somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক টুকরো ৭১'

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

- স্যার , উ শুয়ার কা বাচ্চা একটা বহুত বড় কুত্তা হ্যায় ,
- স্রেফ ও নেহি , তুম শালা সাব বাঙ্গালী কুত্তা হ্যায় ;
- না স্যার , না স্যার ! আমি বাঙ্গালী নেহি হ্যায় স
্যার । আমিতো সাচ্চা পাকিস্তানী হ্যায় , সাচ্চা মুসলমান হ্যায় স্যার
- ইসিলিয়ে সাব মুক্তিকো ভাগাদিয়া ? (মেজর এজাজের গলায় স্পষ্ট রাগের আভাস)
- নেহি স্যার ; আমি নেহি ভাগায়া , কেমনে জানি উলোগ আগে আগে সব জানগেয়া , তারপরে আগে আগে ভাগ গেয়া
!

রউফের বাংলা মিশ্রিত ভুলভাল আর বিরক্তিকর উর্দু শুনে রেগে গিয়ে তার মুখের উপর একদলা থুথু ছুড়ে দিলো মেজর এজাজ আহমেদ । আর রউফ মিয়া ?
যেন কিছুই হয়নি এমন একটা ভাব ধরে হাসি হাসি মুখ করে চেহারার উপর লেপটে থাকা থুথু মুছে নিলো !

এর খানিকটা পরই কি জানি একটা ভেবে মেজর এজাজ হেসে ফেললো , এরপর বলল ,
- তুম সাচ্চা পাকিস্তানী হ্যায় ?
- জ্বি , জ্বি ! জ্বি স্যার ! একদম এত্তোবড় সাচ্চা পাকিস্তানী হ্যায় স্যার (দুই হাত যথেষ্ট পরিমাণ প্রসারিত করে)
- তো ফের আপনা হাত আগে কারো

চাতক পাখি যেমন মেঘের আশায় থাকে , রউফও যেন ঠিক এই আদেশের আশাতেই ছিল । একেবারে বলবার সাথে সাথেই দুই হাত এগিয়ে দিলো মেজর এজাজের সামনে , এবং কিছু বুঝে উঠবার আগেই পুর্বের চেয়েও কিছু বেশী পরিমাণ থুথু তার হাতের উপর ছুড়ে দিলো এজাজ ; আর তার দিকে তাকিয়ে একটি খুবই সহজ ইঙ্গিত দিলো সে , যার অর্থ , “এই থুথুগুলা খা”............

রউফের উপর মেজর এজাজের এভাবে রেগে যাবার কারণটা খুবই স্বাভাবিক । সেদিন তার কথামতোই ১৮ জন মিলিটারির একটি দল নিয়ে মুনশি ইদ্রিসের বাড়িতে হানা দিতে গিয়েছিলো এজাজ । রউফের তথ্য অনুযায়ী ওই বাড়িতে কমপক্ষে ৫-৭ জন মুক্তিযোদ্ধা থাকবার কথা । কিন্তু বাড়ির ভেতর ঢুকেই দেখা গেলো সব ফাঁকা । কোথাও কেউ নেই । হয়তো তাদের চকমা দিয়ে মুক্তিরা অনেক আগেই পালিয়েছে কিংবা রউফের তথ্য ভুলও হতে পারে । আবার এদিকে পুরো বাড়ি খোঁজাখুঁজি করে বেরিয়ে আসবার সময় হঠাৎ ধুম করে তাদের একটা জীপ উড়ে গেলো । পুরো দল ছন্নছাড়া হয়ে গেলো । তবুও জোয়ান বেশী থাকাতেই একটু রক্ষা । তাল সামলে নিতেই এজাজ খেয়াল করলো এতজনের মাঝে রউফ উধাও !

- রউফ কো ঢুনডো , শালা গাদ্দার
- না না স্যার , আমি গাদ্দার নেহি হ্যায় স্যার , এইতো আমি আগেয়া (লুঙ্গি ঠিক করতে করতে হাজির হল রউফ) স্যার মেরা বহুত জোরসে পায়খানা আয়াথা স্যার । বহুত জরুরি থা স্যার.........
এই হল ঘটনা ।

সেদিনের ঘটনার পর তিনদিন রউফ আর্মি ক্যাম্পের ত্রিসীমানায়ও এলো না । চতুর্থ দিনে দুই বগলে দুটি মুরগি আর গলায় দড়ি দেয়া একটা আস্ত খাশি নিয়ে ফের হাজির হল মেজর এজাজের সামনে ।

- স্যার , আপকে লিয়ে এই অধমের একটুখানি তোফা ।
- হুম
- উস দিন কে লিয়ে আমারে মাফ করি দেন স্যার (কাচুমাচু করে বলল সে)
- হুম । লেকিন স্রেফ এইসে মাফি নেহি মিলেগা ।
- স্যার মুঝে মাফ করি দেন স্যার , ও স্যার , স্যার , মুঝে নেহি মারেঙ্গে স্যার , আমি সাচ্চা পাকিস্তানী হ্যায় স্যার......... (ইতোমধ্যেই কাঁদতে কাঁদতে এজাজের পায়ের বুটে নাক ঘষতে শুরু করেছে রউফ)
- ঠিক হ্যায় , তুমহে মাফ কারেঙ্গে ; পেহলে হামারি খিদমত কারনেকে লিয়ে কোয়ি সুন্দারসি , পেয়ারিসি লেড়কি লেকার আও
- জ্বি স্যার , জ্বি স্যার , জ্বি স্যার ! (রউফের চোখ একশো ওয়াটের বাল্বের মতো করেই জ্বলে উঠলো) আইজকাই পিয়ারি পিয়ারি মাইয়া লেকার আসবো স্যার । এখন আমি যাই ? (৩২টি দন্ত বিকশিত করে...)
- হুম । যাও । অউর হামারি পেয়ারি পেয়ারি ফুল , আজ রাত তাক আ জানা চাহিয়ে
- জ্বি স্যার ! জ্বি স্যার ! আইজ রাইতেই আয়া পড়বো (এজাজকে কুর্নিশ ধরণের ভঙ্গিতে সালাম ঠুকতে ঠুকতে বেরিয়ে গেলো রউফ)

পরের দিন দুপুরে হাঁপাতে হাঁপাতে ক্যাম্পে আসলো রউফ । এজাজের জন্য কোন সুন্দরী মেয়ে তো আনেই নি , বরং রাবেয়াদের কুকুরের তাড়া খেয়ে বাঁশের গোঁড়ার সাথে খোঁচা লাগিয়ে নিজের লুঙ্গীর কিয়দংশ ছিঁড়ে এসেছে ।

- স্যার ! স্যার ! বহুত জরুরী খবর আছে স্যার
- ?
- স্যার , রেল বিরিজ স্যার , রেল লাইনের বিরিজ
- কেয়া বাত হ্যায় ? বাতাও
- স্যার , মুক্তির দল , বিচ্চু বাহিনী হ্যায় , উলোগ রেল লাইনের বিরিজে বোম মারেঙ্গা , উরাই ফেলেঙ্গা
- What ?
- জ্বি স্যার । আমি সাচ্চা বোলতা হ্যায় , আইজ রাতেই বোম মারেঙ্গা , আপকে লিয়ে পিয়ারি মাইয়া আনতে রাবিয়াগো বাড়িত গেয়া থা স্যার । ওইখানে আমি নিজের কানে চুরি কইরা শুইনা আয়া স্যার
- হুম ; very good রউফ ! তুম সাচ্চা পাকিস্তানী হ্যায় । ইসকে লিয়ে তুমহে ইনাম মিলেঙ্গা । (রউফের সাথে ভালোভাবে কথা বললেও এজাজের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম ঠিকই স্পষ্ট হতে লাগলো)
- স্যার ইনাম নেহি লাগেগা স্যার । আগে হামারা পাকিস্তান বাচাইতে হইব । এখুনি বাইর হউন লাগেগা স্যার ।
- চুপরাও
(রউফের বিরক্তিকর ভাষায় এজাজের মাথার সবকিছু জটলাতে লাগলো ; একেতো রউফ পাগলার কথায় দুইবার অপারেশন করতে গিয়ে প্রতিবারেই ১২-১৪ জন করে জোয়ান , অনেক গোলা-বারুদ আর তিনটা জীপ শেষ হয়ে গেলো ; এদিকে আজকে রাতের ট্রেনে নতুন জোয়ান আর বেশ কিছু গোলা-বারুদ আসবার কথা ছিল , তাও আবার মুক্তিরা মেইন ব্রিজ উড়াবার প্ল্যান করেছে । অন্য কোন খবর হলে এজাজ আজকে রউফ মিয়ার মাথাই বুঝি কেটে ফেলত ; কিন্তু যেহেতু ব্রিজের ব্যাপারটা আছে , তাহলে অবশ্যই এটি ভুল নয় । রউফ পাগল ধরণের মানুষ হলেও পাকিস্তানকে যে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে তার কথা-বার্তাতেই এর স্পষ্ট প্রমান পাওয়া যায় । যদিও ওর কথামতো কোন সফল অভিযান এখনো হল না ; মনে মনেই একটু করে হেসে নিলো এজাজ)

- স্যার , কি চিন্তা করলেন স্যার ?
- মুক্তিলোগকি অপারেশন রাতকো হ্যায় । ইসকে পেহলে হাম অপারেশন মে জায়েঙ্গে , হুম !
(সামনের টেবিলে জোরে একটা কিল দিলো এজাজ । ছোট্ট একটা পরিকল্পনা এর মধ্যেই করে ফেলেছে সে ; যেহেতু ক্যাম্পে জোয়ানসংখ্যা কম , তার উপরে বর্ষার সময় । এদিকে টেলিযোগাযোগও মুক্তিরা নষ্ট করে দিয়েছে , আবার দিনে দিনে নতুন জোয়ান আসতেও পারবে না । তাই সফল কিছু করতে হলে মুক্তিদেরকে ওদের মতোই গেরিলা পদ্ধতিতে শেষ করতে হবে )
- চিন্তা করন লাগবো না স্যার । জঙ্গল দিয়া একটা রাস্তা হ্যায় স্যার । আমি চিনি স্যার । দিনে দিনে ওইখানে পৌছাই যায়েঙ্গে স্যার , তারপরে আগে থেইকাই পজিশন লেঙ্গে স্যার । মুক্তিরা বোম লাগাইতে আইলেই হামলা করেঙ্গে স্যার
- Right (আবারও হাতে কিল দিয়ে...) !!!!!

এজাজ মনে মনে সব অংক করে ফেলেছে । সবকটি মুক্তিকামী বিচ্ছুকে সে পায়ের তলায় পিষবে আজ ।

কিন্তু ব্যাপারটা অতোটা সহজ হল না । রউফের কথামতো জঙ্গল দিয়েই হেঁটে যেতে হবে তাদের ; আর তাই জঙ্গলের শুরুতেই মাত্র হাতে গোনা ১০-১২ জন জোয়ান নিয়ে জীপ থেকে নেমে হাঁটা শুরু করতে হল এজাজকে । এইবারে সে রউফকে তার হাতের কাছ থেকে কোনভাবেই নড়তে দেবে না , প্রতিবারই বিপদের সময় গায়েব হয়ে যায় ! এর জন্যই তো জীপ থেকে নামবার পরপরই তাকে জরুরী ভিত্তিতে পায়খানা করবার জন্য পাঠিয়ে দিয়েছিলো দূরে এবং অনেকক্ষণ দেরিতে ফিরে আসাতেও তাকে কিছুই বলেনি এজাজ । এবার হাঁটা , শুধুই হাঁটা ।

বৃষ্টি বাদলার দিন , পশ্চিম পাকিস্তানে এসব খুবই অনাকাংখিত । বৃষ্টি বলতে গেলে হয়ই না । এর মাঝে এই কাদায় ভরা নোংরা জঙ্গল দিয়ে হাঁটা , যতোই সময় যায় , এজাজ ততোই বিরক্ত হয়......

এজাজের ফুলহাতা খাকি শার্টের হাতা ফোল্ড করা ছিল । জঙ্গলের মধ্য দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ এজাজ লক্ষ্য করলো তার বা’হাতের কব্জির কাছাকাছি কালো ধরণের মাংশল কিছু একটা লেগে আছে , সেখান থেকে আবার টপটপ করে রক্তও পড়ছে !

- রউফ ????? ইয়ে কেয়া হ্যায় ?
- ও , স্যার ! (এজাজের হাতটা খুব কাছ থেকে দেখে বলল) এইটাতো জোঁক হ্যায় স্যার !
- joke ? what kind of joke ? (ততক্ষণে রাগে অন্ধ হয়ে গেছে এজাজ)
- শুধুই কি কাইন্না আঙ্গুলের সমান জোঁক স্যার ? কতো রকমের জোঁক হোতা হ্যায় স্যার !
(রউফের চোখ ততক্ষণে বড় বড় হয়ে গেছে ; সে যেন কোন ছোট বাচ্চাকে রুপকথার অদেখা দৈত্যের বর্নণা দিচ্ছে) সাচ্চা স্যার ! অনেক রকমের জোঁক হোতা হ্যায় স্যার , কতো রকমের দেখতে ! লেকিন সবগুলান জোঁকই একই রকম হোতা হ্যায় স্যার , রক্ত খাই ফেলতা হ্যায় স্যার , কিন্তুক কেউ নেহি জানতা হ্যায় স্যার । আরও কতো জোঁক দেখেঙ্গা স্যার ! কতো জোঁক দেখন বাকি হ্যায় স্যার ! এইডাতো মনে করেন কিছুই না !
- !!!!!!!!!!!!!!
(এজাজ অবাক হয় ! সে ভেবে পায় না একটা মানুষ এতো কথা কি করে বলে ! সে ঠিক করে রেখেছে আজকের অপারেশন শেষ করবার পরপরই এই রউফ মিয়াকেও টুটি চেপে ধরে শেষ করে দেবে । বড় জ্বালায় ! বড়ই যন্ত্রণা দেয় ! )

বর্ষার দিন বলেই হয়তো সময়ের আগেই আবছা অন্ধকার হয়ে গেছে চারদিক , আবার জঙ্গলও ঘন হয়ে আসছে । এদিকে রউফের কথামতো চোরা রাস্তা ধরতে গিয়ে এতক্ষণেও ব্রিজের কাছে যাওয়া গেলো না ।

- পূর্ব পাকিস্তানে বহুত ঝড়বৃষ্টি হোতা হ্যায় স্যার ! বিকালে বিকালে আন্ধার হই যাতা হ্যায় স্যার , কিছু দেখা নেহি যাতা হ্যায় স্যার । আন্ধার বহুত খারাপ জিনিস স্যার । আন্ধারে ডর লাগতা হ্যায় স্যার । আমি শুনছি মুক্তিরা আন্ধারে আন্ধারে জঙ্গলে জঙ্গলে লুকাই কাম করতা হ্যায় স্যার । বহুত বিচ্চু হোতা হ্যায় স্যার । বহুত কুত্তা হোতা হ্যায় স্যার , মনের মইধ্যে ডর নামের কুছভি নেহি হোতা হ্যায় স্যার , কাউরেই ডরায় না , দেশরে মায়ের চাইতেও বেশী ভালোবাসে , দেশের লাইগা নিজের জীবনও দিতে পারে । তুমরা কতো অত্যিচারই না করলা ; চউখ উপড়াই নিলা , হাত-পাও কাইটা নিলা , ভূরি বার কইরা দিলা...... তবুও হেরারে দমাইতে পারলা না ! আরে তুমরাতো শালা বেতন আর মেডেল এর লাইগা চাকরি করতে এইহানে আইছ , যুদ্ধ করতাছ , আর আমরা নিজের দেশরে বাচাইতে যুদ্ধ করতাছি , দ্যাশ কি জিনিস তুমরা কেমনে জানবা ?
- ?????

এজাজ খেয়াল করলো রউফ হঠাৎ করেই বাংলায় কথা বলছে , যার অনেকখানির অর্থই সে ধরতে পারছে ! তার গলার স্বরও পালটে গেছে , কেমন যেন গম্ভীর হয়ে কথা বলছে সে ! এজাজ তড়িৎ সিদ্ধান্ত নিলো , ব্রিজ ভেস্তে যাক ; এখুনি সে রউফকে শেষ করে দেবে ! শুরুতেই ওর জ্বিভ কেটে নেবে এজাজ । ভেবেই সে পেছনে জওয়ানদের দিকে তাকালো ;
কিন্তু একি ? এরা কারা ?

কি আশ্চর্য ! এজাজ ভাল-মন্দ কিছু ঠিক করে বুঝে উঠতে পারে না । তার পেছনে সাত আটজন মুক্তি দাঁড়িয়ে । হাতে রাইফেল , রাইফেলের সামনে লাগানো বেয়নেট থেকে টাটকা রক্তের ফোঁটা টপটপ করে পড়ছে ! এজাজের বুঝতে কষ্ট হল না যে এ রক্ত তাদেরই জওয়ানদের রক্ত ; রউফের বাচলামি শুনতে শুনতে এগুচ্ছিলো সে , আর পেছনেই মুক্তির দল এই কাজ করে ফেলেছে ! নীরব জঙ্গল হঠাৎ আরও নীরব হয়ে গেলো ।

জঙ্গলে জমে থাকা পানিতে ছপছপ শব্দ করে রউফ গিয়ে দাঁড়ালো মুক্তি দলের সামনে । অন্ধকারের মাঝেও এজাজ যেন দেখতে পেলো রউফের চোখ জ্বলজ্বল করছে । তার কাছে মনে হল এ অন্য কেউ , অন্য কোন রউফ ! কি ভয়ঙ্কর তার চাহনি ! কি থমথমে চেহারা ! এখুনি বুঝি হা করলে বাঘের মতো দাঁত বেরিয়ে আসবে !
এইতো কিছুক্ষণ আগের কথা ! স্যার স্যার করতে করতেই মুখে ফেনা তুলে ফেলছিল সে !

ততক্ষণে এজাজের চারপাশ ঘিরে ফেলেছে মুক্তিরা । বৃত্তের কেন্দ্রে শুরু রউফ আর এজাজ !

- এই জোঁকডারেও দেইখা নে
(এজাজ শুধু একটা শব্দই উচ্চারন করতে পারলো)
- গাদ্দার !!!!!!!!!!
- হ আমি গাদ্দার ! হের লাইগা তুই আমারে কুনু শাস্তিও দিতে পারবিনা । কিন্তুক নিজের দ্যাশের লগে গাদ্দারির শাস্তি ??????? গোলার বগি আগেই লুট করছি । নতুন সৈন্য আনতে চাইছিলি , তারারেও আগেই শ্যাষ করছি ।

এজাজের এখন ঠিক বুঝতে পারছে এতদিন ধরে রউফ কিভাবে পুরো গ্রামটাকে রক্ষা করে এসেছে । সে একটুও বুঝতে দেয়নি কিছু । অযথা মুক্তি ধরিয়ে দেবার নাম করে করে কতগুলো জোয়ান শেষ করে দিলো । গ্রামের মেয়ে ধরে আনবার নাম করে নিয়ে গিয়ে আজকেইতো সে ৫ জন জোয়ান ফেলে দিয়ে নিজে অক্ষত অবস্থায় এসেছে । তবুও এজাজ কিছুই বুঝল না ! পাগল সেজে থাকা রউফ ; দুপুরেইতো সে কতো দক্ষতার সাথে এজাজকে রাতের অপারেশনের প্ল্যান করে দিলো । তখনো সে এটুকুনও খেয়াল করে নি ? এজাজের শেষ ভুলটা ছিল হয়তো জঙ্গলে এসে জীপ থেকে নেমে রউফকে দূরে পাঠানো !!!!!!

৬৫’র ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে বীরত্বের জন্য গোল্ড মেডেল পাওয়া পাকিস্তানী আর্মি অফিসার এজাজ আহমেদ ; এই নিরক্ষর-গ্রাম্য-বন্য দেশপ্রেমীদের সামনে আজ তার নিজেকে বড়ই বোকা মনে হতে লাগলো ।

দেশপ্রেম ! কি সাংঘাতিকই না হয় এই দেশপ্রেম ! এই যে স্টেনগান হাতে এজাজের সামনে খালি গায়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটা ; বয়স আর কতোই বা হবে , খুব বড়জোর ১৬-১৭ ; মাথায় ময়লা কোঁকড়া চুল , বক্ষপিঞ্জরের হাড় পর্যন্ত উঠে গেছে , দিনের আলো থাকলে হয়তো এর প্রত্যেকটা হাড় হাত দিয়েই টেনে খুলে নিতে পারত এজাজ । অপুষ্টির দন্ডায়মান উদাহরণ ! অথচ তার চোখে দেশপ্রেমের দ্যুতি এই অন্ধকারের মাঝেও জ্বলজ্বল করছে !
আবার প্ল্যান উনিশ থেকে বিশ হলেই ধড় থেকে মাথা আলাদা হয়ে যাবে জেনেও এজাজের ছায়া হয়ে থাকা রউফই বা কম কিসে !
বক্ষপিঞ্জরের হাড় উঠে যাওয়া রোগা ছেলেটার হাতের স্টেনগানের দিকে তাকিয়ে থেকেই এজাজ বুঝল মৃত্যুভয় ! সেও বড় সাংঘাতিক ! মরবার আগেই হাজারবার মেরে ফেলে । এজাজ মরবার আগে এখনই হাজারবার মরছে ।
না জানি কুকুর-শেয়ালের পাকস্থলীতে হজম হতে থাকা হাজারো মুক্তিকামী বাঙ্গালীরা.........
না , তারা একবারই মরেছে । একবারই......


* মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস জোঁক অবলম্বনে।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×