্তকে ভূমিতে লুটিয়ে পড়ে; (মূলত এ কোরআন) তাদের বিনয়ভাব আরো বৃদ্ধি করে।” (বনি ইসরাঈল : ১০৭-১০৯)
২. তখন কি অবস্থা হবে যখন আমি প্রত্যেক উম্মাত থেকে একজন করে সাক্ষী উপস্থিত করবো? (নিসা : ৪১)
৩. অত:পর আল্লাহ আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করেছেন। (আত-তূর : ২৭)
৪. যদি আপনি তাদেরকে শাস্তি দেন, তবে তারা আপনার দাস, এবং যদি আপনি তাদেরকে ক্ষমা করেন, তবে আপনিই পরাক্রান্ত, মহাবিজ্ঞ। (মায়েদা : ১১৮)
৫. সাচ্চা ঈমানদার তো তারাই আল্লাহকে স্মরণ করা হলে যাদের হৃদয় কেঁপে ওঠে। আর আল্লাহর আয়াত যখন তাদের সামনে পড়া হয়, তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা নিজেদের রবের ওপর ভরসা করে। তারা নামায কায়েম করে এবং যা কিছু আমি তাদেরকে দিয়েছি তা থেকে (আমার পথে) খরচ করে। এ ধরনের লোকেরাই প্রকৃত মুমিন। তাদের জন্য তাদের রবের কাছে রয়েছে বিরাট মর্যাদা, ভূলক্রুটির ক্ষমা ও উত্তম রিযিক। (আনফাল : ২-৪)।
৬. ঈমান গ্রহণকারীদের জন্য, এখনো কি সে সময় আসেনি যে, আল্লাহর স্মরণে তাদের মন বিগলিত হবে, তাঁর নাযিলকৃত মহা সত্যের সামনে অবনত হবে এবং তারা সেসব লোকদের মত হবে না যাদেরকে ইতিপূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার কারণে তাদের মন কঠোর হয়ে গিয়েছে এবং আজ তাদের অধিকাংশই ফাসেক হয়ে গেছে। (হাদীদ : ১৬)
৭. যে দিন প্রত্যেক আত্মা যা কিছু নেক ‘আমাল করেছে এবং যা কিছু বদ ‘আমাল করেছে তা বিদ্যমান পাবে; সেই আত্মা কামনা করবে যদি তার এবং ওর (অর্থাৎ তার মন্দ কর্মফলের) মধ্যে দুস্তর ব্যবধান হত। আল্লাহ তাঁর নিজের সম্পর্কে তোমাদেরকে সাবধান করছেন, বস্তুত: আল্লাহ বান্দাগণের প্রতি খুবই করুণাশীল। (ইমরান : ৩০)
৮. এরা যে রয়েছে, এরাই হলে শয়তান, এরা নিজেদের বন্ধুদের ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করে। সুতরাং তোমরা তাদের ভয় করো না। আর তোমরা যদি ঈমানদার হয়ে থাক, তবে আমাকে ভয় কর। (ইমরান : ১৭৫)
৯. যারা তাদের রবের কাছে ফিরে যাবে এই বিশ্বাসে তাদের যা দান করার তা দান করে ভীত কম্পিত হৃদয়ে, তারাই দ্রæত সম্পাদন করে কল্যাণকর কাজ এবং তারা তাতে অগ্রগামী থাকে। (মুমিনূন : ৬০-৬১)
১০. অন্যদিকে যাদের অন্তর কঠিন ও আল্লাহভীতিশূন্য তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা কঠোর বাণী উচ্চারণ করেছেন। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, ‘দুর্ভোগ ওই লোকদের জন্য, যাদের অন্তর আল্লাহর স্মরণের ব্যাপারে কঠোর। তারা সুস্পষ্ট ভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে।’ (জুমার : ২২)
১১. এরা হচ্ছে আদমের বংশধর সেসব নবী যাদের প্রতি আল্লাহ তা‘আলা অনুগ্রহ করেছেন এবং যাদের তিনি নূহের সাথে নৌকায় আরোহণ করিয়েছেন এবং ইবরাহীম ও ইসরাঈলের বংশধর, যাদেরকে আমি পথ প্রদর্শন করেছি এবং মনোনীত করেছি, যখনই তাদের সামনে পরম করুণাময় আল্লাহ তা‘আলার আয়াতসমূহ পাঠ করা হতো তখন এরা ক্রন্দনরত অবস্থায় সিজদায় লুটিয়ে পড়ত।’ (মারইয়াম : ৫৮)
অর্থাৎ যখন তাদের সামনে পরম করুণাময় আল্লাহর তা‘আলার আয়াতসমূহ পাঠ করা হতো তারা ক্রন্দনরত অবস্থায় আল্লাহকে সিজদা করার জন্য মাটিতে লুটিয়ে পড়ত।
মহান আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করা সর্ম্পকে হাদীসের ভাষ্য:
১. হযরত ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন : আমার সামনে কুরআন তিলাওয়াত করো। আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ ! আমি আপনার সামনে পড়বো, অথচ আপনার কাছেই তা নাযিল হয়েছে? তিনি বললেন; আমি অপরের তিলাওয়াত শুনতে ভালোবাসি। সুতরাং আমি তার সামনে সূরা নিসা পড়ে শুনালাম। পড়ার সময় যখন আমি এই আয়াতে এসেছি “তখন কি অবস্থা হবে যখন আমি প্রত্যেকে উম্মত থেকে একজন করে সাক্ষী উপস্থাপিত করবো এবং আপনাকে তাদের উপর সাক্ষীরুপে উপস্থিত করবো?” (নিসা: ৪১)। তিনি বললেন, বেশ যথেষ্ট হয়েছে, থামো। এ সময় আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখলাম তাঁর মুবারক দু’চোখ দিয়ে অশ্রæ প্রবাহিত হচ্ছে। (বুখারী ও মুসলিম)
২. হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন এক (নসীহতপূর্ণ) ভাষণ দিলেন, যে ধরণের ভাষণ আমি আর কখনো শুনিনি। তিনি বলেন : আমি যা জানি, তোমরা যদি তা জানতে পারতে,তাহলে হাসতে খুবই কম; কিন্তু কাঁদতে খুবই বেশী। তিনি (রাবী) বলেন, একথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবাগণ কাপড়ে মুখ ঢাকলেন এবং ডুকরে কাঁদতে লাগলেন। (বুখারী ও মুসলিম)
৩. হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উবাই ইবনে কা‘ব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-কে বললেন, ‘‘আল্লাহ আমাকে আদেশ করলেন যে, আমি তোমাকে ‘সূরা লাম য়্যাকুনিল্লাযীনা কাফারু’ পড়ে শুনাই।’’ উবাই ইবন কা‘ব বললেন, ‘(আল্লাহ কি) আমার নাম নিয়েছেন?’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ।’’ সুতরাং উবাই (খুশীতে) কেঁদে ফেললেন। অন্য এক বর্ণনায় আছে, উবাই কাঁদতে লাগলেন। (বুখারী ও মুসলিম)
৪. হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনাবসানের পর হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হযরত ওমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-কে বললেন, ‘চলুন, আমরা উম্মে আইমানের সাথে সাক্ষাৎ করতে যাই, যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে যেতেন।’ সুতরাং যখন তাঁরা উম্মে আইমানের কাছে পৌঁছলেন, তখন তিনি কেঁদে ফেললেন। অত:পর তাঁরা তাঁকে বললেন, ‘তুমি কাঁদছ কেন? তুমি কি জানো না যে, আল্লাহর কাছে যা রয়েছে, তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য (দুনিয়া থেকে) অধিক উত্তম?’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘আমি এ জন্য কান্না করছি না যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য আল্লাহর নিকট যা রয়েছে তা অধিকতর উত্তম, সে কথা আমি জানি না। কিন্তু আমি এ জন্য কাঁদছি যে, আসমান হতে ওহী আসা বন্ধ হয়ে গেল।’ উম্মে আইমান (তাঁর এ দু:খজনক কথা দ্বারা) ঐ দু’জনকে কাঁদতে বাধ্য করলেন। ফলে তাঁরাও তাঁর সাথে কাঁদতে লাগলেন ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, যখন (মরণ রোগে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কষ্ট বেড়ে গেল, তখন তাঁকে (জামা‘আত সহকারে) নামায পড়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেন, ‘‘তোমরা হযরত আবূ বকরকে নামায পড়াতে বল।’’ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, ‘আবূ বকর নরম মনের মানুষ, কুরআন পড়লেই তিনি কান্না সামলাতে পারেন না।’ কিন্তু পুনরায় তিনি বললেন, ‘‘তাকে নামায পড়াতে বল।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
৩। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করেছে সে দোযখে প্রবেশ করবে না যে পর্যন্ত দুধ স্তনে ফিরে না আসে। আর আল্লাহর পথে জিহাদের ধুলোবালি এবং দোযখের ধোঁয়া কখনো একত্রিত হবে না। (বুখারী ও মুসলিম )
৪। হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ৭ শ্রেণীর লোকদের মহান আল্লাহ সেদিন তাঁর সুশীতল ছায়াতলে স্থান দিবেন, যেদিন তাঁর ছাড়া অন্য কোন ছায়াই থাকবে না। তাঁরা হলেন-
১.ন্যায়বিচারক শাসক বা নেতা।
২.মহান আল্লাহর ইবাদতে মশগুল যুবক।
৩.মসজিদের সাথে সম্পর্কযুক্ত হৃদয়ের অধিকারী ব্যক্তি।
৪.যে দুজন লোক একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পরস্পর বন্ধুত্ব করে এবং এ জন্যেই আবার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
৫.এরুপ ব্যক্তি যাকে কোনো অভিজাত পরিবারের সুন্দরী নারী খারাপ কাজে আহবান করেছে, কিন্তু সে বলে দিল, আমি আল্লাহকে ভয় করি।
৬.যে ব্যক্তি এতো গোপনভাবে দান-খয়রাত করে যে, তার ডান হাত কি দান করলো, বাঁ হাতেও তা জানতে পারলো না।
৭.এরুপ ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহর যিকির করে এবং দু’চোখের পানি ফেলে (কাঁদে)। (বুখারী ও মুসলিম)
৫। হযরত আব্দুল্লাহ ইবন শিখরীর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে দেখি তিনি নামায পড়ছেন এবং আল্লাহর ভয়ে কাঁদার দরুণ তাঁর পেট থেকে হাঁড়ির মতো আওয়াজ বেরুচ্ছে। (আবু দাউদ)
৬. হযরত আবু উমাম সুদাই ইবন আজলান আল-বাহিলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মহান আল্লাহর কাছে দু’টি বিন্দু (ফোঁটা) দু’টি নিদর্শনের চাইতে প্রিয় বস্তু আর কিছু নেই। তার একটি হলো আল্লাহর ভয়ে নির্গত অশ্রæবিন্দু এবং অপরটি হলো; আল্লাহর পথে প্রবাহিত রক্তবিন্দু। আর নিদর্শন দু’টি হলো, আল্লাহর পথে জিহাদ করা এবং আল্লাহর ফরযসমূহের মধ্য থেকে কোন ফরয আদায় করা। (তিরমিযী)
৭. হযরত ইরবাদ ইবন সারিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের সামনে এমন এক উপদেশপূর্ণ খুতবা দেন যাতে আমাদের অন্তর ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে এবং চোখ দিয়ে অশ্রæ প্রবাহিত হতে থাকে। (আবু দাউদ ও তিরমিযি)
৮. মুমিনের অন্তর আল্লাহর দুই আগুলের মাঝে অবস্থান করছে। (বিহারুল আনওয়ার, ৭০তম খÐ , পৃষ্ঠা : ৩৯)
৯. ইমাম বাকের (আঃ) বলেছেন : নিশ্চয় অন্তরসমূহ আল্লাহর আগুলগুলোর দু’টির মাঝে রয়েছে; তিনি যেমনভাবে চান তা পরিবর্তন করেন, একেক সময় একেক রকম।(বিহারুল আনওয়ার, ৭০তম খÐ , পৃষ্ঠা: ৩৯)
১০. ইমাম সাদিক (আঃ) বলেছেন : ‘যখন তোমার দেহ আল্লাহর ভয়ে প্রকম্পিত হয় এবং তোমার চোখ থেকে অশ্রæ বর্ষিত হয়, তখন জেনো, তিনি তোমার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছেন বলেই তুমি এমন অনুভূতির অধিকারী হয়েছ।’ (উসূলে কাফি, ২য় খÐ, পৃ: ৪৭৮)
১১. ইমাম সাদিক (আঃ) বলেছেন : ‘কিয়ামতের দিন প্রতিটি চক্ষু থেকেই অশ্রæ ঝরবে, কিন্তু ঐসব চক্ষু ছাড়া যেসব চক্ষু আল্লাহর নিষেধসমূহকে পরিহার করে চলেছে এবং ঐ চক্ষু যে আল্লাহর আনুগত্যের জন্য জাগ্রত থেকেছে এবং ঐ চক্ষু যে গভীর রাতে আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করেছে।’ (উসূলে কাফি, ২য় খÐ, পৃ: ৪৭৮)
এই বর্ণনা থেকে বোঝা যায় যে, পর্দার এ পাশে গভীর রাতে আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনকারী মুখটিই পর্দার ওপাশে অর্থাৎ কিয়ামতের দিন প্রশান্ত এবং নিশ্চিন্ত রূপে প্রকাশিত হবে। কেননা, কিয়ামতের দিন পর্দার অন্তরালের গোপন বিষয়গুলো প্রকাশ হওয়ার দিন। যেদিন গোপন বিষয়সমূহ প্রকাশিত হবে (আ’লা : ৯) ঐ দিন পর্দার আড়ালে থাকা সত্যই সামনে হাজির হবে।
১২. ইমাম বাকের (আঃ) বলেছেন : ‘আল্লাহর নিকট রাতের অন্ধকারে আল্লাহর ভয়ে এবং কেবল তাঁরই সন্তুষ্টি কামনায় যে অশ্রæবিন্দু ঝরে তার চেয়ে অধিক প্রিয় কোন কিছু নেই।’(উসূলে কাফি, ২য় খÐ , কিতাবুদ দোয়া)
১৩. ইমাম সাদিক (আঃ) এক রেওয়ায়াতে আবি বাছিরকে দোয়া এবং কান্না সম্পর্কে কিছু কথা বলেছেন যেখানে তিনি তাঁর সম্মানিত পিতা ইমাম বাকের (আঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন : ‘মহান আল্লাহ্ এবং তাঁর বান্দার মধ্যে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ অবস্থা হচ্ছে সিজদায় ক্রন্দনরত অবস্থা।’ (উসূলে কাফি, ২য় খÐ, কিতাবুদ দোয়া, বাবুল বুকা)
আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করার ফজিলত ও মর্যাদা
অন্তর কঠোর হওয়ার কারণটা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর হাদিসে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, বান্দা যখন একটি গোনাহ করে, তখন তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে। অত:পর যখন সে গোনাহের কাজ পরিহার করে, ক্ষমাপ্রার্থনা করে এবং তওবা করে, তখন তার অন্তর পরিষ্কার ও দাগমুক্ত হয়ে যায়। সে আবার পাপ করলে তার অন্তরে আবার দাগ পড়ে এবং এক পর্যায়ে তার পুরো অন্তর কালো দাগে ঢেকে যায়। আর এটাই হলো সেই মরিচা, যা আল্লাহ তায়ালা তার কোরআনে বর্ণনা করেছেন, ‘কখনই না। বরং তাদের অপকর্মগুলো তাদের অন্তরে মরিচা ধরিয়েছে।’ (তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ)। বোঝা গেল, পাপের কারণেই মূলত অন্তর কঠিন হয়ে যায় এবং এর ফলেই সেই অন্তরে আর আল্লাহভীতি জাগ্রত হয় না। তবে ইসলাম আমাদের অন্তর বিগলিত করে তাতে আল্লাহ তা’য়ালার ভয় আনয়ন ও অশুæ বিসর্জনের কিছু উপায়ও বাতলে দিয়েছে। যেমন আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করার অনেক ফজিলত ও মর্যাদাও বর্ণিত হয়েছে। এ বৈশিষ্ট্যের অধিকারীর সবচেয়ে বড় পুরস্কার হ’ল জাহান্নাম থেকে মুক্তি।
১. হযরত আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে, তবে খুব কম হাসতে এবং অধিক কাঁদতে’। (বুখারী : ৬৪৮৫; তিরমিযী : ২৩১৩; ইবনু মাজাহ : ৪১৯১; মিশকাত : ৫৩৩৯)
২. হযরত আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,‘আমি যা দেখি তোমরা তা দেখ না, আর আমি যা শুনতে পাই তোমরা তা শুনতে পাও না। আসমান তো চড়চড় শব্দ করছে, আর সে এই শব্দ করার যোগ্য। তাতে এমন চার আগুল পরিমাণ জায়গাও নেই যেখানে কোন ফিরিশতা আল্লাহর জন্য সিজদারত নেই। আল্লাহর শপথ! আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে তাহলে তোমরা খুব কম হাসতে, বেশী কাঁদতে এবং বিছানায় স্ত্রীদের উপভোগ করতে না, বাড়ী-ঘর ছেড়ে পথে-প্রান্তরে বেরিয়ে পড়তে এবং চিৎকার করে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে যে, আল্লাহর শপথ! হায়, আমি যদি একটি গাছ হতাম এবং তা কেটে ফেলা হতো। (ইবনু মাজাহ : ৪১৯০; মিশকাত : ৫৩৪৭; সহীহাহ : ১৭২২)
৩. হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনকারীর জাহান্নামে যাওয়া এমন অসম্ভব, যেমন দোহনকৃত দুধ ফের ওলানে ফিরে যাওয়া অসম্ভব।’ (তিরমিজি)।
৪. হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, জাহান্নামের আগুন দুই ধরনের চোখকে কখনও স্পর্শ করবে না। এক. আল্লাহর ভয়ে যে চোখ ক্রন্দন করে এবং দুই. আল্লাহর রাস্তায় যে চোখ পাহারা দিয়ে বিনিদ্র রাত অতিবাহিত করে। (তিরমিজি)।
৪. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘তোমরা (পূর্ববর্তী) আজাবপ্রাপ্ত সম্প্রদায়ের লোকালয়ে ক্রন্দনরত অবস্থা ব্যতীত প্রবেশ করবে না। যদি কান্না না আসে তবে সেখানে প্রবেশ করবে না। যাতে তাদের ওপর যে আজাব আপতিত হয়েছিল, তা তোমাদের ওপর আপতিত না হয়।’ (বুখারী ও মুসলিম)।
৫. হযরত আবু ওমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘দুটি ফোঁটা ও দুটি চিহ্নের চেয়ে অধিক প্রিয় আল্লাহর কাছে অন্য আর কিছু নেই। (এক) আল্লাহর ভয়ে নি:সৃত অশুæ ফোঁটা। (দুই) আল্লাহর পথে নির্গত রক্তের ফোঁটা। আর চিহ্ন দুটি হলো আল্লাহর রাস্তার কোনো চিহ্ন ও আল্লাহর দেওয়া কোনো ফরজ আদায় করতে গিয়ে কোনো চিহ্ন।’ (তিরমিজি)।
৬. রাসূল (সাঃ) বলেছেন : আল্লাহ্ তা‘আলা শোকাহত ও ব্যথিত হৃদয়কে ভালোবাসেন। (বিহারুল আনওয়ার, ৭৩ তম খÐ, পৃ: ১৫৭)
৭. রাসূল পাক (সাঃ) বলেন, আল্লার ভয়ে যখন কোন ঈমানদার ব্যক্তির অন্তর কেপে উঠে, বৃক্ষের পাতার মত তার গোনাহ সমুহ ঝড়ে পড়ে।
৮. হযরত ওকবা বিন আমের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের খেদমতে হাজির হয়ে আরজ করলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ নাজাত পাওয়ার উপায় কি ? জবাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ফরমালেন, নিজের জবানকে সংযত রাখ, ঘর হতে বের হয়ো না, এবং নিজের গুনাহের জন্য ক্রন্দন কর।
৯. হযরত আয়েশা (রাঃ) রাসূল পাক (সাঃ) এর খেদমতে আরজ করলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ! আপনার উম্মতের মধ্যে কেহ বিনা হিসেবে জান্নাতে যাবে কি? জবাবে রাসূল পাক (সাঃ) ফরমালেন, যে ব্যক্তি নিজের গুনাহের কথা স্বরন করে ক্রন্দন করবে সে বিনা হিসেবে জান্নাতে যাবে।
১০. হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) বলেন, তোমরা ক্রন্দন কর, যদি ক্রন্দন না আসে তবে অন্তত উহার ভান কর। তোমরা যদি এর হাকিকত অবগত হতে, তবে এমনভাবে চিৎকার করতে যে, তোমাদের শ্বাস রুদ্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হতো।
১১. হযরত আবু সুলাইমান দারানী (রহ:) বলেন, কারো চোখ যদি অশ্রæতে পুর্ন হয়ে যায়, তবে কিয়ামতের দিন তার চেহারা অপমানিত হবে না। আর চোখের অশ্রæ যদি গড়িয়ে পড়ে, তবে উহার প্রথম বিন্দু দ্বারাই বহু অগ্নি সমুদ্র শীতল হয়ে যাবে। অনুরুপভাবে কোন ব্যক্তি যদি কোন জামাতের সাথে ক্রন্দন করে তবে সেই জামাতের লোকদের কোন আজাব হবে না। তিনি আরো বলেন, কান্না আসে ভয়ের কারনে এবং আশা হয় শওকের কারনে।
১৩. হযরত কাব আহবার বলেন আল্লাহর শপথ! আমি একটি স্বর্নের পাহাড় দান করে দেয়া অপেক্ষা উত্তম মনে করি আল্লাহর ভয়ে এমনভাবে ক্রন্দন করাকে যেন চোখের পানি আমার চেহারাতে গড়িয়ে পড়ে।
১৪. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ফরমান, এমন কোন ঈমানদার বান্দা নেই যার চক্ষু হতে সামান্য অশ্রæও বের হয়ে চেহারায় গড়িয়ে পড়রে, আর আল্লাহ পাক তার উপর দোজখের আগুন হারাম করে দিবেন না।
১৫. হযরত আবুবকর (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি কাঁদতে পারে সে যেন কাঁদে। আর যে ব্যক্তি কাঁদতে পারে না সে যেন কাঁদার ভান করে। হযরত মোহাম্মদ বিন মুনকাদির যখন ক্রন্দন করতেন, তখন চোখের পানি চেহারা ও দাড়িতে মুছতেন। তিনি বলতেন, আমি জানতে পেরেছি যে, যে জায়গায় চোখের পানি লাগবে সেখানে দোজখের আগুন স্পর্শ করবে না।
১৬. হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) বলেন, তোমরা ক্রন্দন কর, যদি ক্রন্দন না আসে তবে অন্তত উহার ভান কর। তোমরা যদি এর হাকিকত অবগত হতে, তবে এমনভাবে চিৎকার করতে যে, তোমাদের শ্বাস রুদ্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হতো।
১৭. হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.:) বলেছেন, ‘আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে তবে কম হাসতে এবং অধিক কাঁদতে।’ (বোখারী ও তিরমিজি)।
১৮. কায়সে বিন আবু হাযেম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আবদুল্লাহ বিন রাওয়াহা (রাঃ) স্বীয় স্ত্রীর কোলে মাথা রেখে হঠাৎ কাঁদতে লাগলেন, তার সাথে তার স্ত্রীও কাঁদতে লাগলেন। আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কেন কাঁদছ? স্ত্রী বললেন, তোমাকে কাঁদতে দেখে আমারও কান্না চলে এসেছে। স্বামী বললেন, (কান্নার কারণ হল) আমার আল্লাহর এ বাণীটি স্মরণ হল যে, (অর্থ) ‘তোমাদের মধ্যে কেউ এমন নেই, যে জাহান্নামের উপর দিয়ে অতিক্রম করবে না (মারইয়াম : ৭১) আর আমার জানা নেই যে, জাহান্নামের উপর স্থাপন করা পুলসিরাত অতিক্রম করার সময় আমি (দোযখ থেকে) রক্ষা পাব না পাব না।’ (মুস্তাদরাকে হাকিম : ৮৭৮৬)
১৯. হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি একবার দোযখের কথা স্মরণ করে কাঁদতে লাগলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কে তোমাকে কাঁদাল? হযরত আয়েশা (রাঃ) বললেন, আমি দোযখের ভয়ে কাঁদছি। আপনি কি কেয়ামতের দিন আপনার পরিবারের কথা স্মরণ রাখবেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তিনটি স্থানে কেউ কাউকে স্মরণ রাখতে পারবে না- (এক) মীযানের (আমল পরিমাপক যন্ত্র) নিকট যতক্ষণ না জানতে পারবে যে, তার নেকীর পাল্লা ভারী হয়েছে না হালকা, (দুই) আমলনামা পেশ করার সময়, যখন বলা হবে আস তোমার আমলনামা পাঠ কর, যতক্ষণ না জানতে পারবে যে, তার আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হচ্ছে না পিঠের পিছন থেকে বাম হাতে। (তিন) পুলসিরাতের উপর দিয়ে অতিক্রম করার সময় যখন তা জাহান্নামের উপর স্থাপন করা হবে।’ (সুনানে আবু দাউদ : ৪৭২২)
২০. হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যখন এ আয়াতটি নাজিল হয়। ‘তবে কি তোমরা এ কথায় বিস্ময়বোধ করছ? হাসছো এবং কান্না করছো না? তখন আহলে সুফফার (একদল সাহাবা) সবাই ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ বলে কাঁদতে লাগলেন এবং তাদের চোখের পানি গাল বেয়ে বইতে লাগলো। তাঁদের কান্নার শব্দ শুনে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও কাঁদতে লাগলেন। তাঁর কান্না দেখে আমরাও কাঁদতে লাগলাম। অত:পর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলার ভয়ে কাঁদে; ওই ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। (তাফসিরে কুরতুবি)
(১) জাহান্নামী না হওয়ার নিশ্চয়তা :
ক) হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন ‘আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনকারীর জাহান্নামে যাওয়া এরূপ অসম্ভব যেরূপ দোহনকৃত দুধ পুনরায় পালানে ফিরে যাওয়া অসম্ভব। আর আল্লাহর পথের ধুলা ও জাহান্নামের ধোঁয়া কখনও একত্রিত হবে না’। (তিরমিযী হা/১৬৩৩; মিশকাত হা/৩৮২৮, সনদ ছহীহ)
খ) আরেকটি হাদীছে এসেছে, ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি ‘জাহান্নামের আগুন দু’টি চোখকে স্পর্শ করবে না। এক- আল্লাহর ভয়ে যে চোখ ক্রন্দন করে এবং দুই- আল্লাহর রাস্তায় যে চোখ পাহারা দিয়ে বিনিদ্র রাত অতিবাহিত করে’। (তিরমিযী : ১৬৩৯; মিশকাত : ৩৮২৯, সনদ সহীহ)
উল্লেখিত হাদীসদ্বয়ের প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, কোন ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার প্রতি পূর্ণ আনুগত্যশীল হয়ে এবং তাঁর নিষিদ্ধ বিষয়াবলী পরিহার করে আল্লাহর ভয়ে অশ্রæ প্রবাহিত করলে সে ব্যক্তি উক্ত মর্যাদার অধিকারী হবে। হৃদয়ে পূর্ণ তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি রেখে নীরবে-নিভৃতে আল্লাহর দিকে লুটিয়ে পড়লে দু’চোখ দিয়ে অশ্রæ ঝরবে। তবে এজন্য হৃদয়ে থাকা চাই পরিপূর্ণ ইখলাছ এবং আল্লাহর প্রতি নিখাদ ভালোবাসা। কপট হৃদয়ের মানুষ কখনোই উক্ত মর্যাদার অধিকারী হ’তে পারবে না। তারা তো দুনিয়ার নগণ্য স্বার্থে ধার্মিকতার লেবাস পরে নিজেকে যাহির করে। তাদের কাছে দুনিয়া হ’ল মুখ্য, আখেরাতের সফলতা তাদের কাছে গুরুত্বহীন। পক্ষান্তরে মুমিন বান্দা আখেরাত হাসিলের জন্য সদা ব্যস্ত। তাই কখনও কোন নেকী বা কল্যাণ তার হাতছাড়া হ’লেই সে ডুকরে কেঁদে ওঠে, অঝোরে দু’চোখ দিয়ে অশ্রæ ঝরে। যেমন সহায় সম্বলহীন দরিদ্র ছাহাবীগণ যারা তাবূক যুদ্ধে পাথেয়র অভাবে যেতে না পারায় কেঁদেছিল। ত্রিশ হাযার সেনা নিয়ে রওয়ানা হওয়ার পূর্বে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বাহনের অভাবে নিজের অপারগতা প্রকাশ করে যাদের বিদায় দিয়েছিলেন সেই সৌভাগ্যবান ব্যক্তিদের প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা তোমার নিকট এজন্য আসে যে, তুমি তাদের (জিহাদে যাবার) জন্য বাহনের ব্যবস্থা করবে। অথচ তুমি বলেছ যে, আমার নিকটে এমন কোন বাহন নেই যার উপর তোমাদের সওয়ার করাবো। তখন তারা এমন অবস্থায় ফিরে যায় যে, তাদের চক্ষুসমূহ হতে অশ্রæ প্রবাহিত হতে থাকে এই দু:খে যে, তারা এমন কিছু পাচ্ছে না যা তারা ব্যয় করবে’ (তওবা : ৯২)।
উক্ত জান্নাত পিয়াসী ব্যক্তিদের সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেন, ‘মদীনায় এমন কিছু লোক রয়েছে, তোমরা যেখানেই সফর করেছ এবং যে উপত্যকাই অতিক্রম করেছ তারা তোমাদের সঙ্গে ছিল। ছাবায়ে কেরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তারা তো মদীনায় ছিল? তিনি বললেন, তারা মদীনায় ছিল, কেবল ওযর তাদের আটকিয়ে রেখেছিল’।(বুখারী : ৪৪২৩; আবু দাউদ : ২০৫৮; মিশকাত : ৩৮১৫)
(২) ক্রন্দনকারী হাশরের ময়দানে নিরাপদে অবস্থান করবে :
ক) হাশরের ময়দান এমন এক স্থান, যেখানে পৃথিবীর যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে মানুষ নতুন এক ময়দানে উত্থিত হবে। আল্লাহ বলেন, এবং তারা আযাবকে প্রত্যক্ষ করবে ও পরস্পরের সকল সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে’ (বাক্বারাহ : ১৬৬)।
খ) সেদিন যালেমের যুলুম শেষ হয়ে যাবে এবং কোন ব্যক্তির কর্তৃত্ব চলবে না কেবল আল্লাহর কর্তৃত্ব ব্যতীত। আল্লাহ বলেন, ‘আজ রাজত্ব কার? কেবলমাত্র আল্লাহর, যিনি এক ও মহাপরাক্রান্ত’ (মুমিন : ১৬)।
গ) ক্বিয়ামতের কঠিন দিনে মানুষের ভয়াবহ পরিস্থিতি সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেন ‘ক্বিয়ামতের দিন মানুষের ঘাম ঝরবে। এমনকি তাদের ঘাম যমীনে সত্তর হাত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে এবং তাদের মুখ পর্যন্ত ঘামে ডুবে যাবে, এমনকি কান পর্যন্ত’।(বুখারী : ৬৫৩২; মুসলিম : ২৮৬৩; মিশকাত : ৫৫৩৯)
ঘ) আর ক্বিয়ামতের কঠিন পরিস্থিতিতে সাত শ্রেণীর মুমিন আরশের নিচে আশ্রয় পাবে। তাদের এক শ্রেণী সম্বন্ধে রাসূল (সাঃ) বলেন, ‘ঐ ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণকালে তার দু’চোখ দিয়ে অশ্রæধারা বইতে থাকে’। (বুখারী : ৬৬০; মুসলিম : ৭১১; তিরমিযী : ২৩৯১; মিশকাত : ৭০১)
(৩) আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনকারী আল্লাহর গযব থেকে রক্ষা পায় :
বিগত যুগে আল্লাহর গযবে যে সমস্ত জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে যেমন ‘আদ, ছামূদ ও লূত্ব ইত্যাদি, তাদের ধ্বংসস্থল অতিক্রমকালে ক্রন্দন করতে বলা হয়েছে এজন্য যে, তাদের উপর যে গযব এসেছিল অনুরূপ গযবে যেন কেউ না পড়ে। এ মর্মে রাসূল (সাঃ) বলেন, ‘তোমরা এসব আযাবপ্রাপ্ত সম্প্রদায়ের লোকালয়ে ক্রন্দনরত অবস্থা ব্যতীত প্রবেশ করবে না। যদি কান্না না আসে তাহলে সেখানে প্রবেশ কর না, যাতে তাদের উপর যা আপতিত হয়েছিল তা তোমাদের উপর আপতিত না হয়’। (বুখারী : ৪৩৩; মুসলিম : ২৯৮; আহমাদ : ৫২৫)
(৪) কঠোর হৃদয়ের প্রতি আল্লাহর ভীতি প্রদর্শন :
যাদের অন্তর কঠিন ও আল্লাহভীতি শূন্য তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘দুর্ভোগ ঐ লোকদের জন্য, যাদের অন্তর আল্লাহর স্মরণ থেকে কঠোর। তারা সুস্পষ্ট ভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে’ (যুমার : ২২)।
বিভিন্ন কারণে মানুষের হৃদয় কঠোর হয়ে যায়। ফলে হৃদয়ে আল্লাহভীতি নষ্ট হয়ে যায়। যেমন- (১) আখেরাত বিমুখতা এবং দুনিয়ার প্রতি অধিক হারে ঝুঁকে পড়া। (২) অনর্থক কথা ও কর্মে জড়িয়ে পড়া (৩) পাপ ও অন্যায় কর্মে জড়িত থাকা। মূলত: পাপের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির হৃদয় অত্যন্ত কঠোর হয়, ফলে পাপিষ্ঠ ব্যক্তির হৃদয়ে আল্লাহভীতি জাগ্রত হয় না। রাসূল (সাঃ) বলেন,‘বান্দা যখন একটি গুনাহ করে তখন তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে। অত:পর যখন সে গুনাহের কাজ পরিহার করে, ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তওবা করে তখন তার অন্তর পরিষ্কার ও দাগমুক্ত হয়ে যায়। সে আবার পাপ করলে তার অন্তরে দাগ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তার পুরো অন্তর এভাবে কালো দাগে ঢেকে যায়। এটাই সেই মরিচা আল্লাহ তা‘আলা যা বর্ণনা করেছেন- ‘কখনই না, বরং তাদের অপকর্মসমূহ তাদের অন্তরে মরিচা ধরিয়েছে’ (মুত্বাফফিফীন : ১৪)। (তিরমিযী : ৩৩৩৪; ইবনু মাজাহ : ৪২৪৪; মিশকাত : ২৩৪২; সহীহুল জামে : ১৬৭০)
(৫) আল্লাহর ভয়ে নির্গত অশ্রæ ফোঁটা তাঁর নিকট অধিক প্রিয় :
হযরত আবূ উমামা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত নবী করীম (সাঃ) বলেন, ‘দু’টি ফোঁটা ও দু’টি চিহ্নের চেয়ে অধিক প্রিয় আল্লাহর নিকট অন্য কিছু নেই। (১) আল্লাহর ভয়ে নি:সৃত অশুæ ফোঁটা (২) আল্লাহর পথে (জিহাদে) নির্গত রক্তের ফোঁটা’। (তিরমিযী : ১৬৬৯; মিশকাত : ৩৮৩৭, সনদ হাসান)
মহা মানবদের আল্লাহভীতি
১. নবী-রাসূলগণ :
মানব জাতির মধ্যে নবী-রাসূলগণ হ’লেন শ্রেষ্ঠ। মানবতার হেদায়াতের জন্য তাঁদের আগমন। তাঁরা অহী মারফত জাহান্নামের শাস্তি ও অদৃশ্য বিষয়াদির খবর পেতেন। এজন্যে তাঁরা সাধারণ মানুষের চাইতে আল্লাহকে অধিক ভয় করতেন। নবী-রাসূলদের অশুæসিক্ত হৃদয় প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘এরাই হলো তারা যাদেরকে আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন নবীগণের মধ্যে। যারা আদমের বংশধর এবং যাদেরকে আমরা নূহের সাথে নৌকায় আরোহন করিয়েছিলাম তাদের বংশধর। তারা ইবরাহীম ও ইসরাঈল (ইয়া‘কূব)-এর বংশধর এবং যাদেরকে আমরা সুপথ প্রদর্শন করেছিলাম ও মনোনীত করেছিলাম তাদের বংশধর। যখন তাদের নিকট দয়াময়ের (আল্লাহর) আয়াত সমূহ তেলাওয়াত করা হতো, তখন তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ত ক্রন্দনরত অবস্থায়’ (মারইয়াম : ৫৮)।
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন ‘তারা (পিতা-পুত্র) সর্বদা সৎকর্মে প্রতিযোগিতা করত। তারা আশা ও ভীতির সাথে আমাদের ডাকত। আর তারা ছিল আমাদের প্রতি বিনয়াবনত’ (আম্বিয়া : ৯০)।
২. সাহাবায়ে কেরাম :
নবী ও রাসূলের পর সাহাবীগণ ছিলেন মানব জাতির মধ্যে শ্রেষ্ঠতম। আল্লাহ তা‘আলার প্রতি তাঁদের ভালোবাসা, ভয় এবং ইসলামের জন্য তাদের অসাধারণ ত্যাগ আমাদেরকে বিস্মিত করে। আল্লাহর আয়াত শ্রবণ করে তারা ক্রন্দন করতেন। এখানে কয়েকজন সাহাবীর ঘটনা উল্লেখ করা হলো-
(ক) ওসমান (রাঃ) :
ওসমান (রাঃ)-এর মুক্ত দাস হানী বলেন, ‘ওসমান (রাঃ) কোন কবরের পাশে দাঁড়িয়ে এত বেশী কাঁদতেন যে, তাঁর দাঁড়ি ভিজে যেত। তাঁকে প্রশ্ন করা হলো, জান্নাত-জাহান্নামের আলোচনা করলে তো আপনি কাঁদেন না, অথচ কবর দর্শনে এত বেশী কাঁদেন কেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘আখেরাতের মনযিলগুলোর মধ্যে কবর হলো প্রথম মনযিল। এখান থেকে কেউ মুক্তি পেয়ে গেলে তার জন্য পরবর্তী মনযিলগুলোতে মুক্তি পাওয়া খুব সহজ হয়ে যাবে। আর এখান থেকে মুক্তি না পেলে তার জন্য পরবর্তী মনযিলগুলো আরো বেশী কঠিন হবে’। ওসমান (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আরো বলেছেন, ‘আমি কবরের দৃশ্যের চাইতে অধিক ভয়ংকর দৃশ্য আর কখনো দেখিনি। (ইবনু মাজাহ : ৪২৬৭; তিরমিযী : ২৩০৮; মিশকাত : ১৩২)
(খ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) :
হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) তাঁর নিজের অসুস্থতায় কাঁদলেন। অত:পর তাকে বলা হলো, কোন জিনিস আপনাকে কাঁদাচ্ছে? তিনি বললেন, ‘আমি তোমাদের এ দুনিয়ার জন্যে কাঁদছি না, বরং আমি কাঁদছি আমার সফরের দূরত্ব এবং স্বল্প পাথেয়র জন্য। নিশ্চয়ই আমি জান্নাত বা জাহান্নামের কঠিন পথ (অতিক্রমের দু:শ্চিন্তায়) সন্ধ্যা করি। আমি জানি না, আমাকে এতদুভয়ের (জান্নাত বা জাহান্নামের) কোথায় নেওয়া হবে? (বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ : ৪১৭৬)
(গ) ইবনু ওমর (রাঃ) :
ইবনু ওমর (রাঃ) যখন আল্লাহ তা‘আলার বাণী,‘দুর্ভোগ মাপে কম দানকারীদের জন্য’ (মুত্বাফফিফিন : ১) এই আয়াত পাঠের পর আল্লাহর বাণী ‘যেদিন মানুষ দন্ডায়মান হবে বিশ্বপালকের সম্মুখে’ (মুত্বাফফিফিন : ৬) এই আয়াতে পৌঁছলেন তখন কেঁদে ফেললেন। অত:পর আয়াতের মর্মবাণী ও আল্লাহর ভয় তাঁর অন্তরে এমন প্রভাব ফেলল যে, তিনি ভেঙ্গে পড়লেন এবং ঐ আয়াতের পর আর সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারলেন না। (আবূ নু‘আইম, হিলইয়াতুল আওলিয়া, (বৈরূত : দারুল কুতুবুল আরাবী, প্রথম সংস্করণ, ১৪০৯ হি:), ১/৩০৫পৃ:)
৩. সালাফে সালেহীনগণ :
(১) ওমর বিন আব্দুল আযীয :
উমাইয়া খলীফা ওমর বিন আব্দুল আযীয ইসলামের ইতিহাসে অধিক ক্রন্দনকারী হিসাবে খ্যাত। তাঁর পুণ্যময় জীবনের বিস্ময়কর একটি ঘটনা হচ্ছে, ফাতেমা বিনতে আব্দুল মালেক কেঁদে কেঁদে তাঁর দৃষ্টিশক্তি দুর্বল করে ফেলল। অত:পর তাঁর ভাই মাসলামা ও হিশাম তাঁর নিকট এসে বলল, কোন জিনিসটি তোমাকে এভাবে কাঁদাচ্ছে? তোমার যদি দুনিয়ার কোন কিছু হারায় তাহলে আমাদের সম্পদ ও পরিজন দ্বারা তোমাকে আমরা সাহায্য করব। তাদের জবাবে ফাতেমা বললেন, ওমরের কোন কিছুর জন্যে আমি দু:খ করছি না। কিন্তু আল্লাহর কসম! গত রাত্রে দেখা একটি দৃশ্য আমার ক্রন্দনের কারণ। অত:পর ফাতেমা বিনতে আব্দুল মালেক বললেন, আমি গত রাত্রে ওমর বিন আব্দুল আযীযকে সালাতরত অবস্থায় দেখেছি। অত:পর তিনি আল্লাহর বাণী ‘যেদিন মানুষ হবে বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মত এবং পর্বতমালা হবে ধুনিত রঙিন পশমের মত’ (ক্বারি‘আহ : ৪-৫) এই আয়াত পাঠ করে চিৎকার করে উঠলেন এবং মাটিতে পড়ে গেলেন। অত:পর কঠিনভাবে চিৎকার করতে থাকলে আমার মনে হ’ল তাঁর রূহ বের হয়ে যাবে। অত:পর তিনি থামলে আমার মনে হ’ল তিনি হয়ত মারা গেছেন। এরপর তিনি চেতনা ফিরে পেয়ে ফরিয়াদ করে বলতে লাগলেন, হায়! মন্দ সকাল! এরপর তিনি লাফিয়ে উঠে ঘরের মধ্যে ঘুরতে থাকলেন আর বলতে লাগলেন, ‘হায়! আমার জন্য দুর্ভোগ। সেদিন কোন লোক হবে বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মত এবং পর্বতমালা হবে ধুনিত রঙিন পশমের মত’? (জামালুদ্দীন আল-জাওযী, আল-মুনতাযাম ফী তারীখিল উমাম ওয়াল মুলূক, তাহক্বীক : মুহাম্মাদ আব্দুল কাদির ও মোস্তফা আব্দুল ক্বাদির (বৈরূত : দারুল কুতুবুল ইলমিয়াহ, প্রথম সংস্করণ, ১৪১২ হি:/১৯৯২ খ্রী:), ৭/৭২)
(২) মুহাম্মাদ বিন মুনকাদির :
কোন এক রাত্রে মুহাম্মাদ বিন মুনকাদির সালাত আদায় করছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি কাঁদতে লাগলেন। এক সময় তাঁর ক্রন্দনের মাত্রা বেড়ে গেলে তাঁর পরিবার ঘাবড়ে যায়। অত:পর তাকে জিজ্ঞেস করা হ’ল যে, তিনি কেন কাঁদছেন? এমতাবস্থায় তাঁর ক্রন্দনের সীমা অতিক্রম করলে তাঁর পরিবার ইবনু হাযমকে ডেকে পাঠালেন। ইবনু হাযম মুহাম্মাদ ইবনু মুনকাদিরকে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জিনিস তোমাকে কাঁদাচ্ছে? জবাবে ইবনু মুনকাদির বললেন, আমি একটি আয়াত তেলাওয়াত করে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলাম। আবু হাযেম বললেন, সে আয়াতটি কি? ইবনু মুনকাদির বললেন, আয়াতটি হচ্ছে- ‘যদি যালেমদের কাছে পৃথিবীর সকল সম্পদ থাকে এবং তার সাথে সমপরিমাণ আরও থাকে, তাহলে অবশ্যই তারা ক্বিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য মুক্তিপণ হিসাবে সবই দিয়ে দিবে। অথচ সেদিন আল্লাহর পক্ষ হতে তাদের জন্য এমন শাস্তি প্রকাশ করা হবে, যা তারা কল্পনাও করত না’ (যুমার : ৪৭)। ইবনু মুনকাদির থেকে উক্ত আয়াত শুনে আবু হাযেম কেঁদে ফেললেন। অত:পর তারা উভয়ে কঠিনভাবে কাঁদতে লাগলেন। (হাফেয যাহাবী, তারীখুল ইসলাম, তাহক্বীক : ওমর আব্দুস সালাম, (বৈরূত : দারুল কিতাবিল আরাবী, ২য় সংস্করণ, ১৪১৩ হি:/১৯৯৩ খ্রী:) ৮/২৫৮, সনদ যঈফ)

হৃদয়ে আল্লাহভীতি আনয়নের উপায় :
মানব মনে আল্লাহভীতি জাগ্রত করার অনেক মাধ্যম রয়েছে, যেগুলি অনুসরণ করলে আল্লাহর ভয় চলে আসবে এবং কঠোর হৃদয় নরম হবে, চোখ বয়ে অশ্রæ বেয়ে আসবে। যেমন-
১. কুরআন তেলাওয়াত করা :
কুরআন এমন এক বরকতময় কিতাব, যার সংস্পর্শে কঠোর হৃদয়ের মানুষও নরম হয়ে যায়। আরবের মরুচারী কঠোর স্বভাবের মানুষগুলি কুরআনের ছায়াতলে এসে বিনয়ী ও সুসভ্য হয়েছে এবং তাদের পাষাণ অন্তর বিন¤্র হয়েছে। কুরআনের বাণী শুনে শ্রেষ্ঠ মানব আল্লাহর রাসূল (সাঃ) ও কেঁদেছেন।
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) বলেন, একদা নবী করীম (সাঃ) আমাকে বললেন, আমার সামনে কুরআন তিলাওয়াত কর। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার সামনে পড়ব, অথচ আপনার কাছে তা নাযিল হয়েছে? তিনি বললেন, আমি অপরের তেলাওয়াত শুনতে ভালবাসি। সুতরাং আমি তাঁর সামনে সূরা নিসা পড়ে শুনালাম। পড়ার সময় আমি যখন এই আয়াতে এসেছি ‘অতএব সেদিন কেমন হবে, যেদিন আমরা প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী (নবী) আনব এবং তোমাকে তাদের সকলের উপর সাক্ষী করব? (নিসা : ৪১)। তিনি বললেন, ‘বেশ যথেষ্ট হয়েছে, থাম। এ সময় আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখলাম তাঁর দু’চোখ দিয়ে অশুæ প্রবাহিত হচ্ছে’। (বুখারী : ৫০৫০)
২. আল্লাহর কিতাব ও তাঁর আয়াত অনুধাবন করা :
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তবে কি তারা কুরআন নিয়ে গবেষণা করে না? নাকি তাদের হৃদয়গুলি তালাবদ্ধ?’ (মুহাম্মাদ ৪৭/২৪)।
নাসের আস-সা‘দী (মৃত: ১৩৭৬ হি:) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘অত:পর তারা যদি কুরআন নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে, তবে তা তাদেরকে সমগ্র কল্যাণের পথে পরিচালিত করবে এবং প্রত্যেক অকল্যাণ হ’তে সাবধান করবে। আর তাদের হৃদয় ঈমান এবং দৃঢ় বিশ্বাস দ্বারা পূর্ণ করে দিবে। অত:পর তাদেরকে উচ্চ মর্যাদায় পৌঁছে দিবে এবং মূল্যবান পারিতোষিক দান করবে’। (তাইসীরুল কারীমির রহমান, পৃ: ৭৩৩)
আল্লাহ আরো বলেন, ‘আল্লাহ সর্বোত্তম বাণী সম্বলিত কিতাব নাযিল করেছেন। যা পরস্পরে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং পুন: পুন: পঠিত। এতে তাদের দেহচর্ম ভয়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে, যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে। অত:পর তাদের দেহ-মন আল্লাহর স্মরণে বিনীত হয়। এটা হ’ল আল্লাহর পথপ্রদর্শন। এর মাধ্যমে তিনি যাকে চান পথপ্রদর্শন করেন। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তাকে পথ দেখানোর কেউ নেই’ (যুমার ৩৯/২৩)।
৩. দ্বীনী আলোচনা শ্রবণ করা :
বেশি বেশি দ্বীনি আলোচনা শ্রবণ করার দ্বারাও অন্তর নরম হয় ও আল্লাহর ভয়ে চোখে অশ্রæ চলে আসে।
ক) আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘সুতরাং যে শাস্তিকে ভয় করে তাকে উপদেশ দান করো কোরআনের সাহায্যে।’ (কাফ : ৪৫)।
খ) অন্য আয়াতে তিনি বলেন, ‘আপনি উপদেশ দিতে থাকুন। কারণ উপদেশ মোমিনদের উপকারে আসবে।’ (জারিয়াত : ৫৫)
গ) ইরবাজ ইবনে সারিয়াহ (রহ.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একবার ফজর নামাজের পর আমাদের মর্মস্পর্শী ওয়াজ শোনালেন, যাতে আমাদের সবার চোখে পানি চলে এলো এবং অন্তর কেঁপে উঠল। এক ব্যক্তি বলল, এটা তো বিদায়ী ব্যক্তির নসিহতের মতো মনে হচ্ছে। হে আল্লাহর রাসুল! এখন আপনি আমাদের কী উপদেশ দিচ্ছেন? তিনি বললেন, আমি তোমাদের আল্লাহভীতির এবং (আমিরের আদেশ) শ্রবণ ও মান্য করার উপদেশ দিচ্ছি। (তিরমিজি ও আবু দাউদ)।
ঘ) আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবার অন্তরে খোদাভীতি এবং চোখে আল্লাহর ভয়ের অশ্রæ দিয়ে ভরে দিন! (তিরমিযী : ২৬৭৬; আবু দাঊদ : ৪৬০৭; আহমাদ : ১৭১৪৪)
৪. অহীর জ্ঞান অর্জন:
আল্লাহ তা'আলার প্রতাপ, মহত্ব এবং তাঁর নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে জ্ঞানার্জন। তারা তাদের উপর পরাক্রমশালী, তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে। (আন-নাহল : ৫০)
৫. জাহান্নামের ভয় অন্তরে পোষণ:
যেস্থানে আমরা কেউই যেতে চাই না, সেই জাহান্নাম ও কঠোর শাস্তি এবং নিকৃষ্ট গন্তব্যে গমনের ভয় অন্তরে পোষন করা।
৬. ক্রুটি-বিচ্যুতির অনূভুতি অন্তরে লালন করা:
আল্লাহ কর্তৃক নির্দেশিত কর্তব্য পালনে নিজের ক্রটি-বিচ্যুতির অনূভুতি অন্তরে লালন করা। সেই সাথে একথাও কল্পনায় রাখা যে, আল্লাহ তা'আলা সবকিছুই দেখছেন এবং সবাই তাঁর হাতের নাগালে। আর গুনাহের ক্ষুদ্রতা ও তুচ্ছতার কথা আমলে না এনে বরং সব সময় যার নাফরমানী করা হচ্ছে, সেই আল্লাহর মহত্বের কথা মাথায় রাখা উচিত।
৭. হাদীস ও সীরাত অধ্যায়ন করা:
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের হাদীসের প্রতি গভীরভাবে চিন্তা করা এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সীরাত অধ্যয়ন করা।
৮. আল্লাহকে ভয় করা:
আল্লাহর বড়ত্বের কথা চিন্তা করা। কেননা যে আল্লাহর বড়ত্ব নিয়ে চিন্তা করবে, তার দৃষ্টিজুড়ে আল্লাহর গুনাবলী ও মহত্বের বিষয়গুলো বিরাজ করবে। আর যার অন্তর আল্লাহর মর্যাদা ও আযমত প্রত্যক্ষ করবে, সে আল্লাহকে অবশ্যই ভয় করবে। বিশ্বাসী মু’মিনগণ যেন বিশ্বাসী মু’মিনদেরকে ছাড়া অবিশ্বাসী কাফেরদেরকে অভিভাবক (বা অন্তরঙ্গ বন্ধু)রূপে গ্রহণ না করে। (১) যে কেউ এরূপ করবে, তার সাথে আল্লাহর কোন সম্পর্ক থাকবে না। তবে ব্যতিক্রম, যদি তোমরা তাদের কাছ থেকে কোন ভয় আশংকা কর (তাহলে আত্মরক্ষার জন্য কৌশল অবলম্বন করতে পার।) (২) আর আল্লাহ তাঁর নিজের সম্বন্ধে তোমাদেরকে সাবধান করছেন এবং আল্লাহর দিকেই (তোমাদের) প্রত্যাবর্তন। (ইমরান : ২৮।)
মহান আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন- তারা আল্লাহকে যথার্থরূপে বোঝেনি। কেয়ামতের দিন গোটা পৃথিবী থাকবে তাঁর হাতের মুঠোতে এবং আসমান সমূহ ভাঁজ করা অবস্থায় থাকবে তাঁর ডান হাতে। (যুমার : ৬৭)
আল্লাহর প্রতি ভয় আল্লাহ সম্পর্কে আরো জানতে বাধ্য করে, আর আল্লাহ সম্পর্কে জানলে তাঁর প্রতি অন্তর বিনয়ে অবনত হয়, যা মানুষকে আল্লাহর অনুগত করে।
৯. মৃত্যু সর্ম্পকে চিন্তা করা:
মৃত্যু ও তার ভয়াবহতা সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করা এবং এ বিষয়েও চিন্তা করা যে মৃত্যু থেকে পলায়নের কোন পথ নেই: আল্লাহ তা'আলা বলেন: বলুন, তোমরা যে মৃত্যু থেকে পলায়নপর, সেই মৃত্যু অবশ্যই তোমাদের মুখামুখি হবে। (আল-জুমুয়া, আয়াত: ৮) এটা আল্লাহর ভয় সৃষ্টি করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, দুনিয়ার স্বাদ বিনষ্টকারী মৃত্যুকে তোমরা অধিক পরিমাণে স্মরণ কর। কেউ যদি মুত্যুকে অসচ্ছল অবস্থায় স্মরণ করে তবে সে প্রশান্তি লাভ করবে, আর যে সচ্ছল অবস্থায় মৃত্যুকে স্মরণ করবে দুনিয়ার প্রতি তার আকর্ষণ কমে যাবে। (তবরানী)
৯. কবর জিয়ারত করা:
মৃত্যু পরবর্তী জীবন, কবর এবং কবরের ভয়াবহতা নিয়ে চিন্তা করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আমি তোমাদেরকে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করতাম, কিন্তু এখন তোমরা কবর জিয়ারত করো, কারণ এটা দুনিয়ার মোহ কমিয়ে দেয় এবং আখিরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়। (ইবনে মাজাহ।)
হযরত বারা (রাঃ) বলেন: 'আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে একটি জানাজায় শরীক ছিলাম, এক পর্যায়ে তিনি কবরের পাশে বসে পড়লেন এবং এতো বেশি ক্রন্দন করলেন যে মাটি ভিজে গেল, এরপর বললেন- হে আমার ভাইয়েরা! এভাবে তোমরাও মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করো। (ইবনে মাজাহ।)
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন, হে মানব জাতি! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, এবং ভয় কর এমন এক দিবসকে, যখন পিতা পুত্রের কোন কাজে আসবে না এবং পুত্রও তার পিতার কোন উপকার করতে পারবে না। নি:সন্দেহে আল্লাহর ওয়াদা সত্য। অতএব, পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে ধোঁকা না দেয় এবং আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারক শয়তানও যেন তোমাদেরকে প্রতারিত না করে। (লুকমান : ৩৩)
১০. ছোট ছোট গুনাহ পরিত্যাগ করা:
ছোট ছোট গুনাহের ধ্বংসাত্মক পরিণতি সম্পর্কে চিন্তা করা; এসব গুনাহ মানুষকে তুচ্ছ ও লাঞ্চিত করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উদাহরণ পেশ করলেন একদল মুসাফিরের সঙ্গে, যারা 'বাতনে ওয়াদী' নামক জায়গায় অবতরণ করেছিলো, এরপর তারা সবাই মিলে রান্নার জন্য জালানী কাঠ সংগ্রহ করলো, এখানে কাঠ ও আগুন প্রজ্জলের মাঝে একটা প্রচেষ্টা ও সম্পর্ক রয়েছে। ঠিক একই ভাবে গুনাহগারের জাহান্নামে জ্বলার মাঝে তার কৃত গুনাহ সমূহের ভূমিকা ও সম্পর্ক রয়েছে : তাদের চামড়াগুলো যখন জ্বলে-পুড়ে যাবে। (নিসা : ৫৬)
১১. হঠাৎ মৃত্যু থেকে পানা ছাওয়া:
বান্দার জানা উচিত যে, হঠাৎ মৃত্যু তার ও তওবার মাঝে অন্তরায় হয়ে দাড়াতে পারে। সে ক্ষেত্রে অনুশোচনা ও আক্ষেপ কোন কাজে আসবে না। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন, যখন তাদের কারও কাছে মৃত্যু আসে, তখন সে বলে: হে আমার পালণকর্তা! আমাকে পুনরায় দুনিয়াতে প্রেরণ করুন। (মুমিনুন : ৯৯)
তিনি ইরশাদ করেন, আপনি তাদেরকে পরিতাপের দিবস সম্পর্কে হুশিয়ার করে দিন। (মারইয়াম : ৩৯)
১২. অশুভ পরিণতি সম্পর্কে চিন্তা করা:
অশুভ পরিণতি সম্পর্কে চিন্তা করা। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন, ফেরেশতারা কাফেরদের জান কবজ করে; প্রহার করে, তাদের মুখে এবং তাদের পশ্চাদদেশে। (আনফাল : ৫০)
১৩. আল্লাহর ভয় বিরাজমান লোকদের সান্নিধ্যে বসা:
এমন লোকদের সান্নিধ্যে বসা যাদের মধ্যে আল্লাহর ভয় বিরাজমান। আল্লাহ তা'আলা বলেন : আপনি নিজেকে তাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে আহবান করে। (কাহাফ : ২৮)
আল্লাহভীতির উপকারিতা ও ফলাফল
(ক) আল্লাহভীতির পার্থিব ফলাফল:
১. আল্লাহর ভয় দুনিয়াতে মানুষকে কতৃত্ব এনে দেয় এবং ঈমান ও আন্তরিক প্রশান্তি বৃদ্ধি করে; কেননা, আপনি যখন প্রতিশ্রæত বস্তু লাভ করবেন, তখন প্রতিশ্রুতিদাতার প্রতি আপনার ভরসা আরো বেড়ে যাবে, এটাই স্বাভাবিক। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন, কাফেররা পয়গম্বরগণকে বলেছিল: আমরা তোমাদেরকে দেশ থেকে বের করে দেব, অথবা তোমরা আমাদের ধর্মে ফিরে আসবে। তখন তাদের কাছে তাদের পালনকর্তা ওহী প্রেরণ করলেন যে, আমি জালিমদেরকে অবশ্যই ধ্বংস করে দেব। তাদের পর তোমাদেরকে দেশে আবাদ করব। এটা ঐ ব্যক্তি পায়, যে আমার সামনে দন্ডায়মান হওয়াকে এবং আমার আযাবের ওয়াদাকে ভয় করে। (ইবরাহীম : ১৩-১৪)
২. আল্লাহভীতি মানুষকে নেক আমল ও ইখলাসের প্রতি উৎসাহিত করে। সাথে সাথে দুনিয়াতে এর বিনিময় যেন কামনা না করে; বরং একনিষ্ঠতা অবলম্বন করে, সে মর্মেও উৎসাহিত করে। আখিরাতে এমন ব্যক্তির সাওয়াবে কোন হ্রাস হবে না। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন, তারা বলে : কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে আমরা তোমাদেরকে আহার্য দান করি এবং তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি না। আমরা আমাদের পালনকর্তার তরফ থেকে এক ভীতিপ্রদ ভয়ংকর দিনের ভয় রাখি। (ইনসান : ৯-১০)
কারো অন্তরে যখন আল্লাহভীতি সৃষ্টি হয়, তখন তা প্রবৃত্তির মন্দ তাড়না ও চাহিদাগুলোকে জ্বালিয়ে নি:শেষ করে দেয় এবং এর ফলে তার মন থেকে দুনিয়ার মোহ কমে যায়।
আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন : আল্লাহ যেসব গৃহকে মর্যাদায় উন্নীত করার এবং সেগুলোতে তাঁর নাম উচ্চারণ করার আদেশ দিয়েছেন, সেখানে সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে; এমন লোকেরা, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে, নামায কায়েম করা থেকে এবং যাকাত প্রদান করা থেকে বিরত রাখে না। তারা ভয় করে সেই দিনকে, যেদিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ উল্টে যাবে। (আন-নূর : ৩৬)
অর্থাৎ আল্লাহর ভয়ে তারা ব্যাকুল থাকে। আর এই চেতনাই তাদেরকে আমলের দিকে অগ্রসর করে। তারা নাজাত ও মুক্তির কামনা করতে থাকে এবং ধ্বংসের পথ পরিহার করে। তারা বাম হাতে আমলনামা প্রাপ্তিকে ভয় করে।
যদি কোন ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে তবে সেই ভয় তাকে কল্যাণের পথে পরিচালিত করে।
(খ) আল্লাহভীতির পরকালীন ফলাফল:
১. আল্লাহর ভয়ে ভীত বান্দা কিয়ামতের দিন আরশের ছায়ায় স্থান পাবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, এবং এমন ব্যক্তি (আরশের নিচে ছায়া পাবে) যাকে অভিজাত সুন্দরী কোন রমণী প্রস্তাব দেয়া সত্বেও সে বলে; আমি আল্লাহকে ভয় করি। (বোখারী)
বাহ্যত: উক্ত হাদীসে সুন্দরী রমনীর কুপ্রস্তাবের জবাবে, নেককার যুবক আল্লাহর ভয়ের কথাটি প্রকাশ করেছে, মহিলাকে নিবৃত করা ও নিজকে উপদেশ দানের জন্য। অর্থাৎ যেন সে ঘোষিত আল্লাহভীতির দাবি অনুসারে চলতে পারে। এমন ব্যক্তি যে নিভৃতে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চোখের পানি ছেড়ে দেয়। (বোখারী,)
চোখে অশ্রæর প্রবাহ সৃষ্টিকারী ভয় মানুষকে এমন স্তরে নিয়ে যায় যে, কিয়ামতের দিন আগুন এই চোখ স্পর্শ করবে না।
২. ভয় মাগফিরাতের কারণ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস এই সাক্ষ্যই দেয়, পূর্বের যুগের এক ব্যক্তি যাকে আল্লাহ তা'আলা অনেক ধন-সম্পদ দান করেছিলেন, মৃত্যুর সময় তিনি ছেলেদের ডেকে বললেন- আমি বাবা হিসাবে কেমন ছিলাম? তারা বলল- উত্তম, অত:পর তিনি বললেন, আমি কোন নেক কাজ করি নাই, সুতরাং আমি যখন মারা যাবো তোমরা আমাকে জ্বালিয়ে ভষ্ম করে দিবে, এরপর তা পিষে গুড়ো করবে, তারপর তা ঝড়োবাতাসে উড়িয়ে দিবে। ছেলেরা নির্দেশ মত সব করল। অত:পর আল্লাহ তার সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ একত্রিত করে বললেন-তুমি এমনটি কেন করেছিলে? সে বলল, আপনার ভয়। অত:পর আল্লাহ তাকে রহমত ও দয়া দ্বারা বেষ্টন করে নিলেন। (বোখারী।)
যে ব্যক্তি আল্লাহর পুনর্জীবন দানের ক্ষমতাকে অবিশ্বাস করে সে কাফের। কিন্তু উক্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে তার অজ্ঞতাকে ওজর হিসাবে কবুল করেছেন আল্লাহ তা'আলা। তার ভয় রবের কাছে সুপারিশকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।
৩. আল্লাহর ভয় মানুষকে জান্নাতে পৌঁছে দেয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- যে ভয় পায় সে আত্মরক্ষার্থে রাতে সফর করে, আর যে রাতে সফর করে সে সচেতনার কারণে গন্তব্যে পৌছতে পারে। তোমরা জেনে রেখো- নিশ্চয় আল্লাহর পুরস্কার অত্যন্ত দামী। আর তা হলো জান্নাত। (সুতরাং আল্লাহর ভয় অন্তরে জাগরুক রাখো এবং সাবধানে দুনিয়ার জীবন পাড়ি দাও। তবেই গন্তব্যে পৌঁছুতে পারবে। (তিরমিযী।)
৪. যার মাঝে আল্লাহর ভয় আছে, সে কিয়ামতের দিন নিরাপদে থাকবে। আল্লাহ তা'আলা হাদীসে কুদসীতে ইরশাদ করেন: আমার ইজ্জতের কসম! আমার বান্দার জন্য দুটি ভয় ও দুটি নিরাপত্তাকে একত্রিত করি না। যদি সে দুনিয়ায় আমাকে ভয় করে তবে কিয়ামতে আমি তাকে নিরাপত্তা দান করব। আর দুনিয়ায় আমাকে যে নিরাপদ মনে করবে (ভয় না করবে) কিয়ামতের দিন তাকে আমি সন্ত্রস্ত রাখবো। (বায়হাকী)
৫. আল্লাহ তা'আলা তাঁর ঈমানদার বান্দাদের যেসব গুন-বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন, আল্লাহভীতি অর্জনকারি ব্যক্তি সেসব গুন-বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে পারে। যেমনটি আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেছেন,ঈমানদার পুরুষ, ঈমানদার নারী, অনুগত পুরুষ, অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ, সত্যবাদী নারী, ধৈর্য্যশীল পুরুষ, ধৈর্য্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ, বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ, দানশীল নারী, রোযা পালনকারী পুরুষ, রোযা পালনকারী নারী, যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী পুরুষ, যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী নারী। (আহযাব : ৩৫) উক্ত আয়াতে মুমিনের গুন-বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে বর্ণিত প্রত্যেকটি শব্দই মর্যাদাপূর্ণ, যা অর্জনের জন্য প্রতিযোগিতা করা উচিত।
আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন, তাদের পার্শ্ব শয্যা থেকে আলাদা থাকে। তারা তাদের পালনকর্তাকে ডাকে, ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে। কেউ জানে না তার জন্যে কৃতকর্মের কি কি নয়ন-প্রীতিকর প্রতিদান লুক্কায়িত আছে। (আস-সিজদা : ১৬)
আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি দিনে ও রাতে সাজদা ও দন্ডায়মান হয়ে আল্লাহর ইবাদাত করে এবং আখেরাতকে ভয় করে ও তার পালনকর্তার রহমত প্রত্যাশা করে, সে কি তার সমান, যে এরূপ করে না; বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না; তারা কি সমান হতে পারে? চিন্তা-ভাবনা কেবল তারাই করে, যারা বুদ্ধিমান।
(আয-যুমার : ৯)
আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন, এবং যারা তাদের পালনকর্তার শাস্তির সম্পর্কে ভীত-কম্পিত। নিশ্চয় তাদের পালনকর্তার শাস্তি থেকে নি:শঙ্ক থাকা যায় না। (আল-মায়ারিজ : ২৭- ২৮)
আল্লাহ তা'আলা তাঁর প্রতি ভয় পোষণ করার কারণে তাঁর নৈকট্যশীল বান্দাদের প্রশংসা করেছেন। আর আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দা হচ্ছেন আম্বিয়ায়ে কেরাম: তারা সৎকর্মে ঝাঁপিয়ে পড়ত, তারা আশা ও ভীতি সহকারে আমাকে ডাকত এবং তারা ছিল আমার কাছে বিনীত। (আল-আম্বিয়া : ৯০)
ফেরেশতাগণও আল্লাহ তা'আলাকে ভয় করে। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন,তারা তাদের উপর পরাক্রমশালী, তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে এবং তারা যা আদেশ পায়, তা করে। (আন-নাহল : ৫০)
৬. আল্লাহর সন্তুষ্টি: আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। এটা তার জন্যে, যে তারা পালনকর্তাকে ভয় করে। (আল-বাইয়্যেনাহ : ৮)
যাঁরা আল্লাহকে প্রকৃতই চিনতে পেরেছেন, সেসব বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ভয়:
আল্লাহর পরিচয় লাভকারী বান্দারা সর্বদা নেক আমলে মগ্ন থাকেন। তারা কখনো নিরাশ হন না। তারাই আল্লাহর ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী ভয় ও বিনয় পোষণ করেন। এর একটি উদাহরণ হলো:
ক) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে এত অধিক ক্রন্দন করতেন যে, ক্রন্দনের ফলে তাঁর বুক দিয়ে ফুটন্ত ডেকের শব্দের মত (গম্ভীর) শব্দ শোনা যেত। (আহমদ, আবু-দাউদ ও নাসাঈ।)
খ) হযরত আবু বকর (রাঃ) জিহ্বা ধরে বলতেন : এটাই আমাকে ধ্বংসের পথে নিয়ে এসেছে এবং তিনি বলতেন: হায়! আমি যদি এমন কোন উদ্ভিদ হতাম যা কেউ ভক্ষণ করে ফেলত!
গ) উমর ইবনুল খাত্তাব রা. বলতেন: আহ! আমি যদি সৃষ্টিই না হতাম!! হায়! আমার মা যদি আমাকে প্রসব না করতেন!! এবং তিনি আরো বলতেন: ফোরাত নদীর তীরে যদি একটি ক্ষুধার্ত উটও মারা যায় তবে আমার ভয় হয় যে আল্লাহ আমাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করবেন। তিনি আরো বলতেন: যদি আকাশ থেকে কোন আহ্বানকারী ডেকে বলতেন হে মানবসকল! তোমাদের মধ্যে একজন ছাড়া সকলেই জান্নাতী। তবে আমি ভয়ে থাকতাম যে সে ব্যক্তি আমি হই কি না!
ঘ) হযরত উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) বলতেন: আমার জন্য এটাই ভালো হতো যে আমি মৃত্যু বরণ করবো, কিন্তু পুনরুত্থিত হবো না। অথচ তিনি এমন ব্যক্তি যিনি তাসবীহ, সালাত ও তিলাওয়াতে রাত কাটাতেন। তবুও আল্লাহর ভয়ে তাঁর অন্তর এতোটা প্রকম্পিত থাকতো।
ঙ) উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রাঃ) আল্লাহর এই বাণী তেলাওয়াত করতেন: অত:পর আল্লাহ আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করেছেন।
আল্লাহর ভয় সংক্রান্ত জ্ঞাতব্য
১. ভয় প্রসঙ্গে কুরআনে দু'টি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। একটি হলো 'খাশয়াত' অপরটি হলো 'খাউফ'। 'খাশয়াত' শব্দটি 'খাউফ' শব্দ থেকে একটু নির্দিষ্ট অর্থের অধিকারী। 'খাশয়াত' শব্দটি এমন ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য যিনি আল্লাহ সম্পর্কে ধারণা রেখেই তবে তাকে ভয় করেন: আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই কেবল তাঁকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী ক্ষমাময়। (আল-ফাতির : ২৮)
অর্থাৎ 'খাশয়াত' হলো যে ভয়ের সাথে ইলমও থাকে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- জেনে রেখো! আল্লাহর শপথ আমি তোমাদের মধ্যে আল্লাহকে অধিক সমীহ করি এবং অধিক ভয় করি। (মুসলিম।)
২. আল্লাহর ভয় তখনই উপকারে আসবে যখন আমল, মুজাহাদা ও যথাযথ তওবার আগ্রহ সৃষ্টি হবে। অপরাধের পরিণাম সম্পর্কে জানা এবং আল্লাহর শাস্তি প্রদান সংক্রান্ত হুশিয়ারীকে বিশ্বাস করার মাধ্যমে ভয় সৃষ্টি হয়। এছাড়া আল্লাহর মাহাত্ম্য, বড়ত্ব ও মর্যাদা থেকেও ভয় সৃষ্টি হয়। আমল, মুজাহাদা ও তওবায় উৎসাহিত করে না এমন ভয়কে প্রকৃত ভয় বলে না।
৩. আল্লাহর প্রতি ভয় পোষণ করা ঈমানের একটি অত্যাবশ্যকীয় দাবী। ইহা অন্তরের জন্য উপকারী এবং গন্তব্যের শেষ প্রান্তে পৌঁছার মাধ্যম। আল্লাহর ভয় প্রতিটি মানুষের জন্য ফরয। এটা পাপ, দুনিয়ার মোহ, অসৎসঙ্গ, আখিরাত সম্পর্কে ঔদাসীন্য ও নির্বোধ মানসিকতা পোষণ থেকে মানুষকে বিরত রাখে: আল্লাহ তা'আলা বলেন: আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই কেবল তাঁকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী ক্ষমাময়। (ফাতির : ২৮)

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে ক্রন্দন করা নবী-রাসূল, সাহাবী, তাবেঈ ও মুমিনদের বৈশিষ্ট্য। আমাদের উচিত এই গুণটি হাসিল করে ইহকাল ও পরকালে সাফল্য লাভ করা। মানুষের চোখের পানির মর্যাদা আল্লাহ তাআলার নিকট অনেক বেশি। তাই মানুষের উচিত তাঁর ভয়ে বেশি বেশি কান্নাকাটি করা। আল্লাহ তা’আলা দুনিয়াতে মানুষকে তাঁর সব বিধিবিধান মেনে চলার পাশাপাশি তাঁর ভয়ে বেশি বেশি কান্নাকাটির করার তাওফিক দান করুন। মানুষের মনে তাঁর ভয় ও মহব্বত সৃষ্টি করে দিন। আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ১:০৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×