পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, (এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনের ক্ষেত্রে) ১৩০ নটিক্যাল মাইলে যে ছেদবিন্দু ছিল, সেক্ষেত্রে দুইশ' নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত গমন সুবিধা পেয়েছি। সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে ঘিরে ২১৫ ডিগ্রি এ্যাঙ্গেলে দুইশ' নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বাংলাদেশ সমুদ্রসীমার অধিকার পেয়েছে বলে জানান তিনি। সমুদ্রসীমা নিয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের সালিশ নিত্তি করে এ রায় দেন জার্মানির হামবুর্গের ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনাল ফর দি ল অব দি সির (আইটিএলওএস) বিচারক হোসে লুই জেসাস। ট্রাইব্যুনালের দেয়া ১৫১ পৃষ্ঠার এ রায় চূড়ান্ত এবং এর বিরুদ্ধে আপিলের কোনো সুযোগ নেই।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আদালত সমদূরত্বের ভিত্তিতে ন্যায্যতাভিত্তিক সমাধান দিয়েছে। মন্ত্রী বলেন, এ মামলার নিত্তি হয়েছে দুই বছরের মধ্যে যেমনটি সমুদ্রসীমা বিরোধ বিষয়ক অন্য কোনো মামলার ক্ষেত্রে হয়নি। সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ নিত্তিতে ২০০৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর সমঝোতার ভিত্তিতে আইটিএলওএসে নিত্তির জন্য যায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। সমুদ্রসীমা নির্ধারণে বাংলাদেশ ন্যায্যতাভিত্তিক পদ্ধতি অনুসরণের পক্ষে হলেও মিয়ানমার এই ক্ষেত্রে সমদূরত্ব পদ্ধতি অনুসরণের পক্ষপাতি ছিল। সমদূরত্ব পদ্ধতি অনুসরণ করে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ হলে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হত, যদিও এই বঙ্গোপসাগরের মহীসোপান গঠনে বাংলাদেশের ভূমির অবদানই বেশি। বাংলাদেশ ট্রাইব্যুনালকে অনুরোধ করে দু'দেশের মধ্যে সমুদ্রসীমা ১৯৭৪ সালের দু'দেশের ঘোষিত সমুদ্রসীমা অনুযায়ী নির্ধারণ করে দেয়া হোক, যাতে ২০০৮ সালেও দু'দেশ সম্মত ছিল।
ন্যায্যতাভিত্তিক সমাধান
নিত্তি
তেল-গ্যাস সমৃদ্ধ বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের দীর্ঘদিনের সীমানা বিরোধ ২১ বনাম এক ভোটে
হয় ট্রাইব্যুনালে, বলা হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। বাংলাদেশের দুইশ' নটিক্যাল মাইলের এক্সক্লুসিভ জোন এবং মহীসোপান-পরবর্তী দুইশ' নটিক্যাল মাইলের দাবিকে রায়ে বৈধতা দেয়া হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের দাবি এখন স্বীকৃত এবং নিশ্চিত। ওই সীমানার মৎস্য সম্পদসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদে বাংলাদেশের তর্কাতীত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলো। দীপু মনি বলেন, এর ফলে এখন বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ এগুনো যাবে।
মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ রায়ের মাধ্যমে তেল-গ্যাস সমৃদ্ধ বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার দীর্ঘ দিনের অমীমাংসিত সীমানা চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হলো। দীর্ঘ ৩৮ বছর যাবত চলে আসা দ্বীপাক্ষিক আলোচনায় কোনো ফলপ্রসূ সমাধান না পাওয়ায় বাংলাদেশ ২০০৯ সালের ৮ অক্টোবর প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমারের বিপক্ষে আলোচ্য আইনি কার্যক্রমের সূচনা করে। তবে এ বিজয় দু'দেশেরই মন্তব্য করে জার্মানিতে অবস্থানরত পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এর মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক আইনের মধ্য দিয়ে সমাধান হলো। আইনি প্রক্রিয়ায় এ সমস্যার সমাধানে মিয়ানমারের সম্মতি এবং ট্রাইব্যুনালের রায় মেনে নেয়াকে আমি স্যালুট জানাই।
মিয়ানমারের দাবি অনুযায়ী, দেশটির সমুদ্রসীমা সরাসরি বাংলাদেশের উপকূলরেখা দিয়ে যায়। যার ফলে বাংলাদেশের সীমা কমে হয়ে যায় ১৩০ নটিক্যাল মাইল, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী যা হওয়ার কথা দুইশ' নটিক্যাল মাইল। এছাড়া মিয়ানমার বলেছিল, মহীসোপান-পরবর্তী দুইশ' নটিক্যাল মাইল সীমার রায় দেয়ার এখতিয়ার ট্রাইব্যুনালের নেই। এছাড়া সেন্টমার্টিন্স দ্বীপকে ছয় নটিক্যাল মাইল আঞ্চলিক সমুদ্র দেয়ার প্রস্তাব করে মিয়ানমার। ট্রাইব্যুনাল এ সব যুক্তিই বাতিল করে। মহীসোপান-পরবর্তী দুইশ' নটিক্যাল মাইল সীমার সমাধান করে ট্রাইব্যুনালের গতকাল বুধবার দেয়া রায়টি এ ধরনের সীমা বিষয়ে কোনো আদালত বা ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায়।