গতকাল তথা ১০ ডিসেম্বর, ২০১০ তারিখে রাত সাড়ে নয়টা নাগাত রোমান এর মামা যখন রোমানের মা'র শোবার ঘরের জানালার কোবাট লাগাচ্ছিলেন তখন রোমানের মা বারবার তার ভাইকে নিষেধ করছিলেন জানালার কোবাট লাগানোতে। কেননা তাঁর একমাত্র ছেলে রোমান জানালা দিয়ে তাঁর কাছে আসবে। জানালার কোবাট আটকানো থাকলে তাঁর (মা'র) ছেলে রোমানের পক্ষে তাঁর কাছে আসা সম্ভব হবে না, এই-ই মায়ের আহাজারি।
মো: রোমান, ২৩ বছরের ছুটে চলা এক যুবক, গতকাল সকাল পৌনে ৭টায় ঢাকা মেট্রোপলিটান হাসপাতালে তার শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেছেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত (২০ দিন যাবত) হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করেছে রোমান। একটি মোটর সাইকেল এক্সিডেন্টে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে জ্ঞান হারায় রোমান এবং সেই জ্ঞান আর তার ফিরে আসে নাই। বিজ্ঞ ডাক্তারগণের প্রানান্তকর প্রচেষ্টা আর মা-বাবাসহ আত্মীয়-বন্ধু-বান্ধব সকলের দোয়াকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মৃত্যু তাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে এ পৃথিবীর সকল মানুষের কাছ থেকে।
রোমানকে কবরে শুইয়ে দিয়ে তার ওপর মাটি দিয়ে ভরাট করে আল্লাহর কাছে ছেলের জন্য দোয়া করে রোমানের বাবা বাড়িতে ফিরে আসেন তাঁর বন্ধু আর অন্য অনেকের সাথে। এবং এর অব্যহতিকালে সে (বাবা) শুধু বলতে থাকেন আইসিইউতে তাঁর ছেলের অনেক কষ্ট হয়েছে। তাঁর চারপাশে এত এত মানুষ থাকার পরেও তাঁর মনে হতে থাকে সে নি:শ্ব এবং অসহায়।
তারও আগে রোমানের মৃত্যু সংবাদ শোনার পর তার শ্বাশুরি ডুকরে কাঁদতে থাকেন হাসপাতালে (উপস্থিত অন্যান্য মানুষের সামনেই)। তাঁর এই কান্না কেউ সহজভাবে নিক বা না নিক, এতে কেউ বিরক্ত ইউক বা না হোক তাতে তাঁর কিছু যায় আসে না।
এবং ঠিক একইভাবে কাঁদতে থাকেন রোমানের মামাগণ, স্ত্রী, বোন আর বন্ধু-পরিজন।
(মৃত্যুর কোন সময় অসময় নেই। তাই বলে কি এমনভাবে...!
যে অসাবধানতা (একসিডেন্ট এর সময় রোমানের মাথায় কোন হেলমেট ছিল না) এই ঘটনার সাক্ষী হয়ে থাকল, তা কারোই আপন নয়, বরং ধ্বংসকারী। আর এইখানেই মানুষের প্রচেষ্টা আর সাবধানতার বোধ।)