সৈয়দপুর শহরের লিবার্টি সিনেমা হলে চলছিলো বাংলা সিনেমা 'আপন পর'। ১৯৭১ সালে শহরটাতে বাংলাদেশের যেকোনো শহরের চেয়ে বাঙ্গালী-অবাঙ্গালী অনুপাতে অনেক বেশি অবাঙ্গালি ছিলো। অবাঙ্গালী মানে উর্দুভাষী জনগন। তারাই ছিলো শহরের ক্ষমতায়। হঠাত ১৯ মার্চ সিনেমা হলে হামলা করে বসলো এই অবাঙ্গালীরা। তাদের দাবী এই শহরে শুধু উর্দু সিনেমা চলবে। এই হামলাহ আহত হলো অনেক বাঙ্গালী।
চারদিন পর। ২৩ মার্চ। পার্শ্ববর্তী জেলা দিনাজপুর থেকে কিছু আহত অবাঙ্গালী শহরে এলো। দাবী করলো- বাঙ্গালীরা তাদের আহত করেছে। এ ঘটনায় ক্ষেপে গেল অবাঙ্গালীরা। তারা ক্ষিপ্ত হয়ে বাঙ্গালীদের উপর আত্রুমণ চালালো।অনেককে সেনানিবাসে নিয়ে আটকে রাখা হলো। ভয় পেয়ে অনেক বাঙ্গালী শহরের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে চলে গেল।
বাঙ্গালীদের ওপর এ আত্রুমণের খবর মানতে পারলেন না একজন। তিনি সৈয়দপুরের পার্শ্ববতী দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার সাতনালা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহাতাব বেগ। পরদিন ২৪ মার্চ তিনি বাঙ্গালীদের উদ্ধারের জন্য ছুটে আসেন । তার সাথে যোগ দেয় গ্রামের শত শত গ্রামবাসী। প্রায় ১০ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে তাঁরা সৈয়দপুর শহরের কাছাকাছি চলে আসে সকাল ১০টার দিকে।
পথে শহর ঘেঁষে প্রবাহিত খড়খড়িয়া নদীর উপর ব্রিজে পাকবাহিনীর প্রতিরোধের মুখে পড়েন তাঁরা। পরে তাঁরা বসুনিয়াপাড়া ও মিস্ত্রিপাড়া মোড় হয়ে সৈয়দপুর শহরে ঢোকার চেষ্টা করলে পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে তাদের তুমুল যুদ্ধ বাধে।
এদিনই, শহরের মিস্ত্রীপাড়া এলাকায় সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন মাহাতাব বেগ। এদিন তার মাথা কেটে তা নিয়ে গোটা শহরে আনন্দ মিছিল করে অবাঙ্গালীরা। তিনি সৈয়দপুরের প্রথম শহীদ। সারা দেশে পাকিস্তান বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণের বিরুদ্ধে ২৫ মার্চ কালো রাতে মুক্তিযুদ্ধের লড়াই শুরু হলেও তার নেতৃত্বে সৈয়দপুরে মুক্তিযুদ্ধের লড়াই শুরু হয় ২৪ মার্চ।
স্বাধীনতা অর্জনের দীর্ঘ ৪২ বছর পরও মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী শহীদ এ সন্তানকে আজো রাষ্ট্রীভাবে কোন বীরত্বপূর্ণ উপাধি দেয়া হয়নি। উইকিপিডিয়ায় ছবি ছাড়া তার নামে বরাদ্দ হয়েছে চার পাঁচটি লাইন।
শহীদ মাহতাব বেগ সম্পর্কে আমার স্কুল জীবনের বন্ধু সাকিব বেগ এর নানা হন। সেই সূত্রে সৈয়দপুরের সম্ভ্রান্ত এই পরিবারটির যৌক্তিক অভিমানের কথা জানি। পারতপক্ষে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে খুব বেশি কথা বলতে চান না তারা। আজ ২৪ মার্চ। এই দিনটি সৈয়দপুরে পালিত হয় প্রত্যক্ষ প্রতিরোধ দিবস হিসেবে। আজকের এই দিনে শহীদ মাহাতাব বেগকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


