somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোরআন বুঝে পড়ার জন্য অসামান্য প্রয়োজনীয় কিছু বই

০১ লা অক্টোবর, ২০১২ সকাল ৮:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের এই ৬০/৭০ বছরের জীবনটির উদ্দেশ্য কি? আল-কোরআনে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন যে, তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন শুধুই তাঁর ইবাদত করার জন্য (সূরা আজ-জারিয়াত ৫১:৫৬)।

আমরা অনেকেই মনে করি, শুধুমাত্র নামাজ পড়া, রোজা রাখা, হজ্জ্ব করা ও যাকাত দেয়াই বোধহয় ইবাদত। বস্তুত, এটা একটা ভুল ধারণা। প্রকৃতপক্ষে, আল্লাহ্‌ যা করতে হুকুম করেছেন তা করা এবং যা করতে নিষেধ করেছেন তার থেকে বিরত থাকার নামই ইবাদত। আমাদের কালেমার ১ম অংশে তাই আমরা বলিঃ ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, অর্থাৎ আল্লাহ্‌ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য আর কোন উপাস্য নাই। আরেকটু ভেঙ্গে বললে, আমাদের সকল কাজ-কর্মে হুকুম মানতে হবে শুধুই আল্লাহ্‌র, যদি আল্লাহ্‌র হুকুমের চেয়ে কামনা-বাসনা, টাকা-পয়সা, বন্ধুরা কি বলল ইত্যাদি আমাদের জীবনে বেশী গুরুত্বপূর্ন হয়, তাহলে বুঝতে হবে আমরা মুখে কালিমা পড়লেও আসলে আমরা আমরা অন্য কোন কিছুর বা অন্য কারো ইবাদত করি।

আল্লাহ্‌র হুকুম মেনে চলতে জানতে হবে আল্লাহ্‌র দেয়া গাইডলাইন, আর তাঁর এই গাইডলাইনের নাম কোরআন। এই কোরআন কিভাবে জীবনে বাস্তবায়িত করতে হবে তা আমাদের দেখিয়ে গেছেন মুহাম্মাদ(সা), যিনি আল্লাহ্‌র রাসূল। আল্লাহ্‌ মহাগ্রন্থ কোরআনের ৪০বারেরও বেশী বার আমাদের বলেছেন রাসূলুল্লাহ(সা) কে মেনে চলতে। উদাহরনস্বরূপ বলা যায় যে, আল্লাহ্‌ সূরা আন-নিসায় বলেছেনঃ
অতএব,আপনার রবের শপথ! তারা কখনো মুমিন হবে না,যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে আপনাকে বিচারকের দায়িত্ব অর্পণ না করে, অতঃপর আপনি যে বিচার করবেন তা দ্বিধাহীন অন্তরে গ্রহণ করতে সংকীর্ণতা না থাকবে এবং তা সর্বন্তকরণে মেনে নিবে। - সূরা আন-নিসা (৪:৬৫)

কোরআন নাজিল হয়েছে দীর্ঘ ২৩ বছরে, কখনো ১ আয়াত, ২ আয়াত, আবার কখনো ১টি পরিপূর্ন সূরা একসাথে। কোরআনের আয়াতগুলো অনেক গভীর, এবং এর অনেকগুলোর সাথেই জড়িত রয়েছে মুহাম্মদ(সা) এর জীবনের ঘটনা। সাহাবারা রাসূলুল্লাহ(সা) এর শ্রেষ্ঠ উম্মত হওয়া সত্ত্বেও কোরআনের অর্থ বুঝার জন্য রাসূলুল্লাহ(সা) কে বিভিন্ন প্রশ্ন করতেন এবং বিভিন্ন আয়াত ও সূরার তাৎপর্য জানতে চাইতেন।

কোরআনের আয়াতের ব্যাখাকে আরবীতে তাফসীর বলে। সাহাবাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ তাফসীরবিদ ছিলেন রাসূলুল্লাহ(সা) এর চাচাতো ভাই আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস(রা)। এরপর শ্রেষ্ঠ তাফসীরবিদ হিসাবে বিখ্যাত ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ, যিনি কমপক্ষে ৭০টি সূরা সরাসরি রাসূলুল্লাহ(সা) এর কাছ থেকে শিখেছিলেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ বলেছেন, কোরআনের এমন কোন আয়াত নাই, যা কবে, কখন, কোথায় নাজিল হয়েছিল তা আমি জানি না। অন্যান্য সাহাবারা এবং পরবর্তীতে তাবেঈনরা কোরআনের এইসব বিখ্যাত তাফসীরবিদদের কাছ থেকে কোরআনের অর্থ বুঝে নিতেন। কাজেই কোরআন থেকে সত্যিকার অর্থেই গাইডলাইন পেতে চাইলে আমাদের শুধু কোরআনের অনুবাদ পড়লেই চলবে না, বরং পড়তে হবে এর তাফসীর। কারণ শুধু অনুবাদ পড়লে আমরা অনেক আয়াতেরই অর্থ না-ও বুঝতে পারি, বা বুঝলেও ভুল বুঝতে পারি।

কোরআনকে সঠিকভাবে বুঝতে হলে আমাদের কোরআনের আয়াতের অর্থের সাথে সাথে জানতে হবে এর সাথে জড়িত হাদিসগুলো, কোন্‌ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আয়াতটি নাজিল হয়েছিল, এই আয়াত আমাদের কি শিক্ষা দেয়, এর থেকে ইসলামের কোন্‌ ফিকহ বা আইন বাস্তবায়িত হয়েছে, ইত্যাদি – আর তখনই আমরা কোরআন পড়ার মধ্যে মজা পাব, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম জ্ঞানভান্ডার আমাদের সামনে উন্মুক্ত হবে।

আমি নিজে যখন কোরআনের বাংলা অনুবাদ পড়তে শুরু করলাম, তখন বাজারে প্রচলিত এত অনুবাদ ও তাফসীর এর ভিড়ে কোন্‌টা পড়ব এই ব্যাপারে কনফিউজড্‌ হয়ে পড়লাম। আমার জ্ঞানকে শতভাগ সঠিক তা বলব না, তবে ঘাঁটাঘাঁটি করতে করতে বুঝতে পারলাম কোন্‌ তাফসীরটি ভালো, কোন্‌ অনুবাদের দুর্বলতা কোথায়। আমার সেই অভিজ্ঞতার আলোকে, এই পোষ্টে বাংলাভাষার পাঠকদের জন্য কোরআনের কয়েকটি তাফসীরসহ অনুবাদ শেয়ার করলাম।

১) তাফসীর আশরাফ আলী থানভি

এই অনুবাদটির ভাষা সুন্দর ও সহজ, সাথে বাংলা ভাষায় কোরআনের আরবী উচ্চারণও দেয়া আছে। অপেক্ষাকৃত দুরূহ আয়াতগুলির ব্যাখা ও নাজিলের প্রেক্ষাপট দেয়া আছে। আপনি যদি প্রথমবারের মত কোরআনের অনুবাদ বা তাফসীর পড়া শুরু করে থাকেন, তবে এইটি দিয়েই শুরু করুন।



ডাউনলোড

২) আহসানুল বায়ান

এটি সমসাময়িক কালে প্রকাশিত কোরআনের একটি সুপ্রসিদ্ধ তাফসীর। এটিতে প্রায় প্রত্যেকটি আয়াতেরই ব্যাখা দেয়া হয়েছে। তাফসীর আশরাফ আলী থানভীতে কোনো আয়াতের ব্যাখা না পেলে বা ব্যাখা পড়ে আপনি সন্তুষ্ট না হলে আহসানুল বায়ান থেকে মর্মার্থ বুঝে নিন। এটিতে শুধু কোরআনের আয়াতের ব্যাখাই নয়, আছে ইসলাম ধর্মের অনেক গুরুত্বপূর্ন ধারনা নিয়ে আলোচনা। যেমন, সূরা ফাতিহার ব্যাখায় বুঝানো হয়েছে তাওহীদ কি, এর শ্রেনীবিভাগ কি, বান্দাহর উপর আল্লাহ্‌র হক কি ইত্যাদি।



ডাউনলোড

৩) তাফসীর ইবনে কাসির

ইবনে কাসির ইসলামের ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ তাফসীরবিদ ও হাদিস-বিশেষজ্ঞ। অধিকাংশ ইসলামী পন্ডিতের মতে ইবনে কাসির এর তাফসীরটি কোরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ তাফসীর। আগের দুই তাফসীরের তুলনায় এটি বেশ বিষদ, প্রতিটি আয়াতের সাথেই তুলে ধরা হয়েছে প্রেক্ষাপট, প্রাসঙ্গিক হাদিস এবং ক্ষেত্রবিশেষে ফিকহ্‌। এই তাফসীর এর বিশালতার কারণে এটি কাভার-টু-কাভার পড়তে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে, কিন্তু রেফারেন্স হিসাবে এই বইটির তুলনা নেই। তাফসীর আশরাফ আলী থানভি এবং আহসানুল বায়ান – এই দুইটিতেই আপনি কোনো আয়াতের ব্যাখায় সন্তুষ্ট না হলে তাফসীর ইবনে কাসির দেখুন।



ডাউনলোড

সবশেষে যে বইটি উল্লেখ করব তা কোরআনের কোনো অনুবাদ নয়, বরং কোরআনের বিষয়ভিত্তির আয়াতের অভিধান (Index). কোন নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর কোরআনের আয়াতগুলো খুঁজে পেতে চাইলে এই বইটি কাজটিকে অনেক সহজ করে দেয় বলে এটিকে আমি খুব পছন্দ করি।



ডাউনলোড

আল্লাহ্‌ আমাকে এবং আপনাকে সঠিকভাবে কোরআন বুঝার এবং তা বাস্তবায়ন করার সুযোগ করে দিন। হযরত উসমান(রা) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ(সা) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে সে-ই শ্রেষ্ঠ যে নিজে কোরআন শিখে এবং অতঃপর তা শিক্ষা দেয়। (বুখারী)

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ পাঠককে একথা মনে রাখতে হবে, অনুবাদকৃত কোরআন কখনোই মূল কোরআনের সমতুল্য নয় বরং তা অনুবাদকের চিন্তা-ভাবনায় কোরআনের অর্থের অনুবাদ। কারণ, কোরআন আরবী ভাষায় সরাসরি আল্লাহ্‌র কথা, যার পরিপূর্ণ অনুবাদ সম্ভব নয়।

লিঙ্কগুলো নেয়া হয়েছে এখান থেকেঃ
View this link
View this link
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১১:২৯
১০টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×