somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অ্যান্টিবয়োটিক সম্পর্কে যা জানা প্রয়োজন

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকে আমরা জ্বর হলে অ্যান্টিবয়োটিক খেয়ে থাকি কিংবা অন্যকে খেতে উৎসাহিত করি। অথবা সামান্য সর্দি কাশিতেও আমরা অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে থাকি যা আদৌ কাম্য নয়। ঔষধ তা যত মহৌষধই হোক না কেন সর্বপ্রথম চেষ্টা থাকা উচিৎ সেটা কীভাবে অ্যাভয়েড করা যায় তার উপর অর্থাৎ যেসব কারনে ঔষধ খাওয়া অনিবার্য হয়ে ওঠে সেসব কারন না ঘটানো। আর অগত্যা যদি খেতেই হয় ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক খাওয়া উচিৎ। সকল ঔষধেরই কোন না কোন সাইড এফেক্ট বিদ্যমান তা যত নিরাপদ ঔষধই হোক না কেন। আর কিছু ঔষধ আছে যেসব নিয়ম মাফিক না খেলে উপকার তো হয়ই না বরং অপকার ঘটে। অ্যান্টিবায়োটিক তার মধ্যে অন্যতম।
আমরা যারা সামান্য অসুখ বিসুখে অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে থাকি তাদের জানা প্রয়োজন যে অসুখ বিসুখ সাধারণত দুই ধরনের জীবানু দ্বারা সংগঠিত হয়। তাদের একটি হল ভাইরাস আর অপরটি ব্যাক্টেরয়া। অধিকাংশ অ্যান্টিবায়োটিক শুধুমাত্র ব্যাক্টেরিয়াজনিত রোগের ক্ষেত্রে কাজ করে এক্ষেত্রে কেউ যদি ভাইরাস জ্বর এর কারনে সেই অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহন করে তাহলে সেটা কাজ তো করবেই না বরং শরীরে সয়ে যাবে। এর পরে যখন ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ হবে তখন সেই ঔষধ আর কাজ করবে না। শুধু তাই নয়, অ্যান্টিবায়োটিক খেলে অনেক সময় শরীরে উপকারী ব্যাক্টেরিয়া গুলো যেমন হজমে সহায়তাকারী অন্ত্রের ব্যাক্টেরয়াগুলো মরে যায়; এজন্য অনেক সময় অ্যান্টিবায়েটিক এর সাইড এফেক্ট হিসেবে আমাশয় এর উপসর্গ দেখা যায় কারন তখন খাদ্যদ্রব্য ঠিক তত হজম হতে পারে না।
অনেকে আমরা অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া শুর করার পর অসুখের উপসর্গ বিতাড়িত হলে কোর্স শেষ করি না। এটা করা অনুচিৎ কারন এর মাধ্যমে শরীরের জীবানু গুলো আরো দ্বিগুন শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসে। তাই জীবাণু পুরোপুরি নির্মূল করার জন্য অ্যান্টিবয়োটিক এর কোর্স কমপ্লিট করাটা জরুরী।
অ্যান্টিবায়োটিক সম্পর্কে আরো যা জানা প্রয়োজন তা হল, নতুন অ্যান্টিবায়োটিক বিশেষ প্রয়োজন না হলে এড়িয়ে চলুন। এখন যে অ্যান্টিবায়োটিক আপনার শরীরে কাজ করে তা-ই পরবর্তীতে ব্যবহার করুন। এদেশে ডাক্তাররা সব সময় নতুন নতুন অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করে এর কারন যতটা না চিকিৎসাজনিত তার চেয়ে বেশী অর্থনৈতিক ও স্বার্থপ্রণদিত। পশ্চিমা বিশ্ব বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে যে নতুন নতুন ঔষধ ফর্মূলা তৈরি করে তা তারা প্রথমে সাপ্লাই দেয় তৃতীয় বিশ্বে। এর ফলে তাদের বিনিয়োগের কিছুটা অংশ তো নিশ্চয় উঠে আসে, কিন্তু তা জনসাস্থে কতটা হিতকর হয় তা বিতর্কিত না হলেও আলোচনাসাপেক্ষ। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, পশ্চিমা দেশগুলো যেমন আমেরিকা এখনও অ্যান্টিবায়োটক হিসেবে পেনিসিলিন খায় যা কি না একটি প্রথম জেনারেশনের ড্রাগ বা ঔষধ। কিন্তু এখন তো তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম জেনারেশনের ঔষধ বাজারে চলে এসেছে তাহলে তাদের দেশে তারা এটা ব্যবহার করছে না কেন? এর কারণ হল, মানুষ যখন কোন ঔষধ খায়, তখন আস্তে আস্তে সেই ঔষধ শরীরে সয়ে যায় অর্থাৎ এমন একটা সময় আসে, যখন এটা আর কাজ করে না এবং এই পরম্পরা শুধু একটি জেনারেশনেই সীমিত নয় বরং এক জেনারেশন থেকে আর এক জেনারশনে পুনরায় আবর্তিত হয়। এটাকে বিবর্তনের একটি ধারা বলা যেতে পারে। এমন একটা সময় আসে যখন দেখা যায় যে ঔষধটি একটি দেশের কোন জনগোষ্ঠীর মধ্যেই আর কাজ করছে না। অর্থাৎ ঔষধটি দেশের সমস্ত জনগণেরই সয়ে গেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে একে বলা হয় টলারেন্স ডেভেলপ করা। এখন প্রশ্ন হলো, আমেরিকা কেন পেনিসিলিনের পরবর্তী জেনারেশনের ড্রাগগুলো সযতনে এড়িয়ে চলে? উত্তর খুবই সোজা কারণ তাদের সেগুলো ঔষধ প্রয়োজন নেই। একটু ভেবে দেখুন যে রোগের লক্ষণ কোন পুরনো জেনারেশনের ঔষধ দিয়েই পূরণ করা সম্ভব, সেক্ষেত্রে নতুন ঔষধ গ্রহণ করা কেন? নতুন জেনারেশনের ঔষধ শুধুমাত্র তখনই গ্রহণ করা উচিৎ যদি পুরনো জেনারেশনে তুলনায় এটি অধিকতর নিরাপদ ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত হয়। উল্লেখ্য যে, কোন ঔষধই কিন্তু ১০০% নিরাপদ বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত নয়। যারা বলে সম্পূর্ণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত তারা ভুল বলে। তাই নতুন ঔষধ যদি পুরনো ঔষধের তুলনায় অধিকতর কার্যকর আর অধিকতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত না হয় তাহলে কেন শুধু শুধু নতুন ঔষধ গ্রহন করা? অনেক সময় পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ব্যক্তিভেদে উপর নিচ হয়। যেমন একটি ঔষধ একজনের ক্ষেত্রে নিরাপদ আর একজনের ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যুক্ত বা অ্যালার্জিক হতে পারে। তালে ঝুঁকি নিয়ে নতুন ঔষধ গ্রহণ করার সার্থকতা কোথায়? ডাক্তাররা নতুন ঔষধ প্রেসক্রাইব করে কারন এর মাধ্যমে তারা ঔষধ কোম্পানি থেকে কমিশন পায়। ঔষধ কোম্পানি গুলো নতুন ঔষধ বিক্রি করে ঔষধ তৈরির গবেষণায় সাহায্য করে আর নতুন ঔষধ গ্রহন করে আমরা সেক্ষেত্রে অবদান রেখে চলি। নতুন ঔষধ তৈরি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় কিন্তু এর ব্যবহার সুষ্ঠুভাবে হওয়া উচিৎ।
আরো একটি তথ্য জেনে রাখুন অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্যান্য ঔষধ সম্পর্কে। নতুন জেনারেশনের অ্যান্টিবায়োটিক সাধারণত পুরনো জেনারশনের চাইতে অধিকতর শক্তিশালী হয়। তাই কেউ যদি নতুন অ্যান্টিবায়োটিক একবার ধরে ফেলে তাহলে তার পুরনো অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করবে না বা তার কার্যকারীতা হ্রাস পাবে সেই ব্যক্তির ক্ষেত্রে। এভাবে এমন এক সময় আসবে যখন সবাইকে হাই পাওয়ারের অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে রোগের প্রতিকারের জন্য। এবং এটা আমাদের পরবর্তী জেনারেশনেও চলতে থাকবে। অর্থাৎ তাদের শুরুই করতে হবে হাই পাওয়ারের অ্যান্টিবায়েটিক দিয়ে যেহেতু তাদের পিতা মাতা হাই পাওয়ারের অ্যান্টিবায়োটিকে অভ্যস্ত ছিল। তাই যেখানে আমেরিকর মত উন্নত দেশ এখনও প্রথম জেনারেশনেই পরে রয়েছে ঔষধ গ্রহণ করার দিক থেকে তখন যেই নতুন জেনারেশনের অ্যান্টিবায়োটিক বা ঔষধ নতুন বাজারে আসছে তা গ্রহন করে বাংলাদেশের জনসাধারণ উচ্চ ক্ষমতার ঔষধের প্রতি ক্রমেই নির্ভরশীল হয়ে পরছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:১১
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×