somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্ম, ভোটের রাজনীতি এবং গণতন্ত্র

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খুব সাধারণ একটা দৃশ্য। একটি মৃত শিকার করা হরিণকে চার-পাঁচটা সিংহ পরস্পর ঝগড়া করে ছিড়েখুড়ে খাচ্ছে। কিছুটা দূরে দাড়িয়ে থাকা ক্ষুদার্ত হায়ানারা সেই দৃশ্যটা জিভ বেড় করে দেখছে আর ভাবছে ”খাবারের ভাগ আমার পেটে একটু হলেও যদি জুটতো”? বাংলাদেশের বর্তমান চলমান রাজনীতির সাথে সে দৃশ্যটির কোথায় যেন একটা মিল খুজে পাওয়া গেল। জামাতে ইসলামের চেহারার সাথে হেফাজতে ইসলামের যে হুবুহু একটা মিল পাওয়া গেছে তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। বেশ বোঝাই যাচ্ছে যে ভাগ বাটোয়ারার হিশেব নিকেশে জামাতে ইসলাম তাদের শিকার করা হেফাজত ইসলাম নামক হরিণটার মুখ্য দাবিদার। ভোটের রাজনীতিতে এই নব্য শিকারটির উপর থাবা বাংলাদেশ জাতিয়তাবাদী দলটি অনেক আগেই বসিয়েছে এবং কামিয়াবও হাসিল করেছে। এদিকে আওয়ামী লীগও মনে হচ্ছে বসে নেই। হেফাজতে ইসলামকে একটু ’হেফাজত’ করতে পারলে অসুবিধা কি? তাতে ভোট ব্যাংকের পাল্লা যদি দু এক ফোটা যোগ হয় তাতেওবা মন্দ কিসে? দেখতে পাই চতুর এরশাদও এই ভোট ভাগাভাগির দৌড় প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই। লং মার্চকারী হেফাজতে ইসলাম দলটিকে পানি ও শুকনা খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করে সেখান থেকে দু খাবলা ভোট উদরস্থ করার ধান্দায় দলটি হেফাজতের পদ সেবায় নেমে পরেছে।

আমাদের মহান ইসলাম ধর্মকে রুপক ভাবে যদি কোলের একটি ’শিশু’ হিসেবে কল্পনা করি তাহলে দেখবো বিএনপি, জামাতে ইসলাম এবং হেফাজতে ইসলাম নামের দলগুলো এই শিশুটাকে বুকে আকড়ে ধরে রাজনীতিতে নেমেছে। বাংলাদেশের মাটিতে শিশুটির ’নিরাপত্তার’ আশংকায় সংকিত এবং উদ্বিগ্ন হয়ে এই দলগুলো বুক চাপড়ে দেশবাসীর সামনে শিশুটির একমাত্র অভিবাবকত্ব দাবী করে মায়াকান্নায় নিজেদের চোখ ভাসিয়ে দিচ্ছে! দেখতে পাই বাাংলাদেশ আওয়ামী লীগও এই দুধের শিশুটির প্রকৃত অভিবাবকত্ব নিয়ে নিজেদের অবস্থান পরিস্কার করতে ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে উঠেছে। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিশেবেই সম্প্রতি ব্লগারদের গ্রেফতার সহ গণজাগরণ মঞ্চকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বিভিন্ন রকম সিদ্ধান্ত নিতে যেয়ে সরকার নিজেরাই এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পরেছে।

”ধর্ম” মানুষের ব্যাক্তিগত চর্চার একটি বিষয়। বর্তমান মানব সভ্যতার উত্তরনের পথে এই ধর্মের ভুমিকা অনস্বিকার্য। তারপরও এই ধর্ম এবং অধর্মদের মাধ্যে লড়াই সেই মানব সভ্যতার শুরু থেকেই হয়ে আসছে। তখন সেই আদি যুগে লড়াইটা সীমিত ছিল মুলত ধর্মের প্রতি বিশ্বাসী এবং অবিশ্বাসীদের মাঝেই। পরবর্তীতে ধর্মের শ্রেষ্ঠত্যে দাবী নিয়ে মানুষ মানুষকে খুন করেছে, ধ্বংস করেছে। সেই কলংকময় ইতিহাসের কথা আমরা সবাই জানি। ধর্ম নিয়ে এই পারস্পরিক ঝগড়া এবং বিবাদের ফলে একদিকে যেমন বিপন্ন হয়েছে আমাদের মানবতার অন্যদিকে আমাদের সাম্যবাদের পথ হয়েছে রুদ্ধ। এই বিংশ শতাব্দীর এই যুগেও গোটা বিশ্বেই ধর্মকে রাজনীতির অন্যতম হাতিয়ার হিশেবে ব্যাবহার করা হচ্ছে। বাংলাদেশও এর থেকে কোন অংশেই পিছিয়ে নেই। ধর্মের লেবাস বুকে ঝুলিয়ে ভোটের রাজনীতি করে এর মোটা তাজা ফসলটি অনায়াসে ঘরে তোলা এখন রাজনৈতিক পাড়ার অন্যতম ”স্ট্র্যেটেজি” হিশেবে দাড়িয়েছে। সেকারনেই যখন তখন কোন ব্যাক্তি বা দলকে ”নাস্তিক” অপবাদ দিয়ে বা মানুষের মুক্তচিন্তা ও মতকে থামিয়ে দিয়ে ভোটের রাজনীতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর ফায়দা হাসিল করা নতুন কোন ঘটনা নয়। বর্তমান সুবিধাবাদী রাজনীতির এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফসল হিশেবে মানবতার পথ থমকে দাড়িয়েছে, বিপন্ন হয়েছে মানুষের মুক্তচিন্তা আর সেই সাথে ধ্বংস হয়েছে ’গণতন্ত্র’ চর্চার ক্ষেত্রটিরও। খুব স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসে এই ধর্মকে সামনে রেখে ভোটের রাজনীতি আর কতদিন চলবে?

কোন ধর্মকে সামনে রেখে বা ধর্মকে রক্ষা করতে একাত্তর সালে পশ্চিম পাকিস্তানের হায়ানাদের বিরুদ্ধে আমাদের নয় মাসের মহান মুক্তিযুদ্ধ হয়নি। পশ্চিম পাকিস্তানের অন্যায় অত্যাচার আর জুলুমের বিরুদ্ধে এবং ন্যায় সংগত দাবী আদায়ের লক্ষ্যে সেদিন বাংলাদেশের ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সবাই অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল এবং দীর্ঘ একটি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ’বাংলাদেশ’ নামের স্বাধীন একটা রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছিল। স্বাধীনতার মাত্র বিয়াল্লিশ বছরের মধ্যেই আমরা আমাদের সেই সাম্যবাদের কথা ভুলে যেতে পারি না। ইদানিং অবাক হয়ে লক্ষ্য করছি কিছু ইসলামি দলের নামধারী নেতারা যখন তখন তাদের সুবিধামতভাবে তারই কোন মুসলমান ভাইকে ’নাস্তিক’ বলে গালি দিচ্ছেন। একজন মুসলমান আরেকজন মুসলমানকে চোখ বুজে কিভাবে ’নাস্তিক’ তকমা জুড়ে দিতে পারে সে ভার আপাতত ইসলামী চিন্তাবীদদের হাতে তুলে দিয়ে শুধু একটা কথাই বলতে চাই যে আজ যারা ধর্মকে সামনে রেখে রাজনীতির ব্যবসা ফেদে বসেছেন তারা আর যাই হোক ধর্মের যথাযথ হেফাজতকারী হতে পারেন না।

যারা সূফিবাদ চর্চা করেন তারা ’রবুবিয়ত’ শব্দটির কথা প্রায়ই বলে থাকেন। ’রবুবিয়ত’ শব্দের অর্থ হল ’সৃষ্টির পালনবাদ’। অর্থাৎ গোটা পৃথিবীর তাবত সৃষ্টিকে ভালোবাসা। আর সৃষ্টিকে ভালোবাসা মানেই হল এর ¯্রষ্ঠাকে ভালোবাসা। শুধু ক্ষমতা আর ভোটের রাজনীতি না করে সত্যিকারভাবে আন্তরিকতার সাথেও ধর্মকে চর্চা করা যায়। ধর্ম একজন মানুষের সম্পূর্ণ একটি ব্যাক্তিগত চর্চার জায়গা। ধর্ম মানুষকে ভালোবাসতে শেখায়, মানবিকতা শেখায়। এই ধর্মের সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোখনই সাংঘার্ষিক হতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং ধর্মীয় চেতনা কখনই পরস্পর বিরোধী নয়। কিন্তু আফসোসের বিষয় বর্তমানে বাংলাদেশের ধর্মনির্ভর কিছু রাজনৈতিক দল এই বিষয়টিকে পরস্পর সাংঘার্ষিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য উঠে পরে লেগে গেছে। আবারো বলি ধর্মকে যথেচ্ছ ব্যাবহার করে সুস্থ্য রাজনীতিতে কোন রকম সুফল বয়ে নিয়ে আসতে পারে না। আমরা চাই রাজনীতি হোক দেশের কল্যাণের জন্য, দেশের মানুষের জন্য। আমরা সব সময় বিশ্বাস করি ধর্ম আমাদের একান্ত ব্যাক্তিগত চর্চার বিষয়, লালন-পালনের বিষয়। ধর্মকে ভোটের অস্ত্র হিশেবে ব্যাবহার করা কোন গনতন্ত্র চর্চার মানষিকতার লক্ষন হতে পারে না। ধর্মনিরপেক্ষ আর ধর্মহীনতা এক কথা নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জিবিত এই নতুন প্রজন্মরা সুন্দর, সুস্থ একটি ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ গড়তে চায়। বাংলাদেশ হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ খৃষ্টান সহ সব ধর্মের একটি দেশ। এই সাম্যবাদ আমাদের অহংকার। আমরা এই অহংকারকে লালন করতে চাই। শুধুমাত্র ধর্মকে সামনে রেখে ভোটের এই নোংরা রাজনীতি আমরা এই নতুন প্রজন্মরা কখনই মেনে নিতে পারব না।

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:০৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×