আমরা যারা সামান্য অসুখ বিসুখে অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে থাকি তাদের জানা প্রয়োজন যে অসুখ বিসুখ সাধারণত দুই ধরনের জীবানু দ্বারা সংগঠিত হয়। তাদের একটি হল ভাইরাস আর অপরটি ব্যাক্টেরয়া। অধিকাংশ অ্যান্টিবায়োটিক শুধুমাত্র ব্যাক্টেরিয়াজনিত রোগের ক্ষেত্রে কাজ করে এক্ষেত্রে কেউ যদি ভাইরাস জ্বর এর কারনে সেই অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহন করে তাহলে সেটা কাজ তো করবেই না বরং শরীরে সয়ে যাবে। এর পরে যখন ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ হবে তখন সেই ঔষধ আর কাজ করবে না। শুধু তাই নয়, অ্যান্টিবায়োটিক খেলে অনেক সময় শরীরে উপকারী ব্যাক্টেরিয়া গুলো যেমন হজমে সহায়তাকারী অন্ত্রের ব্যাক্টেরয়াগুলো মরে যায়; এজন্য অনেক সময় অ্যান্টিবায়েটিক এর সাইড এফেক্ট হিসেবে আমাশয় এর উপসর্গ দেখা যায় কারন তখন খাদ্যদ্রব্য ঠিক তত হজম হতে পারে না।
অনেকে আমরা অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া শুর করার পর অসুখের উপসর্গ বিতাড়িত হলে কোর্স শেষ করি না। এটা করা অনুচিৎ কারন এর মাধ্যমে শরীরের জীবানু গুলো আরো দ্বিগুন শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসে। তাই জীবাণু পুরোপুরি নির্মূল করার জন্য অ্যান্টিবয়োটিক এর কোর্স কমপ্লিট করাটা জরুরী।
অ্যান্টিবায়োটিক সম্পর্কে আরো যা জানা প্রয়োজন তা হল, নতুন অ্যান্টিবায়োটিক বিশেষ প্রয়োজন না হলে এড়িয়ে চলুন। এখন যে অ্যান্টিবায়োটিক আপনার শরীরে কাজ করে তা-ই পরবর্তীতে ব্যবহার করুন। এদেশে ডাক্তাররা সব সময় নতুন নতুন অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করে এর কারন যতটা না চিকিৎসাজনিত তার চেয়ে বেশী অর্থনৈতিক ও স্বার্থপ্রণদিত। পশ্চিমা বিশ্ব বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে যে নতুন নতুন ঔষধ ফর্মূলা তৈরি করে তা তারা প্রথমে সাপ্লাই দেয় তৃতীয় বিশ্বে। এর ফলে তাদের বিনিয়োগের কিছুটা অংশ তো নিশ্চয় উঠে আসে, কিন্তু তা জনসাস্থে কতটা হিতকর হয় তা বিতর্কিত না হলেও আলোচনাসাপেক্ষ। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, পশ্চিমা দেশগুলো যেমন আমেরিকা এখনও অ্যান্টিবায়োটক হিসেবে পেনিসিলিন খায় যা কি না একটি প্রথম জেনারেশনের ড্রাগ বা ঔষধ। কিন্তু এখন তো তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম জেনারেশনের ঔষধ বাজারে চলে এসেছে তাহলে তাদের দেশে তারা এটা ব্যবহার করছে না কেন? এর কারণ হল, মানুষ যখন কোন ঔষধ খায়, তখন আস্তে আস্তে সেই ঔষধ শরীরে সয়ে যায় অর্থাৎ এমন একটা সময় আসে, যখন এটা আর কাজ করে না এবং এই পরম্পরা শুধু একটি জেনারেশনেই সীমিত নয় বরং এক জেনারেশন থেকে আর এক জেনারশনে পুনরায় আবর্তিত হয়। এটাকে বিবর্তনের একটি ধারা বলা যেতে পারে। এমন একটা সময় আসে যখন দেখা যায় যে ঔষধটি একটি দেশের কোন জনগোষ্ঠীর মধ্যেই আর কাজ করছে না। অর্থাৎ ঔষধটি দেশের সমস্ত জনগণেরই সয়ে গেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে একে বলা হয় টলারেন্স ডেভেলপ করা। এখন প্রশ্ন হলো, আমেরিকা কেন পেনিসিলিনের পরবর্তী জেনারেশনের ড্রাগগুলো সযতনে এড়িয়ে চলে? উত্তর খুবই সোজা কারণ তাদের সেগুলো ঔষধ প্রয়োজন নেই। একটু ভেবে দেখুন যে রোগের লক্ষণ কোন পুরনো জেনারেশনের ঔষধ দিয়েই পূরণ করা সম্ভব, সেক্ষেত্রে নতুন ঔষধ গ্রহণ করা কেন? নতুন জেনারেশনের ঔষধ শুধুমাত্র তখনই গ্রহণ করা উচিৎ যদি পুরনো জেনারেশনে তুলনায় এটি অধিকতর নিরাপদ ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত হয়। উল্লেখ্য যে, কোন ঔষধই কিন্তু ১০০% নিরাপদ বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত নয়। যারা বলে সম্পূর্ণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত তারা ভুল বলে। তাই নতুন ঔষধ যদি পুরনো ঔষধের তুলনায় অধিকতর কার্যকর আর অধিকতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত না হয় তাহলে কেন শুধু শুধু নতুন ঔষধ গ্রহন করা? অনেক সময় পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ব্যক্তিভেদে উপর নিচ হয়। যেমন একটি ঔষধ একজনের ক্ষেত্রে নিরাপদ আর একজনের ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যুক্ত বা অ্যালার্জিক হতে পারে। তালে ঝুঁকি নিয়ে নতুন ঔষধ গ্রহণ করার সার্থকতা কোথায়? ডাক্তাররা নতুন ঔষধ প্রেসক্রাইব করে কারন এর মাধ্যমে তারা ঔষধ কোম্পানি থেকে কমিশন পায়। ঔষধ কোম্পানি গুলো নতুন ঔষধ বিক্রি করে ঔষধ তৈরির গবেষণায় সাহায্য করে আর নতুন ঔষধ গ্রহন করে আমরা সেক্ষেত্রে অবদান রেখে চলি। নতুন ঔষধ তৈরি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় কিন্তু এর ব্যবহার সুষ্ঠুভাবে হওয়া উচিৎ।
আরো একটি তথ্য জেনে রাখুন অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্যান্য ঔষধ সম্পর্কে। নতুন জেনারেশনের অ্যান্টিবায়োটিক সাধারণত পুরনো জেনারশনের চাইতে অধিকতর শক্তিশালী হয়। তাই কেউ যদি নতুন অ্যান্টিবায়োটিক একবার ধরে ফেলে তাহলে তার পুরনো অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করবে না বা তার কার্যকারীতা হ্রাস পাবে সেই ব্যক্তির ক্ষেত্রে। এভাবে এমন এক সময় আসবে যখন সবাইকে হাই পাওয়ারের অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে রোগের প্রতিকারের জন্য। এবং এটা আমাদের পরবর্তী জেনারেশনেও চলতে থাকবে। অর্থাৎ তাদের শুরুই করতে হবে হাই পাওয়ারের অ্যান্টিবায়েটিক দিয়ে যেহেতু তাদের পিতা মাতা হাই পাওয়ারের অ্যান্টিবায়োটিকে অভ্যস্ত ছিল। তাই যেখানে আমেরিকর মত উন্নত দেশ এখনও প্রথম জেনারেশনেই পরে রয়েছে ঔষধ গ্রহণ করার দিক থেকে তখন যেই নতুন জেনারেশনের অ্যান্টিবায়োটিক বা ঔষধ নতুন বাজারে আসছে তা গ্রহন করে বাংলাদেশের জনসাধারণ উচ্চ ক্ষমতার ঔষধের প্রতি ক্রমেই নির্ভরশীল হয়ে পরছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:১১