জোছনা রাতের গল্প
হেমন্তের এক তারাভরা রাতে সুজয় চোখ মেলে চাইল। কোন দিক ধরে এসেছিলাম ? নাহ, কোন দিকচিহ্ন নেই। থাকতে নেই। মরু কি কখনো পদচিহ্ন এঁকে রাখে ? নক্ষত্রের আলোয় দূর দিগন্তে অস্পষ্ট একটা আভা। এখানে সুজয়ের একটা বাড়ি ছিল। দেখতে ঠিক যেন একটা মিনার। বাড়িটাকে পেঁচিয়ে সাপের মত সিঁড়ি উঠে গেছে। বাড়ির পাশে একটা খেজুর গাছ। জানালা দিয়ে তাকালে একটা কুয়াশার রাত। উপরে নীল জোছনা। নিচে কাছাকাছি দূরত্বের প্রগাঢ়তা। অবশ্য এমন উতলা জোছনায় কাছে-দূরে, সরল-গরল কোনটাই স্পষ্ট বোঝা যায় না। সেই রাতটা আচমকাই একটা পাহাড়ের গায়ে ভীড়েছিল। রাত বেড়েছে। রাতের কাছে বেড়েছে ঘুমের দেনা। এমন ধূসর রাত যে আমার অনেক দিনের চেনা। সুজয় হাঁটছিল বন-পাহাড়ের আড়ালে আড়ালে। পাতার ফাঁকে বড় এক রূপার থালা। কালি পড়া। পাতাগুলো ঝির ঝির বাতাসে নড়ে উঠে রূপার থালার কলঙ্ক মুছতে চায়। সেই স্পর্শে চাঁদের ধুলি কুয়াশা হয়ে ঝরতে থাকে ধূসর পাহাড়ের বুক জুড়ে। সেই কুয়াশা চোখ ভিজিয়ে দেয়। ভেজা চোখে সব ভেজা দেখায়। ভেজা রাত, ভেজা ঘাস, ভেজা নক্ষত্রের কাছাকাছি সুজয়। দূর পৃথিবীর গন্ধে ভাসে উদাস তেপান্তর। উদাস চোখে বাড়িটাকে খুঁজছে সুজয়। দিগন্তের কাছে একটা অস্পষ্ট আভা।
বাড়িটার পাশে একটা গাছ ছিল। গাছটা নির্বাক চোখে তাকিয়ে থাকত। গাছটা জোছনায় ভিজত। গাছটা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকত। ধোঁয়ায় ধোঁয়ায় আকাশ গেল ছেয়ে। আঁধার এল আঁধার এল আলোর রেখা বেয়ে। জোছনার নীল আলোয় মন কেমন করত গাছটার। বাড়িটার গল্প পাহাড়টা শুনেছিল। অনেক মানুষ। অনেক মুখ। অনেক চোখ। এক জোড়া চোখ। একটা চশমা। রিমলেস ফ্রেম। নাহ, বাড়িটার দেখা নেই। বাড়িটার পাশে গাছটার পাশে সুজয় একবার এক জনকে খুব মেরেছিল। আশ্চর্য ! মারতে মারতে তার বয়স কমে যাচ্ছিল। সুজয় দেখল সে একটা লোককে না, মারছে একটা... নাহ, ... উঁহুঁ একটা শিশুকে ! একটা শিশুকে মেরে ফেলেছিল সুজয়। গাছটার মন খারাপ হয়ে যায়।
দিগন্তের কাছে অস্পষ্ট রেখা। বাড়িটার দেখা নেই। একি ! চাঁদ ! তুই কখন উঠলি বল তো ? এই মরুর বুকে একার সুখে কেমন আছিস বল তো ? যায় না মোছা খুব সহজে কলঙ্ক তার নাম। কিনে নিলাম তারেই দিয়ে হাজার রাতের দাম। সোনালী সোনালী গন্ধ। রূপালী আলোর রাত। সুজয়ের একটা বাড়ি ছিল। “এখানে এই ঘাসে হৃদয় ঢেকে নিয়ে ঘুচাব দ্বন্দের জয়ের ক্লান্তি। বলোনা কথা পাখি আস্তে ঝরো ফুল। ঘুমের রাত আসে শান্তি শান্তি।”

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




