মেয়েদের ধর্ষণ হওয়ার পেছনে নাকি অশালীন পোশাক দায়ী। এই কথাটা আমি একদমই মানতে পারিনা। কোন যুক্তি খুঁজে পাইনা মানার। কিন্তু চারপাশের অনেক মানুষ পুরুষের পাশাপাশি কিছু নারীদেরও এই অন্ধযুক্তি যে ধর্ষণ হওয়ার কারন কি?
"নিশ্চয়ই মেয়েটার জামা কাপড় ঠিক ছিলনা।"
আসলেই কি তাই? চারপাশে যত ধর্ষণের ঘটনা আমরা দেখতে পাই তার মধ্যে কয়টি "অশালীন পোশাক" এর কারনে হয় এটা একটা চিন্তার ব্যাপার বটে। সংক্ষেপে কিছু প্রশ্ন করব, ভেবে দেখবেন।
১। যখন ৫ বছর বয়সের একটা মেয়ে ধর্ষিত হয় তখন তাকে আপনারা কি বলবেন যে ঐ মেয়েটির যৌবন অকালেই এতটাই পেকে গেছে যে তাকে ধর্ষক ধর্ষণ না করে পারেনি?
২। যখন ৫০ বছর বা তারও উপরের বয়সের মহিলা কে ধর্ষণ করা হয় তখন আপনি কি বলবেন যে এই বুড়ি যৌবন রস এই বয়সেও কমেনি যার আকর্ষণে ধর্ষক তাকে ধর্ষণ করতে বাধ্য হয়েছে?
৩। মুক্তিযুদ্ধের সময় এদেশের অসংখ্য মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। শুধু এদেশে কেন, সব দেশেই যুদ্ধের পরপর বা পাশাপাশি পরাজিত বা অপেক্ষাকৃত দুর্বল দেশের মেয়েদের ধর্ষিত হওয়া একপ্রকার সাধারণ একটা ঘটনা। ঐ মেয়েরা বোরকা পরে চলুক বা না চলুক। এটাকে কি বলবেন? ঐ মেয়েদের রুপ যুদ্ধকালিন সময়ে এতই বেড়ে গিয়েছিল যে সৈনিকরা নিজেদের সংবরণ করতে পারেননি, এই তো?
৪। শুধু মেয়েরা নয় ছেলেরাও কিন্তু ধর্ষিত হয়। "ঘেঁটু পুত্র কমলা" চলচ্চিত্রটি এদেশেরই আবহমান কাল থেকে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে তৈরি হয়েছিল। সেক্ষেত্রে আপনারা কি বলবেন? ঐ ছেলেটির মধ্যে মেয়েলি ভাব এতই তীব্র যে ধর্ষকের আর তর সয়নি?
আরও উদাহরণ দেয়া যায় চাইলে। উপরের ঘটনাগুলোতে কোথাও কিন্তু পোশাক আশাকের কারনে ধর্ষণ হয়নি। হয়েছে ধর্ষকের অসুস্থ মানসিকতার জন্য, প্রতিহিংসাপরায়নতার জন্য, বিকৃত মনোবৈকল্যের জন্য। আর যেসব মেয়েরা ধর্ষিত হয় তাদের কয়জন আসলেই অশালীন পোশাক পরে আগে খোঁজ নিয়ে দেখুন। চোখ কান বন্ধ করে একটি মাত্র খোঁড়া যুক্তি প্রলাপের মত আওড়াতে থাকবেন না।
কীভাবে কিছু মানুষ ধর্ষিতা একটা মেয়ের দোষ খুঁজে বেড়ায় আমি বুঝিনা। এরা কি আসলেই মানুষ? এদের নিজেদের মা, বোন, বন্ধু, প্রেমিকা বা কাছের কেউ যদি এমন হত তখন সে কী বলত? মাঝে মাঝে এই অসুস্থ ইচ্ছাটিও আমার হয়।
ধর্ষণকে যেকোন ভাবে যারা সমর্থন করার জন্য যারা যুক্তি দেখায় বা দেখানোর চেষ্টা করে তারা ধর্ষকের চাইতে কম অসুস্থ নয়। কোন ধর্ষণই যৌন উত্তেজনা নিবৃত করার জন্য করা হয় না, এটা অন্য একটা মানুষকে যন্ত্রনা দিয়ে, কষ্ট দিয়ে পাশবিক এক আনন্দ পাবার জন্য করা হয়। এটা এক প্রকার অসুস্থতা। যৌনতা এখানে কোন কারন না। পাশবিক বলা ভুল হল কারন কোন পশু আরেক পশুকে ধর্ষণ করে না যেভাবে মানুষ মানুষকে করে।
একটা মেয়ের পূর্ণ স্বাধীনতা আছে সে কী পড়বে কীভাবে পড়বে। তাকে অশালীন কিছু পড়তে দেখলেই তাকে উপুড় করে সাথে সাথেই এফোঁড় ওফোঁড় করতে হবে এই অধিকার কিন্তু কোন মানুষের নেই। একটা নগ্ন দেহের সুন্দরী মেয়েকে দেখে যদি কোন ছেলের উত্তেজনা হয়, তাতে সমস্যা নেই, সমস্যা হল উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে সেই মেয়েকে যদি কেউ ধর্ষণ করতে চায় বা করে সেখানে। সমস্যা সেই ছেলের যে তার দুই পায়ের মাঝের অঙ্গের উত্তেজনা সংবরণ করতে না পেরে দিগ্বিদিক জ্ঞ্যান হারিয়ে মস্তিষ্ক বিলুপ্ত প্রাণীর ন্যায় মেয়েটাকে ধর্ষণ করার চিন্তা করে বা ইচ্ছা পোষণ করে। এখানে মেয়েটার কোন দোষ নেই। মেয়েটার যদি দোষ থাকেও যে কাপড় কম পরেছে তা এত বড় নয় যে তাকে ধর্ষণ করতে হবে। এই যুক্তি যারা দেয় তারাও ধর্ষকের মতই অসুস্থ বিকৃত মস্তিষ্কের অধিকারী।
নারীই হোক আর পুরুষই হোক আমরা যে প্রথমে একজন মানুষ এটাই আমাদের বড় পরিচয় এটা আমরা বেশিরভাগ সময়ই ভুলে যাই। তবে আমি আশাবাদী কিছু মানুষদের নিয়ে যাদের মধ্যে আমার কিছু ভাইয়েরাও আছেন যারা নিজেরা পুরুষ এই পরিচয়ের চাইতে বেশি তারা যে মানুষ এটা মনে রেখেছেন। স্যালুট আপনাদেরকে।
মানব প্রজন্মের একটি অংশ নারী ও একটি পুরুষ। তুলনামূলক ভাবে নারীরা অনেকাংশে এখনও অবহেলিত। কাজেই তাদের সচেতনতার পাশাপাশি যদি পুরুষরাও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় তবেই সম্ভব একটা সুন্দর আগামি পৃথিবীর সৃষ্টি হওয়া। যেখানে একটা মানুষের ধর্ষণ হওয়ার কথা কেউ কোনভাবেই "যৌক্তিক" প্রমান করার চেষ্টা করবে না, কারন তারা জানবে এটা সবদিক থেকে একটা মানুষের প্রতি আরেকটা অসুস্থ মানুষের অন্যায়। আর এই অসুস্থতার জন্য শাস্তির পাশাপাশি চিকিৎসাও দরকার।
শুধু নারী বা পুরুষ নয়, মানুষ হোন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


