নারীদের হেয় করার প্রায় সব কৌশলই জানা সৃজন আহমেদের। এমন-ই সৃজনশীল করিৎকর্মা এই যুবক। এই পুলিশপুত্র বন্ধুদের নিয়ে রাস্তায় অশ্লীল বাক্য ছুঁড়ে দেওয়ার প্রতিযোগিতায়ও বেশ কয়েকবার ‘সেরা’ হয়েছে। নোংরামির সঙ্গে মেকি প্রেম নিবেদনেও পিছিয়ে নেই। ইংরেজিমাধ্যমে পড়ুয়া এই তরুণের আলোচিত সেই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই ইতোমধ্যে দেখেছেন। কিন্তু এতদিন তার হদিস করা যায়নি। সম্প্রতি বের হয়ে আসে তার পরিচয় ও চাঞ্চল্যকর জীবনযাপন।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘মানসিক সমস্যার কারণেই সৃজনের মতো যুবকেরা বিপথগামী হচ্ছে। অনেকেই এমন অপরাধ করেও নিজেকে ‘বীরপুরুষ’ ভাবে। অপরাধীর বন্ধুরাও অনেক ক্ষেত্রে এসব ঘটনায় উৎসাহ দেয়। বখে যাওয়া এই যুবকেরা পরবর্তীতে ধর্ষণের মতো অপরাধেও জড়িয়ে পড়লে অবাক হওয়ার কিছু থাকে না।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১০ সালের অক্টোবরে সিরাজগঞ্জের একটি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে তার এক মেয়ে সহপাঠীকে হাতে ফুল দিয়ে প্রেম নিবেদন করতে যায় সৃজন। মেয়েটি যখন সৃজনের উপহার দেওয়া ফুলটি নিতে হাত বাড়ায় তখনই সে সজোরে চড় মারে তাকে। এতে হতভম্ভ হয়ে যায় মেয়েটি। ভিডিওতে দেখা যায়, মেয়েটি হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে অপার বিস্ময়ে শুধু চেয়ে থাকে সৃজনের দিকে।
এই সেই ভিডিও.. : Click This Link
ঘটনাটি সেখানেই শেষ হতে পারত, কিন্তু সম্প্রতি ওই ভিডিও ফেসবুক-ইউটিউবসহ অনলাইন মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে দেয় সৃজনেরই এক বন্ধু মাসুদ রানা। ভিডিওটির সঙ্গে আক্রমণাত্মক বার্তাও জুড়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই মেয়েটি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এরপরই শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা। ওই যুবকের প্রতি অসংখ্য মানুষ তীব্র ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশ করে কমেন্ট করতে থাকে। অসংখ্যবার শেয়ার হয় ভিডিওটি। সবাই ওই অপরাধীকে খুঁজে বের করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সৃজনের বাড়ি পাবনায়। বাবা আবুল কালাম আজাদ। তিনি বগুড়ার ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। এ ব্যাপারে পরিবর্তন ডটকমের পক্ষ থেকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তার ছেলের ওই ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রথমে তিনি কথা বলতে চাননি। যখন বলা হয় সেই ভিডিওটি পরিবর্তন ডট কমের কাছে আছে তখন তিনি মুখ খোলেন। এ সময় তিনি দাবি করেন, “সে (সৃজন) এখন পড়ালেখা করে না।‘’ এক পর্যায়ে তিনি আবার বলেন, ‘’সৃজন এখন কোথায় আছে তাও আমি জানি না।” এর বেশি আর কিছু বলতে রাজি হননি তিনি। কথা বলার এ পর্যায়ে ওসি আজাদ ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
শুক্রবার বিকেলে সৃজনের মোবাইল ফোনে (01611335665) কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনটি বন্ধ ছিল। তবে জানা গেছে, সৃজন বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছে। সে মালয়েশিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। পাসপোর্ট ও ভিসা তৈরি। সেখানে সে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চেষ্টা করছে। সৃজনের বন্ধুদের একজন শিবলী শিপু। শিপুই ওই ভিডিওটি ধারণ করেছিল। ঘটনার সময় শিপু ছাড়াও আরো অনেক সহপাঠী সেখানে উপস্থিত ছিল। আগে থেকেই সৃজন ঠিক করে রেখেছিল যে সে এভাবে মেয়েটিকে প্রত্যাখ্যান করবে। শিপু ওই ঘটনা প্রকাশ না করতে অনুরোধ জানায়।
এই ঘটনার প্রতিবাদে বিভিন্ন উদ্যোগ নেন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা। এই অপরাধীকে আইনের হাতে তুলে দিতে বিভিন্ন উদ্যোগও নেয় তারা। নিরাপত্তা বাহিনীর দপ্তর ও সংবাদমাধ্যমগুলোতে ই-মেইলের মাধ্যমে ভিডিও ক্লিপটি পাঠানো হয়। সৃজনকেও গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়। অনলাইনের সুপরিচিত ব্লগার সুশান্ত দাশ গুপ্ত এই উদ্যোগে জোরালো ভূমিকা রাখেন। সুশান্ত দাশ পরিবর্তন ডট কমকে বলেন, রামুর ঘটনাসহ ২০১২ সালে বেশ কয়েকটি সাইবার ক্রাইম ঘটে। এরমধ্যে সৃজনের ঘটনাটি অন্যতম। কিন্তু শুরুতে বড় এই ঘটনাটি গণমাধ্যমের নজরে আসেনি। তিনি জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। Click This Link