কোথায় হারিয়ে গেল আমার সেই শাহবাগ? সেই ফেব্রুয়ারী ৫, ৬, ৭, ৮...শহবাগ চত্বরে লাখো মানুষের ঢেউ। জোয়ান-বুড়া, যুবক-যুবতী, চার বছেরর কোলের শিশু, সেই মন্টু মিয়া বাদাম বিক্রেতা, কুলাউরা থেকে আসা আগুনের গোলা ভরা চোখে শফিক, সাভারের অংকের শিক্ষক সিরাজ সরকার, সেই নেত্রকোনা থেকে ঢাকায় পায়ে হেটে আসা চার ভাই। ততক্ষনে সবার চোখে-মুখে, চিন্তায়-ভাবনায়, শ্লোগানে, প্রকাশে, মননে কয়েকটা শব্দমালা জায়গা করে নিয়েছে.."রাজাকারের ফাঁসি চাই, বাংলাদেশ থেকে জামাত-শিবির নিষিদ্ধ কর”।
নাহ! শাহবাগের সেই উত্তাপ আর নেই। সব দেখে-শুনে মনে হয় শাহবাগ বুঝি মরা কোন এক গাঙ। যে গাঙে এক সময় ঢেউ ছিল, তার বুকে ভাসমান অসংখ্য জেলেদের চোখে অনাগত ভবিষ্যতের রং ছিল। সেই শাহবাগ কোথায় কীভাবে জানি হারিয়ে গেল!! ফেব্রুয়ারীতে জন্ম নেওয়া কোথায় হারিয়ে গেল আমার সেই উত্তাল শাহবাগ?
কি চাওয়া পাওয়া ছিল আমাদের শাহবাগের কাছে? মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জিবিত আমাদের তরুণ প্রজন্মরা কি দেখতে পেয়েছিল এই শাহবাগের চোখ দিয়ে? এক নদী রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের প্রিয় এই স্বাধীনতার ৪২ বছর পর আমাদের এই তরুন প্রজন্মরা মশাল হাতে নিয়ে শাহবাগকে বুকে আকড়ে ধরে আবার জ্বলে উঠতে চেয়েছিল। গত ৪২ বছর যাবত হৃদয়ের গহীনে পুষে রাখা সেই দগদগে আগুনের লেলিহান শিখাগুলো তরুনদের হাতের মশালের আগুন হয়ে শাহবাগে ঠাই করে নিয়েছিল। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো যখন পুরোপুরিভাবে দেউলিয়াগ্রস্থ,সঠিক নেতৃত্রহীনতায় গোটা জাতি যখন দিশেহারা, জামাত-শিবিরের তান্ডবে আমার প্রিয় স্বদেশ যখন ক্ষত-বিক্ষত, ঠিক সেই সময়ে হ্যাঁ ঠিক সেই মোক্ষম সময়ে আমাদের তরুনরা, আমাদের দেশের দেশপ্রেমিক সকল জনগণ এই বিস্ফরিত শাহবাগের ছায়ায় তাদের আশ্রয় খুজে পেতে চেয়েছিল। আর সেই কারনেই শাহবাগ শুধুমাত্র একটি আন্দোলনের নাম না হয়ে তা গোটা বাংলাদেশের মানুষের আত্বার ঠিকানায় পরিনত হতে পেরেছিল।
স্পষ্ট মনে আছে(মনে না থাকার কোন কারনতো নেই?) শাহবাগ গণজাগরন মঞ্চে কোন রাজনৈতিক নেতাদের উপস্থিতি ছিল অনাহুত। শাহবাগ কোন দলের ছিল না, কোন লীগের ছিল না। শাহবাগ ছিল গোটা বাংলাদেশের মানুষের আস্থার ঠিকানা। শাহবাগ ছিল সেই সব মানুষের সম্মিলিত কন্ঠস্বর যারা যু্দ্ধপরাধীদের ফাঁসির দাবী চেয়েছিল, যারা বাংলাদেশের মাটি থেকে জামাত শিবির এর রাজনীতি বন্ধ করতে বদ্ধপরিকর ছিল। হায়! সেদিন আমার এক বন্ধু আমাকে দেখে খুব দুঃখের সাথে বললেন,” আমার শাহবাগ হেকড হইয়া গেছে…”। বর্তমান শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চ উদিচীর মতই একটি খুবই সুন্দর আর যুতসই সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে। এখন সেখানে দেশাত্ববোধক গান হয়, কবিতা আবৃত্তি হয়, লীগের কর্মকতারা বড় গলায় গলাবাজি করেন আর আমাদের প্রাণপ্রিয় ইমরান ভাই তার পিট পিট ঢুলু ঢুলু চোখে এর সব কিছুই খুব সুন্দর আর দক্ষহাতে দেখভাল করেন।
দেখতে পাই শহীদ রুমি স্কোয়াডে যুদ্ধপরাধীদের ফাঁসির দাবীতে আর জামাত শিবিরর নিষিদ্ধের জন্য আমাদের তরুনরা আমরণ অনশনরত। এদের কারো কারো শারিরিক পরিস্থিতি অবনতি থেকে অবনতির দিকেই যাচ্ছে। আমরা যারা সন্ধার সাজের আলোয় বুকে এক ঝাক হাহাকার নিয়ে নতমুখে ঘর ফেরতা যুবক ঠিক এই সময়ে হঠাৎ করে এই সংবাদে আমরা যেন আবার নড়েচড়ে বসলাম। মনে হল বাংলার আনাচে-কানাচে হাজারো লক্ষ রুমিরা যেন আমাদের সাথে চিৎকার দিয়ে বলছে “জামাত-শিবির রাজাকার, এই মুহুতে বাংলা ছাড়”। আমাদের সবার আস্থার ঠিকানা রুমি স্কোয়াড। রুমি স্কোয়াড কে ঘিরে আমাদের প্রাণে এখন শুধু নতুন আলোর হাতছানি, এক নতুন প্রাণের স্পন্দন। জয় আমাদের হবেই।