somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লগি বৈঠার খুনি বাপ্পাদিত্য বসু শাহবাগের নেতৃত্বে

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
গত ৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার শাহবাগে ব্লগার পরিচয়ের ছদ্মাবরণে গণমাধ্যম বন্ধের হুমকিদাতা সেই বাপ্পাদিত্য বসুর পরিচয় পাওয়া গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে যাওয়া বাপ্পাদিত্য ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের ভয়ঙ্কর খুনি। সেদিন লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ মারার পর লাশের ওপর নৃত্য করেছিলেন তিনি। বর্তমানে ওয়ার্কার্স পার্টির ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি। অভিযোগ, যশোরের বাম-চরমপন্থীদের নিয়ে একটি বিশাল জঙ্গি গ্রুপ রয়েছে তার। যশোর অঞ্চলে খুন-লুটপাটের সঙ্গে জড়িত এরা। তার মামা জীবন পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (জনযুদ্ধ) দুর্ধর্ষ ক্যাডার। বর্তমানে তিনি ভারতে আশ্রিত বলে জানা যায়।
এই বাপ্পাদিত্যই এখন মিডিয়ার কল্যাণে মস্ত বড় ব্লগার ও শুদ্ধ তরুণ বনে গেছেন। তার সহপাঠী কয়েকজন জানান, বাপ্পা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই মাদকাসক্ত ছিল। ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে যাওয়ার পর প্রকাশ্য রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও চরমপন্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে শুরু করেন। যশোরে চরমপন্থীদের একটি গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেন তিনি। ২৮ অক্টোবর জামায়াতের ডাকা সমাবেশের প্রস্তুুতিকালে একদল সন্ত্রাসী তার নেতৃত্বে হামলা চালায়।
তবে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বাপ্পাদিত্য বলেন, সেদিন সবকিছু করা হয়েছিল গণতন্ত্র রক্ষার জন্য। বাপ্পার দাবি, সেদিন রাজপথে জামায়াত-শিবিরকে প্রতিরোধ করা গিয়েছিল বলেই আজ দেশে গণতন্ত্র আছে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ২৮ অক্টোবর আমরা লগি-বৈঠা নিয়ে মাঠে নেমেছিলাম। লগি-বৈঠা কিন্তু কোনো অস্ত্র না। আজ যেমন আমরা শাহবাগে বাঁশের লাঠির কথা বলছি, এটাও কোনো অস্ত্র না। বাঁশের লাঠি স্বাধীনতা রক্ষার প্রতীক। আর লগি-লগি বৈঠা গণতন্ত্র রক্ষার। আমরা সেদিন আঘাত করিনি, লগি-বৈঠা দিয়ে বিএনপি-জামায়াতের মতো অপশক্তিকে প্রতিরোধ করেছিলাম মাত্র। এদিকে এই খুনির পরিচয় প্রকাশ হওয়ার পর তাকে ব্লগার পরিচয় দেয়ায় মিডিয়ার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিভিন্ন ব্লগাররা। তারা শাহবাগের আন্দোলনকে সরকারের সাজানো নাটক আখ্যা দিয়ে এর সঙ্গে তরুণ প্রজন্ম তথা ব্লগারদের কোনো সম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করেন।
৫ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়। ওইদিন সন্ধ্যায় রায়ের বিরুদ্ধে ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের ব্যানারে শাহবাগে অবস্থান নেয় কিছু বাম কর্মী ও সমর্থক। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা। বাম নেতারা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় চলা এ অবস্থানকে অরাজনৈতিক আন্দোলন দাবি করলেও বিভিন্ন বাম সংগঠন ও ছাত্রলীগ নেতারা এর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখেন। বামদের নেতৃত্বে গত ৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয় মহাসমাবেশ। এ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাম, ছাত্রলীগ ও আওয়ামীপন্থী বুদ্ধিজীবীরা। সেদিন বাপ্পাদিত্য বসু ব্লগার পরিচয়ে মঞ্চ থেকে দৈনিক আমার দেশসহ কয়েকটি গণমাধ্যম বন্ধের হুমকি দেন। তিনি বেশ কয়েকটি ইসলামী প্রতিষ্ঠান বন্ধেরও দাবি জানান। তার এমন ঔদ্ধত্য দেখানো নিয়ে দেশজুড়ে শুরু হয় তীব্র সমালোচনা। পাঠক জানতে চান কে এই ব্লগারবেশী প্রতিক্রিয়াশীল বাপ্পাদিত্য বসু। পরে আমার দেশ-এর এক অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে বাপ্পাদিত্যের আসল পরিচয়। সে ব্লগার বেশ ধারণ করা এক ভয়ঙ্কর খুনি। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর রাজধানীর পল্টনে জামায়াত-শিবির কর্মীদের লগি-বৈঠা দিয়ে নির্মমভাবে হত্যার পর তাদের লাশের ওপর নৃত্য করেছিলেন এ বাপ্পাদিত্য।
বাপ্পাদিত্যের পরিচয় : এই খুনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ২০০২-২০০৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়। ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করায় দ্বিতীয়বর্ষে পড়ার সময় ২০০৫ সালে ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে যায় তার। তবে ২০১১ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পাসকোর্সে ডিগ্রি পাস করেন বাপ্পা। ছাত্রত্ব বাতিলের পর চরমপন্থীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ বেড়ে যায়। ২০০৫-২০০৬ সালে ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক, একই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক ছিলেন বাপ্পা। ২০০৬-২০০৭ সেশনে ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। গত দু’মেয়াদে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
১৯৮৩ সালের ২১ আগস্ট যশোর জেলার সদর উপজেলার রুপদিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন বাপ্পাদিত্য বসু। তার পিতার নাম দুলাল চন্দ্র বসু (মৃত)। তিনি রুপদিয়া স্কুলে পড়াশোনা করেন। ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াকালে বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে জড়ান। এ সময় ধীরে ধীরে চরমপন্থীদের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। একই সময়ে বামপন্থী সংগঠন অরুণোদয় সাংস্কৃতিক সংস্থায় সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করেন তিনি। রুপদিয়া স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন বসু। যশোরের সিঙ্গিয়া আদর্শ ডিগ্রি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাসের পর ঢাকায় চলে আসেন। তারা তিন ভাই এক বোন। একমাত্র বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। ভাইদের মধ্যে বাপ্পা বড়। তার এক ভাই একটি কম্পিউটার দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন। বসুর বাবা দুলাল চন্দ্র বসুরা তিন ভাই। এক ভাই সপরিবারে ভারতে থাকেন। অপর ভাই মারা গেছেন। এলাকায় বসুর পরিচিতি তেমন নেই। তবে ২৮ অক্টোবর পল্টনে লগি-বৈঠার তাণ্ডবের পর এলাকার মানুষ তাকে চিনতে শুরু করেন। বেশিরভাগ মানুষই তাকে চেনেন ২৮ অক্টোবরের খুনি হিসেবে।
যশোরের স্থানীয় এক সাংবাদিক জানান, যশোর অঞ্চলে এখন আর আগের মতো সুবিধা করতে পারছে না চরমপন্থীরা। তাই বাপ্পাদিত্যের মতো দুষ্কৃতিকারীরা অন্যান্য অঞ্চলের চরমপন্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে। তার মামা জীবন চরমপন্থী সংগঠন পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (জনযুদ্ধ) সক্রিয় ক্যাডার। বর্তমানে তিনি ভারতে আশ্রিত আছে বলে জানা যায়। ১৯৯৮-৯৯ সালের দিকে সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিলেন জীবন। পরে আবার সশস্ত্র আন্দোলনে ফিরে যান।
তিনি জানান, প্রতিবছর ২৮ অক্টোবর জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের হত্যাকাণ্ড নিয়ে যেসব পোস্টার বের হয় সেখানে বাপ্পার ছবি থাকে। আমাদের এলাকায় প্রচুর পোস্টার সাঁটানো হয়। সেই পোস্টার দেখেই মানুষ তাকে চিনে। ঢাকায় রাজনীতি করলেও এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। তবে আন্ডারগ্রাউন্ড কিছু সংগঠনের সঙ্গে গোপন যোগাযোগ রয়েছে বলে শোনা যায়।
ছাত্রত্ব বাতিলের বিষয়ে জানতে চাইলে বাপ্পাদিত্য বসু বলেন, ছাত্রদলের হামলায় ক্যাম্পাসে এসে পরীক্ষা দিতে না পারায় আমার ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে যায়। পরে টিএন্ডটি কলেজ থেকে পাসকোর্সে ডিগ্রি পাস করি। তিনি জানান, জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে অবস্থান করবে তারা। তাদের আন্দোলনে ভয় পেয়ে জামায়াত-শিবির রাজপথ ছেড়েছে দাবি এ বাম ক্যাডারের।
সমাবেশ থেকে কিছু প্রতিষ্ঠান ও পত্রিকা বন্ধের ঘোষণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের ঘোষণা অনুযায়ী মানুষ সাড়া দিয়েছে। অনেকে ইসলামী ব্যাংক থেকে তাদের অ্যাকাউন্ট প্রত্যাহার করে নিয়েছে। খুলনায় ইসলামী ব্যাংকের এটিএম বুথ পুড়িয়ে দিয়েছে মানুষ। এসব কিছুই স্বতঃস্ফূর্তভাবে করছে তারা। Click This Link
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×