somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুখ, স্বপ্ন - এখনো আছে 'ছোটলোকের' ঘরে...

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১০:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সিগারেটে টান দিতে দিতে রিকশায় উঠে বসলাম। সবার শুনি শেষের দিকে সুখটান দিতে ভালো লাগে, আমার অর্ধেকের পরে তেতো লাগে। ফল হলো মুখটা এক্টু বিরক্ত হয়ে ছিলো। সেটা দেখেই কিনা জানিনা, রিকশাওয়ালা এসে বল্লো - স্যার, মনে কিছু নিয়েন না। চায়ের অর্ডার দিয়া দিসিলাম, তাই আপনারে বসায় রেখেই খালাম।

আমিঃ ঠিক আছে, চলেন এইবার।

তড়িঘড়ি সে রিকশা ছাড়লো। সিগারেটের শেষের তেতো টানটা দিয়ে দেখলাম ফিল্টার পুড়ি-পুড়ি করছে, তাই ফেলে দিলাম। মোবাইলটা বের করে দেখি প্রায় রাত সাড়ে দশটা বাজে।

আমিঃ আপনার রিকশায় বসতে খুব আরাম...
রিকশাঃ জি স্যার, কুমিল্লা বডি। ২৫ হাজার টাকা লাগসে বানাইতে। আজ ১ মাস হইলো ঢাকা নিয়া আসছি। সেই সকালে বারাইছি রিকশা নিয়ে।
আমিঃ এতো টাইম ধরে রিকশা চালান, তাইলেতো আপনার অনেক ইনকাম!
রিকশাঃ হে হে। সকালে বারাইছি, সারাদিন কিছু খাইনাই। এখন আর পারতেছিলাম না। তাই খালাম।
আমিঃ আপনার যে কাজ, ঠিক মতো না খাইলেতো পারবেন না।

রিকশাওয়ালা পেডেল মারে আর অনেকটা আপন মনেই বলতে থাকে - মা ডা অসুস্ত, টিউমার হয়েছে, পেডে পানি জমে। এইবার ঢাকা নিয়া আইসছি। ঢাকায় বড় বড় ডাক্তার, চিকিৎসা করালে ভালো হয়ে যাবে। দেশে গেসি, তা মা বলে, "বাবা আমারে ঢাকা নিয়া চিকিৎসা করা।" শুনছি টিউমার বেশি দিন থাকলে নাকি ক্যান্সার হয়া যায়, তখন লাখ টাকা লাগবে চিকিৎসা করতে। তাই মা ডারে নিয়া আইলাম।

এবারে সে কিছুটা সময় নীরবে রিকশা টানতে থাকে।

আমিঃ আপনার রিকশা কি নিজের?
রিকশাঃ জি স্যার।
আমিঃ কোথায় যাবেন এখন রিকশা নিয়ে? (হয়তো শুনতে পেলো না)
আমিঃ আপনি থাকেন কোথায়?
রিকশাঃ গোরান।

রিকশা চলছে, শীতের রাতে এই সাড়ে দশটাতেই সমস্ত রাস্তাঘাট শুনশান! চলতে চলতে ঠিক আগের সুরেই সে আবার বলতে শুরু করে-
মায়েরে একটা কিলিনিকে বর্তি করাইছি। দালাল ধরসি। অনেক বড় ডাক্তার দিয়া চিকিৎসা করাইতেছে। পরশু বলছে কালকের মধ্যে ৩ হাজার টাকা লাগবে। তাই সকাল সকাল রিকশা নিয়া বারাইছি। এখনো সাড়ে বারোশ টাকা লাগবে, তাই সারাদিন খাইনাই, এখন খালাম। টাকা না দিতে পারলে দালাল ভালো ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা করাবেনা।

আহা! কথা গুলো শুনে এত খারাপ লাগলো! আবার এও মনে হলো - সিনেমাতে যা দেখি তা সবাই গল্প বলে, কিন্তু এর কথাতো সিনেমার মতোই। আবার এও ভাবলাম, মা কে সবাই কতইনা ভালবাসে! কিন্তু এর ব্যাপারতো একটু অন্যরকম - না খেয়ে আছে কিছু টাকা বাঁচাবে বলে!

রিকশাঃ মার চিকিৎসাটা ইনশাল্লা হলে সাথে সাথে আমার এই বাম পায়ের গোড়ালিটাতেও অপারেশেন করাব। (দেখি আসলেই ও যায়গাটা ফুলে আছে) পেডেল মারতে গেলে টান পড়ে। কাজ করেতো খেতে হবে।
আমিঃ আপনার পায়ের এই অবস্থা হলো কেমনে?
রিকশাঃ আরেক রিকশায় লেগে পা কাটি গেসিল। এই ফুলে ঢোল হয়ে গেসেলো। এখনো পেডেল মারতে টান লাগে। স্যার আমার মায়ের জন্যি দোয়া করেন। মা ডা সুস্ত হয়ে গেলে আর চিন্তা নাই ইনশাল্লা। আল্লাহ ভালই রাখবে।
আমিঃ আপনি কি আজকে আরো রিকশা চালাবেন?
রিকশাঃ সাড়ে বারোশ টাকা লাগবে, আর দুইটা ক্ষেপ মারব। কালকে আবার সকালে বারাব। বিকালে দালালরে টাকা দিতে হবে। মা ডা সুস্ত হয়ে গেলে চিন্তা নাই, আল্লা ভালই রাখবে ইনশাল্লা।

এতক্ষণে বাসায় এসে গেছি। মানি ব্যাগ থেকে দশ টাকা বের করে ভাড়া দিলাম। তারপর কি মনে করে ১শ টাকার একটা নোট বের করে হাতে দিয়ে বললাম - এটা আপনার মা'র জন্য।

টাকাটা হাতে পেয়ে তার যে অভিব্যক্তি দেখলাম, আর কিছুর সাথে তার তুলনা হয়না।

রিকশাঃ আমার মার জন্যে দোয়া করবেন স্যার। আর সাড়ে এগারশ টাকা লাগবে। (তার চোখ চক-চকে)
আমিঃ আমার জন্যও দোয়া করবেন।

একথা বলে কেন জানি না, চোরের মত দ্রুত পালিয়ে এলাম। নিজেকে অনেক ক্ষুদ্র মনে হতে লাগলো - একশো টাকা দিলাম! আমি ওই লোকটাকে মাত্র একশো টাকা দিলাম! সকালে বাসা থেকে বের হয়ে ১১০ টাকা দিয়ে বেন্সন কিনে সারাদিন শেষে বাসায় ফেরার সময় কিনে নেই আর পাঁচটা। ১৩০-১৪০ টাকা যেখানে ধোঁয়া করে উড়িয়ে দিচ্ছি প্রতিদিন!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১১:১৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×