somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অধ্যাপক ইউনূস, গ্রামীন ব্যাংক এবং আ.লীগ এর রাজনীতি

২০ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্লাসের সমস্ত নিরাবতা ভেঙ্গে হঠাৎ করেই আমাদের সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্ক এর ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষক ডেভিড আমার নাম উচ্চারণ করলেন! ”আদনান নোবেল পেয়েছে, চলো আমরা সবাই তাকে অভিবাদন জানাই”। ডেভিডের মুখে এইরকম ইয়ার্কি মার্কা কথা শুনে ক্লাসের সবাই আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেটে পরে আর কি! আমারও মনে মনে ডেভিডের দিকে খুব রাগ হচ্ছিল। ” বেটা ইয়ার্কি মারার আর জায়গা পেলি না?”। কিন্তু ডেভিড নাছোড় বান্দা। তিনি এবার সরাসরি শিক্ষকের মঞ্চে তার পাশে যেয়ে দাড়াবার জন্য আমাকে অনুরোধ করলেন। সব দেখেশুনে আমারত আত্বারাম খাচাছাড় হয় আর কি! শুধু মনে মনে ভাবছিলাম এই পাগলাটার আজ হল কি? (এখানে উল্লেখ্য যে ইংরেজি শিক্ষক ডেভিড ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে পাগলা এবং ক্ষেপা হিশেবে বেশ নাম কুড়িয়েছিল)। আমি মঞ্চে তার সামনে আসতেই এবার ডেভিড তার আসল কথায় এলেন। ”আদনানের দেশের একজন মানুষ নাম মুহাম্মদ ইউনুস আর তার গ্রামীন ব্যাংক শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। এই গর্ব আমাদের সবার। চলো এর জন্য আমরা সবাই দাড়িয়ে আদনানকে অভিবাদন জানাই।” সেটা ছিল ২০০৬ সালের কথা। সত্যি বলতে সেদিন আমি আমার চোখের আনন্দ অশ্রু ধরে রাখতে পারিনি। যখন আমরা দূর প্রবাসে বসে প্রতিনিয়ত দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, দূর্নিতী, অনিয়ম, হত্যা, গুম,খুন ইত্যাদি শুনতে শুনতে অভ্যস্থ হয়ে গিয়েছিলাম ঠিক সেই সময়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নোবেল প্রাপ্তিটা ছিল আমার মত হাজার হাজার বাংলাদেশিদের জন্য মরুভুমিতে এক পশলা বৃষ্টির মতই। স্পষ্ট মনে আছে, গ্রামীন ব্যাংক এবং অধ্যাপক ইউনুস শান্তিতে নোবেল পুরস্কারে ভুষিত হয়েছেন খবরটা যখন আমাদের নিউইয়র্কবাসী প্রবাসীদের কানে এল তখন নিউইয়র্কের বাঙালি পাড়া জ্যাকসন হাইটস এ মিষ্টি খাওয়ার ধুম পরে গিয়েছিল। এই গর্বে সেদিন আমাদের বুকের ছাতি যেন দশ ফুট চওড়া হয়ে গিয়েছিল।

অধ্যাপক ইউনূস গত বুধবার ১৭ মে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসরকারি সম্মামনা ’কংগ্রেশনাল স্বর্ণপদক’ এ ভুষিত হয়েছেন। আবারো তাকে অভিনন্দন! মার্কিন পরিষদের স্পিকার জন বোয়েনার আনুষ্ঠানিকভাকে যখন তার হাতে এই পদক তুলে দিচ্ছিলেন তখন সে দৃশ্য দেখে দ্বিতীয় দফায় আবারো আনন্দ অশ্রু বর্ষণ করলাম। ১৭৭৬ সালে জর্জ ওয়াশিংটনকে দিয়ে যে পদকের যাত্রা শুরু হয়েছিল সেই পদকটি যে খুবই ভাড়ি এবং অহংকার করার মত একটা বস্তু তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। জেনারেল কলিন পাওয়েল, ফ্রান্ক সিনাত্রা, মাদাম তারেসা, রোসা পার্ক, পপ জন পল, মার্টিন লুথার কিং সহ অনেক দেশবরেণ্যরা এই পদকে ইতিমধ্যেই ভুষিত হয়েছেন। মুহাম্মদ ইউনূস নামটিও এখন এই পদক তালিকায় যোগ হল। এই গর্ব শুধু অধ্যাপক ইউনূসের নয় বরং এই গর্ব গোটা বাংলাদেশের।

”আমরা দারিদ্র্যকে যাদুঘরে পাঠাবো”মুহাম্মদ ইউনূসের এই মন্ত্রে উদ্দিপ্ত হয়ে গোটা পৃথিবীর মানুষ যখন আনন্দে সোচ্চার তখন অবাক হয়ে লক্ষ্য করি খোদ নিজ ভুমিতেই এই মানব প্রেমিক নির্গিহিত হয়ে আছেন। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাদেরই দাবি যে ইউনূস এর পরিবর্তে দলটির প্রধান এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারই এই নোবেল পাওয়া উচিৎ ছিল। বাংলাদেশের এটর্নি জেনারেল থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের নেতা হানিফ, বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল মুহিত, দলটির সাধারণ সম্পাদক এরা সবাই মুহাম্মদ ইউনূসের কাজকে প্রকাশ্যে সমালোচনা করার জন্য যেন মাঠে নেমেছেন। হয়তো সে কারনেই অধ্যাপক ইউনূসের এই ’কংগ্রেশনাল স্বর্ণপদক’ প্রাপ্তিতে বাংলাদেশের সরকারি পর্যায়ে কোথাও কোন আলোড়ন চোখে পরল না। তবে বিরোধীদলের নেতা খালোদা জিয়া তাকে অভিনন্দন জানালেও সরকারি পর্যায়ে এই ”এড়িয়ে যাওয়া নীতি” প্রকারান্তরে আমাদের হীনমন্যতারই যে পরিচয় চরম বহিপ্রকাশ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

আবারো পুরনো একট স্মৃতিতে ফিরে যাই। নোবেল প্রাপ্তির পর মুহাম্মদ ইউনূস নিউইয়র্ক এলেন। যুক্তরাষ্ট্র বসবাসরত আমরা প্রবাসী বাঙালীরা কুইন্স কলেজের কোলডেন হলে দলমত নির্বিশেষ তাকে এক নাগরিক সম্ভর্ধনা দিয়েছিলাম। পিন পতন নিরাবতায় ড. ইউনূস সেদিন আমাদের শুনিয়েছিলেন গ্রামীন ব্যাংকের সাফল্যের কথা, বলেছিলেন কীভাবে এই দারিদ্রতাকে বাংলাদেশ তথা গোট বিশ্ব থেকেই চিরতরে দূর করে দিতে চান তিনি। হঠাত লক্ষ্য করছিলাম আমার ডান পাশের চেয়ারে বসা এক বাঙালী ভদ্রলোক আনন্দে উত্তেজনায় তার কথায় উদবুদ্ধ হয়ে হাত তালি দিতে দিতে প্রায় দাঁড়িয়ে পরছিলেন আর বিড় বিড় করে মাথা ঝাঁকিয়ে কীসব যেন আপনমনেই বলছিলেন। আমার চোখাচোখি হতেই তিনি বললেন, ’’আরে বুজলেন ভাই, ইউনুসের মত আর দুইটা লোক হইলেই আমাদের হইয়া যাইতো! আর যাই হোক আমাদের আর এই বিদেশের মাটিতে পইচচা মরতে হইতো না’’। আমি কাঁধ ঝাকিয়ে তখন তার কথার প্রতি আমার সমর্থন জানিয়েছিলাম।

কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানই সমালোচনার উর্ধে নয়। যে কোন গঠনমূলক সমালোচনায় একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পরিশুদ্ধ হতে বাধ্য। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বা তার প্রতিষ্ঠান গ্রামীন ব্যংক নিশ্চয়ই সমালোচনার উর্ধ্বে হতে পারে না। ইউনূস অথবা তাঁর প্রতিষ্ঠিত গ্রামিন ব্যংকের গঠনমুলক সমালোচনা অবশ্যই করা যেতে পারে। কিন্তু সমালোচনার নামে প্রতিনিয়ত ব্যক্তি ইউনূসের প্রতি বিষ বাক্য ছড়িয়ে সরকার নিজেই যে নিজেকে অনেক ছোট করে ফেলছেন সে কথা সরকারকে কে বুঝাবে? শেষ কথা হল মুহাম্মদ ইউনূস গোটা বিশ্বেই একজন সম্বানিত ব্যাক্তিত্ব। এই নোবেল পাওয়া মানুষটাকে কি আমরা আমাদের নোংরা রাজনীতির বাইরে রাখতে পারি না?

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১:০৭
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×